লকডাউনের দিনলিপি

কোনওটাই ঠিক করে হচ্ছে না 

দেবাশিস মন্ডল


‘লকডাউন’— সঙ্গে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে নেট পরিষেবা। ঘরের বাইরে, গঙ্গার ধারে নেট সংযোগ হতে পারছে। গঙ্গার কাছাকাছি এলেই মোবাইলে ঝাঁপিয়ে পড়ছে অনেক মেসেজ। রাস্তায় দাঁড়িয়ে সব দেখা বা উত্তর দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। সব ঠিকঠাক থাকলে, ১৭ তারিখ নেট পরিষেবা পুনরায় চালু হওয়ার কথা। 
ঘরে বসে বসে কিছু লেখার চেষ্টা, কবিতা বলা, নতুন স্বাদ বদলের কথা ভাবা। ছাত্রছাত্রীদের জন্য ক্লাসের ভিডিও করাও চলছে। তারা তো কিছুই করছে না। একটা গানও গেয়ে ফেললাম! কোনওটাই ঠিক করে হচ্ছে না। স্মৃতির পাতায় কোথাও থেকে কচুরিপানা ভেসে আসছে। ভেসে যাওয়া জলের স্রোতে!
মায়ের কাছে শ্লেটের লেখা সম্বল করে ছোটবেলার নার্শারী স্কুলে ... বকুলাল শিশুনিকেতন। পাশের বাড়ির পিসিমাদের তৈরি করা স্কুল, তিন পিসিমাই দিদিমণি। টিফিন খাওয়া হত, জল খাওয়ার ঘরে নানারঙের প্লাস্টিকের গ্লাস সাজিয়ে রাখা থাকত, জল ভরে। আমরা একচুমুক জল খেয়ে, গ্লাসসুদ্ধু নিয়মানুযায়ী পাশের বালতিতে ফেলে দিতাম! এ একরকম খেলা! 
দুপুরে গ্রামোফোনের গান শোনানো হত, কোনওদিন মনে পড়ে না কি গান হত! তারপর ঘুমানোর সময়। বড় বড় তোষক পাতা হোতো, গোটানো থাকত। পাতা হত বালিশ। একবার অস্থির সাম্যে উঁচু করে রাখা সব বালিশ ঠেলা দিয়ে ফেলে দিয়েছিলাম।
দুপুরে ঘুম কোনওদিনই হয় না। চোখের প্রতি কড়া নজর থাকত দিদিমণির। মাঝে মাঝে মাথা তুলে দেখতাম, কে কিভাবে  ঘুমাচ্ছে! কেউ জেগে থাকলে  হঠাৎ করে তার কাছে চলে যেতে চেষ্টা করতাম। সেই তখন একমাত্র সম্বল বন্ধু! আর ভাবতাম— কখন শেষ হয় ঘুমের সময়!
ঘুমের শেষে চুল আঁচড়ে, জুতো পরিয়ে দেওয়া হত। মা ঘরে নিয়ে যেতেন।
বিকালে খাবার থাকত কাটগ্লাসের বাটিতে রাখা ছানা। আমি খাব না! আর আমাকে খেতেই হবে। মারধোর চলত। একদিন হ্যাঁ না করতে করতে বাটি পড়ে ভেঙে গেল ... মার তো আছেই! সবচেয়ে অখাদ্য ছিল আপেল সিদ্ধ! এত খারাপ স্বাদের খাবার কেউ কখনো খায়নি!
বড়দের ঘুমের ক্লাস হত না, দিদিমণিও রাগি। নিজের জুতো নিজে খুঁজে নিয়ে পরতে হত। একবার মাথা নীচু করে জুতোর ফিতে বাঁধার সময় মাথা ঠুকে গেল আর এক দাদার সঙ্গে। অনেক খুঁজেও তাকে আর খুঁজে পাওয়া গেল না, কাউকে বলতেও পারছি না! আর একবার মাথা ঠুকে নিতে হবে যে! সেই ভয় এখনও পাই ... যদি  একটা শিং গজায়!
ক্লাস ওয়ান পর্যন্ত ওই স্কুলে পড়েছি। তারপর অন্য সরকারি প্রাইমারি স্কুলে।
শ্রীরামপুর কলেজের প্রাচীনতম গৃহের অযত্নরক্ষিত দৃশ্যটি আজ পৌছে দিয়েছিল খুব ছোটবেলার স্মৃতির স্মরণীতে! স্মৃতি তো অনেক! আসে, যায়, আবার ফিরে আসে!

Post a Comment

0 Comments