নগরকীর্তন


গানের পাখি/ ২

মনফকিরা নির্মলেন্দু 

আবীর মুখোপাধ্যায়


স্বর্ণযুগের বাংলা গানের সুর ও কথার মতোই মিঠে সেই সব গান তৈরির গল্পও। সুরকার, গীতিকারদের সঙ্গে শিল্পীদের সম্পর্ক— জন্ম দিয়েছে যামিনি পটে জড়ানো বিচিত্র উপাখ্যানের। এই ধারাবাহিকে আমরা ফিরে ফিরে শুনব হারানো দিনের মনকেমনের গান। চেয়ে চেয়ে অপলক দেখব সুরের আকাশে শুকতারা। আর একলা হয়ে নিবেদন করব একে অপরকে গানের রেকাব। এই পর্বের ‘গানের পাখি’ শিল্পী নির্মলেন্দু চৌধুরী। ফিরে পড়ব প্রায় হারানো, আমার একটি লেখা।


বেলেঘাটায় জলসা।
কলকাতার প্রায় সব তারকা শিল্পীরাই এসেছেন। স্টেজের পাশে জমজমাট আড্ডা।
কে নেই! হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, মানবেন্দ্র, শ্যামল মিত্র...।
হঠাৎই মাইক গেল বিগড়ে!
মিনিট দশেক যেতেই ধৈর্যচ্যুত জনতা তেরিয়া হয়ে উদ্যোক্তাদের এই মারে, সেই মারে। দ‎র্শক আসনে তুমুল হট্টগোল।
মাটি ফুঁড়ে উদয় হলেন এক যুবা। বুকের মধ্যে আঁকড়ে ধরা দোতারা।
সে বললে, ‘‘মশাই, স্টেজটা আমাকে ছেড়ে দিন। মাইক-টাইক লাগবে না।’’
সবাই ভাবছে, লোকটা পাগল নাকি!
ততক্ষণে মঞ্চে উঠে জিকির দিয়ে দোতারায় চড়া পর্দায় সুর লাগিয়েছে সুদর্শন যুবাটি। আর সেই উঁচু পর্দা থেকেই ধরল সে— ‘নাইয়া রে...’।
মুহূর্তে চুপ, সব্বাই চুপ!
নেই কণ্ঠী, চূড়াকেশ, উদাসীনের আলখাল্লা। অথচ, গলায় মন উদাস করা ভাটিয়ালি সুর। একের পর এক গান গেয়ে চলল সে মাইক ছাড়াই। গভীর প্রত্যয়ে পর পর শোনাল, ‘নাইয়ারে, সুজন নাইয়া’, ‘ললিতে কার লাগি আসিয়াছি কুঞ্জবনেতে’, ‘ভাল কইর‍্যা বাজান গো দোতারা’। ভাটিয়ালি থেকে ধামাইল, ধামাইল থেকে সারি গান, ভাওয়াইয়া। কে এই যুবা?
স্মৃতি থেকে মানবেন্দ্র লিখছেন, ‘‘জানলাম, নাম নির্মলেন্দু চৌধুরী। জিজ্ঞেস করলাম সে কলকাতায় নতুন কিনা, কত দিন থাকবে ইত্যাদি। মনে মনে ভাবলাম, থাকলে আমাদের ভাত মারবে! সেদিন থেকেই ও বন্ধু।’’
গান যখন শেষ হল, বেশ রাত। রাতটহলিয়া বেলেঘাটার অদূরে ভেরির জলে ভাসছে ডিঙি চাঁদ।

সাধের খাঁচা পড়ে রবে তোর

শিল্পীর এমনতরো প্রত্যয়ের নানা কাহিনি শোনাচ্ছিলেন ওঁর ছেলে প্রয়াত উৎপলেন্দুর স্ত্রী উত্তরা চৌধুরী।
সল্টলেকের নিরিবিলি ফ্ল্যাটবাড়িতে তাঁর স্মৃতি-সম্পূটে ধরা পড়ল শ্বশুরমশাইয়ের মুখে শোনা বেহেলি গাঁয়ের গল্প। সিলেটের গণ সংগ্রামের কাহিনি। আর কলকাতায় এসে পড়া ছিন্নমূল এক লোকশিল্পী পরিবারের কষ্টের সকরুণ দিনকালের সাত-কাহন।
নিমর্লেন্দু কখনও এই ফ্ল্যাট বাড়িতে আসেননি। তাঁর মৃত্যু পার্ক সার্কাসের ১২৬, লিন্টন স্ট্রিটের ভাড়া ঘরেই। কিন্তু উৎপলেন্দুর এই ফ্ল্যাটজুড়ে সবখানে তিনি। তাঁর গানের খাতা, দোতারা, উপহার-স্মারকে সাজানো উত্তরার স্মৃতি-সংসার।
ঠিক এমনই ছিল পার্কসার্কাসের দু’কামরার বাসাটা। যেখানে স্ত্রী নিলীমাকে নিয়ে সংসার পেতেছিলেন নির্মলেন্দু। ছিল টেরাকোটার গণেশ, নারকেল মালার ছাইদান।

