বেঁচে থাকার মতোই বেপরোয়া তাঁর কবিতা সুমন গুণ বাংলা কবিতায় নির্মলেন্দু গুণের একটি স্পষ্ট আর প্রকাশ্য অবস্থান আছে। সহজ কথা সরাসরি বলার মধ্যে অনেক ঝুঁকি থাকে। সারা পৃথিবীতেই সহজে লক্ষ্যভেদী বহু কবিতা লেখা হয়েছে, বাংলাতেও সুভাষ মুখোপাধ্যায়, অরুণকুমার সরকার থেকে শুরু করে এই সময় পর্যন্ত এমন অনেক কবির লেখাই আমরা পড়েছি, কৌণিক কোনও ধরন না রেখেও যাঁরা সফল হতে পেরেছেন। নির্মলেন্দু গুণ এই ঘরানার, সম্ভবত, জনপ্রিয়তম কবি। 'সুন্দর এসে থেমে আছে তার নাসিকার শেষ প্রান্তে নাকপাশা যেন সোনা দিয়ে মোড়া ঘুঘু চোখ ঘুমে বুঁদ, অথবা শীতের পিঁপড়ের মুখে আলতা মাখানো খুদ।…
প্রতীক্ষায় জীবন বাজি রাখতে পারি সুশোভন অধিকারী আষাঢ়ের প্রথম দিন। অফিসিয়ালি বর্ষার শুরু হল বুঝি। সেই কবে কালিদাসের যুগে বিরহী যক্ষ তার প্রিয়ের উদ্দেশে মেঘকে দূত করে খবর পাঠিয়েছিল। সেই আর্তি বোধহয় এখনও আকাশে ভেসে বেড়ায়। তবে আজ তার কাজ ফুরিয়েছে। বর্ষার মেঘ সরিয়ে জায়গা নিয়েছিল মরাল কপোতের মতো পাখি-পাখালির দল, তাদেরও রোমান্টিক পর্ব পেরিয়ে এখন ডাকবিভাগ ছাড়িয়ে কুরিয়ার সার্ভিস। আজ তাও নয়, ই-মেইল, মেসেজ, হোয়াটস-আপে বার্তার ছড়াছড়ি। এখন আর অপেক্ষা করতে হয় না আমাদের, খবর পাঠানোর পরেই ঠিন করে ঘণ্টি বাজিয়ে উত্তর এসে পড়ে। বড় দ্রুত, বড় চটজলদি। প্রাপকের সেই …
মণিকুন্তলা রায়ের দুটি কবিতা অস্পৃশ্য ছুঁৎমার্গের শেয়ার বাজারে ধস নামুক মর্মান্তিক রোগ বেশি দুঃসহ না অস্পৃশ্যতা সে ইতিহাস বলবে- কিন্তু, এ মৃত্যু অশোভনীয়! মৃত্যু আসুক, কিন্তু প্রিয়জন নাগালে থাকুক- নিমীলিত চোখ চুমে যাক এলোচুলে আঁকা কপাল বুক আঁকড়ে শেষ কাঁদা কেঁদে নিক পেটের সন্তান আলোকবর্ষ দূরে সরে সরে না গিয়ে প্রজাপতির পাতলা ডানার মতো নিরাপত্তা বলয়ের এপার থেকেই একবার আঁকড়ে ধরুক সীমন্ত সীমন্তিনীকে! এক বুক তৃষ্ণা নিয়ে শেষ ছুঁয়ে দেখার আকুতি আঁধি শেষে, আঁখি জলে মিটুক! ঢক্কানিনাদের আড়ালে ব্যাধি অস্পৃশ্যতার জিয়ন কাঠি হওয়ার বিভীষিকা আনলে যে ইতিহাস ডুক…
জেলের চিঠি, কবির ক্ষত অভিমণ্যু পাঠক বাদশাহ্ বাহাদুর শাহ্ জাফর তাঁর জীবন সায়াহ্নে স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে জানিয়েছিলেন, জীবনে বাড়তি যে চারদিন ভিক্ষা করতে চেয়ে নিয়েছিলেন, দু’দিন হারিয়ে গেছিল আশায়-আশায়, আর বাকিটা অপেক্ষায়। আরও আশা আরও অপেক্ষাকে ডেকে আনে, প্রশ্রয় দেয়। যেখানে কাজ খুব বাঁধাধরা, নেই বললেই চলে, সেখানে সময় পিছলে যায়, হাতের আঙুলের ফাঁক গলে, চোখের পাতা ভারী হয়ে আসে। জেলের ভেতরের জীবনটা খানিকটা তেমনই। এমন করেই তাঁর জেলের স্মৃতিকথার বয়ানের ডালি সাজিয়েছেন, ভারভারা রাও তাঁর, ‘Captive Imagination: Letters from Prison’ বইয়ে। অন্যের মুখের ঝাল ন…
চিলাপাতায় দিনযাপন সুকন্যা দত্ত ‘‘গহন অরণ্যে আর বারবার একা যেতে সাধ হয় না- তবু যেতে হয় বারবার ফিরে যেতে হয়”.... অরণ্যের হাতছানি পেয়ে মন বাঁধা মানতে নারাজ। সবুজের আদিমতা, গহীন অরণ্যের রহস্যময়তা, বুনো ফুলের গন্ধ, নির্জনতা ভেদী পাখির কলতান প্রকৃতির কোলে বৈচিত্র্যের পটচিত্র রচনা করে। জঙ্গলের কাছে গেলে আমার হারিয়ে যেতে ইচ্ছে হয়, বার বার। অরণ্য যত গভীর হয়, ততই তার রহস্যময়তা বাড়ে। নিবিড় অরণ্যে সূর্যের আলো অনেক কষ্টে পাতার চাঁদোয়া সরিয়ে মাটিকে ছুঁতে আসে, নতজানু হয় মাটির কাছে। জঙ্গলের শরীরে হাঁটতে হাঁটতেই শোনা যায় পাতার মর্মর ধ্বনি, লেখা হয় আরণ্যিক নোট…
সংযোগ