মণিকুন্তলা রায়ের দুটি কবিতা অস্পৃশ্য ছুঁৎমার্গের শেয়ার বাজারে ধস নামুক মর্মান্তিক রোগ বেশি দুঃসহ না অস্পৃশ্যতা সে ইতিহাস বলবে- কিন্তু, এ মৃত্যু অশোভনীয়! মৃত্যু আসুক, কিন্তু প্রিয়জন নাগালে থাকুক- নিমীলিত চোখ চুমে যাক এলোচুলে আঁকা কপাল বুক আঁকড়ে শেষ কাঁদা কেঁদে নিক পেটের সন্তান আলোকবর্ষ দূরে সরে সরে না গিয়ে প্রজাপতির পাতলা ডানার মতো নিরাপত্তা বলয়ের এপার থেকেই একবার আঁকড়ে ধরুক সীমন্ত সীমন্তিনীকে! এক বুক তৃষ্ণা নিয়ে শেষ ছুঁয়ে দেখার আকুতি আঁধি শেষে, আঁখি জলে মিটুক! ঢক্কানিনাদের আড়ালে ব্যাধি অস্পৃশ্যতার জিয়ন কাঠি হওয়ার বিভীষিকা আনলে যে ইতিহাস ডুক…
উৎসব নীপবীথি ভৌমিক সমস্ত শোক মিশে গিয়ে সুর হয়ে ওঠে আবার। এই যে ক্রমশ বেহালা বাজিয়ে চলেছে লোকটা এক নাগাড়ে, আর বসন্ত ঝরে ঝরে পড়ছে ওর আঙুল থেকে! তুমি কি তবে ভাবো, কোনো অভিনয় এসে ঘিরে রেখেছে তার মৃত মন? বেহালা বেজে যায়। শোক উথলে পড়ে ওর থালা ভর্তি জীবন জুড়ে, যন্ত্র আর যন্ত্রীর মাঝেও যে কিছু কিছু উৎসব জেগে থাকে সে আমরা জানি ক’জনেই বা! রাধামাধব আপনাকেই বলছি পারমিতা ভট্টাচার্য রাধামাধব, মনে আছে? আমাকে ক্যারামের ঘুঁটির মতো ঘুরিয়ে চাল দিতেন আপনার আদিগন্ত মরাঘাসের বোর্ডে আমি গড়াগড়ি খেতাম কখনও আবার ল…
পাঠক্রম সুমন গুণ ঈষৎ পরাস্ত তুমি, এই মর্মে প্রচারিত, আর খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখে টের পাচ্ছি কোথাও আবার সহাস্য বাতাসা ছুঁড়ে সম্ভবত সময় কাটাও। মধ্যযুগ শেষ হলে ছবি তুলে বন্ধুকে পাঠাও। আমি, তবু, সুযোগসন্ধানী ছাত্রের মুগ্ধতা নিয়ে তোমাকে নক্ষত্র বলে মানি। মিছিলে ফেরাই ভাল আবীর মুখোপাধ্যায় তিন দফা ছাঁটাইয়ের পর লোক কম, দূরে, বহুদূরে এক-আধজন। সেন্ট্রাল এসির দৌলতে ফাঁকা ফাঁকা নিউজ ডেস্ক যেন মর্গ। এরইমধ্যে এজেন্সির পাঠানো গতানুগতিক করোনা-রাফাল-চিন, নয়া শিক্ষানীতি, বচ্চনসাহেবের ট্যুইট! আপাতত এই লাশকাটা ঘরে…, এর বাইরে তেমন কোনও খবর নেই! হঠাৎ মেঘ দেখলাম—…