গুরু কাঙাল জানিয়া পার করো

নির্মলেন্দু তখন স্কুলের চৌকাঠে।
শ্রাবণে চলে গেলেন রবিঠাকুর! মৃত্যুর খবরে শোক মিছিল বের হল বাংলাদেশের পথে-প্রান্তরে। শ্রীহট্টর পথে যে মৌন মিছিলটি শহর পরিক্রমা করেছিল শোকের সেই দিন, তাতে সবার আগে হেঁটেছিল নির্মলেন্দু। সারাক্ষণ তার বুকের মধ্যে আঁকড়ে ধরা রবিঠাকুরের ছবি। মিছিলের সারাটা পথ, ভিজে চোখের পাতা। ভিড়ের মধ্যেও সে যেন একলা। বাড়ি ফিরে একা চিলেকোঠার নিভৃতিতেও কেঁদেছিল খুব! ‘‘সিলেটের বেহেলি গাঁ। নদী ঘেরা ছোট্ট পল্লি। আমার শ্বশুরমশাইয়ের জন্ম আর বড় হওয়া সেখানেই। খাসিয়া আর গারো পাহাড়ের মাঝামাঝি শ্রীহট্টর এই মহল্লায় কেটেছে ওঁর ছেলেবেলা। শাশুড়ি মায়ের কাছে শুনেছি, অল্প বয়স থেকেই ওঁর ডাকাবুকো সাহসের গল্প। — পাহাড়ি নদীর স্রোতে ভেসে যাচ্ছে বাঘের শাবক। তাকে বাঁচাতে এক বার ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন জলে। শাবকটিকে উদ্ধার করে তবে শান্তি। তখন উনি খেলোয়াড় হওয়ার স্বপ্নে মশগুল। সাঁতার, বাস্কেটবল, ভলিতে খুব নামডাক,’’ বলছিলেন উত্তরা।
নির্মলেন্দুর গান শেখা ঠাকুমা স্নেহলতার মুখে। মঙ্গলকাব্য, পদ্মপুরাণ শুনে শুনে। পরে শিখলেন সিলেটের প্রাণেশ দাস আর সুধীর চক্রবর্তীর কাছে। গান খুঁজে বেড়াতেন ফকির, সাঁই কীর্তনীয়াদের গলায়। তবে রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে তাঁর মন কেঁদেছে সারাটা জীবন। সেই বালক বয়সেই, অশোকবিজয় রাহার কাছে রবিঠাকুরের গান শেখা শুরুও হয়। কিন্তু সিলেটির উচ্চারণ ভুলতে পারেননি। তাই ‘পাগলা হাওয়া’ গাইতে বসে, কেবলই গেয়েছেন ‘ফাগলা হাওয়া’! উত্তরা বলছিলেন, ‘‘নিজের খেয়ালে প্রায়ই গাইতেন একটা রবিঠাকুরের গানও। হয়তো ভুল কথায়, ভুল সুরে, ‘বড় আশা করে এসেছি গো’। কিন্তু নিবেদন থাকত। হাসলে কপট রাগ করতেন। বলতেন, আমার গান শুনে হাসছিস!’’

প্রেম জানে না রসিক কালাচাঁদ

পঞ্চাশের দশক।
শান্তিদেব ঘোষ ডাক পাঠালেন শান্তিনিকেতন থেকে। নির্মল গেলেন সেখানে। সঙ্গী দোতারা। রবিঠাকুরের গান নয়, আসরে দোতারায় ধুন তুলে ধরলেন ‘প্রেম জানে না রসিক কালাচাঁদ’। পুরনো লাইব্রেরির বারান্দায় সুরের বিস্তার ছাড়লেন তারসপ্তকে। ‘ও কালা রে…’। খোলা গলায়, চড়া সুর ছড়িয়ে পড়ল আদিগন্ত খোয়াইয়েও। ফিরেই ডাক এল সাগরপারের। কিন্তু বিদেশ যাওয়ার পোশাক কই! এক ভদ্দরলোক ধার দিলেন কোট-প্যান্ট। সেটিই সম্বল করে পাড়ি দিলেন সাগরপারে। আমৃত্যু সেই মানুষটিকে ভোলেননি। তাঁর কষ্টের দিনে অর্থ সাহায্য জুগিয়ে পাশে থেকেছেন শেষ সময় অবধি।

