ব্লগ : চিত্ররূপময়/ ২ । কবিতায়, গদ্যের মেধাবী আহ্বান

কবিতায়, গদ্যের মেধাবী আহ্বান

সুমন গুণ


রঁদ্যা সম্পর্কে রিলকের সেই বিস্ময়ভারাতুর কথা আছে না, যে, এই ঐশ্বর্যময় শিল্পী নিজের ভেতরেই সংরক্ষণ করছেন অন্ধকার আর নীলিমা, নিজেই তিনি এক অরণ্য, যার পাশ দিয়ে বয়ে চলেছে মুগ্ধ জলধারা! অলোকদার পাশে বসে আমার কথাটা মনে পড়ে।
বাংলা ভাষায় অলোকরঞ্জন দাশগুপ্ত যে মেধাবী শৌর্য ও লাবণ্য সঞ্চার করেছেন, সেটা আমরা কম বেশি জানি। এমন শিল্পী তো খুব বেশি পাইনি আমরা বাংলা গদ্যে, যাঁর ভাষা তাঁর বক্তব্যের প্রচ্ছদ হয়ে উঠতে পারে। পাণ্ডিত্য অনেকেরই থাকে, তার ভার অনেককে নুইয়ে দেয়, কেউ কেউ অক্লেশে সেই ভার উহ্য রাখতে পারেন, আবার কেউ বিদ্যাচর্চাকেএমন ভাবে স্বগত করে রাখেন লেখায় যে তা নিঃশব্দে আমাদের সংক্রামিত করে। অলোকরঞ্জন দাশগুপ্ত তাঁর প্রবল আন্তর্জাতিক আহরণ লেখার মধ্যে, সে লেখা গদ্যই হোক বা কবিতা, অবধারিতভাবে উহ্য রেখেও উদ্যত রাখতে পারেন।
এটা তাঁর, একমাত্র তার একটি বিশেষ ঘরানা। কিন্তু শুধু লেখা নয়, অলোকরঞ্জন দাশগুপ্তের সান্নিধ্যও যে কতটা সৃজনশীল সেটা তাঁর ঘনিষ্ঠজনরা জানেন। এমন বিপজ্জনকভাবে প্রাণবন্ত থাকেন তিনি সবসময় যে নাগাল পাওয়া দুঃসাধ্য হয়ে ওঠে প্রায়ই। বিপজ্জনক শব্দটা কেন বললাম জানতে চাইতে পারেন।


এটা বোঝানো মুশকিল। আমি অভিজ্ঞতায় বুঝেছি। উনি আমার পদবীকে বিপরীতার্থ করে উচ্চারণ করেছিলেন একবার আমার বন্ধুদের কাছে। ব্যস, বন্ধুরা বন্ধুকৃত্য করার সুযোগ ছাড়বেন কেন। তাঁরা যথারীতি নিজের কীর্তি বলে তা প্রচার করতে শুরু করলেন। আমি অলোকদার কাছে তারপর আনুষ্ঠানিকভাবে অভিযোগ জানালে তিনি দ্রুত তা প্রত্যাহার করে নিলেন।
অলোকরঞ্জনদাশগুপ্তর সঙ্গে আমার প্রথম পরিচয় নব্বই দশকের গোড়ার দিকে। আমার এক তরুণ কবিবন্ধুর সঙ্গে এক রবিবারের সকালে গিয়েছিলাম তাঁর যাদবপুরের বাড়িতে। ‘প্রমা’ সম্পাদক সুরজিৎ ঘোষের সঙ্গে অলোকদার খুব ভাল সখ্য ছিল। সুরজিৎদা সেই বছর আমার একটি কবিতার বই বের করেছিলেন। ‘সোমবার, আত্মীয়স্বজন’ নাম ছিল বইটির। বাড়িতে গিয়ে দেখলাম সুরজিৎদাও বসে আছেন, ফলে আমার সঙ্গে অলোকদার পরিচয় স্বচ্ছন্দেই হয়েছিল সেদিন।
তারপর থেকে তাঁর সঙ্গে আমার নানা সূত্রে যোগাযোগ রয়েছে। এমন গুণী অথচ প্রসন্ন মানুষ, প্রাজ্ঞ অথচ উদার ব্যক্তিত্বের সঙ্গ যে কতভাবে পেয়ে কৃতার্থ হয়েছি। একটা ব্যাপার,উনি দেশের বাইরে বেশিরভাগ সময় থাকলেও বাংলা সাহিত্যের সঙ্গে তাঁর স্বাভাবিক ও নিরবচ্ছিন্ন সম্পর্ক কিন্তু টোল খায়নি।
যে কেউ যে কোনও ব্যাপারে তাঁর পরামর্শ ও সহযোগিতা পেতে পারে। এখনও ইমেইল গ্রহণ না করলেও ফোন আর ফ্যাক্সে যেভাবে সাড়া দেন তিনি, আমাদের বিস্ময় আর কৃতজ্ঞতার সীমা থাকে না। অলোকদাকে আমি একবার গুরুতর ব্যাপারে সক্রিয় পরামর্শদাতা হিসেবে পেয়েছিলাম। ২০০৯ সালে আমি পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য বিশ্ববিদ্যালয় যখন তুলনামূলক সাহিত্য বিভাগ শুরু করি, অলোকদাকে অনুরোধ করেছিলাম বিভাগের পাঠক্রম তৈরি করে দিতে। আমার প্রতি স্নেহ বা তুলনামূলক সাহিত্য বিষয়ের প্রতি মমতা, যে কারণেই হোক সাগ্রহে রাজি হলেন।
মনে আছে পরপর কয়েকদিন প্রায় ভোরবেলায় আমরা বসতাম। আমি শিক্ষার্থীর আগ্রহ ও উত্তেজনা নিয়ে অলোকদারসামনে নতজানু হয়ে থাকতাম। 

Post a Comment

1 Comments

  1. Rodin এখানে n এর অবস্থান শেষে। তাই চন্দ্রবিন্দুর বোঝা র বহন করবে কেন? পন্ডিতদের একটু জিগ্গেস করে নেবেন।

    ReplyDelete