বন্ধুদাদার চিঠি
এ বছর সবকিছুই আলাদা। নতুন একটা কথা শোনা যাচ্ছে ‘নিউ নর্মাল’। অর্থাৎ কিনা নতুন ভাবে নতুন নিয়মে আমাদের স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে হবে। সেই যাপন হবে মুখে মাস্ক এঁটে সকলের সঙ্গে শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে চলা ও থেকে থেকে হাত, পা সাবানজল দিয়ে ধুয়ে ফেলা। এই ‘নিউ নর্মাল’ ব্যাপারটা কবে যে কাটবে! আবার নতুন দিন আসবে কবে যেদিন আমরা একে অপরকে ভালোবাসায়, নির্ভরতায় জড়িয়ে ধরতে পারবো?
আসবে, আসবে। আশা ছাড়বো না বন্ধুরা। আশাই তো আমাদের বাঁচিয়ে রাখবে। আর দুর্গাপুজোর এবছরের দিনগুলোয় বেশির ভাগ মানুষই ঘরে রয়েছেন ও ঘরের লোকজনদের সঙ্গেই দিনগুলো কাটাচ্ছেন দেখে শুনে কিছুটা ভরসার জায়গা তৈরি হয়েছে।
আপাতত আমরা পড়ায় মন দিই। সেই রোমাঞ্চকর ধারাবাহিকে চোখ রাখি। ‘জলে জঙ্গলে সুন্দরবন’ বেশ জমে উঠেছে। সেটা পড়ে ফেলো আর আমাদের মতামত জানাবে বন্ধুরা, কেমন?
আনন্দ পাঠশালার এই পর্বে ধারাবাহিক এই লেখাটি ছাড়াও থাকল কয়েকটি অন্য পুজোর ছড়া।
ভাল থাকো সবাই। ভালবাসা নিয়ো।
তোমাদের বন্ধুদাদা
পুজোর ছড়া—১
তাল কাটা পুজো
বিদ্যুৎ মুখোপাধ্যায়
টাক্ ডুমা ডুম্ ডুম্
পড়লো পুজোর ধূম!
খোকা খুকু উঠলো মেতে
ছুটলো চোখের ঘুম।
তাক্ ধিনা ধিন্ তাক্
বাজছে পুজোর ঢাক
মুখরোচক খাবার খেতে
বাবুর্চিকে ডাক!
ধা তেরে কেটে ধা
মন্ডা মিঠাই খা
দুগ্গা ঠাকুর দেখবি যদি
প্যান্ডেলেতে যা।
ড্যাম্ কুড়া কুড় কুড়
গণেশ বাগায় শুঁড়
এ সব সাধে বাদ সেধেছে
করোনা অসুর!
ধিন্ তাক্ তাক্ ধিন্
কই সে পুজোর দিন ?
কাটা গায়ে নুনের ছিটে
কোভিড নাইন্টিন ।
সা রে গা মা পা
বর্মে ঢাকিস গা
লাগামছাড়া ফূর্তি করে
রক্ষে পাবি না।
পুজোর ছড়া—২
পুজোর দিনে
অঙ্কন রায়
ওই দেখেছো? গাঁয়ের জমি নীচু,
শীর্ণা নদী বইছে তারই পাশে।
বর্ষা শেষের উপচে ওঠা জলে
সেই সে গাঁয়ের বসত যত ভাসে।
এবার দেখো, তোমার শহর জুড়ে
বৃষ্টি হলেও আলোর বহর কতো।
রঙ বেরঙের পোষাক পরে সেজে
লুটছো খুশি দু’হাত মেলে যতো।
ওদের গায়ে ছিন্ন মলিন বাস,
তোমার মুখে ঝলমলানো আলো।
তোমার পুজোয় দিকভোলানো মায়া,
ওদের চোখে আঁধার রাতের কালো।
এমনি ভাবেই আসলে পুজোর দিন,
কেউ খুশি, কেউ অশ্রুধারায় ভাসে।
উৎসবদিন সবটা ভালো নয়,
এসব কেন আমার ছড়ায় আসে?
পুজোর ছড়া—৩
বলি ও দুগ্গিঠাকুর
পাপড়ি দত্ত
ও মা ও কী!
করেছ কী?
মাস্ক টাস্ক ছাড়া..
