নতুন এক আরম্ভের জন্য আবীর মুখোপাধ্যায় কোনও কোনও সিনেমা থাকে, ছবি দেখে হল থেকে বের হয়ে কথা বলতে ইচ্ছে করে না। কোনও বই হয়, শেষ করে সিলিং ফ্যানের দিকে তাকিয়ে চুপ করে থাকি। সম্প্রতি বরানগরের রবীন্দ্রভবনে একটি নাটক দেখে এমন মনে হল— কথা বলিনি ঢের রাত অব্দি কারও সঙ্গে। নাটকের ভিতর ঘরের কথা ও উপকথন আমাকে চুপ করিয়ে দিয়েছিল! বরানগর রবীন্দ্রভবন কানায় কানায় উপচে পড়া ভিড় নয়, বরং কিছুটা শূন্য অডিটোরিয়ামে দেখা হল ‘আর এক আরম্ভের জন্য’। নিবেদনে : স্রোত নাট্য একাডেমী (বরানগর)। এ লেখার প্রথম পর্বেই সেই কারণে পরিচালক বিমান চক্রবর্তীকে ধন্যবাদ জানিয়ে রাখি এমন একটি…
বন্ধুদাদার চিঠি প্রিয় বন্ধুরা, হইহই করে এসে গেল শারদীয় ‘এখন শান্তিনিকেতন’। আর তারই হাত ধরে তোমাদের প্রিয় ‘আনন্দ পাঠশালা’—ও হাজির তার রকমারি লেখার পসরা নিয়ে। মুদ্রিত আকারে অবশ্যই। সেই বই তোমরা অবশ্যই সংগ্রহ করবে। তার সঙ্গে এই সাপ্তাহিক আনন্দের পাঠশালাতেও তোমাদের উপস্থিতি নিয়মিত চাই। তা না হলে আমরাই বা উৎসাহ পাব কি করে বলো? আমরা বড়রা তো চাই তোমাদের জন্য তোমাদের মনের মতো জিনিসপত্র নিয়ে আসতে। তোমাদের হাসিমুখ দেখার জন্য আমরা উদগ্রীব হয়ে থাকি। তোমরাও আমাদের সঙ্গ দাও৷ আজ ধারাবাহিক সুন্দরবনের গপ্পো তো রয়েছেই। সেই সঙ্গে রইল একটি মিষ্টি ছোটগল্প পুজো নি…
বন্ধুদাদার চিঠি প্রিয় বন্ধুরা, গতকাল আমাদের প্রাণপ্রিয় সাহিত্যিক শ্রী বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্মদিন গেল। তাঁর কথা ভাবতে বসলেই মনের ক্যানভাস জুড়ে ভেসে ওঠে নিশ্চিন্দিপুর, ভেসে ওঠে অপু দুর্গার মুখ, ভেসে ওঠে কাশবনের ফাঁকে ধোঁয়া ওঠা রেলইঞ্জিনের ছবি। এই সব দৃশ্য যতটা বিভূতিভূষণের, ঠিক ততটাই যেন সত্যজিত রায়ের। পথের পাঁচালী পড়েছিলাম প্রথমবার ক্লাস সিক্সে। তখনই দুর্গাদিদির চলে যাওয়া মানতে পারিনি। অঝোরে কেঁদেছিলাম। পরে চলচ্চিত্রে সেই বই দেখতে গিয়ে যে কতবার চোখ ঝাপসা করেছি তার ইয়ত্তা নেই। জানো, কাল বহুবার পড়া সেই পথের পাঁচালীরই কিশোর সংস্করণ আম আঁ…
বন্ধুদাদার চিঠি গতকাল শিক্ষক দিবস গেল বন্ধুরা। না না। আমি শিক্ষক দিবসের ইতিহাস আজ বলতে বসছি না। আমি জানি সে তোমরা জানো। আমি শুধু এবছর নিজের মনখারাপের এই দিনটাকে তোমাদের মনখারাপের সঙ্গে মিলিয়ে নিতেই প্রসঙ্গ তুলেছি। টিচার্স ডে বা শিক্ষক দিবস, আর স্কুলের দরজা বন্ধ, এ কি কখনও আমরা ভাবতে পেরেছিলাম বন্ধুরা? কোনওদিন না। কারণ এই দিনটা আমাদের স্কুলের সবচাইতে আনন্দের দিন। যখন পাঠভবনে শিক্ষকতা করি, একটা নতুন জিনিস দেখলাম যা আগে পূর্ণিয়ায় থাকতে দেখিনি। দেখলাম উঁচু ক্লাসের ছেলেমেয়েরা জুনিয়র ক্লাসে রীতিমতো মাস্টারমশাই হয়ে ক্লাস নিচ্ছে, পড়াচ্ছে। খুব ছোট ক্ল…