মুসলমানে বলে গো আল্লা

সেই প্রথম তাঁর বিদেশ যাত্রা। গিয়েছিলেন পোল্যান্ডের ওয়ারশে বিশ্ব যুব উৎসবে। ‘মুসলমানে বলে গো আল্লা’ গেয়ে পেলেন স্বর্ণপদক। আন্তর্জাতিক লোকসঙ্গীত প্রতিযোগিতায় সেই তাঁর প্রথম স্থানের স্বীকৃতিও! সফরে সে বার দলে ছিলেন বলরাজ সাহানি। নির্মলেন্দুর স্বর্ণপদক পাওয়ার রাতে তিনি বললেন, ‘‘যার কাছে যা আছে বের করো, আজ পার্টি হবে।’’ সারা রাত্তির জুড়ে চলল হল্লোড়!  আর অক্লান্ত গান। উদ্যোক্তারা পরদিন শহরে ঘুরতে বেরলেন। আর বাসের দরজায় দাঁড় করিয়ে দিলেন বিজয়ী শিল্পীকে। সেখানে দাঁড়িয়েই নির্মলেন্দু উদাত্ত গলায় গাইতে লাগলেন, ‘মুসলমানে বলে গো আল্লা’। যেদিন কলকাতায় ফিরলেন, উত্তমকুমার ভাই তরুণকুমারকে ডেকে বললেন, ‘নির্মল আমাদের বাংলার গর্ব। ও গোল্ড মেডেল পেয়েছে। তুই আমার গাড়িটা নিয়ে যা। এয়ারপোর্ট থেকে ওকে রিসিভ করে নিয়ে আয়!’ দেশে ফিরে এ বার পরিচিতি আরও বাড়ল। ডাক এল রেডিয়ো থেকে। জলসাতেও। সেই সময়ই রাণী চন্দ নির্মলেন্দুর বন্ধু অমিতাভ চৌধুরীকে চিঠি লিখছেন— ‘‘একটি ছেলে নাকি শান্তিনিকেতনে এসে দারুণ গান গেয়ে গেছে। তুমি চেনো তাকে? চেনা থাকলে নামটা জানাও, আমি পঁচিশে বৈশাখ কলকাতা যাচ্ছি। ৪৮, চৌরঙ্গি রোডে আমার সঙ্গে ওকে দেখা করতে বলো।’’

নাচ করে সুন্দরী গো

ঠিক পরের বছর আবার বিদেশে। এ বার  রাশিয়া আর পূর্ব ইউরোপ। একা নয়, অনেকে। গোটা দেশের প্রতিনিধি হয়ে। যাওয়ার ঠিক আগে তাঁর গান শুনে ফেলেছেন পণ্ডিত নেহরুও। তিনি হুকুম দিয়েছেন, ‘‘বিদেশের কোনও অতিথি এলে যেন গান শোনাতে নির্মলকে ডাকা হয়।’’ রানি এলিজাবেথ এলেন। আইজেনহাওয়ার এলেন।  ডাক পড়ল নির্মলেন্দুর। বিদেশ-সফরে সে বার দলে ছিলেন বিলায়েৎ খান, বাহাদুর খান, শান্তাপ্রসাদ, দ্বিজেন মুখোপাধ্যায়রা। নির্মলেন্দু সেবারও সুরের সারিন্দায় জয় করলেন বুখারেস্ট, প্রাগ, মস্কো। মার্শাল টিটো ছুটে এলেন তাঁর গান শুনে। জড়িয়ে ধরলেন ক্রুশ্চেভ! রেগে গেলেন এক নর্তকী সুন্দরী! সুদর্শন নির্মলকে এই বুঝি আঁচড়ে-কামড়ে মাটিতে পেড়ে ফেলেন তিনি! তিনি সেকালের বিখ্যাত শিল্পী সিতারা। আসরে আসরে সিতারার ছিল কত্থক নৃত্য। প্রতি শোয়ের পর নির্মলেন্দুর এত এত প্রশংসা দেখে নিজেকে সামলে রাখতে পারেননি। একদিনের কথা। বুলগারিয়ার রাজধানী সোফিয়ায় অনুষ্ঠান। অনিল চন্দ সে বার দলের নেতা। সিতারা তাঁকে বললেন—
‘মিস্টার চন্দ, আমরা কি ফেলনা? নির্মল চৌধুরীকে আপনি গান গাইতে দিন দেখি আমার সঙ্গে। তখন দেখব, আমার নাচের পর, ও গেয়ে কেমন হাততালি পায়!’
অনিল চন্দ বললেন, ‘কাগজের প্রশংসায় আমার হাত নেই। তবে নির্মলকে চ্যালেঞ্জের কথা জানাব!’
হোটেলে নির্মলেন্দুর ঘরে গেলেন তিনি। দেখলেন পেট-ব্যথা নিয়ে শুয়ে কাতরাচ্ছেন গায়ক। অনিলবাবুকে দেখেই নির্মল বললেন, ‘সন্ধের পোগ্রাম থেকে আমাকে বাদ দিলে হয় না!’ অনিলবাবু বললেন, ‘কী সর্বনাশ!’
‘কেন!’
‘আরে, একটু আগেই আমি যে সিতারার চ্যালেঞ্জ অ্যাকসেপ্ট করে এলাম তোমার হয়ে!’
‘কী চ্যালেঞ্জ!’
সব শুনেই উঠে বসলেন নির্মলেন্দু। বললেন, ‘কুছপরোয়া নেই। সিতারার নাচের পর গাইব।’
বিকেল ফুরিয়ে সন্ধে নামল। একমুঠো ওষুধ খেয়ে, ঝলমলে সুন্দরী সিতারার কত্থকের পরই মঞ্চে উঠলেন তিনি। সঙ্গী কেবল সাধের দোতারাটি। গান শেষ হতে তর সয় না। তুমুল হাততালি। নির্মলকে কোলে তুলে নিলেন সোফিয়ার শ্রোতারা। স্মৃতি থেকে এ গল্প শুনিয়ে নির্মলেন্দুর বন্ধু অমিতাভ চৌধুরী লিখেছিলেন, সে দিন স্টেজ থেকে ফিরে নিভৃত সাজঘরে একটি একটি করে নাচের পোশাক খুলতে খুলতে খুব কেঁদেছিলেন সিতারা!

