স্পর্শদোষের জীবনে ফিরতে চাই পৌষালী চক্রবর্তী চতুর্দিকে অস্বস্তিকর এক নীরবতা। তার মধ্যে আমাদের রাত ভোর হয়, দুপুর গড়িয়ে যায় মধ্যযাম এ। অতিমারির গ্রাস ব্যপ্ত করেছে সমগ্র চরাচর। এই সামূহিক নীরবতার মধ্যে অচেনা লাগে নিজেকে, নিজের হাত পা, নাসাগ্র, সমস্ত অঙ্গ প্রত্যঙ্গ। অচেনা লাগে নিকটের মানুষটিকেও। গলার কাছে দলা পাকিয়ে ওঠে কেমন এক বোবা কষ্ট। শ্বাসবায়ু নিংড়ে ফেটে বেরতে চায় কবেকার চাপা পড়া বোবা কান্না। এখন জীবন চাল, ডাল, ওষুধ বিষাদের। সকাল থেকে উঠে জীবনকে গতানুগতিকতায় ঠেলে নিয়ে যাওয়া। ঝাড়পোছ করতে গিয়ে চেনা ঘরের কোণকে অচেনা মনে হয়। পর্দার কোণে যে ছায়া …
অনন্ত উড়ানের অবাধ আয়োজন! অমৃতা ভট্টাচার্য্য এ বছর কোপাই কেমন সুন্দর জলে ভরে গেছে! তার বুক ছাপিয়ে মাটি ধোয়া জল ভেসে চলেছে সেই কোন্ নিরুদ্দেশে। খেলেডাঙার মাঠে ধান রোয়া হয়েছে ক’দিন আগেই। সবুজ গালচে পেতে মাটি যেন স্থির হয়ে বসে আছে আকাশের অপেক্ষায়। কবে যে ফুরসৎ হবে, আলের ধারে বসে বসে মেঘ দেখার! শ্রাবণ দুপুরে এমন দিনে আমরা কোপাইয়ের জল দেখতে যেতাম, মেঘ দেখতে যেতাম। শ্যামবাটির ক্যানেল তখন আমাদের নায়গ্রা হয়ে খুব ব্যস্ত পথচলতি মানুষকেও স্থাণু করে দিতে পারতো সহজেই। আজকাল ঘরে বসে বসে এসব কথাই ঘুরে ফিরে মনে পড়ে। এখন আর হস্টেলে ফিরে সাইকেলের কাদা পরিষ…
দমবন্ধ হয়ে আসছে, মুক্তি চাই মালবিকা সেনগুপ্ত ১৩ মার্চ স্কুলের সভা। তখনও মনে হয় ওই সভাকক্ষের কেউই জানতেন না আমাদের সকলের ভবিষ্যত কোন্ অন্ধকারের পথে হাঁটতে শুরু করেছে। তারপরের দিন রবিবার। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশমতো দেশজুড়ে জনতা কার্ফু। সবাই ঘরে থাকবেন। তাহলে ভাইরাসের চেন ভেঙে যাবে। এবং আমরা ভাইরাসকে কব্জা করতে পারব। আমরা সবাই তাই করলাম। ভেবেছিলাম—, দেখো, আমেরিকা, ইতালি, স্পেন তোমরা যা পারলে না, আমরা ভারতীয়রা কেমন সহজেই করোনাকে জব্দ করলাম! নিজেদের জন্য বেশ গর্ব বোধ করছিলাম। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশের বিজ্ঞানসম্মত যুক্তি খুঁজে বের করেছিলাম। কিন্তু…
সব কথা যেন ফুরিয়ে গেছে অর্পিতা চট্টোপাধ্যায় সে ই কবে খড়গপুর ক্যাম্পাস ছেড়েছি। ছায়া ঘেরা কোয়ার্টার, সবুজ মাঠ, নির্জন এক-একটা দিন— সেই সব কথা এই লকডাউনে মনে পড়ছে ফের। স্বামী গবেষণার কাজে ল্যাবে, কুট্টু তখন খুব ছোট— কথা বলার সঙ্গী বলতে স্থানীয় এক দিদি পাপাম্মা। আমাকে সর্বক্ষণ ঘরের কাজে সাহায্য করত। আজ মনে পড়ছে তার কথা খুব। কেন যে মনে পড়ছে! যত বন্দি-জীবন দীর্ঘ হচ্ছে, মনে পড়ছে পুরনো দিনের কথা। কত মানুষের কথা। মনে মনে চিঠি লিখছি তাদের। আজ যেমন লিখছি পাপাম্মাকে। পাপাম্মা দিদি, কেমন আছ তুমি? এখনও মাথায় ফুলের মালা লাগাও? নিশ্চয় আরও খানিকটা সুন্দর হ…