করোনার কুমোরটুলিতে শূন্য কাঠামো শুচিস্মিতা দাস দু র্গাপুজোর আর বাকি মাসদুয়েক। কুমোরটুলিতে ঢুকলেই এসময় চোখে পড়ে একটা চেনা ব্যস্ততা। প্রতিমার রঙ-ছাঁচ-সাজ, ব্যস্ত কারিগররাও। ভিড় থাকে প্রতিমার সাজের দোকানগুলিতেও। তবে এ বছর যেন ছবিটা একটু ফিকে। বনমালী সরকার স্ট্রিট দিয়ে ঢুকেই প্রথমেই চোখে পড়ে যে সাজের দোকানগুলি, খোলা নেই সবকটি। উত্তর কলকাতার কুমোরটুলি এলাকায় বসবাস কমবেশি ৩৫০টি কুমোর পরিবারের। সম্বৎসর কাজ চললেও সকলেই জানে কুমোরটুলির প্রত্যেকেই তাকিয়ে থাকেন আশ্বিনমাসে দুর্গাপুজোর দিকে। অন্যান্যবার পয়লা বৈশাখের দিন থেকেই তারা পেতে শুরু করেন ‘সুখবর…
বন্ধুদাদার চিঠি করোনাকালে এখনও তোমরা অবরুদ্ধ। এখনও তোমাদের ইস্কুল নেই। আছে শুধু নেটনির্ভর জীবনযাপন। একটা কথা ভাবলে তোমাদের একটু মজা পাওয়ার কথা। ভেবে দেখো, এই তো কয়েকমাস আগেই তোমার মায়ের বা বাবার অ্যান্ড্রয়েড ফোনটা হাতে নিয়ে একটু বেশি সময় ধরে নাড়াচাড়া করলেই সবাই রে রে করে বকে উঠে বলতেন, ‘এই ফোনটাই যত নষ্টের গোড়া। পড়াশোনা সব লাটে উঠে যাচ্ছে। তোমাদের হাতে এসব দেওয়াই ভুল।’ আর এখন সেই অ্যান্ড্রয়েড, সেই ইন্টারনেট, সেই মায়ের বা বাবার ফোনটাই তোমাদের হাতে তুলে দিয়ে তাঁরা বলছেন, ‘নাও ক্লাস করো। স্কুলের নোটস, হোমটাস্কগুলো টুকে নাও।’ অনলাইনে ক্লাস করছো …
মাস্ক বিপ্লব আবীর মুখোপাধ্যায় ১ ‘‘তোর জন্য সাদা কিনেছি। বৌমার লাল।’’ ‘‘লাল!’’ ‘‘ওমা! ও সাদা পড়বে নাকি— নতুন বউ! বাজারে এখন নানা রঙের পাওয়া যাচ্ছে। তোর বাবা প্রথমে অবশ্য সাদাই এনেছিল। আমি আপত্তি করাতে, আজ ওর জন্য পাল্টে লাল এনেছে— বর্ডারে সুতোর সেলাই— চমৎকার দেখতে। শোন, যেদিন আসবি, ওগুলো নিয়ে যাবি— তোর সাদা, বৌমার লাল।’’ টেলিফোন রেখে আকাশপাতাল ভাবছিল নিখিলেশ! ওর ইচ্ছে করছিল নিজের মাথাটা নিজেই দেওয়ালে ঠুঁকে দিতে। কিংবা বিল্ডিং থেকে ঝাঁপ দিতে! ভাবছিল লকডাউনে থাকতে থাকতে বাবা-মা-সবাই কি শেষে পাগল হয়ে যাচ্ছে একটু একটু করে! দু’ মাস ধরে ও বাড়ি যাওয়া …