ড্যাং ড্যাং
তুলে ঠ্যাং
উঁচিয়েছ খাঁড়া !
অসুরের
শ্বশুরের
খুক খুক কাশি,
নেই কাজ
তাই আজ
অসুরেরে নাশি।
বেশি নয়,
ফুট ছয়
দূরে দূরে থাকো,
দশ হাতে
দিনে রাতে
সাদা ফেনা মাখো।
বলি মাগো
যেও নাগো
কৈলাস ছেড়ে...
তুমি গেলে
ভীড় ঠেলে
রোগ যাবে বেড়ে।
তার থেকে,
মুখ ঢেকে,
চোদ্দোটা দিন...
ভালো চাও
হয়ে যাও
কোয়ারেন্টিন।
তোলা থাক
ঢাক টাক,
হাসি কলরব ;
গেলে বেঁচে
নেচে নেচে
হবে উৎসব।
ধারাবাহিক/ ৫
জলে জঙ্গলে সুন্দরবন
প্রকাশ কর্মকার
আমি ডেকের উপরে উঠে এলাম, আমার পিছনে পেছনে হামিদও এলো। আমরা ডেকের উপর পায়চারি করছি, দেখলাম বিদ্যাধরি নদীর পারে দাঁড়িয়ে থাকা সুন্দরীর গভীর অরণ্য কি সুন্দর রূপ ধারণ করেছে। পূর্ণিমার চাঁদের আলোয় তা আরও উজ্জ্বল। রাত তখন তিনটে হবে। ভাটার টানে নদীর জল কমতে শুরু করেছে। বনের গভীর থেকে নালা বেয়ে সমুদ্রের নোনা জল আবার নিজের গন্তব্যে ফিরে চলেছে, তার জানান দিচ্ছে জলের কুলু কুলু ধ্বনি। পুবদিকের আকাশটা লালচে রং ধারণ করছে আস্তে আস্তে। আকাশ আর বনের সৌন্দর্য দেখতে দেখতে কখন ঘড়িতে সাড়ে পাঁচটা হয়ে গেছে খেয়াল ছিল না। গতকাল রাতের রাজপুত্রের বাঘ শিকারের গল্পটা মনটাকে উদাস করে দিয়েছে, শেষের দিকে কি হবে তা না শোনা অবধি মন কিছুতেই মানতে চাইছে না। এক ভদ্রমহিলা একটা ছোট নৌকা করে নদীর ধারে কিছু একটা ধরছিল, সে ছোট জাল টেনে টেনে মাছ আর কিছু সংগ্রহ করছিল। মাছের সঙ্গে কি ধরছিল তা জানার জন্যে একটা ছোট্ট হাঁক দিলাম, ‘মাসি কি ধরছেন?’
নৌকো থেকে সাড়া এলো, ‘বাবারা গুলে মাছ (এক প্রকার ছোট ছোট নোনা ও মিষ্টি জলের মাছ), কাঁকড়া ধরছি।’
শুনেছি এখানকার বেশির ভাগ অধিবাসী খুব গরিব, তারা নদীর উপর অনেকাংশে নির্ভরশীল। নদীর মাছ, কাঁকড়া ধরে বাজারে বিক্রি করে তাদের দিন চলে। সরকারি সাহায্য মাঝে মধ্যে আসে। তাছাড়া বনের কাঠ, মধু সংগ্রহ করে অনেকেই সংসার চালায়। আজ থেকে ত্রিশ চল্লিশ বছর আগে সুন্দরবনের গ্রামগুলো অনুন্নত ছিল কিন্তু বর্তমানে সরকারি তৎপরতায় বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হয়েছে। সামুদ্রিক ঘুর্ণিঝড়ের হাত থেকে বাঁচার জন্য বড় বড় ফ্ল্যাড সেন্টার গড়ে উঠেছে। ফ্ল্যাড সেন্টারগুলো তৈরির জন্য ওয়ার্ল্ড ব্যাংক অর্থ সাহায্য করে। তাছাড়া সেন্ট্রাল ও রাজ্য সরকারের সাহায্যও আসে এই সেন্টারগুলো তৈরির জন্য। সোলার কানেকশনও ভর্তুকি দিয়ে দেওয়া হয় সরকারি ভাবে। এখন এখানকার ছেলেমেয়েরা লেখা পড়া খুব ভাল ভাবে করতে পারে। যোগাযোগ ব্যবস্থা সরকারি ভাবে ভাল করা হয়েছে। বিভিন্ন নদীপথে ব্রিজ বেঁধে দেওয়া হয়েছে যাতে এখানকার ছোট ছোট দ্বীপের লোকেরা অনায়াসে এখানে সেখানে যাতায়াত করতে পারে জীবন ও জীবিকার তাগিদে। তবুও এখানকার প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে মানুষের দুর্ভোগের শেষ নেই।