লকডাউনের বর্ষা অতনু রায় ব র্ষা এসেছে— সে তো কবেই এসেছে। করোনাকালে এটি আর কোনও বিশেষ ঘটনা নয়। ঋতুচক্রের স্বাভাবিক নিয়মমাত্র। তবে এই ঋতু শিল্পীমনের খুব বড় প্ল্যাটফর্ম। কত কবিতা, গান এই বর্ষাকে নিয়ে। এখন যদিও গৃহবন্দি বর্ষাযাপনে ভরসা বলতে ব্যালকনি অথবা জানালা থেকে বৃষ্টি দেখা। আরও একটি উপায় অবশ্যই আছে, যদিও তাতে বৃষ্টির ছাঁট মাখার সুযোগ নেই। সেটি হল সোশ্যাল মিডিয়ার বর্ষাযাপন। যদিও আমার এই অতি অনাবশ্যক বকবকানি তেমনই এক ই-আয়োজনের জন্যই। সত্যি বলতে কী এই বর্ষায় আমার কোনও উচ্ছ্বাস নেই। বরং একঘেয়ে বৃষ্টি যেমন বিরক্তি উদ্রেক করছে। কোথাও যাও…
করোনা ক্রান্তি নন্দিতা আচার্য্য মা র্চের মাঝামাঝি পুরুলিয়ায় নিমন্ত্রণ; একটি পুরস্কার পাওয়ার কথা। পুরুলিয়া আমার প্রথম যাওয়া হবে; এসময় নাকি পলাশ ফুলে লাল হয়ে থাকে সে জায়গা। এদিকে বাড়ি থেকে বলা হচ্ছে, চিনের উৎপত্তি করোনা ভাইরাস ঢুকে পড়েছে ইন্ডিয়াতে; এখন বাইরে বেরনো রিস্কি। কিন্তু অযোধ্যা পাহাড়, জঙ্গল, আর সাহিত্যের আড্ডা আমাকে নিশির ডাকের মতো হাতছানি দেয়। তখন দিল্লিতে ঢুকে গেছে করোনা। সাবান, স্যানিটাইজার পকেটে নিয়ে একটু দুরুদুরু বক্ষে ট্রেনে উঠে পড়লাম। সে সময় একেবারেই বুঝিনি, ক্ষুদ্রাতি ক্ষুদ্র তুচ্ছ এক জীবাণু এমন ভাবে সমস্ত কিছু ওলট…
লকডাউন ও কাফকা’র ছারপোকা শুচিস্মিতা দাস ব ন্দি যক্ষ এ-মেঘের রঙ দেখেই অস্থির হয়েছিল কিনা জানি না। বর্ষণে প্রকৃতির গাঢ় সবুজ ভারি হয়ে উঠেছে। মাসখানা আষাঢ়। এক অধ্যাপক ক্লাসে একদিন বলেছিলেন, ‘আষাঢ়ের ঢ়-এ বৃষ্টির বসতি।’ তাই আমি এখনও ওনার মত করে আষাঢ় বলতে পারি না। রাস্তায় মোটরবাইক দাঁড় করিয়ে কয়েকটা ছেলে আড্ডা মারছে, মুখে ‘মাস্ক’ বাঁধার দরকার এদের পরে না। এসময় রোজ এক বয়স্ক রাস্তা পার হন। মুখে কাপড়ের ‘মাস্ক’, সবুজের ধার দিয়ে খয়েরী ডোরা। হাতে দুটো ম্যাগি, আরেকটা লাল লঙ্কাগুড়োর প্যাকেট। সম্ভবত এটাই দিনের প্রথম খাওয়া— লাঞ্চ। বিকেল ৪ টে বাজে। প…
চাকা ঘুরছে শিল্পাঞ্চলে অনির্বাণ মুখোপাধ্যায় এ খনও মনে আছে— ‘কে কাহাকে জল দেয়, কে কাহাকে স্পর্শ করে৷ কেহ কাহার চিকিৎসা করে না ; কেহ কাহাকে দেখে না ; মরিলে কেহ ফেলে না ৷ অতি রমনীয় বপু অট্টালিকার মধ্যে আপনা আপনি পচে৷’ এই ভাবেই বঙ্কিমচন্দ্র ছিয়াত্তরের মন্বন্তরের সময় মহামারীর বর্ণনা করেছিলেন ৷ একবিংশ শতকের ভয়াবহ মহামারী করোনা ভাইরাস রোগ বা কোভিড-১৯ ৷ বিশ্বের ১৮৫টি দেশে এক কোটির উপর মানুষ এখনও পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন কোভিড-১৯-এ৷ আমাদের দেশে করোনা আক্রান্তের সংখ্যাও ভয়ঙ্কর। মৃতের সংখ্যা যদিও সুস্থতার সংখ্যার তুলনায় অনেক কম ৷ কিন্তু…