সুন্দরী গ্রাম লেপচাখার পথে হোমাগ্নি ঘোষ ব ক্সা টাইগার রিজার্ভের মূল ফটকটা পেরোতেই শুরু হল ঘন শাল বনের সারি, তার সঙ্গে শুকনো পাতার ঝরে পড়ার নিঃশ্বাস, হটাৎ করে কানে এলো এক কর্কশ শব্দ, অটোর সামনের কাচ দিয়ে দেখলাম বাহারি পেখম তুলে উড়ে গেল একটা ময়ুর কিন্তু ওর কর্কশ শব্দটা মিশে গেল বনের মাধুর্যতার সঙ্গে। আমাদের গন্তব্য আলিপুরদুয়ার থেকে সান্তালাবারি দূরত্ব প্রায় ২৬ কিলোমিটার, রাস্তা মাঝে ভাগ হয়ে একটা চলে গেছে জয়ন্তীর পথে, আর আমরা তাকে পাশে রেখে লোয়ার বক্সা টাইগার রিজার্ভের সীমা বরাবর এগোতে লাগলাম পথে পড়তে লাগল রেস্ট হাউস, ছোট ছোট কাঠের বাড়ি তার মাঝে …
বন্ধুদাদার চিঠি গতকাল স্বাধীনতা দিবস গেল বন্ধুরা। আর এই প্রথম এই বিশেষ দিনটিতে তোমাদের জন্য আমার নতুন করে মনখারাপ করল। এই বিশেষ দিনে প্রতিটি স্কুলে স্কুলে তোমাদের উদ্যম, উৎসাহ আর আনন্দ থাকে চোখে পড়ার মতো। তোমাদের পতাকা উত্তোলন, তোমাদের প্যারেড, মিষ্টি খাওয়া... সব... সব কিছু ভরিয়ে রাখে আমাদের। আমরা তোমাদের চোখ দিয়ে দেখতে পাই আগামী পৃথিবীকে। কিন্তু এ বছর? এ বছর শিশুশূন্য বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে সারা দেশের মাস্টারমশাই, দিদিমনিরা প্রথা অনুযায়ী পতাকা উত্তোলন করলেন। আমিও এমন একটি বিদ্যালয়ে অংশ নিতে গেলাম আর নতুন করে তোমাদের জন্য মনখারাপ নিয়ে ফিরে এলাম বা…
পাঠক্রম সুমন গুণ ঈষৎ পরাস্ত তুমি, এই মর্মে প্রচারিত, আর খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখে টের পাচ্ছি কোথাও আবার সহাস্য বাতাসা ছুঁড়ে সম্ভবত সময় কাটাও। মধ্যযুগ শেষ হলে ছবি তুলে বন্ধুকে পাঠাও। আমি, তবু, সুযোগসন্ধানী ছাত্রের মুগ্ধতা নিয়ে তোমাকে নক্ষত্র বলে মানি। মিছিলে ফেরাই ভাল আবীর মুখোপাধ্যায় তিন দফা ছাঁটাইয়ের পর লোক কম, দূরে, বহুদূরে এক-আধজন। সেন্ট্রাল এসির দৌলতে ফাঁকা ফাঁকা নিউজ ডেস্ক যেন মর্গ। এরইমধ্যে এজেন্সির পাঠানো গতানুগতিক করোনা-রাফাল-চিন, নয়া শিক্ষানীতি, বচ্চনসাহেবের ট্যুইট! আপাতত এই লাশকাটা ঘরে…, এর বাইরে তেমন কোনও খবর নেই! হঠাৎ মেঘ দেখলাম—…
যারা কখনও কবিতা লিখতো মৈনাক বিশ্বাস কী গভীর অন্ধকার! ‘‘The horror! The horror!’’ না! এ সেই অন্ধকার নয়! এখানে কুর্টজ নেই। এখানে আছে একদল ছেলে। যারা বাসস্ট্যাণ্ডে, স্টেশনে বসে চা খেত, আড্ডা দিত। ঘরের চেয়ে বাইরে কাটাতো সময় বেশি। আত্মীয় স্বজনের থেকে দূরে থাকত ভয়ে। শুধু একটি প্রশ্নের ভয়ে: “কী করছ এখন?” ইংরেজী ‘quarantine’ এর বাংলা অর্থ গুগল ট্রান্সলেটর বলে ‘পৃথকীকরণ’ (এর অন্য কোনও প্রতিশব্দ দিল না কেন্ জানি না)। আর ‘exile’ হল ‘নির্বাসন’। সেই কোন কাল থেকে মূলত রাজনৈতিক কারণেই কাউকে নির্বাসিত করা হত। আর সেই নির্বাসন কখনও কখনও ডেকে আনতো মৃত্যু। আবার…
