কবিতা

কেমন আছে পৃথিবী? এই সময়—আমাদের নিত্য? রেখা ও লেখায় ধরা দিল করোনা ক্লান্ত বিশ্ব সংসার। প্রথিতযশা শিল্পী যোগেন চৌধুরীর সদ্য সদ্য আঁকার সঙ্গে পাঠকদের জন্য রইল দেবাশিস চন্দ, মৌমন মিত্র এবং অসিকার রহমানের কবিতা।


শিল্পী : যোগেন চৌধুরী

লজ্জা দিবেন না 

দেবাশিস চন্দ 


না, করোনা নিয়া কোনও লেখা চাহিয়া লজ্জা দিবেন না;
করোনাকরুণ কবিতা বা নিদেন পক্ষে একটা গদ্যের চিকন মালপোয়া—
কিছুই দিতে পারছি না, মাফ করবেন দেওয়া সম্ভব নয় করোনা–ললিপপ,
ওফ্‌, কেন বুঝতে পারছেন না এখন মেকি মলম মিশিয়ে মিশিয়ে
পাতার পর পাতায় অক্ষর গড়িয়ে তাসের ঘর তৈরি করার সময় নয়,
সময় নয় শব্দে শব্দে অবৈধ সঙ্গমের, অশ্লীল শীৎকারে ঝরা পাতাকে
মাটিতে কবর দেওয়া, এখন রঙিন জলে ক্ষত ঢাকার সময়ও নয়,
পিচ্ছিল কালো কাদা প্যাচ কষছে কোথায় কখন কোন পোস্টে
গোল দেবে, আর নেচে উঠবেন অন্ধকারের কন্টক সেনাপতি,
কী বললেন? অমুকে কবিতা লিখছে, তমুকে ধারাবাহিক,
বানাচ্ছে সিনেমা, ফেসবুকে হেড়ে গলায় গান, দিগন্ত থেকে দিগন্তে
উড়ছে খুশির আঁচল, মোমের মতো নরম গালের চুম্বিত আহ্লাদ,
ভুল ছন্দে নেচে ওঠা, হোয়াটসঅ্যাপের পাতায় পাতায় রংমশাল,
পরস্পরের পিঠ চুলকোতে চুলকোতে আর পিঠই পাওয়া যাচ্ছে না?
ওহো, পিঠ নেই তো কী হয়েছে, মাঠে গিয়ে ঘাস ছিঁড়ুন,
পারলে একটু খেয়েও দেখুন, ঘাসের সঙ্গে গোবর মিশিয়ে চচ্চড়ি,
ফেসবুক উপচে পড়ছে খাবারের ছবিতে, মদ্যপানের আব্দারে, 
লকডাউন— ইন্ডিয়ার বাবু/ বিবিদের পড়ে পাওয়া চোদ্দআনা আমোদছুটি,
বাজার আর বাজার— সকালে, দুপুরে, বিকেলে, রাত্রে; টেবিল উপচানো
খাবার, কত রং, কত বাহার, কত কিসিমের প্রজাপতি উড়ে উড়ে বেড়াচ্ছে,
গড়ায় সকাল থেকে রাত, যৌন ক্রীড়া, লোভের ক্রিমি কিলবিল করে,
আর ভারতবর্ষ নামক কাঁটাতারের ওপার থেকে দেখছে জামলো মকদমরা,
হেঁটে চলেছে মাইলের পর মাইল, বছরের পর বছর, একমুঠো ভাতের জন্য 
মায়ের কোল থেকে নেমেই ছুটে যাচ্ছে লঙ্কার খেতে কাজ করতে,
বাড়ি থেকে যাচ্ছে অধরা স্বপ্নের মতো, মাথা থেকে পা অব্দি খিদের বেড়ি,
হেঁটে চলেছে খিদের ভারতবর্ষ, ভাইরাসের ভারতবর্ষ, অন্ধকারের ভারতবর্ষ,
যে ভারতবর্ষকে চেনে না ইন্ডিয়া, যে ভারতবর্ষ পড়ে থাকে মরা নদীর মতো,
ঢেকুর তুলে ছুটির জাবর কাটেন, পাশ ফিরে নিদ্রা যান ইন্ডিয়ার বাবু/ বিবিরা, 
ভারতবর্ষ থেকে ইন্ডিয়ার দূরত্ব কত ক্রোশ জানা নেই জামলো মকদমদের,
ভারতবর্ষ থেকে ইন্ডিয়া যাওয়ার পাসপোর্ট ওদের আজও জোগাড় হল না।

# # # #
না, করোনা নিয়া কোনও লেখা চাহিয়া লজ্জা দিবেন না।


স্থিরচক্ষুরেশ 

মৌমন মিত্র 


'মৃত্যু-অমৃত করে দান'

মনখারাপের অবেলায় 'আছি এখনো' লিখতে যেও না
ফিরবে সকাল মিটবে কাল রুখবে সন। তুমি থেমে যেও না মেঘ-মেটামরফোসিস; রক্ত, অসহায়,বাসনাও হতে পারে
নিউ ইয়র্ক-কলকাতা এক নিঃশ্বাসের মোম-ফু দিতে পারে ...