সোহাগ চাঁদ বদনি ধনি

বিদেশের মাটিতে অনুষ্ঠানের পর পরই গুণমুগ্ধ সুন্দরীদের ভিড় তাঁকে ঘিরে— এ ছিল চেনা ছবি!
একদিন মস্কোর একটি হোটেলে উঠেছেন। সঙ্গী দ্বিজেন মুখোপাধ্যায়। শীতের সে-রাতের সাক্ষ্য দ্বিজেনেরই স্মৃতিতে— হোটেলে ফিরে নির্মলেন্দু বললেন, ‘আজ রাতে মজা করার ইচ্ছা আছে। তুমি একটু সাহায্য করো।’ ‘কী মজা!’ নির্মলেন্দু মজার ব্যাখ্যা করতেই হেসে উঠলেন দ্বিজেন। নির্মলেন্দু বললেন, ‘তুই শালা বড্ড হাসিস, ও রকম হাসলে যে সব জানাজানি হয়ে যাবে!’
হিমের রাত গড়াতে লাগল। প্রায় মাঝ প্রহরে ফোন বাজল দ্বিজেনের ঘরে। নির্মলেন্দু! চাপা গলায় দ্বিজেনকে নির্দেশ, সে যেন দলেরই ক-বাবুর ঘরের সামনে গিয়ে পায়চারি করে। ঘর ছেড়ে চুপিসাড়ে বেরিয়ে দ্বিজেন তাই করলেন। একসময় ক-বাবু দরজা খুলে ওভারকোর্টের বোতাম আঁটতে আঁটতে বেরিয়ে আসতেই দ্বিজেন জিজ্ঞেস করলেন, ‘কী ব্যাপার, এত রাতে!’ মুচকি হেসে ক-বাবুর উত্তর, ‘মজা কি শুধু তোমরাই করবে!’’ ক-বাবু নেমে গেলেন। চুপি চুপি তাঁকে ফলো করলেন দ্বিজেন। দেখলেন, লবিতে শুধু ক-বাবু নয়, খ-বাবু, গ-বাবুরাও কাদের আঁতিপাতি খুঁজে বেড়াচ্ছেন! পাগলের মতো। স্মৃতি উস্কে দ্বিজেন লিখছেন, ‘‘অবশেষে স্বয়ং নির্মল নিজে এসে হাজির। কথা মতো আমাকে নিয়ে ওদের কাছে গেল, এবং বলল, ‘তোমরা কী! তোমাদের তিনজন মহিলা-বন্ধু ভুল করে আমার ঘরে গিয়ে হাজির হয়েছে, আমি বসিয়ে রেখে এসেছি। শিগগির যাও, একটুও ভদ্রতা জানো না?’ নির্মলের বলা শেষ হল না, তিনজন উর্ধ্বশ্বাসে ওপরে ছুটে গেল। নির্মল বলল, চল দ্বিজেন আমরা পালাই।’’’
নির্মলেন্দু সে দিন মেয়েদের গলা নকল করে ভাঙা ভাঙা ইংরেজি, রাশিয়ান আর হিন্দিতে ফোন করে টোপ দিয়েছিল ওই তিন জনকে। আর তাতেই ওই দশা ওঁদের!

