নতুন এক আরম্ভের জন্য আবীর মুখোপাধ্যায় কোনও কোনও সিনেমা থাকে, ছবি দেখে হল থেকে বের হয়ে কথা বলতে ইচ্ছে করে না। কোনও বই হয়, শেষ করে সিলিং ফ্যানের দিকে তাকিয়ে চুপ করে থাকি। সম্প্রতি বরানগরের রবীন্দ্রভবনে একটি নাটক দেখে এমন মনে হল— কথা বলিনি ঢের রাত অব্দি কারও সঙ্গে। নাটকের ভিতর ঘরের কথা ও উপকথন আমাকে চুপ করিয়ে দিয়েছিল! বরানগর রবীন্দ্রভবন কানায় কানায় উপচে পড়া ভিড় নয়, বরং কিছুটা শূন্য অডিটোরিয়ামে দেখা হল ‘আর এক আরম্ভের জন্য’। নিবেদনে : স্রোত নাট্য একাডেমী (বরানগর)। এ লেখার প্রথম পর্বেই সেই কারণে পরিচালক বিমান চক্রবর্তীকে ধন্যবাদ জানিয়ে রাখি এমন একটি…
মাল্টিপ্লেক্স থেকে ওটিটি অরিন্দম মুখোপাধ্যায় কিছুদিন আগে আইনক্স থেকে দেওয়া স্টেটমেন্টের পর বেশ শোরগোল পড়ে গেছে। পড়ারই কথা, কারণ বহু বড় স্টারেদের সিনেমা সরাসরিভাবে অনলাইন প্ল্যাটফর্মে আসছে। সে সমস্ত সিনেমার পোস্ট প্রোডাকশান কমপ্লিট হয়ে গিয়েছিল এবং সিনেমাহল বন্ধ থাকার দরুণ সেলভড হয়ে পড়েছিল সেগুলোই সরাসরিভাবে অনলাইন প্ল্যাটফর্মে আনার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। এর ফলে আইনক্সের তরফ থেকে এরপর আমাদের কী হবে টাইপের একটা বিবৃতি দিয়ে শোক ও ভয় প্রকাশ করা হয়েছে। মনে রাখতে হবে আইনক্স কিন্তু সিনেমার ভবিষ্যৎ কিংবা তার আগামী পরিবর্তনের ধাপ নিয়ে একেবারেই চিন্তিত নয়। …
চিরদিনের নায়ক আবীর মুখোপাধ্যায় সে দিন কি তবে অনুজ সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের সামনে অভিনয় করতে অস্বস্তিতে পড়ছিলেন মহানায়ক? একের পরে এক শট ‘এনজি’! নট গ্র্যান্টেড! বারবার রি-টেক! সংলাপ বলতে বলতে হোঁচট খাচ্ছেন! জিভ জড়িয়ে যাচ্ছে। চোখে ক্লান্তির ছাপ। পরিচালক দিলীপ মুখোপাধ্যায়ের পাশেই বসে ছিলেন সহ-অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। কাছে গিয়ে বললেন, ‘‘বাজে একটা শট। বদলে দিতে বলো না।’’ উঁহু! উত্তম তা বললেন না। অনুজ-অভিনেতাকে বললেন, ‘‘বোস না। এক্ষুনি হয়ে যাবে। শট ওকে করে চা খাব।’’ ক্যামেরার পিছন থেকে পরিচালক এগিয়ে এলেন, ‘‘তাহলে একটা টি-ব্রেক দ…