কবির সংসার

সমুদ্রে নাকি কোনও এক অধরা সুখের নোনা-স্নান হয়। আর নদীতে; প্রগাঢ়জন্মমৃত্যুবাস!
ডাকুয়াখালের তীরে মরণ যাত্রা সেরে—

'গফুর মিঞার ময়লা কোর্তা'—ইন্দিরা দেবীকে কবির চিঠি।
সাঁতরে ফেরার পর। আমি অমিত - কে পড়ে শোনাই। কোনও এক বৈশাখীর,ভিজে-বাদলার দিনে।ব্যাধির অনর্গল ঢেউ গুণে—

গাজিপুর ভ্রমণ

আমি ও অমিত মনে মনে; ওঁর স্পর্শবেশে

শুনেছি; কবির কন্যা 'বেলা' -র জন্ম সেখানে
যখন; আমার বেলা,গর্ভে ও মনে মনে
অমিতর টেবিলে আজ নাইট ক্রিম, সল্ট ল্যাম্প ও 'নিষ্ফল কামনা'
এখানে গোলাপের খেত। গঙ্গার ধার। আবার ধারও নয় ঠিক।

'কেবল নীরবে রহি'

বরং পাশে বোসো, কপালে রাখো হাত। ছোঁও পল্লব সেদিন
কিছু বলতে গিয়েও উথালপাতাল। দিকশূন্য কালপ্রতিদিন
প্রেম ভাঙলে নদীর সৃষ্টি হয় প্রলয় এলে ঝর্ণার হৃদয়
ভাঙ্গন-গড়ন পরিসংখ্যানে; কালশূন্য অতিশূন্য মহাশূন্যে 
           অমিত তুমি
                বিলাবলরাগিনীতানে
           আমি লাবণ্যে
                নীরবরহিঅন্তরস্নানে

এই আমাদের তুমি-আমি। পরিযায়ী শ্রমিকের মতো
                     চলার পর চলা, ফেরার পর ফেরা, থাকার পর থাকা, রাখার পর রাখা, মৃত্যুর পর মৃত্যু, বাঁচার পর বাঁচা।

জন্ম স্মৃতি প্রলয়

সকাল যদিও কেটে গেল, বিকেল তুমি ছাড়া থাকা যায়!
দিন-শেষ ল্যাপটপ স্ক্রিনে
                               কিছুতেই কেন যেতে চাও না রবি?
মেঘেতে থাকে দিন, দিনে থাকে মেঘ।মেঘ মেলানো মাঠে--

ফেরো কেন এই দুর্বোধ্যর কাছে অমিত? ফেরো কেন এত জটিলতার কাছে? ফেরো কেন দীর্ঘব্যাধিশেষে?
অজানা বিষাদ ভোরে!
লাবণ্যের বিদায় প্রশ্ন করে তোমায়?
                         না স্থিররবিচক্ষুর দ্বিতীয় ঢেউ?


বিশ্বাসের সূচিপত্র

অসিকার রহমান 


অনেক সাধনায় গড়া বিশ্বাস আর ভালোবাসা —
 যাদের দ্বিতীয় জন্ম নেই, নেই কোনও জন্মোৎসব,
ছিঁড়ে যাচ্ছে জীবন-মৃত্যুর মাঝে পরম্পরা
মাথার উপরে আলম্বী আকাশ প্রেমের ভাণ্ডার
তাকেও হজম করতে হচ্ছে মানুষ-পোড়া গন্ধ

মহামূল্য শূন্যাকাশ বড়ো লজ্জায় পীড়িত
পৃথিবীময় শুরু এখন রক্তের হোলি খেলা
চতুর্দিকে ঘরবাড়ি জ্বলছে খুন হচ্ছে মানুষ
কেউ কি ভেবেও দেখেছি শেষ হয়ে যাচ্ছে প্রেম
আসলে ভেঙে যাচ্ছে বিশ্বাসের সূচিপত্র...

--------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------




Post a Comment

0 Comments