দিব না দিব না দিব না

‘‘এত দেশ বিদেশ ঘুরেছেন বাবা, কখনও কিন্তু ভুলে যাননি শ্রীহট্টের নদী ঘেরা গ্রামের কথা,’’ স্মৃতির উজানে উত্তরা।
পার্টির কাজে জড়ালেন কখন?
উত্তরা বলছিলেন— শ্রীহট্টের স্কুলের চৌকাঠ পার হলে, পড়াশোনার জন্য নির্মলেন্দু চলে যান সিলেটে। সেই বয়সেই স্বাধীনতা সংগ্রাম জড়িয়ে পড়লেন। তার পর গণ সংগ্রামে। ক্রমে পার্টির সভ্যপদে। হয়ে উঠেছিলেন পার্টির এক জন দক্ষ সংগঠকও। তাঁর জীবনজুড়ে গণ-সংগ্রাম ও সুরের হাওয়া লাগল সেই উত্তাল বিয়াল্লিশের ঝোড়ো সময় থেকেই। তখন সবে ‘ব্ল্যাকআউট’ কথাটা চালু হয়েছে। সারা সিলেট জুড়ে জাপানি বোমার আতঙ্ক। ট্রেঞ্চ কাটা হচ্ছে চার দিকে। গড়ে উঠেছে আধা সরকারি বাহিনী। গানের স্কোয়াড প্রভাতফেরিতে গাইছে, ‘দিব না দিব না দিব না, দস্যুকে পথ ছেড়ে দিব না’। এই সময়ই এআরপি-র পোশাকে নির্মলেন্দুর সঙ্গে আলাপ হল খালেদ চৌধুরীর। তার পর পরই তাঁর জীবনে এলেন হেমাঙ্গ বিশ্বাস। হেমাঙ্গ নির্মলেন্দুকে ডাকলেন ‘নবনী’। আর নির্মলেন্দু়র তিনি হয়ে গেলেন ‘লালুদা’। ‘নবনী’র গলা শুনেই ‘লালুদা’ বুঝেছিলেন, ‘সুনামগঞ্জের ছাওর, বিলের ঢেউয়ের বিস্তার তার গলায়।’
জাপান সিঙ্গাপুরের দখল নিল। বোমা পড়ল শিলচরের উপকণ্ঠে। মিলিটারি এরোড্রাম কুম্ভীরগ্রামের উপর! পার্টি ঠিক করল, প্রতিরোধ আন্দোলন আরও জোরদার করতে হবে। নির্মলেন্দুকে তখন শিখতে হল গেরিলা যুদ্ধের কৌশল! অন্য দিকে নির্মল মায়ের কাছে শেখা গান এসে শোনাতে লাগলেন হেমাঙ্গকে। আর হেমাঙ্গ তাতেই কথা পাল্টে বিপ্লবের শব্দ বুনে দিতেন। হেমাঙ্গ লিখেছেন সেই স্মৃতি। —‘‘শ্যামল ঊরণরূপে প্রাণ নিল হরিয়া’— শোনার সঙ্গে সঙ্গে কথা বসালাম— ‘কী শুনি, কী শুনি সইগো, কী শুনি, কী শুনি, হরিতে রমণীর মান আইলোরে জাপানি’।… মনে পড়ে, সেই যে সুর সংগ্রাম শুরু হয়েছিল, তা কলকাতার মহেন্দ্র গোঁসাই লেনের মামার বাড়িতে স্বল্প পরিসর ধোঁয়াচ্ছন্ন গলিতে এসেও থামেনি।’’
নির্মলেন্দু পরে এই গানটি মহিলাশিল্পীদের ধামাইল শিখিয়ে কলকাতার অনুষ্ঠানে গেয়ে বেড়াতেন। হেমাঙ্গ-নির্মলেন্দুর গান গড়ার এই গল্প যে-সময়ের, তখন সিলেটে তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের পৌরোহিত্যে একটি সাহিত্য সভা হয়। নির্মলেন্দুর গলা শুনে চমকে গিয়েছিলেন তারাশঙ্করও।

