পেজ থ্রি

চলে গেলেন ইরফান

আবীর মুখোপাধ্যায়


ঠিক এক সপ্তাহ আগে শেষ ট্যুইট করেছিলেন! দর্শকদের কৃতজ্ঞতা জানাতে! আর এক সপ্তাহ পর— আজই চলে গেলেন!
ইরফান কি বুঝতে পেরেছিলেন?
গত বুধবার লিখেছিলেন, “জয়ী হওয়ার পথে আমরা ভালবাসার গুরুত্ব ভুলে যাই। তবে দুর্বল সময় তা মনে করিয়ে দেয়। জীবনের পরের ধাপে পা রাখার আগে তাই একটু থমকে দাঁড়াতে চাই আমি!’’ আরও লিখেছিলেন, ‘‘অফুরন্ত ভালবাসা দেওয়ার জন্য সকলকে কৃতজ্ঞতা। এই ভালবাসাই যন্ত্রণায় প্রলেপ দিয়েছে। অন্তর থেকে কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি সকলকে।”
মাত্র ৫৩ বছর বয়সে, বুধবার সকালে মুম্বইয়ের কোকিলাবেন হাসপাতালে চলে গেলেন শিল্পী! চার দিন আগে শিল্পীর মা জয়পুরে মারা যান। করোনায় দেশজুড়ে লকডাউনের জন্য সেখানে পৌঁছতে পারেননি ইরফান। ভিডিও কলে পরিবারের সঙ্গে কথা বলেছিলেন। কোনও কোনও সংবাদমাধ্যমের দাবি, অসুস্থতার জন্যই মায়ের শেষকৃত্যে যেতে পারেননি অভিনেতা। আর তারপরই দুই ছেলে আর আর স্ত্রী কে রেখে নিজেই ঘুমের দেশে চলে গেলেন!
খবর পেয়ে ট্যুইট করেছেন অমিতাভ, শেখর কাপুর, সুজিত সরকার। অমিতাভ লিখেছেন— ‘‘অপূরণীয় ক্ষতি!’’ শোকে বাকরুদ্ধ দেশের সিনে দুনিয়া! ‘পিকু’ ছবির ডিরেক্টর সুজিত সরকার লেখেন, ‘‘ইরফান তুমি অনেক লড়াই করেছ। তোমার জন্য গর্ব হয়। আবার তোমার সঙ্গে দেখা হবে। সুতপা, বাবলি তোমরাও অনেক লড়েছ। তোমাদের সমবেদনা জানাই।’’
উল্লেখ্য, ব্রেনে টিউমার নিয়ে বেশ কয়েক বছর ধরে লড়াই করছেন ইরফান খান। ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে তাঁর নিউরো এন্ডোক্রিন টিউমারে আক্রান্ত হওয়ার খবর সামনে আসে, এরপর দীর্ঘ সময় লন্ডনে চিকিত্সা চলেছে। গত বছর এপ্রিলে ভারতে ফিরেছিলেন অভিনেতা। ক্যানসার যুদ্ধে জয়ী হলেও তারপর থেকেই ইরফানের নিয়মিত চিকিত্সার মধ্যেই ছিলেন, কিন্তু আচমকাই পরিস্থিতি খারাপ হয়। সেই কারণে তাঁর শেষ ছবি ‘আংরেজি মিডিয়াম’-এর প্রমোশনেও থাকতে পারেননি। সোশ্যাল মিডিয়ায় অভিনেতা লেখেন, ‘‘নমস্কার ভাই-বোনেরা। আমি ইরফান। আপনাদের সঙ্গে একপ্রকার রয়েছি আবার নেইও! ‘আংরেজি মিডিয়াম’ ছবিটি আমার জন্য ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ। বিশ্বাস করুন, যেভাবে ভালবেসে ছবিটা তৈরি করেছি, ঠিক সেভাবেই এর প্রচার করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু শরীরে কিছু অযাচিত অতিথি এসে বাসা বেঁধেছে, তাদের সঙ্গেই কথাবার্তা চলছে। দেখি কী হয়! যাই হোক না কেন, আপনাদের জানাব।’’ সে আর হল কই!
১৯৬৭ সালের ৭ জানুয়ারি ভারতের জয়পুরে একটি সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন এই অভিনেতা। ইরফানের মা, বেগম তন্ক হাকিম পরিবার থেকে এসেছিলেন এবং এবং তাঁর মরহুম পিতা জাগিরদার তন্ম জেলার বাসিন্দা ছিলেন সেখানে পাগড়ির ব্যবসা করতেন। ইরফান ১৯৮৪ সালে নয়া দিল্লির ন্যাশনাল স্কুল অব ড্রামা (এনএসডি) থেকে স্কলারশিপের অর্জন করেন। তিনি তখন এমএ পড়ছেন।
অস্কার মনোনীত ছবি মীরা নায়ারের ‘সালাম বম্বের’ সঙ্গে ১৯৮৮ সালে রূপোলি পর্দায় পথচলা শুরু করেন অভিনেতা। এর আগে চুটিয়ে টেলিভিশন ও থিয়েটারে কাজ করেছেন ইরফান খান। অভিনয় করেছে‌ন পর পর ছবিতে— ‘সালাম বম্বে’, ‘ধন্ধ’, ‘বিল্লু’, ‘দ্য লাইফ অব পাই’, ‘পিকু’, ‘হিন্দি মিডিয়াম’, ‘ডুব’ ইত্যাদি। শুধু বলিউড নয়, হলিউড এবং তেলেগু ছবিতে কাজের জন্য পরিচিত এই অভিনেতা। তিনি ২০১২ সালের মার্কিন চলচ্চিত্র ‘অ্যামেজিং স্পাইডারম্যান’-এ অভিনয় করে প্রশংসা অর্জন করেন। এছাড়া তিনি হলিউডের সিনেমা জুরাসিক ওয়ার্ল্ড এ অভিনয় করেন। পদ্মশ্রী, জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার, ফিল্মফেয়ার পুরস্কার আর অসংখ্য দর্শকের ভালবাসা রয়েছে তাঁর প্রাপ্তির ঝুলিতে।


Post a Comment

0 Comments