বইপাড়া : কী পড়ছি, কেন পড়ছি

পড়তে পড়তে মগজে কারফিউ। নন্দিত-নিন্দিত নানা কথার দু’মলাট নিয়ে কী পড়ছি, কেন পড়ছি। পর্ব ১ 

সমীর এন্ড ইওনাটান

দীয়া বন্দ্যোপাধ্যায়

ড্যানিয়েলা কারমি’র ‘সমীর এন্ড ইওনাটান’ হিব্রু ভাষায় প্রকাশিত হয় ১৯৯৭-এ। অনুবাদ হয়ে প্রকাশ পায় ২০০২ সালে। সমীর প্যালেস্টাইনবাসী। বাবা চুল কাটেন, মা এক দোকানের কর্মচারী। ইসরাইল-অধিকৃত প্যালেস্টাইনে তারা অর্থনৈতিক অভাবের মধ্যে দিয়ে বেঁচে থাকে। গ্রেফতার হওয়ার ভয়ে অনেকেই বাড়ি থেকে বের হওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। গুলি খেয়ে মারা যায় সমীরের ৫ বছর বয়সী ভাই। ইসরাইলি সৈন্য ভয়াবহ, অন্তত সমীর সেরকমই জানে। বেপরোয়া খুনে বিশ্বাসী তারা, অন্তত সমীর সেটাই বোঝে। কারফিউ’র সময়ে ধরা পড়লে আর কেউ কোনওদিন খুঁজে পাবে না, অন্তত সমীর সেটাই শুনেছে। দুর্ঘটনায় পা ভেঙে যায় সমীরের। 
দেখা যায় কোনও হাসপাতাল তার চিকিৎসা করতে সক্ষম হয়নি। বিদেশী ডাক্তারের আশায় সমীরের মা তাকে ইসরাইলের একটি হাসপাতালে রেখে আসতে বাধ্য হন। ইসরাইলি একদল বাচ্চাদের সঙ্গে থেকে, সমীর কি খুব হিংসের সম্মুখীন হচ্ছে? জাহি’র সৈন্য দাদা কি ভয়ানক? সে চকলেট নিয়ে এলে সমীর কি ভাগ পায়? যুদ্ধ থেকে দূরে, বড়ো মানুষের “বলে দেওয়া” থেকে দূরে, “চিলড্রেন’স ওয়ার্ল্ডের” ইসরাইলি বাচ্চারা কি সমীরকে শত্রুপক্ষ হিসেবে দেখে? ইওনাটান কি তাকে জর্জরিত পৃথিবী থেকে মঙ্গলগ্রহে নিয়ে যেতে সক্ষম হয়?
কারমি’র উপন্যাস আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিতে পারে যুদ্ধের পেছনের চেহারা। যে চেহারায় কোনও রাজনীতি নেই, শুধু খেলা, মেডিক্যাল টেস্ট আর খাওয়া-দাওয়া। সমীর নতুন কিছু বন্ধুদের স্মৃতি নিয়ে দেশে ফেরত যায়। কিন্তু ঠিক কীভাবে প্যালেস্টাইন থেকে আসা একটি বাচ্চাকে ইসরাইলের কিছু বাচ্চা বন্ধু হিসেবে মেনে নেয় এবং সমীর কি করে নিজের ভয় কাটিয়ে ওঠে ইসরাইলিদের প্রতি সেটাই এই উপন্যাসের বিশেষত্ব। “কে ঠিক জানা নেই। যুদ্ধক্ষেত্রে সবাই ঠিক”— এমন বাক্যে যদি সহমত হন, তাহলে পড়ে ফেলতে পারেন ‘সমীর এন্ড ইওনাটান।’

Post a Comment

0 Comments