ঠোঁট সুমন ঘোষ সহজ, আরও সহজ করে বলো কঠিন— সে তো জলের ধারে থাকে বুকের ভিতর নৌকা ছলোছলো বিপদ বহন, বলছি তুলনাকে শ্রীমুখ থেকে ওষ্ঠ তুলে সারা গোষ্ঠ ছেড়ে গহন বনে ভাসা বনের ভিতর নুনের পলেস্তারা সহজ, আরও সহজ সর্বনাশা নিম্নে ঝোরা অধীর শামিয়ানা অধীনে নেই, এমন দুটি টিলা শুনেছে কে ঠোঁটের মৃদু মানা আলগা হয়ে এসেছে সব খিলান সহজ, আরও সহজ করে ডাকো নৌকাখানি বিপদ বহন করে জিহ্বা খেয়ে ফেলেছে সব সাঁকো জলের তলায় আমরা পরস্পরে কঠিন খুলে সহজ দিয়ে বাঁধি এসব ছিল ঠোঁটের ঘটনাদি! আমজাদ আলী আহা খান অতনু বর্মন আমার কোনও রাগ নেই, রাগিনী…
কোয়ারান্টাইন মীরা মুখোপাধ্যায় জাহাজ দাঁড়িয়ে আছে দূরে দেখা যাচ্ছে তার নীল বিশাল মাস্তুল ঢেউ তাকে দোলাচ্ছে, ভোলাচ্ছে শোনাচ্ছে জাহাজী কেচ্ছাও এই তো আর কটা দিন, তারপরই বন্দর এত কাছে তবু এত দূর এখানে যে তার বাড়ি... পপলার গাছের নীচে বৌ বাচ্চা চল্লিশ চাঁদের পর নোঙর তোলার কথা ফেরা হবে! ঢেউ কোনও কথা বলছে না সে যে একলা পাগল খুঁজে বেড়ায় সায়ন্তী দাস আমাদের এই দাঁড়ি, কমাসর্বস্ব আর কপি কাটাকুটিজীবন ছেড়ে এক নিটোল সূর্যাস্ত দিলাম তোমায়।... ভ্রম কিছু ধরব না আর, বর্তমানে সুর মায়াজাল— আর তুমিই বিভ্রম। শুধু কবিতার জন্য…
বিষাদসিন্ধু স্বপন বন্দ্যোপাধ্যায় দহনের বিষাদ ঢালে, ঢালে বিষ বাষ্পের ফেনা এই চোখ, এই মূর্তি, ঊষাকালে আমার অচেনা কিম্ভুত সময় যেন, চারপাশে দেখি তার ছায়া লোল জিহ্বা মেলে ধরে, সর্বগ্রাসী ভ্রান্তিময় মায়া... কোথায় আলোর চিহ্ন, কোথা মুক্তি, শব্দময় প্রেম আমার হারিয়ে ফেলা সব স্মৃতি, তোমায় দিলেম রেখে দাও চক্ষুধারে, রাখো শিরে, আধেক কপালে এমন ছিন্ন মালা কেন যে তুমি, আমাই পরালে? হে দেবী, বিষাদসিন্ধু, এইভাবে ডাকো নাকো আর পালাবার পথ দাও, ডেকো নাকো অন্তরে আবার সন্মুখে অনেক যুদ্ধ, বহু পথ পেরোনোর ডাক ভেঙে দিয়ে মনোরথ, আর তুমি, করো …
রূপম ভাল আছে সুজিত দাস মান্যবরেষু, এম এ পাশ, বাবা নেই। কিন্তু চাকরি চাই না আমার। পিওনের কাজ আমাকে দিয়ে হবে না। ক্যাডারের চাকরিও। প্রেমিকারা নদীর এপারেই আছে। এপারে এখনও মুথাঘাস। ঘাসের ডগায় মুনিয়া পাখির দোলনা। তমাল তরুমূলে ফোন ঘোরাবার মতো কেউ নেই মামা, কাকা, জ্যাঠা এমনকী বাতাস সকলেরই স্মার্টফোন এখন। মানুষ জানার আগে দক্ষিণের বাতাস জেনে যায় আমার কবিতার শিরোনাম। দক্ষিণে কোনও অরণ্য নেই। দক্ষিণে শুধুই পটচিত্র। আমার কাছিমের প্রাণ, হুজুর। পারিজাত কাননের পাসপোর্ট নেই। নবম তলের লিফটে জায়গা হয়নি। তবু রাস্তা থেকে তুলে এনে খেতে পরতে দিয়…
