সম্পাদকীয়

কার লেখা, কার নাম

আবীর মুখোপাধ্যায়


বাঙালি আর কোনওদিন শোধরাবে না!
ভাল লেখা পেলেই হাত নিসপিস করে। কেউ নিজের নামে চালিয়ে দিচ্ছেন। কেউ সংগৃহীত লিখে মেরে দিচ্ছেন।
কেন উল্লেখ করবেন না? লজ্জা লাগছে অন্যের লেখার প্রশংসা করতে? পারবেন, করোনা নিরাময়ে কোনও অ্যান্টিডটের নাম নিজের সঙ্গে জড়াতে? কঠিন কাজ— তাই অতি সহজেই লেখক হতেই হবে আপনাকে? তাই না? কেন আপনি তো ভাল পিয়ানো বাজাতে পারেন— পারেন না? নাচতে পারেন? নাচুন না। কত্থক? তেরে কেটে ধা তেরে কেটে ধা তা ধিন ধিন তা! নাচুন! আচ্ছা কয়েকদিন রবীন্দ্রনাথের গান না করে একটু মল্লারের কোনও বন্দিশ আথবা কীর্তন শোনাবেন? কি গাইবেন? রেনেটি, মান্দারনি? নৌকাবিলাস? টপ্পা হোক— লকডাউনের বাজার— হোক, হোক। নিধুবাবু। ‘যার মন তারই কাছে,/ লোকে বলে নিলে নিলে,/ দেখা হলে জিজ্ঞাসিব,/ সে নিলে কি আমায় দিলে।’ রবিঠাকুরের গানেও আছে। আপনি পারবেন— একসঙ্গে গান— ‘হল না হল না সই, হায়/ মরমে মরমে লুকানো রহিল, বলা হল না।’ আচ্ছা, এই যে রোজ তিনবেলা খাচ্ছেন-দাচ্ছেন-ঘুমোচ্ছেন, দেশের কোন কাজে আসবেন এই নধর গতর নিয়ে? সেনা-বাহিনিতে যাবেন? পারবেন নিশানা লাগাতে?
আসলে এগুলোর কোনওটাই কপি-পেস্ট হবে না। তাই চেষ্টাও করবেন না। তাই যেটা সহজে কপি আর পেস্ট করা যায়— সেই কাজগুলো নিয়ে মেতেছি আমরা— বাঙালিরা! একজন ছবি আঁকছি— ঝেড়ে দিচ্ছেন। লিখছি— ঝেড়ে দিচ্ছেন। নতুন বিষয় নিয়ে ভাবছি— বাজারি সংবাদমাধ্যম আইডিয়া চুরি করছে। লেখা তো এঁদের কাছে মামুলি ব্যাপার— আস্ত বই, লেখক, বইয়ের লে-আউট, প্রচ্ছদ— সবই চুরি হচ্ছে নিম্ন-মেধার কিছু মানুষের দৌলতে।
একটি উদাহরণ নিই— আমার প্রকাশনার গুরুত্বপূর্ণ লেখক মঞ্জীরা সাহা। তাঁকে চিনি, পথ ঘুরে লেখা লেখক হিসাবে। তিনি লিখছেন— ‘‘একদিন দেখলাম বর্ডারে মেয়েরার লেডিস কামরার বর্ণনা সে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে নিজের নামে লিখে চলেছেন। কপি করতে গিয়ে সামান্য ভুল হয়ে গেছে তার। তিনি ভুলে গেছিলেন নিজে একজন পুরুষ। লেডিস কামরায় তার পক্ষে যাওয়া সম্ভব না।’’ কী বিস্ফোরক! চমৎকার! বাংলা ভাষা এগোচ্ছে!
কে শোনে কার কথা! শিক্ষিত বুড়ো ভামদের এই কীর্তি দিনদিন বেড়েই চলেছে। কোথায় যাব আমরা? আমরা মানে— যারা পথে নেমে অথবা বহু সময় ব্যয় করে অবিরাম একটি তথ্যের জন্য দু’মলাটে মুখ গুঁজে থাকি! ঠিক কোন পথে হাঁটব এই অপমান আটকাতে?
বন্ধ হোক এই ‘সংগৃহীত’ লিখে শঠ-শেয়ার! গোটা লেখা সংগ্রহ করছেন, তিনি কেন লেখকের নামটুকু সংগ্রহ করতে পারবেন না? নিজের দায়িত্বে সংগ্রহ করতে হবে। এভাবে ঠকানো বন্ধ হোক লেখক ও পাঠককূলকে। যদি একাধিক কিস্তিতে কোনও লেখা নিজের পোস্টে দিতে চান— দিন। কিন্তু রোজই লেখা ও লেখকের নাম উল্লেখ করতে হবে। সূত্র উল্লেখ করতে হবে। এত সহজ ভেবে নিলে, জানবেন বড় বিপদ আপনার জন্য অপেক্ষা করে আছে। সে বিপদ বাংলা ভাষার। নতুন প্রজন্মের!
এই সময়ের যারা লিখছেন, এখনই সাবধান হয়ে একজোট হয়ে কথা বলুন এই নিয়ে। চুপ করে জল মাপবেন না— আজ আমার হচ্ছে, কাল আপনারও হবে। আর তখন খুব আশ্চর্য হবেন। আমিও হচ্ছি। যখন দেখছি, কেউ অন্যের লেখা শেয়ার করেই থামে না, প্রশংসা পেয়ে লেখে ‘ধন্যবাদ!’

Post a Comment

4 Comments

  1. এইসব প্রকৃত অর্থে বিকৃত মস্তিষ্কের পরিচয়। দিনে দিনে যেন এটা একটা অসুখে পরিণত হচ্ছে। বলা বাহুল্য এটি একটি ক্ষমাহীন অপরাধ। এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। এবং এটাও মনে করি এর বিরুদ্ধে একটি সম্মিলিত প্রতিবাদ গড়ে তোলা উচিত।

    ReplyDelete
  2. অন্যের লেখা চুরি করাটা একটা ফ্যাসান হয়ে গেছে এখন।

    ReplyDelete
  3. এ অপকর্ম এখন অনেক পত্রিকা পোর্টাল অবলিলায় করে যাচ্ছে

    ReplyDelete
  4. দারুণ বলেছেন! আকছার দেখছি এই অকাজ।

    ReplyDelete