লাঙল যার, জমি তার

আবার পিছনের কথা। শ্রদ্ধানন্দ পার্ক। সাল চুয়াল্লিশ।
শেষ শীতের রোদ গায়ে মেখে কলকাতায় তখন ফ্যাসিবাদ বিরোধী প্রকাশ্য অধিবেশন। অনুষ্ঠানে দোতারা নিয়ে গাইতে উঠলেন শ্রীহট্টের টগবগে যুবা নির্মলেন্দু। তাঁর গলার গমকে চমকে গেলেন নগর-শিল্পীরা। সেই প্রথম তাঁর গান শুনল মহানগর। ও দিকে লেখা হচ্ছে ‘বাংলার কৃষক বাইগণ হওরে চেতন/ লাঙল যার জমি তার কৃষকের এই পণ’। কণ্ঠে সে গান নিয়েই নির্মলেন্দু তাত ছড়ালেন দু’পারের বাংলার গাঁ-ঘরে! কয়েক মাস পর কলকাতায় মহম্মদ আলি পার্কে সাহিত্য সম্মেলন। তাতে সিলেট স্কোয়াডের সঙ্গীত পরিচালনার দায়িত্ব নির্মলের। সঙ্গে খালেদ চৌধুরীও। কলকাতা আবার শুনল তাঁর অনাবিল কণ্ঠের গান। গান তো নয়, যেন আত্ম-নিবেদন। তাঁতের তারে বাঁধা দোতারায় সেই এক সুর-ছন্দের দোলন। যেন নগরমঞ্চে আব্বাসউদ্দিন!
নির্মলেন্দু কখনও কথকও।
এই গাইছেন, ‘সুন্দইরা নাওয়ের মাঝি’। হঠাৎ অন্তরায় থেমে ক্ষণিক চলল গণ-চেতনার জবানি! কলকাতা বুঝি প্রেমে পড়ল এক মনফকিরা সুদর্শনের! আর নির্মলেন্দু? প্রিয় এই শহরে বরাবরের জন্য চলে এলেন স্বাধীনতার পর। সে’ও এক অন্য সংগ্রাম। দেশ স্বাধীন হলেও, দেশভাগের ক্ষত তাঁর বুকে। বাংলা আর পঞ্জাব ভাগের সেই ক্ষত নিয়েই ছিন্নমূলের পারাপার! ‘‘দেশ স্বাধীন হওয়ার ঠিক পরের বছর বিয়ে হয় ওঁদের। শাশুড়ি মায়ের কাছে শুনেছি বিয়ের সময় গান নয়, গণনাট্য-র কাজেই বেশি যুক্ত ছিলেন বাবা। ছিলেন পার্টির হোলটাইমার। কিন্তু মাকেও সময় দিতেন। আমি বউ হয়ে চৌধুরী পরিবারে আসার পর ওঁকে বলতে শুনেছি, ‘আমি নির্মলেন্দু চৌধুরী হতে পেরেছি তোমার মায়ের জন্য।’’’ স্মৃতি থেকে বলতে গিয়ে উত্তরা মনে পড়ালেন, ছেলে উৎপলেন্দুর লেখার মধ্যেও রয়েছে কলকাতায় নির্মলেন্দুর দিনযাপনের কষ্টের কথা।— ‘‘উত্তর কলকাতার মহেন্দ্র গোস্বামী লেনে এক কামরার ছোট্ট বাসস্থানে তখন আমাদের মাথা গোঁজার ঠিকানা। মনে পড়ে বাবার তখন একটি মাত্র শার্ট। সেটি পরম মমতায় কেচে, ইস্ত্রি করে আমার মা প্রতিদিন বাবার হাতে তুলে দিতেন। সঙ্গে দিতেন এক আনা পয়সা। যাতায়াতের সেকেন্ড ক্লাসের ট্রামভাড়া। মায়ের কাছে শুনেছি, এমনও হয়েছে, সারাটা পথ পায়ে হেঁটে বাবা ওই এক আনা পয়সা ফিরিয়ে এনেছেন বাড়িতে!’’

তোমার রক্তে রাঙ্গা নিশান

বম্বেতে গণনাট্য সংঘের সারা ভারত সম্মেলন হল তিপ্পান্ন সালে। কলকাতা থেকে গিয়েছিলেন শিল্পী-সাহিত্যিক-কর্মীরা। গিয়েছিলেন নির্মলেন্দু। বাড়িতে একরত্তির ছেলে উৎপলেন্দু অসুস্থ। তবু দল আর হেমাঙ্গের অনুরোধে যেতেই হল! গিয়েছিলেন ঋত্বিক ঘটকও। ‘দলিল’ নাটক নিয়ে। তার আগে দেশভাগের ‘জ্বালা’-য় লেখা সে-নাটকের প্রথম অভিনয় হয় কলকাতায়। ২০৬, লোয়ার সার্কুলার রোডে গণনাট্য কর্মী, গায়ক নৃপতি নন্দীর বাড়ির ছাদে। সেখানে ক্ষেতু ঘোষের ভূমিকায় ঋত্বিক। বম্বেতে এই ‘দলিল’-ই প্রথম পুরস্কার পেল। আর নাটক দেখে নির্মলেন্দু যেন নতুন স্বপ্ন দেখলেন! আশায় ফের বুক বাঁধলেন ক্ষেতু ঘোষের সংলাপে! চাঙ্গা গলায় কনফারেন্সে গান ধরলেন— ‘তোমার রক্তে রাঙ্গা নিশান, লড়াইয়ের নিশানা’। সেই প্রথম সারা দেশের গণ-সংগ্রামের কর্মীরা শুনল তাঁর গান।  ছিলেন উৎপল দত্ত, সলিল চৌধুরীরাও। তখন সবে ‘দো বিঘা জমিন’-এর ক্যান বন্দি ফিল্ম নিয়ে বিমল রায় ফিরেছেন মস্কো ফিল্মোৎসব থেকে। তাঁর সঙ্গে গিয়ে রাশিয়ার ‘কয়্যার’ দেখে মুগ্ধ সলিল! তৈরি হল সলিলের ‘বম্বে ইয়ুথ কয়্যার’। পাশে রইলেন নির্মলেন্দু-দ্বিজেন। সলিলের কয়্যারে হারমোনিয়াম বাজাতেন সুরকার অনিল বিশ্বাস। তবলায় রোশনজি। গানে মান্না-মুকেশ-নির্মলেন্দু!

