কবিতা

শহর আরও ১০০ ছুঁলে 

রূপক বর্ধন রয়


২১২০, রাসবিহারী
বারান্দার গ্রিলে একরাশ ঝুল জমে আছে
সেই কবে, অভিমানী গাড়ি বারান্দা ঝরে গেছে।
২১২০, গোলপার্ক;
একটা উড়ন্ত ট্যাক্সি নেমে আসে, মানুষ সরে;
না ধোয়া, না শব্দ ওড়ে।
২১২০, এক্সাইড;
দুটো লোক গড়াগড়ি যায়, গাড়ি যায় না।
অন্ধকার উড়ালপুল-ছাদ, ওরা আকাশ পায় না!
ক্ষিদে আসে রাতে, ভোর ভোর কাঁপে শীতঘুম
হাইটেক পাঁচতারা ঘরে, ভালবাসা শোকে নিঝ্‌ঝুম।
১০০ বছর অল্প সময়, পালটে গেছে গল্পকথা;
শহর নাকি প্রেমিক ছিল? নাকি এখন কল্পনা তা?
শহরের না একা থাকার ভাবনাটাতেই কান্না পেত?
বান্ধবীরা শুনলে বলে, ‘ছাড়তো, বেকার ফুটেজ খেত!’
হঠাৎ যদি বুক ফেটে যায়, পুরনো এক দুঃখ এলে,
শহর আমার হৃদয়হীনা, কান্না শুধু নিজের সেল-এ!

২০২০, হাজরা
আজকাল এক নতুন ব্যামো, ভদকা খেলেই স্বপ্ন জ্বালায়,
খুব চটপট বেরোনো চাই, শ্রীপর্ণা আজ মিলন মেলায়!
এহেঃ, আজ সোমবার না? নটায় ঢোকা মিটিং ডে তে!
এ্যলার্ম ঘড়ি কাটফাটা খুব, ঘুম কেটেছে যন্ত্রনাতে।
বাবা যা জ্যাম, সাড়ে-নটাই বাজবে বোধহয়!
পাড়ার মোড়েই ধরলো কাকু ‘শুনছি ভাইপোঁ, চায়না নাকি স্মার্ট সিটিতেই পয়সা লাগায়?’
দুদিন পরেই বলছে নাকি, উড়বে সব ট্যাক্সিগুলো?
আওয়াজ নাকি হবেই না আর, উড়বেও না একটু ধুলো?”
কথার খই ফোঁটার আগেই, মুচকি হেসে বা দিক দিয়ে,
এগিয়ে গেলাম, চট্ করে, কিং-গোল্ডফ্লেকের প্যাকেট নিয়ে।

সময় যাবে, নিজের তালে, নিজেই বুঝুক নিজের বাঁক,
আমার শহর নিজের বড়, আদি-অন্তে জ্যান্ত থাক্!

দেবদারু গাছকে

সবর্ণা চট্টোপাধ্যায় 


বড়ো বিষণ্ন লাগে। আজকাল ঘুম ভেঙে যায়।
দেবদারু পাতার মতো এলোমেলো চুল
ছিনিয়ে নেওয়ার মতো রাজার মেজাজ
আটকে রাখার মতো দীর্ঘ পুরু ঠোঁট
ঘুম ভেঙে যায়!

থুতনির নীচে কাটা দাগ পড়ে। দাঁতের ভেতর
শিরশির করে হাওয়া। নিঃশ্বাস ঘন হয়।
মজে যায় খেজুরের রস।
আজকাল বিষণ্ন লাগে!

কোন পরিত্যক্ত স্টেশনের পাশে একা হয়ে
থাকা শিমুল কিংবা রেললাইনের ধারে পড়ে থাকা রোদ, কেও দেখেনি যাদের কোনওদিন
কোনওদিন ছোঁয়নি কোন হাত
হঠাৎ যদি তারাই দীর্ঘজীবী হয়,
তারাই হুকুম চালায় একছত্র বসন্তের ওপর
আনন্দে, শিহরনে ঘুম আসে না যেমন
তেমনই হাওয়ায় দেবদারুর পাতা নড়ে উঠলে মনে হয়, দরজায় নতুন অতিথি এসেছে বোধহয়!


এইসব দিনরাত্রি

সুমন চট্টোপাধ্যায় 


সম্পর্কের মধ্যে যেটুকু ব্যবধান ছিল , সেই স্থানটুকু
দ্যাখো, অধিকার করে নিয়েছে মৃত্যু ...
ভালোবাসার শব্দোচ্চারণের আগে এখন
কেঁপে উঠছে বুকের পলাশ – শিমুল 
তোমাকে দূরত্বে রেখেছি আমি, আমাকে
তুমি ঠেলে দাও প্রতীক্ষার অতল গহ্বরে
এ কেমন জ্বালা, এ কেমন বিতত অন্ধকার
কেমন এক অসীম শূন্যতা ধীরে ধীরে গ্রাস করে
নিচ্ছে আমাদের আর
ঠোঁটের তরলে ফুটে উঠছে নিকষিত গরল !

চুম্বনের মধ্যে যেটুকু সংশয় ছিল, সেই ফাঁকটুকু
দ্যাখো, দখল করে নিয়েছে মৃত্যু ...

Post a Comment

3 Comments