লকডাউনের দিনলিপি


ফেসবুকে বিপ্লব মানে রোমান্স

দীয়া বন্দ্যোপাধ্যায়

‘‘পারব না বস! কত হাজার মানুষ না খেয়ে বাড়ির পথে হাঁটছে। এমনি এমনি বাড়িতে বসে নিজের কথাটুকু ভাববো, আর আমার দেশের ভাই বোনেরা না খেয়ে মারা যাবে, হবে না।’’
‘‘তাহলে, তুই কি করবি ভেবেছিস? কোনও পদক্ষেপ নেওয়া হল?’’
‘‘আরে সেটাই তো! মন আকুলি বিকুলি করছে কিছু করতে পারছি না বলে।’’
‘‘তাহলে এই যে বললি কি কি যেন পারবি না…।’’
‘‘না! মানুষ তো সুন্দর ঘরে বসে ফেসবুকে লিখছে স্টে হোম, স্টে সেফ। ভেবে দেখেছে পাশের মানুষটার কথা?’’
‘‘তা তুই-ও তো এই দাবিগুলো ফেসবুকের আড়ালেই করছিস। তাতে?’’
‘‘অন্তত আমার বোধটা তো আছে যে...।’’
‘‘তাহলে তোর ‘বোধ’ থাকলেই দিল্লি’র বাস স্ট্যান্ডে আটকে থাকা মানুষ খেতে পাচ্ছে বুঝি?’’
‘বোধ’। আর কিছু থাকুক না থাকুক, বাঙালির বোধের অভাব নেই বললেই চলে। কেবলমাত্র এই করোনা-ক্লান্ত সময়ে নয়, সারা বছর এই ‘বোধের’ ভিড় whatsapp-এ, ফেসবুকে, দেখি, পড়ি, স্ক্রোল করি। কি অনুমান করা যায় এই বোধের ভিড় থেকে?
‘‘মার্ক্স!’’
‘‘আপনার থেকে বেশি পড়েছি।’’
‘‘লিওতার?’’
‘‘সেসব ১০ বছর বয়সেই কম্যুনিস্ট বাবা পরিয়েছিলেন।’’
চা-এর আড্ডায়ে বসে চলতে থাকে গরিবের দুঃখ কমানোর উপায় আবিষ্কার। ধল্লার মেয়েটি তখনও পাতা কুড়িয়ে যায়! এই লেখার উদ্দেশ্য একটাই— আমরা যারা হঠাৎ একদিন ৫৫৫ টাকা জিও রিচার্জ করে ফেলতে পারি, যারা বাড়ির ফ্রিজ ঠাঁসাই খাবার নিয়ে বসে আছি, যারা ফোনে প্রেম করে, ফেসবুকে লেখা লিখে, ইউটিউব চ্যানেল দেখে, ব্লগ পড়ে সময় কাটাচ্ছি, তাঁরা সবাই (আমি সহ) এক কথায় ‘প্রিভিলেজড’।
আগে স্বীকার করুন আপনার ফেসবুকের লেখা থেকে কারোর কোনওদিন উপকার হয়নি। তাহলে দেখবেন ‘সঠিক’ আর ‘প্র্যাকটিকাল’ (ফলপ্রসূ) আলাদা করতে পারবেন। সেখানে বসে আপনার ফেসবুক খুলে দেখছেন না আনন্দবিহারের লোকটি, সে জানতে পারছে না আপনি কোন সোশ্যাল-মিডিয়া বিপ্লব ঘটাচ্ছেন, লাভ হচ্ছে না কারোর। সবাইকে টেক্সট-মেসেজ করে জানিয়েছি, আপনাকে এই মাধ্যমে বলি-কারণ ছাড়া বের হবেন না। ফেসবুকে বিপ্লবের বাণী দেবেন না। পারলে গ্লাভ, মাস্ক পড়ে রাস্তা-এ নেমে সতর্ক হতে বলুন সবাইকে। পারলে নিয়ম মেনে ৫ জনের সেবা করুন। আবার পড়ুন, নিয়ম মেনে। সুস্থ থাকুন। পাশের লোকটিকেও সুস্থ রাখুন।
এক গ্লাস জল রেখে গেলাম। পুড়ে গিয়ে থাকলে ব্যবহার করুন।

Post a Comment

2 Comments