তর্ক সরিয়ে তাঁর ছবি দেখি কুশল ভট্টাচার্য যে কোনও সৃষ্টিশীল মানুষের মনের গভীরে একটি বিপন্নতা থাকে, একটা প্রবল রকম অসোয়াস্তি! প্রায় রক্তের অন্তর্গত বিপন্ন বিস্ময়ের মতোই, খেলা করে চেতনে, অনেকটাই অবচেতনে। মনোবিদের ভাষায় একে বাইপোলার ডিসঅর্ডার বলুন, কিংবা অন্যান্য কিছু এটা এমন একটা তীব্র মানসিক অরাজকতা কিংবা অস্বাভাবিক ভাবে জীবনের বিপ্রতীপ হয়ে ওঠা, যখন সাধারণ দুঃখবোধ কখনও দুঃখবিলাসে পরিণত হয় আমরা জানতে পারি না। অস্তিত্বের মূলগত বিষন্নতা কখন মনের ভিতরে গুঁড়ি মেরে আত্মঘাতী হয়ে বসে, অনেকেই তা বুঝতে পারি না। একটা মুলতুবি রাখা বিনবিনে মনখারাপ…
ছবিজুড়ে স্মৃতির লখনউ নগরী আবীর মুখোপাধ্যায় আ বদুল হলীম ‘শরর্’ লেখা ‘মশরিকী তমদ্দুন কা আখিরী নমুনা’ বা ‘গুযিশ্তা লখনউ’ পড়েছেন? পড়তে পড়তে চোখের সামনে সেলুলয়েডের মতো সরে যায় পুরনো লখনউয়ের অলি-অন্দর, মহফিল, মসনবী-মঞ্জিল! শুক্রবার লকডাউন সিনড্রোম ভেঙে, শিরদাঁড়া সোজা করে সেই লখনউ নগরীই যেন দেখে ফেললাম সুজিত সরকারের ‘গুলাবো সিতাবো’ ছবিতে। কি নেই সাবেক লখনউয়ের? মির্জা আছে, বেগম আছে। মহল আছে। খানদান-পান-গান— সবই আছে। রিভিউয়ের নামে, সিউডো ইন্টেলেকচুয়াল সেজে আঁতলামি বাদ দিয়ে, কোনও ন্যারেটিভ না খুঁজে বলি এ ছবি— সপরিবারে দেখার। দেখানোর! ‘পিকু…
দর্শক পুতুল পুতুল ‘রবীন্দ্রনাথ’ মেনে নেয়নি সমীরণ নন্দী একটা পুরনো ছবি খুঁজতে গিয়ে এই ছবিটা বেরিয়ে এল। প্রতিদিনের মতো সেদিনও, ২০১৬-র মধ্য সেপ্টেম্বরের এক সন্ধ্যার সময় হাঁটতে বেরিয়েছিলাম। উত্তরায়ণের সামনে দিয়ে যাচ্ছি, হঠাৎ ওখানকার একজন গার্ড ডেকে বললেন ‘‘স্যার, উদয়ন বাড়ির বারান্দায় রবীন্দ্রনাথ বসে আছেন’’— চমকে গেলাম! কি বলছে রে বাবা! কৌতুহল হল, জিজ্ঞাসা করলাম কী ব্যাপার? উনি বললেন, ‘‘স্যার একবার ভিতরে গিয়ে দেখুন।’’ তখন প্রায় সন্ধ্যে সাড়ে সাতটা, ভাবছি, ঢুকবো? ওনার পীড়াপীড়িতে ভিতরে গেলাম। ভিতরে গিয়ে দেখি উদয়নের একতলায় উত্তরের বারান্দায় রব…
চলে গেলেন ইরফান আবীর মুখোপাধ্যায় ঠিক এক সপ্তাহ আগে শেষ ট্যুইট করেছিলেন! দর্শকদের কৃতজ্ঞতা জানাতে! আর এক সপ্তাহ পর— আজই চলে গেলেন! ইরফান কি বুঝতে পেরেছিলেন? গত বুধবার লিখেছিলেন, “জয়ী হওয়ার পথে আমরা ভালবাসার গুরুত্ব ভুলে যাই। তবে দুর্বল সময় তা মনে করিয়ে দেয়। জীবনের পরের ধাপে পা রাখার আগে তাই একটু থমকে দাঁড়াতে চাই আমি!’’ আরও লিখেছিলেন, ‘‘অফুরন্ত ভালবাসা দেওয়ার জন্য সকলকে কৃতজ্ঞতা। এই ভালবাসাই যন্ত্রণায় প্রলেপ দিয়েছে। অন্তর থেকে কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি সকলকে।” মাত্র ৫৩ বছর বয়সে, বুধবার সকালে মুম্বইয়ের কোকিলাবেন হাসপাতালে চলে গেলেন শিল্পী! চা…
