বইপাড়া : বই-বাহিকের কড়চা/ ১


পুরানো বই, নতুন বই, হারিয়ে যাওয়া বই, প্রিয় বই, নানা সময়ের পড়া, পড়তে চাওয়া, ভুলে যাওয়া, মনে পড়ে যাওয়া বইয়ের কথা নিয়ে বই-বাহিকের কড়চা। আজ প্রথম কিস্তি। লিখছেন মানবেন্দ্র মুখোপাধ্যায়

বই নিয়ে এই কাগজে কিস্তিতে কিস্তিতে লিখবার জন্য আমার কাছে আব্দার জানিয়েছেন আবীর। সে তো উত্তম প্রস্তাব। ব্যক্তিগতভাবে আমার ব্যসন বলতে তো ওই বই! পড়ুয়া হই আর না হই, ঝোলায় বই বইতে বইতে এখন নিজের জন্য ‘বই-বাহিক’ খেতাবটা অন্তত দাবি করতেই পারি! 
এতদিনের নাড়াঘাঁটায় এটুকু অন্তত বুঝতে পারি, কোন বই শুধু পাতা উলটে গেলেই চলে আর কোন বই আলাদা করে তাকে তুলে রাখতে হয়। তেমন তেমন বই পড়বারও একরকম আলাদা মাহেন্দ্র-অমৃত যোগ লাগে বইকি! রবীন্দ্রনাথের মতো পাঠক জানতেন কখন কোন বই পড়তে হয়। আমি বলি শুধু লেখার ভাগটুকুই নয়; বইয়ের মলাট ‘পড়তে’ হয়, পুস্তানি ‘পড়তে’ হয়, আরও কতকিছু ‘পড়তে’ শিখতে হয়! বইছাপানো আর গ্রন্থনির্মাণ শিল্প এক্কেবারে আলাদা মুদ্দা। কোন বইয়ের প্রচ্ছদ কেমন? রঙের ব্যবহার মার্জিত না ক্যাটকেটে? মার্জিনে স্পেস আড়ে-বহরে কতটা—এসব না বুঝলে আর কিসের বই-বাহিক হওয়া?
পাক্কা বাজারিয়ারা যেমন পটোলের গায়ে হাত দিয়েই তা পালিশ করা কিনা ধরে ফেলেন, পোক্ত বই-বাহিকেরা তেমনি শুধু ফন্টের ধরন-ধারণ দেখেই বলে দিতে পারেন সেটা অ্যামেচারিস্ট না প্রফেশন্যাল প্রোডাক্ট।
আমাদের দেশে গ্রন্থনির্মাণ ব্যাপারটা বিদ্যায়তনিক চর্চায় এখনও তেমন সিরিয়াসলি নেওয়া হয়নি। ইতিউতি দুয়েকটা নজির যে নেই তা নয়। তবে এই কম্পিউটার প্রযুক্তির যুগে সুদর্শন এক-আধটা বই হাতে নিয়ে মনে হয়েছে, আস্‌লি মাকাল ফল ছাড়া সেগুলো আর কিছু নয়। ফন্ট লে-আউট মার্জিন—সবই যথেষ্ট পরিমিত, কিন্তু বিসমিল্লায় গলদ! শুধু রূপটানকে তো আর বিউটি বলে না!
ব্যতিক্রম বাদ দিয়ে বলব, আমাদের বইপাড়া এখনও যথাযথ সম্পাদনা শেখেনি। এমনকি, সংকলন আর সম্পাদনার তফাত আমরা ঠিকঠাক ঠাওর করতে শিখিনি আজও। খুঁতগুলো ধরিয়ে দিলে যে সবাই প্রসন্ন হন না, তাও মালুম হয়েছে একাধিকবার কাগজে রিভিউ করার সূত্রে। দুর্বলতাগুলোকে গ্লোরিফাই করায় সত্যিই আমাদের জুড়ি মেলা ভার!
আজকাল দেখি কাগজের রিভিউগুলোও বেশিরভাগ ক্ষেত্রে কেমন যেন মনরাখা গোছের হয়ে থাকে। প্রথম শ্রেণির কোনও কোনও কাগজে রিভিউয়ের জায়গা দিনদিন কমতে কমতে প্রায় জিরো-ফিগার হওয়ার জোগাড়! অনেক কাগজে রিভিউয়ের ল্যাঠাই চুকিয়ে দেওয়া হয়েছে পুরোপুরি। আর লিটল্‌ ম্যাগাজিন সাময়িকপত্রের ক’টাতেই বা বইয়ের খবর পাই?
রিভিউয়ের নামে ছিদ্রান্বেষণ করতে হবে তা বলছি না, তবে সমালোচনার নামে দায়সারা ফুল-জল ছেঁটানো আদপেই ভব্যতা নয়। উলটো একটা চলও অবিশ্যি আছে। প্রাজ্ঞ রিভিউয়াররা অনেক সময় হয় চিমটি কাটেন, অথবা নিজের জ্ঞানের বহর প্রদর্শন করেন। বই-বাহিক দূর থেকে তাঁদের সব্বাইকে বলবেন, ‘দুয়ো—দুয়ো—দুয়ো’!

Post a Comment

1 Comments

  1. প্রিয় বই বাহিককে ভালোবাসা। বইয়ের জগত এভাবেই আমাদের চেনাতে থাকুন।

    ReplyDelete