পুনরুত্থান পৌষালী চক্রবর্তী প্রেমিকের মৃত্যুগন্ধী দেহে চন্দন ছিটে দিই নিকিয়ে তুলি তার অলিন্দ, নিলয়, বাতায়ন মধুপর্কের পাত্রে। পুনরুত্থান ঘটে যায়; আবার আকাঙ্ক্ষা করি ডিঙ্গাখানি নিয়ে যাক সমুদ্রগর্ভে। মৎস্যকন্যা আমি এক উঠে বসি সুপ্রাচীন কষ্টিপাথরের গাত্রে। নীল জঙ্ঘা, বৃষস্কন্ধ, বাঁশিখানি পারিজাত কাঠ এমন কৃষ্ণরূপে আমি মরি! প্রাণনাথ! পাথর সচল হয়, উবু এক কচ্ছপের পীঠে আমার যে সাধ যায় হ্লাদিনী রাধিকার তুমিও বুঝেছ সার কতখানি ব্রহ্মান্ড বিস্তার। তোমার কোলের নীচে মুগ্ধবোধ শিক্ষা করি গরল অমিয়া ভেল, কষা স্বাদ মিঠে। লগ্ন আসন্নপ্রায়, ম…
কেমন আছে পৃথিবী? এই সময়—আমাদের নিত্য? রেখা ও লেখায় ধরা দিল করোনা ক্লান্ত বিশ্ব সংসার। প্রথিতযশা শিল্পী যোগেন চৌধুরীর সদ্য সদ্য আঁকার সঙ্গে পাঠকদের জন্য রইল দেবাশিস চন্দ, মৌমন মিত্র এবং অসিকার রহমানের কবিতা। শিল্পী : যোগেন চৌধুরী লজ্জা দিবেন না দেবাশিস চন্দ না, করোনা নিয়া কোনও লেখা চাহিয়া লজ্জা দিবেন না; করোনাকরুণ কবিতা বা নিদেন পক্ষে একটা গদ্যের চিকন মালপোয়া— কিছুই দিতে পারছি না, মাফ করবেন দেওয়া সম্ভব নয় করোনা–ললিপপ, ওফ্, কেন বুঝতে পারছেন না এখন মেকি মলম মিশিয়ে মিশিয়ে পাতার পর পাতায় অক্ষর গড়িয়ে তাসের ঘর তৈরি করার সময় নয়, …
শহর আরও ১০০ ছুঁলে রূপক বর্ধন রয় ২১২০, রাসবিহারী বারান্দার গ্রিলে একরাশ ঝুল জমে আছে সেই কবে, অভিমানী গাড়ি বারান্দা ঝরে গেছে। ২১২০, গোলপার্ক; একটা উড়ন্ত ট্যাক্সি নেমে আসে, মানুষ সরে; না ধোয়া, না শব্দ ওড়ে। ২১২০, এক্সাইড; দুটো লোক গড়াগড়ি যায়, গাড়ি যায় না। অন্ধকার উড়ালপুল-ছাদ, ওরা আকাশ পায় না! ক্ষিদে আসে রাতে, ভোর ভোর কাঁপে শীতঘুম হাইটেক পাঁচতারা ঘরে, ভালবাসা শোকে নিঝ্ঝুম। ১০০ বছর অল্প সময়, পালটে গেছে গল্পকথা; শহর নাকি প্রেমিক ছিল? নাকি এখন কল্পনা তা? শহরের না একা থাকার ভাবনাটাতেই কান্না পেত? বান্ধবীরা শুনলে বলে, ‘ছাড়তো, বেকার…