তার দু’খানি নয়নতারা আবীর মুখোপাধ্যায় কলকাতায় পা রাখার পরের কথা। এ শহরে আর পাঁচজন লক্ষ্মীছাড়ার মতো আমারও দিনমান ঠিকানাবিহীন ঠিকানা হয়ে ছিল যাদবপুর ক্যাম্পাসের ঝিলপাড়। পটের নেশার আড় ভাঙতে ভাঙতে অন্য আরও বড়, সুস্বাদ নেশায় তখন দিব্যি হাত ও গলা পাকাচ্ছি আমরা ক’জন। আমি ছাড়া, সকলেই দারুণ গিটারিস্ট। গায়ক। কে যেন, আনোয়ার শা’ থেকে জট পাকানো শিকড় তুলত। তবে হুল্লাট নেশাটা জমত, অন্য জিনিষে। ওদের গাওয়া, গানে গানে। ওরা সুমনের গান গাইত। তার আগে বোলপুরে শুনে ফেলেছি বিক্ষিপ্তভাবে লোকটার গান— ক্যাসেটে ‘ইচ্ছে হল’, ‘নবাব নবাবি করে, মুটে মুটে গিরি’,…
‘উনিশে এপ্রিল’ : সম্পর্কের অন্তঃসঞ্চার সুমন গুণ বাংলা ফিল্মের ধারায় ঋতুপর্ণ ঘোষের অবস্থান খুব স্পষ্ট আর নিশ্চিত। তাঁর ছবির মতোই। বুদ্ধদেব অপর্ণা গৌতম-এর পরে ঋতুপর্ণ ঘোষের গল্পবলার দায়হীন আর কৌণিক ধরনটিই বাংলা ফিল্মের গ্রাহ্য প্রবণতা হয়ে উঠল নয়ের দশক থেকে। অথবা এমনও বলা যায়, ঋতুপর্ণর এই ধরনটি তাঁর সময়ই ঠিক করে দিয়েছিল। খেয়াল করলে দেখা যাবে, সাত-আটের দশকে সারা ভারতেই ফিল্মের ভাষায় যে-দায়বোধের দাপট ছিল, কখনো কখনো আদর্শের প্রতি আস্থার যে-স্বাভাবিক প্রকাশ ছিল, তা নয়ের দশক থেকে কমতে শুরু করে। আর্ট আর কমার্শিয়াল ফিল্ম …
রতন কাহার গানটি আকাশবাণীতে গেয়েছিলেন অতনু বর্মন স্বপ্না চক্রবর্তীর গাওয়া ‘বড়লোকের বিটি লো’ গানটির গীতিকার যে রতন কাহার তা আমরা বহুকাল জানলেও রেকর্ডে লেখা হয় কথা প্রচলিত। এই বিষয়টি নিয়ে আমি দীর্ঘকাল ধরেই সোসাল মিডিয়ায় লেখালিখি করছি। সম্প্রতি একটি তথ্যচিত্রে রতন কাহার স্বয়ং গানটি ওনার লেখা বলাতে আমাদের এই নিয়ে এগোনোর কিছুটা সুবিধা হয়। ইতিমধ্যে rapper বাদশার একটি গানে ওই গানের কয়েকটি লাইন ব্যবহৃত হয়েছে এবং তাই নিয়ে সোসাল মিডিয়ার ঝড় উঠলো। বাদশার পক্ষ থেকে আজ দুপুরে আমাকে ফোন করা হয়। ওরা গীতিকার রতন কাহারকে যথেষ্ট মোটা অঙ্কের ক্ষতিপূরণ দ…
সংযোগ