সবাই ফেরার অপেক্ষা করছে পামেলা ভট্টাচার্য স ব ঠিকঠাকই চলছিল। স্বাভাবিক যাপনচিত্র, অফিস, বাড়ি, সপ্তাহশেষে বন্ধুদের সঙ্গে ঘোরাঘুরি। ব্যস্ত এবং নিয়মিত জীবন। কাজের সূত্রে আমি থাকি গুরগাঁওতে। মার্চের শেষে বাড়ি যাওয়ার কথা। টিকিট কাটা আছে। সেই মতো গোছগাছও চলছিল। আচমকাই সেই ব্যস্ততায় একদিন পূর্ণচ্ছেদ। ভারতে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব। অফিস অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ। বাড়ি থেকে কাজ করতে হবে। আর প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা, দেশে ২১ দিনের লকডাউন। ফ্লাইট ক্যানসেল। বাড়ি যাওয়া অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত। জীবনের দৈনন্দিন আহ্নিকগতি এক…
লকডাউনের দিনলিপি ভাবছি টিকা এলে অসুখ সারবে সুমন ঘোষ ম লিন ফুটো-ফুটো নোংরা একটা লুঙ্গি। লুঙ্গির পিছনদিকে কোঁচরে গোটানো অল্পদামের মোবাইল। লুঙ্গির ওপর থেকেই অদ্ভুত কায়দায় মোবাইলে চাপ দিয়ে ঘন-ঘন সময় জেনে নিচ্ছে সে। মোবাইলখানা তার বহুচর্চিত সুরেলা গলায় বলে দিচ্ছে, দ্য টাইম ইস...! মুখ থেকে অনর্গল থুথু ছেটানো বাচলতা। সে আমাদের লোকাল নেতা। কক্ষনো মুখে মাস্ক পরে না। মানে পরতে হয় না আর কী! সে মনে করে করোনা স্বয়ং তাকে ভয় পায়। নানা ধান্ধায় এ-পাড়া থেকে ও-পাড়া সে শুঁকে বেড়ায়। কার অসুখ কার বিশল্যকরণী! কার শক্তি কার দুর্বলতা! সে-ই …
লকডাউনের দিনলিপি অন্য বর্ষা, অন্য যক্ষ সঞ্চালিকা আচার্য ঋ তু নাম পাল্টে বর্ষা হয়ে এল। বর্ষা মানেই স্যাঁতস্যাঁতে দিন এবং রশিদ খাঁ-এর গলায় মেঘমল্লারের আশ্চর্য কন্ট্রাস্ট। বর্ষা মানে মন হারিয়ে পথ ভুলে যাওয়ার দিন, বৃষ্টির জল গোঁড়ালি ছুঁলে কদমরেণুর মতো মোহমগ্ন ভেসে যাওয়ার দিন। কামাতুর দাদুরীর আহ্বান শুনতে শুনতে রাধাহৃদির পিছলে যাওয়ার রাত। দামিনী দমকে প্রিয় বুকে মুখ গুঁজে বৃষ্টিফোঁটার মধুর ছন্দমহিমায় ঘুমে তলিয়ে যাওয়ার রাত। এবারে যদিও তেমন বর্ষা নয়, বেশ অন্যরকম। এই বর্ষায় শিশুদের ভোকাবুলারিতেও ঢুকে গ্যাছে একটা নতুন শব্দ ‘লকডাউন’, যখন বা…