পদ্মা হাসে, পদ্মা কাঁদে

বম্বে থেকেই আলাপ জমল শোভা সেন-উৎপল দত্তদের সঙ্গে। নির্মলেন্দু একটু একটু করে নিজেকে জড়ালেন কলকাতার নাট্য-জগতের সঙ্গে। সে সময় এক কয়লাখনিতে বড় দুর্ঘটনা ঘটেছে। কাগজের শিরোনামে রোজ সে-খবর। লেখা হল নাটক ‘অঙ্গার’।
মিনা‎র্ভা থিয়েটারে তাপস সেন তৈরি করলেন আলো-আধারর কয়লাখনি। আর উৎপল দত্তের নাটকে সেই প্রথম কয়লাখনির মজদুর জীবনের গান করলেন নির্মলেন্দু। সঙ্গীত পরিচালনায় রবিশঙ্কর! শোভা সেন লিখছেন, ‘‘খুব সঙ্কোচের সঙ্গে তাঁকে (নির্মলেন্দু চৌধুরী) অনুরোধ করলাম।...অতি সামান্য যাতায়তের খরচ ছাড়া নির্মল ও তার দলবল কিছুই পেত না। আমাদের অনুরোধ অগ্রাহ্য না করে প্রতিটি শো-তে দলবল নিয়ে থাকত নির্মল। তার সহৃদয় সাহায্যে সমৃদ্ধ হয়েছে ‘অঙ্গার।’’’
জনপ্রিয় হয়েছিল পরে নির্মলেন্দুর গাওয়া গানে আরও একটি নাটক। ‘তিতাস একটি নদীর নাম’।


দয়া নি করিবা আল্লারে

নৌশাদ ছাদ পেটানোর সুরে হিন্দিতে গান বাঁধলেন। তার পিছনেও নির্মলেন্দু। সে গল্প রয়েছে সলিল-স্মৃতিতে। বিমল রায় যখন ‘বিরাজ বহু’ ছবি করছেন, তার আবহসঙ্গীত করতে বম্বে গেলেন নির্মলেন্দু। প্রায়ই উঠতেন বন্ধু সলিলের বাড়িতেই। সলিল লিখছেন, ‘‘নির্মল ওর গলার জাদুতে মহারাষ্ট্রকে বাংলাদেশ করে ছেড়েছিল।’’ সে সময়ই ওঁর ছাদ পেটানোর গান ‘সুন্দইরা নাওয়ের মাঝি’, গাজির গান ‘দয়া নি করিবা আল্লারে’ মোহিত করে দিয়েছিল নৌশাদকে।

তোমার লাগিয়া রে

ছাপ্পান্নতে এইচএমভি থেকে বের হল নির্মলেন্দুর প্রথম রেকর্ড।
দুটি গান, ‘তোমার লাগিয়া রে’ ও ‘আমার সাধের নাও’। গানের কথা, অনল চট্টোপাধ্যায়।  সুর দিলেন শিল্পী নিজেই। ‘‘মহেন্দ্র গোস্বামী লেন থেকে বন্ডেল রোডে ভাড়া ছিলেন ওঁরা কিছু দিন। তারপর সাতান্ন সালে পাক সার্কাস। তখন শহরে বাবার বেশ নাম-ডাক। আমার স্বামীর কাছে শুনেছি, ওঁরা নতুন বাড়িতে এসেই গাড়ি কিনলেন। হিন্দুস্থান ফোর্টিন। বন্ধুদের বললেন, ‘ভাবিনি লোকসঙ্গীত গেয়ে গাড়ি কিনব’! নিজেই সেই গাড়ি চালিয়ে খুব সেজে অনুষ্ঠানে যেতেন। পাট ভাঙা ধুতি-পাঞ্জাবি, সুগন্ধিতে পর পর জলসা করে ফিরতেন শেষ রাতে। শেষের দিকে খুব জনপ্রিয় হয় ওঁর মলুয়া।’’
কোনও দিন নির্মলেন্দু  হয়তো কলকাতাকে শোনাচ্ছেন হাসনরাজা ‘লোকে বলে বলেরে’, কোনও দিন শোনাচ্ছেন, বৌনাচ ‘সোহাগ চাঁদ বদনী ধনি’। কখনও একক, কখনও সপরিবারে-সমবেত। একবার রানাঘাটে অনুষ্ঠান করতে গিয়ে মঞ্চ ভেঙে পড়ল। বুকের পাঁজরে আঘাত। সেরে উঠে ফের শুরু করলেন অক্লান্ত গানের যাত্রা।  সে যাত্রা দীর্ঘ, বর্ণিল। সলিল চৌধুরী দেশ পত্রিকায় লিখছেন— ‘‘নির্মল তার অ্যামবাসাডারের গতিতে অতিক্রম করতে চেয়েছিলেন জীবন! সন্ধ্যায় বার্ণপুরে গান গেয়ে নিজে গাড়ি চালিয়ে রাতে নদিয়ায় গান সেরে পরদিন ভোরে হাওড়ায় গান গেয়ে ও বাড়ি ফিরত— বছরের পর বছর গড়পড়তা চল্লিশ মাইল স্পিডে সে জীবনটাকে চালাল। কিন্তু তাতেই সে আমাদের সবাইকে হারিয়ে দিল!’’