নদীগুলিতে অনেক ধরনের মাছ পাওয়া যায় যেগুলিকে স্থানীয় বাসিন্দারা যে নামে ডাকে সেগুলি হল শিমুলকাঁটা, গুড় জালি, গুলে মাছ, টাইগার ফিস ইত্যাদি। তবে সমুদ্রের খাঁড়ি অঞ্চল উঁচু করে বেঁধে সমুদ্রের নোনা জল ঢুকিয়ে চিংড়ি, নোনা কাঁকড়া, ভেটকি মাছের চাষ করে অনেকে জীবিকা নির্বাহ করে। যাই হোক এখন সকালের টিফিনটা ভালভাবে করতে হবে, সারারাত জেগে পেটটা খালি খালি লাগছে। লঞ্চের ছাদ থেকে নিচে নেমে ব্যাগ থেকে ব্রাশ আর পেস্ট বের করে লঞ্চ থেকে নেমে আসা একটি কাঠের সিঁড়ি বেয়ে নদীর পারে নেমে এলাম। এই প্রথম সুন্দরবনের মাটিতে পা রাখলাম। জল কাদার মধ্যে সাবধানে দাঁড়িয়ে বনের গভীরে চোখ রাখার চেষ্টা করলাম। আমার দেখাদেখি সুজয়, মিহির, হামিদও নিচে নদীর পারে নেমে এলো। বনের ভেতরে কি সুন্দর দৃশ্য, সারি সারি সুন্দরী গাছ দল বেঁধে দাঁড়িয়ে আছে। নদীর পারে দাঁড়িয়ে থাকা ম্যানগ্রোভ সারি সহস্র হাজার শেকড়ের সাহায্যে কাদা মাটি আঁকড়ে ধরে নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষার আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে শত শত বছর ধরে। তাদের দেখলে মনে হয় নদীর তীরে একদল রমণী অপেক্ষারত তাদের প্রিয়জনদের জন্যে, যারা হাজার বছর আগে নৌবহর নিয়ে বাণিজ্যে গিয়েছে, কিন্তু ফেরার নামগন্ধ নেই। আমি আর মিহির কিছুটা ভেতরে ঢুকে বনের সৌন্দর্য উপভোগ করতে লাগলাম কিন্তু বাধ সাধলো এক পশলা বৃষ্টি। তাড়াতাড়ি লঞ্চে ফিরে এলাম। টিফিন রেডি। গরম গরম ফুলকো লুচি, আলুর দম, শুকনো বুন্দিয়া আর জয়নগরের মোয়া। টিফিন সেরে আমরা সবাই ডেকের উপর জটলা করে বসে গল্প করছি এমন সময় আকাশ কালো করে মুষলধারে বৃষ্টি নামলো। লঞ্চ একটা জায়গায় স্থির ভাবে দাঁড় করানো হল, জায়গাটা ঠিক মাতলা ও বিদ্যাধরি নদীর সংযোগস্থল, দুপাশে ঘন জঙ্গল। মাঝখানে ইংরাজী অক্ষর ওয়াই (Y) আকৃতিতে নদী দুটি দু দিকে বাঁক নিয়েছে। নদীর মধ্যে লঞ্চে বৃষ্টি ভালই উপভোগ করছিলাম। ব্রজেশকাকু দুপুরে আমরা কি খাবো জিজ্ঞেস করতে এলেন। আমি বললাম বৃষ্টি হচ্ছে তাই আজ দুপুরে খিচুড়ি আর তার সঙ্গে মচমচে বেগুনি করুন।
ব্রজেশ কাকু মাথা নেড়ে ‘ঠিক আছে তাই করছি।’ বলে চলে গেলেন।