ফিরতে ভালবাসি সবাই অনসূয়া চন্দ্র। ১২ জুন, ২০২০ । ক্যালিফোর্নিয়া যে কোনও কারণেই হোক, আমরা ফিরতে ভালোবাসি। তা সে বাড়ি থেকে বেরোনোর সময় প্রিয়জনের দিকে ফিরে তাকানোই হোক বা নিশ্চল সময়ে বসে ছেলেবেলার রোমন্থন করা অথবা হোক না সে ফেলে আসা শিকড়ের টান। এখন গল্পটা অবশ্য অন্যরকম। হুড়মুড়িয়ে চলতে থাকা বর্তমানটা হুট্ করে অতীত হয়ে গেছে। হাতে রয়ে গেছে অঢেল সময়। যেখানে কর্তা টিভি দেখে ক্লান্ত, গিন্নি সব কাজ সামলাতে হিমসিম, বাচ্চারা রঙ-তুলিতে বোরড্, প্রেমিক বিরহে, প্রেমিকা পুরনো ডি-পি তে, পুলিশ ভিড় ঠেকাতে, জনতা রেশন নিতে এমন আরো কত কী! এমতাবস্থায় সব…
অন্তরীণ দিন শেষের গল্প সুদীপ্তা চট্টোপাধ্যায় । ৮ জুন, ২০২০ । নিউ জার্সি আ শির্বাদ না অভিশাপ? মুক্তি নাকি মৃত্যুর হাতছানি? জানি না! ভবিষ্যতের অজানা পাতায় হয়ত সময়ের কলমে লেখা হবে এইপ্রশ্নের উত্তর। তবে অন্তরীণ জীবনের দিনলিপি লেখার আজ শেষ দিন…। স্বেচ্ছা নির্বাসনের এই লিপিতে গ্রন্থিত কী শুধুই আমার যাপন কথার ফুল? না এ গাথা সপ্তপদীতে কখনও করোনা আক্রান্ত দুপুরগুলোর পারসোনাল ন্যারেটিভ। কখনও মৃত্যুর ভয়ে থার্মোমিটারের পারার উঠা নামায় বিকেলের কবিতার আড়াল। কখনও অক্সিমিটারের অক্সিজেন লেভেলের পারসেন্টেজে ভোরের লিরিকাল গদ্য, এক অদ্ভুত ছন্দে বাঁচা…
মেস বন্দির দুইমাস্যা মৃদুলকান্তি ঘোষ ফল। ফুল। সবজি। চিকেন। মাছ। সদর দরজায় ফেরিওয়ালার প্রাত্যহিক রুটমার্চ। লকডাউনে মেস—বন্দি জীবনে ওঁদের ডাকেই সকাল। সন্ধেবেলা গরম সিঙাড়া। এই হাঁক আগে কখনও শুনিনি। দমদমের ফকির ঘোষ পাড়া। ফ্রিজে আদা শেষ। পড়শি গৃহকর্তা দাঁড়িয়ে আছেন বারান্দার রেলিং ধরে। দশ মিনিটেই চিরাগের জিনের মত হাজির সবজিওয়ালা। ঠেলা গাড়িতে সবজি বেচা চলতি রেওয়াজ। লকডাউনের হাওয়া বদলে সাইকেলেও ঝাঁকা বেঁধে হোম ডেলিভারি। স্কুটারে চাপিয়ে ফল বেচছেন কাজ হারানো যুবক। রিকশাওয়ালারাও পেশা বদলে সবজি অথবা ফলের কারবারি। পাড়ার মোড়ে সস্তা দরে বিকো…
এখন ভয় পাওয়া দরকার পার্থ সারথি চক্রবর্তী সত্যি দেখতে দেখতে কেটে গেল কয়েক সপ্তাহ। ঘরে বসে থাকতে থাকতে কিন্তু কিছুটা হতাশাও গ্রাস করতে শুরু করছে অনেককে। সাংসারিক জীবনে নানারকম চিন্তা ও চাপ সর্বদাই আমাদের উপরে কাজ করে। তবে সেটা যখন খানিকটা অন্য ভাবে আমাদের আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে ফেলে তখন সেটা একটা অন্য মাত্রা নেয়। হ্যাঁ সেটা ভয়। আমদের জীবনের প্রতি মুহূর্তের সঙ্গী এই ভয়। আমরা প্রত্যেকেই ভয় পাই। খুব ছোটবেলা থেকেই আমাদের মনে এই ভয়ের সঞ্চার হয়ে থাকে। আমরা কিছু ভয় নিয়ে জন্মাই আর কিছু ভয় আমরা শিখি। যেমন পরীক্ষায় ভাল ফল করা, অন্যের থেকে কম নম্বর পাওয়…
