লকডাউনের দিনলিপি

দিন কাটছে, অস্বাভাবিক ছন্দে

পারমিতা ভট্টাচার্য


মহামারী আর মন্বন্তর, দুটি শব্দই গল্প উপন্যাসে পড়া ছিল। এখন তারা আমাদের ঘরে ঢুকে পড়েছে। ডাক্তাররা জানেন না এই মহামারীর সঠিক চিকিৎসা, আমরা বুঝতে চেষ্টা করছি মন্বন্তরের মোকাবিলা কি ভাবে করতে হবে।
দেশছাড়া মানুষগুলো কি ভাবে দেশে ফিরবে। গরম বাড়ছে। জলকষ্ট বাড়বে। অসুখ বাড়বে। কিন্তু দিন কাটছে, অস্বাভাবিক ছন্দে।
অনেক গাছপালার মধ্যে বাড়ি। ফুল, পাখি নিত্যদিনের সঙ্গী। কিন্তু, কি যেন একটা নেই। বা কিছু একটা বেশি আছে। খুব দরকারে বাজার যাওয়া ছাড়া বেরোনো নেই। সে তো মাঝেমাঝে। ঘুরনচন্ডি আমার তো সত্যিই অসুবিধা হওয়ার কথা। কিন্তু ততোটাও হচ্ছে না।
মাথা বা মন বিক্ষিপ্ত থাকার জন্য কিনা জানি না, রোজকার পাখিগুলোর দেখা কম পাচ্ছি। আবার এও হতে পারে, ওরাও পৃথিবীর গভীর অসুখের কথা বুঝতে পারছে। তাই একটু আড়ালে থাকছে। দিনের বেলা ডাকাডাকি কম করে না।
সময় কেটে যাচ্ছে হাবিজাবি হস্তশিল্প করে, বই পড়ে, সিনেমা দেখে। কখনও ছবি তুলে। সমস্যা হচ্ছে রাত্রে। এমনিতেই ঘুম কম। রাত হলেই পাখিগুলো সারা সন্ধ্যা চুপ করে থাকার পর, এক অদ্ভুত স্বরে ডাকতে শুরু করছে। দিনের উচ্ছাস তাতে নেই। বিলম্বিত লয়ে, খানিকটা করুণ সুরে সেই অনর্গল ডাক। মনটা যেন কিরকম কূ ডেকে ওঠে।
তারই মধ্যে শুক্লপক্ষে চাঁদ ওঠে। রাতে আলো নিভিয়ে শুতে গেলে জ্যোৎস্না এসে মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়। মানুষের জীবনে তো কৈশোরের পরে আর মাথায় বা মনে হাত বোলানোর মতো মানুষ কমই মেলে। যা মেলে, সে মাথায় হাত বোলানোর অন্য অর্থ। ওই হাত বোলানো আর পাখির ডাকে মনটা ভিজে যায়। ঘুম আরও দূরে সরে যায়।

Post a Comment

2 Comments

  1. খুব সুন্দর অনুভূতিকে ফুটিয়ে তুলেছেন। পরে খুব ভালো লাগলো।

    ReplyDelete
  2. বেশ ভাল হয়েছে, লিখুন, আরও আরও আরও

    ReplyDelete