গঙ্গা গঙ্গার তরঙ্গে

‘সোহাগ চাঁদ বদনী ধনি’ কিংবা ‘ভালো কইরা বাজান গো দোতারা’ তাঁকে জনপ্রিয় করলেও, তা শিখর ছুঁলো সমরেশ বসুর কাহিনি নিয়ে তৈরি ‘গঙ্গা’ ছবির পর। সাদাকালো ছবিটির সঙ্গীত পরিচালনা করেছিলেন সলিল চৌধুরী। নির্মল গাইলেন, প্রচলিত কথা ও সুরে ‘আরে ও সুন্দইরা নাওয়ের মাঝি’ আর সলিল চৌধুরীর কথা ও সুরে ‘গঙ্গা গঙ্গার তরঙ্গে’। এর পর একে একে জনপ্রিয় হতে লাগল, ‘প্রেম জানে না রসিক কালাচাঁদ’, হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গীত পরিচালনায় তরুণ মজুমদারের ‘নিমন্ত্রণ’ ছবির ‘আমি বন্ধুর প্রেমাগুণে পোড়া’, গৌরীপ্রসন্ন মজুমদারের কথায় ‘পদ্মা হাসে, পদ্মা কাঁদে’, ‘ডাকাতিয়া বাঁশিরে’— আরও কত-শত গান! সে সময়, সব গীতিকারই মুখিয়ে থাকতেন তাঁর সঙ্গে কাজ করার জন্য। এক বারের কথা। ‘রুনুর ঝুনুর পায়ে’ গানের রেকর্ডিং হবে।
হঠাৎ সে দিন বাংলা বন্‌ধ! চিন্তিত নির্মলেন্দু। গীতিকার গৌরীপ্রসন্ন তাঁর গাঙ্গুলিবাগানের বাড়ি থেকে পার্ক সার্কাসে গায়কের ডেরায় হেঁটে চলে এলেন। শেষ মুহূর্তে লেখা হল গান। রেকর্ডিংও হল। আবারও জনপ্রিয়!
শুধু গান নয়, নিউ থিয়েটার্সের ‘নতুন ফসল’ ছবিতে অভিনয়ও করেছিলেন নির্মলেন্দু। উত্তরাদেবী বলছিলেন—
‘‘বাবা বাড়িতেও সিলেটি ভাষায় কথা বলতেন। মায়ের কাছে গল্প শুনেছি, ‘নতুন ফসল’ করার সময় এ নিয়ে খুব সমস্যা হয়। বাবার সংলাপ থেকে কিছুতেই সিলেটি টান আর যায় না। শেষে পরিচালক মাকে দায়িত্ব দিয়েছিলেন যাতে বাবার সিলেটি টান ঘোচে। রোজ বাড়িতে মা বাবাকে রীতিমতো ট্রেনিং দিতেন এ নিয়ে!’’
ছবিতে সিলেটি টান নিয়ে এত সমস্যা, অথচ নির্মলেন্দুর সিলেটি কথা-সুরেই গাঁথা লোকগানে বারবার তাজ্জব হয়ে গিয়েছে বিদেশের শৌখিন শ্রোতা থেকে মায়ানগরীর মেহফিল। মুম্বইতে ফিল্ম ফেয়ার অনুষ্ঠানে যে বার আমন্ত্রিত হয়েছিলেন, বাংলা  লোকগান গাইলেন। সেই জিকির! সেই দমের খেলা। চড়া থেকে খাদে। অনায়াস গলা উঠছে, নামছে। কখনও সুর ধরে রাখছেন ‘বন্ধুরে’!
গান শুনে মহম্মদ রফি এত আপ্লুত হলেন যে, তাঁকে কোলে তুলে গোটা প্রেক্ষাগৃহ ঘুরে বেড়িয়েছিলেন!


পাখি কখন উড়ে যায়

ঠিক ছিল, শান্তিনিকেতনের নির্জনে বাড়ি করবেন। যে রবিঠাকুরের ছবি বুকে নিয়ে একদিন শ্রীহট্টের পথে পথে কেঁদে মিছিলে হেঁটেছিলেন, তাঁর ছায়ানিবিড় আশ্রমেই ছোট্ট বাড়ির নাম দেবেন ‘দোতারা’। কিন্তু তার আগেই ৮১-র এপ্রিলে চলে গেলেন শান্তিলোকে!
‘চৌধুরী বাড়ি’ থেকে চলে আসার আগে উত্তরাদেবী দেখালেন শিল্পীর সেই প্রিয় দোতারাটা। রয়ে গিয়েছে অবিকল। তাঁতে বাঁধা একলা দোতারা! সুরের পাখি শূন্যে দিয়েছে উড়ান!

Post a Comment

1 Comments

  1. আনন্দবাজারে সেই লেখাগুলোর স্মৃতি যেন ফিরে এলো আবার।

    ReplyDelete