মানুষ একবার জন্মায় না সৈকত বালা একদিন সত্যি সত্যিই রবীন্দ্রভবনের গেটে ঝুলতে দেখলাম ভবনের অনির্দিষ্ট কালের জন্য ঘুমিয়ে পড়ার বিজ্ঞপ্তি। আর তারপর থেকেই যেন ধীরে ধীরে প্রগাঢ় সুষুপ্তি নেমে এলো চারদিকে, কেউ কোত্থাও নেই। পথের ঘূর্ণিতে একটা শুষ্ক বটপাতা হয়তো বা উড়ে গেল কিছু দূরে। ‘দূর’ এই শব্দখানি ভোরের আবছা স্বপ্নের মতো শোনায় এখন, কোনও এক ভবিষ্যতে তা সত্যি হবে বটে তবে সুদূর না অদূর তা বলা যায় না। বস্তুত বসন্তোৎসবের দিন ট্রেনটা বোলপুর ছেড়ে যাওয়া মাত্রই সব কেমন যেন ফাঁকা হয়ে গেল, ফোনটা তুলে নিয়ে বাড়িতে বললাম— ‘মা আমি কালকেই ফিরছি’। আর তারপর থে…
আতশবাজির অপেক্ষায় দ্যুতিমান ভট্টাচার্য এক অদ্ভুত নীরবতা। জনতা কারফিউ। রবিবার দুপুরবেলা। শুধু রিমোটের বাটনে অসহিষ্ণু চাপ। এ চ্যানেল, সে চ্যানেল। তথ্যানুসন্ধান। আগত কার অপেক্ষায়? হলিউডি সায়েন্স ফিকশন মুভিতে যেমন। এক দমবন্ধকর অপেক্ষা। রুদ্ধশ্বাস। নেইল বাইটিং। যেন এক ধার্মিক প্রাণ অনন্ত সময় ধরে মুক্তির সন্ধান চাইছে। যেন কোনও ধর্মভীরু ঈশ্বরের সন্ধান চেয়ে বসে আছে জনম জনমের পথ চেয়ে। জীবন যেন এমনই এক প্রতীক্ষার গল্প। এই নিয়েই স্যামুয়েল বেখট্-এর যুগান্তকারী নাটক— ‘ওয়েটিং ফর গডো।’ নিউজ চ্যানেল আর সোস্যাল মিডিয়ায় ঘুরে বেড়ায় সে। উড়ে বেড়ায়। গুজ…
সবাইকে ভাল রেখো আবীরা সাহা ‘‘নিন না দিদি খুব ভালো শাক।’’ ‘‘মা নাও না গো পুঁইশাক তো খুব ভালো।’’ বুঝলাম এটা ক্ষেন্তি এফেক্ট। সবে পুঁইমাচা শেষ হয়েছে। মাঝে মাঝেই পুঁই চারা লাগানোর বাসনা মাথা চাড়া দিয়ে উঠছে। কিন্তু আমার কোনও পক্ষপাতিত্ব নেই পুঁই শাকের প্রতি। ওদিক থেকে ‘নিন না দিদি’, এদিক থেকে ‘নাও না মা’র চাপে নিয়েই ফেলি একবোঝা। ডাঁটাগুলো লাগালে গাছ হবে কিনা ভাবতে ভাবতে দাম মেটাই। গুটিকয় উচ্ছে, ঝিঙে আর টমেটো আজকের সংগ্ৰহ। আর কিছুই নেই। মাঝে মাঝে সাইকেলে করে সবজি নিয়ে আসছে ছেলেটি। পেশায় দিনমজুর। এখন কাজ বন্ধ। এমন কত কিছুই যে বন্ধ। সব বদলে …
কোনওটাই ঠিক করে হচ্ছে না দেবাশিস মন্ডল ‘লকডাউন’— সঙ্গে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে নেট পরিষেবা। ঘরের বাইরে, গঙ্গার ধারে নেট সংযোগ হতে পারছে। গঙ্গার কাছাকাছি এলেই মোবাইলে ঝাঁপিয়ে পড়ছে অনেক মেসেজ। রাস্তায় দাঁড়িয়ে সব দেখা বা উত্তর দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। সব ঠিকঠাক থাকলে, ১৭ তারিখ নেট পরিষেবা পুনরায় চালু হওয়ার কথা। ঘরে বসে বসে কিছু লেখার চেষ্টা, কবিতা বলা, নতুন স্বাদ বদলের কথা ভাবা। ছাত্রছাত্রীদের জন্য ক্লাসের ভিডিও করাও চলছে। তারা তো কিছুই করছে না। একটা গানও গেয়ে ফেললাম! কোনওটাই ঠিক করে হচ্ছে না। স্মৃতির পাতায় কোথাও থেকে কচুরিপানা ভেসে আসছে। ভে…
সংযোগ