মোচন প্রগতি বৈরাগী আমাদের রাত্রিবাস ইদানিং অকলঙ্ক একাদশী মতে শ্যামল ও সোনামাখা, দুটি পিঠ থেমে থাকা ট্রেন মাঝখানে গিরিখাত, আন্ধার আন্ধার... ডুবে যায় প্রেমমুখ ব্যথামুখ, উদযাপনের শেষে চুড়া ছুঁয়ে নেমে আসা ঘামে ভেজা টপটপ মুখ সকল তীর্থগ্রাম, চিরায়ত যুদ্ধপথ ভ্রমণের পরে ধুলোট সঙ্গকাল সরিয়ে রেখেছ ফিরতি ডাকের মুখে ঢেকে দিচ্ছ আলস্য দেওয়াল শুধু তুমি দেখছ না জ্যোৎস্না খোলস ভেঙে নেমে এল বুকের উপরে ঋতুচক্রে ধুয়ে যাচ্ছে ধুলোদের দাগ সবুজ ডাঙাটি জুড়ে প্রাক-মধুকাল, গভীরা সন্ধিফুল, স্ফটিক লাবণ্যফল দুইসারি পাতাদের মাঝে ঝিন…
অন্য দ্যুতক্রীড়া গৌতম ভরদ্বাজ দীর্ঘ সময় ধরে চলা খেলা শেষ হল। ঈশ্বরের হার প্রায় নিশ্চিত হলে দর্শকরা সনৈ সনৈ উঠে আগেই চলে গেছে। দ্যুতক্রীড়া মন্ডপ ফাঁকা। পরাজিত ঈশ্বর মাথা নীচু করে মণ্ডপে আসা যাওয়ার মূল ফটকটি দিয়ে আরও ফাঁকা তাঁর সাধের ভূখন্ডের উত্তর মেরুর দিকে চলে গেলেন। পৃথিবীর অগণিত বছরের ইতিহাসে যেন প্রথম পারদের মতন ভারী আঁধার নেমে এল। শয়তান বিজয়ী— ঘোষণা করার কেউ নেই। বত্রিশ পাটি সাদা দাঁত রাগতঃ …
কথা দিতে পারছি না শিলাজিৎ একটা মাছ মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছে, এমন ভাবে আটকেছে বঁড়শিটা, গাল গেছে ফুটো হয়ে, পাড়ে বসে গুটিকয় লোক, দু-একটা ফুল ফুটে আছে, জল খুব শান্ত সরল, পাখিদের মিঠে খুনসুটি। এদিকে দাঁড়িয়ে জমিদার ওদিকে আকাশ ঘন নীল, যেদিকে তাকাবে শুধু রোদ মেঘেদের ইশকুল ছুটি, মাছটা তখনও লড়ে যাচ্ছে ছলাৎ ছলাৎ ছিলিৎ ছিলিৎ ছিটকে আসছে জল আবার পরে যাচ্ছে পুকুরের ভাঁজে মাছটা মরতে পারে বাঁচতেও পারে এক ঝাঁক পায়রা উড়ে যেতে পারে বসে পড়তে পারে দর্জিপাড়ার সেন বাড়ির প্রশস্ত ছাতের ব্যোম-এ, কিন্তু মাইরি মালিক কথা দিতে পারছি না— এ পাঁচিলের একটা ইঁট কবিতা হব…
আপেল ২ । মাসুদ পথিক অথবা কিংবা আর জলে ভেসে ভেসে তথাপি ভেসে না-ভেসে কেবলি ভেসে বেড়ায় রক্তমাংস ব-দ্বীপের চারধারে আপেল ফেরে না সমুদ্রের তীরে ফিরে আসে না তবুও কোনো ডাকাত দাঁড়িয়ে থাকে রাত জেগে কুড়িয়ে বা ছিনিয়ে নেবে আপেল সমুদ্রের বুক থেকে পাহারায় থাকা সমাজপুলিশ ট্যাবুর শকুন চোখ তারাও গোপনে গহীনে করে মনোপলি বিচরণ কবে কোনকালে কোন বৃক্ষ থেকে এই আপেল গড়িয়ে না-গড়িয়ে পতিত হয় জৈব প্রকারে কতো কতো লোকচক্ষু আকারে বিকারে তার চারধারে তাকায় বিস্ফারিত লোভে নূহের নৌকা ভেসে যায় আপেলের পাশ ঘেঁষে কালা'র চাতুর্য লোকমুখে ছড়ালো রসায়ন আর…
সংযোগ