হামিদ বললো, ‘মোহনলালকাকুর ছেলের মৃত্যু রহস্যটা আমাকে খুব ভাবাচ্ছে, এই ঘন জঙ্গলে কি ভাবে তার মৃত্যু হল? বাঘে মারলো, না অন্য কিছু? বাঘে মারলে তাকে না খেয়ে পালাল? এটা কি করে সম্ভব! আর সাপের কামড়ে মৃত্যু হলেও তো দাগ থাকার কথা, কিন্তু ময়না তদন্তের রিপোর্ট অন্য কথা বলছে, হার্ট ফেল করে মৃত্যু। কিন্তু কি এমন সেদিন হয়েছিল যার জন্য তিতাস হার্ট ফেল করলো? আমাদের এটা বের করতেই হবে।’
মিহির— ‘আমার দৃঢ় বিশ্বাস ব্রজেশকাকু এ সম্পর্কে আমাদের দিশা নির্দেশ দিতে পারবে।’
সুজয়— ‘সুন্দরবনের নদীর স্রোতে দুলতে দুলতে রহস্যে ভেজা গল্পগুলো শুনে আমার মনে হচ্ছে যারা এখানে ঘুরতে এসে শুধু নদী আর বনের দৃশ্য দেখে ফিরে যায় তারা অনেক কিছু না জেনেই ফিরে যায়। সুন্দরবন শুধু ভ্রমণের জায়গা নয়, এখানকার প্রতি প্রান্তরে লুকিয়ে আছে ইতিহাসের ফিস ফিস, আর রহস্যের গোপন তথ্য। আমার মনে হয় আমরা যদি আমাদের ইন্দ্রিয়গুলোকে সচল রাখি তাহলে তিতাসের আকস্মিক মৃত্যুর কারণ উদ্ধার করতে পারবো।’
দুপুরের খাবারের জন্য ডাক পড়ল। আমরা সবাই খাবার টেবিলে বসলাম। খিচুড়ি আর তার সঙ্গে মচমচে বেগুনি ভাজা খুব মজা করে খেলাম। আকাশের মেঘ ততক্ষণে সরতে শুরু করেছে। শীতকালের মেঘ বর্ষার মেঘের মত নয়, তাই বৃষ্টির পরিমাণ খুব বেশি হয় না। তবে সমুদ্র উপকূল বলে বৃষ্টি বেশি বলেই মনে হয়।
একটা বড় বাংলাদেশী ধোঁয়াকল (স্থানীয় ভাষায় জাহাজকে সুন্দরবনের লোকেরা ধোঁয়াকল বলে) হর্ন মারতে মারতে সামনের দিকে আমাদের লঞ্চ থেকে হাফ কিলোমিটার দূরে আড়াআড়িভাবে এগিয়ে চলেছে। দেখতে ভারি সুন্দর লাগছে। এই জাহাজে করে তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের উড়ন্ত ছাই (FLY ASH), পেট্রোলিয়াম জাত দ্রব্য, পাট ও অন্যান্য জিনিস দুই দেশের মধ্যে আমদানি রপ্তানি হয়। বিকেলের দিকের আবহাওয়া বেশ ফুরফুরে, ঠান্ডা হাওয়া বইছে। ব্রজেশকাকু এসে বললেন চলুন বাবুরা গত কালের গল্পের শেষ অংশটা আপনাদের শুনিয়ে ফেলি। এই কথা শুনে আমরা ভীষণ খুশি হলাম। সবাই চেয়ার গুলো গোল করে সাজিয়ে বসে পড়লাম।
ব্রজেশকাকু শুরু করলেন—
‘‘রাজকুমার অলোঞ্জয়ের দৃষ্টি ওই হলুদ জিনিসটার দিকে, চোখের পলক পড়ছে না। ধনুকটা শক্ত করে চেপে ধরে আছে। নৌকার মধ্যে বাকি সঙ্গীসাথীরা স্থির ভাবে দাঁড়িয়ে আছে। একটি বজ্রপাতের শব্দে সমগ্র জঙ্গল কেঁপে উঠল আর তার তীব্র আলোর ছটায় দেখা গেল দূরে এক সুদীর্ঘ বাঘিনী তার শাবককে নিয়ে জল পান করতে মগ্ন। বাঘিনীর জল পানের শব্দ সমগ্র অঞ্চলকে মুখরিত করছে। শাবকটিও মায়ের দেখাদেখি জল পান করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। আর এই সুযোগকে অলোঞ্জয় কোনও মতেই হাতছাড়া করলো না, একটা তীর বাঘিনীর দিকে নিশানা করে চালিয়ে দিলো। তীর লক্ষ্যভ্রষ্ট হল না। গেঁথে গেলো বাঘিনীর গলায়। আকাশ বাতাস কেঁপে উঠল বাঘিনীর তীব্র গর্জনের শব্দে। অলোঞ্জয় তীর চালিয়ে যাচ্ছে। আর যত বার তীর গিয়ে বাঘিনীর গায়ে গেঁথে যাচ্ছে গর্জনের শব্দ আরও বেড়ে যাচ্ছে। কিন্তু বাঘিনী আর বেশিক্ষণ পেরে উঠলো না। বাঘিনীর গর্জন ধীরে ধীরে ব্যর্থ গোঙানিতে পরিণত হল। তীরবিদ্ধ বাঘিনীটি লুটিয়ে পড়ল তার শাবকের ঠিক পাশেই। ছোট্ট শাবক কিচ্ছু বুঝতে না পেরে তার মায়ের মৃতদেহটি ঘিরে পাক খেতে লাগল। সে কখনও তার মায়ের মুখ চাটে আবার কখনও তার ছোট্ট থাবা দিয়ে মায়ের বিশাল নিথর শরীরটা নাড়াবার চেষ্টা করে। শিশু শাবকটি তখনও মাতৃদুগ্ধ ছাড়েনি। সে মাতৃদুগ্ধ পানে ব্যস্ত। কিন্তু অলোঞ্জয়ের হাত থেকে সেই ব্যাঘ্র শাবকটিও রক্ষা পেলো না। একটা তীর গিয়ে বিদ্ধ করলো শাবকটিকে। মূহুর্তে সেও মায়ের কোলে লুটিয়ে পড়ল। নিমেষের মধ্যে প্রকৃতি চুপ হয়ে গেল। এই ঘটনায় সমগ্র বনানী যেন স্বজন হারানোর বেদনায় নীরব হয়ে গেল। এই অন্যায় সুন্দরবন মেনে নেবে কি? নদীর জলে পড়ে থাকা দুটি মৃতদেহ বুকে আগলে সুন্দরবনের নিঝুম প্রান্ত কি অপেক্ষা করতে লাগল প্রতিশোধের জন্যে?’’
এই ঘটনা শুনে আমাদের মন ভারাক্রান্ত হয়ে গেল।
মিহির বলল, ‘তারপর?’
ব্রজেশকাকু বলল— ‘আমরা এ গল্প আমাদের পূর্বপুরুষদের মুখে শুনে বড় হয়েছি। আমরা শুনেছি রাজকুমার অলোঞ্জয়কে তার সাম্রাজ্যের প্রজারা ‘আলোর দূত’ রূপে দেখতেন। তিনি যে সাক্ষাৎ মৃত্যুকে বধ করে প্রজাদের জীবনে আলো এনে দিয়েছেন। আর সেই ঘটনার পর থেকেই প্রজাদের মনে তিনি হয়ে উঠেছিলেন— ‘আলেয়া’ অর্থাৎ তাদের আলোর দূত। কিন্তু সুন্দরবনের গহন বন এই আলোর দূতকে মেনে নিল না। আলোর ঠিক পিছনেই যেমন গাঢ় অন্ধকার থাকে যা মৃত্যুর মতোই শীতল, ঠিক সেইরকমভাবে আলোর দূত রাজকুমারের জীবনে নেমে এল ঘোর কালো অন্ধকার। প্রতিশোধের নেশায় কে যেন অপেক্ষা করছিলো সেই পশ্চিমের ঘন জঙ্গল প্রান্তরে। রহস্যে ঘেরা সুন্দরবন আলো চায়না সে চায় আদিম শীতল আঁধার যা তার মায়াবী রূপের প্রকৃত শোভা।
অলোঞ্জয়ের মতো রাজার পাহারাদারিতে সুন্দরবনের মানুষ সাহস পেল। এখন জেলেরা নিশ্চিন্তে বনের গভীরে তাদের নৌকা নিয়ে মাছ ধরতে যেতে পারে। মধু সংগ্রহ’ অলোঞ্জয়। কিন্তু এই সুখ বেশি দিন টিকলো না। অচিরেই নেমে এলো ঘোর কালো অন্ধকার।... (ক্রমশ)
0 Comments