কবিতা

কথা দিতে পারছি না

শিলাজিৎ

একটা মাছ মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছে, এমন ভাবে আটকেছে বঁড়শিটা, গাল গেছে ফুটো হয়ে, পাড়ে বসে গুটিকয় লোক, দু-একটা ফুল ফুটে আছে, জল খুব শান্ত সরল, পাখিদের মিঠে খুনসুটি। এদিকে দাঁড়িয়ে জমিদার ওদিকে আকাশ ঘন নীল, যেদিকে তাকাবে শুধু রোদ মেঘেদের ইশকুল ছুটি, মাছটা তখনও লড়ে যাচ্ছে ছলাৎ ছলাৎ ছিলিৎ ছিলিৎ ছিটকে আসছে জল আবার পরে যাচ্ছে পুকুরের ভাঁজে মাছটা মরতে পারে বাঁচতেও পারে এক ঝাঁক পায়রা উড়ে যেতে পারে বসে পড়তে পারে দর্জিপাড়ার সেন বাড়ির প্রশস্ত ছাতের ব্যোম-এ, কিন্তু মাইরি মালিক কথা দিতে পারছি না— এ পাঁচিলের একটা ইঁট কবিতা হবে কি হবে না।




মধুছন্দাদি

কিংশুক চট্টোপাধ্যায়

মেঘের বয়স বাড়ে চাঁদ পোড়ে ওরে ছাই
পাতা ঝড়া দিনে মধুচন্দাদি কে-ই চাই

মুখোমুখি বাড়ি ছিল দিদি বলে ডাকতাম
দু’ঠোটের আস্কারা মুছে গায়ে মাখতাম

তোমার হলদে শাড়ি মায়াবি সুগন্ধে
খয়েরি ঠোঁটের ফাঁকে ঝুঁকে দেখা সন্ধে

বলেছিলে বুকে ঠোঁট বাড়ালেই পাবি চাঁদ
দোতলার ফাঁকা ঘরে টেনে ধরেছিলে হাত

তারপর গল্পের একই ছবি চেনা প্লট
তুমিও করোনি কিছু আমিও দরুণ সৎ

চলে গেলে চাকরীটা বদলিয়ে পেলিং-এ
অপেক্ষা ধুলো মাখে নীল সাদা রেলিং-এ

বলেছিলে কতকিছু আরো কত কি কি সব
পালকে লুকানো মায়া জোনাকির উৎসব

আজ তুমি ভালবাসো মেঘেদের পাড়াকে
এ শহরে আমি একা শুধু মন খারাপে

পাল্টেছে শহরে খোল আর চলছে
সাবানের মতো চাঁদ এখনও তো গলছে

মনে হয় বলেছিলে ফিরে চলে আসবে
সিনেমার মতো করে হেভি ভালবাসবে

FB- তে খুঁজে দেখি ট্রেস নেই সেখানেও
নাম্বার পাল্টেছ দাওনি তা এখনও

মধুছন্দাদি এখনও কি থাকো তুমি পেলিং-এ?
অপেক্ষা ধুলো মাখে নীল সাদা রেলিং-এ!


এমনই একটি কথা যা ছিল তোমাকে বলার

দীপশেখর চক্রবর্তী 

একটি আলো আপন মনে কেঁপে কেঁপে ভেসে চলেছে জলের ওপরে সে কি জানে আমার এমনই একটা কথা ছিল তোমাকে বলার তবে কথা সামান্য হলেও অক্ষর ধরে ধরে তার ঠোঁটে শব্দ সাজিয়ে উড়িয়ে দিতে হবে এমন পথেই একটি কথা হয়ে যেতে পারে পায়রা
অথচ তুমিও জানো, আমি কোনদিন শুধু পায়রার লোক নই
আমি নদীর হাওয়ায় পাল তোলার লোক অথবা আকাশের নীলে ডুবছে এমন ধ্যানী
তেমন দেখার চোখ পেলে নদী বা আকাশের মধ্যে, মাঝি ও পাখিদের মধ্যে কি-ই বা তফাত থাকে?
আমার সে দেখার চোখ বলেছিল-দিগন্তরেখা ধরে চোখ বুজে হাঁটো, প্রতিটি পা যেন ব্যথা বরাবর পড়ে
অথচ তোমাকে বলার মতো কাঁপা কাঁপা জলের মতো একটা কথা ছিল যতবার বলব ভেবেছি ঠিক তার আগের রাতেই বাঁধ ভেঙে জল ঢোকে আমাদের গ্রামে
বাঁধ কেউ সারায় না পুরোপুরি কেন তা জানা নেই শুধু দেখি প্রলয়ের জল, তার ওপারে বিশ্বস্ত আমি দাঁড়িয়ে আছি,তোমাকে একটি কথা বলার ছিল সামান্য
অথচ এতদিন কেটে কেটে ধার করে রেখেছি অক্ষর
যে মা মাটির দুহাতে জগতের অন্ধকার থেকে আড়াল করে রাখে শিশুর দেউটি তার মতো টেনে টেনে তোমাকে হৃদয়ের কথা বলার মতো মাতৃভাষা শিখিনি এখনও।


ধ্বংসের গুঁড়োর মধ্যে

সঞ্চালিকা আচার্য 

শাদা পৃষ্ঠার ওপর শব্দরা বন্দি হয়ে আছে, প্রচলিত অর্থের কারাগারে। অথচ তারা যেন আরও উন্মোচনের অপেক্ষায়, কোনও গূঢ় অর্থ গর্ভে নিয়ে। এইসব পোয়াতি শব্দরা মাথার ওপর চক্রাকারে ঘোরে। ভাষার সীমায় দীর্ঘশ্বাস।
এরই মধ্যে সুযোগ বুঝে বাদুড়ের একটি দল সিলিং-এ এসে বসেছে। যেন তন্দ্রাচ্ছন্ন, বা সবটাই ভাণ। হঠাৎ কোনওটির সাথে চোখাচুখি হয়ে গেলে ইউরেটারে চাপ লাগে। বেনজোডিয়াজিপিনের স্ট্রিপে আর দুটো মাত্র দানা পরে আছে। হারেম থেকে রাজসভার দূরত্ব ঠিক কতটা, অভাগিনী কবিতা জানে না।
অতঃপর গাছেদের কাছে প্রেরণা খোঁজা। শিকড়ে রক্তপাত ও ভাঙা প্রত্যঙ্গ নিয়েও যারা ঝড়ের মুখে স্থানচ্যুত হয়নি, সেইসব আত্মবিশ্বাসী মেধাবী গাছরাও কিন্তু ধূসর, উদাসীন ভঙ্গিমা ফিরিয়েছে। মনে পড়ে রান্নাঘরে সব বাসনপত্র উল্টো করেই রাখা। নিঝুম আকাশ এ’কোন সংকেত পাঠায়―
তবে কি জলের কিনার ছুঁয়ে অন্তর্জলিই আসন্ন?
‘‘কিন্তু তারপর কী?’’― শাদা চাদরে শুয়ে শব্দরা প্রশ্ন করে।



Post a Comment

0 Comments