বন্ধুদাদার চিঠি গত পরশু ছিল বাইশে শ্রাবণ। কবিগুরুর চলে যাওয়ার দিন। কিন্তু শান্তিনিকেতনে সেই দিনটিতে নতুন প্রাণের আহ্বান জানাতে রোপণ করা হয় নতুন বৃক্ষের চারা। সেই অনুষ্ঠান ঘিরে যে উৎসব, যে নান্দনিকতা, তা বিশ্বের কাছে একটি দৃষ্টান্ত। আমরা প্রতি বছর হৈ হৈ করে এই ‘বৃক্ষরোপণ’ উৎসব পালন করে এসেছি। এই অভিনব উৎসবের আয়োজনকে অনুসরণ করে বিশ্বভারতী ছাড়াও আরও বহু শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানে বৃক্ষরোপণের উৎসব পালিত হয়। এ বছর আমরা দুঃসময়ের মাঝে বাস করছি। এই আতঙ্ক আর ভয়ের আবহে বৃক্ষরোপণ উৎসব কোথাও তাই সে ভাবে পালন করা যায়নি। কোথাও নিয়মরক্ষায় কয়েকজন মানুষ …
জলের উপত্যকা অমৃতা ভট্টাচার্য ডি মাপুর ছাড়িয়ে চলেছি। আমাদের গন্তব্য কোহিমা। ধুলো ওড়ানো সড়ক আর বিচ্ছিন্ন কিছু জনপদ পেরিয়ে পাহাড়ি রাস্তায় এসে পড়লাম। ওই নীচে দেখা যাচ্ছে সবুজ ধানের ক্ষেত। ধাপে ধাপে চাষাবাদ আর শান্ত নির্জন ঘরবসতি। নাগাল্যাণ্ডের মানুষ ইতিহাস আর রাজনীতির গন্ধ মেখেছে বারবার। বিচ্ছিন্নতার গল্প শুনতে শুনতে ওরা মাটি আর মানুষকেই আরও নিবিড় করে আকড়ে ধরেছে তাই। কোহিমার বাজারে ঘুরে বেড়ালে শাক, ফল, লতা, গুল্ম আর প্রাণীজ খাদ্য খাবারের পসরা দেখে মুগ্ধ হতে হয়। ওই নীচু রাস্তা ধরে উঠে আসছে যে মেয়েটি ওর গোলাপি গালে ঋজু, কঠিন এক সংগ্রামী জীবনের গন্…
দমবন্ধ হয়ে আসছে, মুক্তি চাই মালবিকা সেনগুপ্ত ১৩ মার্চ স্কুলের সভা। তখনও মনে হয় ওই সভাকক্ষের কেউই জানতেন না আমাদের সকলের ভবিষ্যত কোন্ অন্ধকারের পথে হাঁটতে শুরু করেছে। তারপরের দিন রবিবার। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশমতো দেশজুড়ে জনতা কার্ফু। সবাই ঘরে থাকবেন। তাহলে ভাইরাসের চেন ভেঙে যাবে। এবং আমরা ভাইরাসকে কব্জা করতে পারব। আমরা সবাই তাই করলাম। ভেবেছিলাম—, দেখো, আমেরিকা, ইতালি, স্পেন তোমরা যা পারলে না, আমরা ভারতীয়রা কেমন সহজেই করোনাকে জব্দ করলাম! নিজেদের জন্য বেশ গর্ব বোধ করছিলাম। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশের বিজ্ঞানসম্মত যুক্তি খুঁজে বের করেছিলাম। কিন্তু…
সংযোগ