মাল্টিপ্লেক্স থেকে ওটিটি


মাল্টিপ্লেক্স থেকে ওটিটি

অরিন্দম মুখোপাধ্যায়


কিছুদিন আগে আইনক্স থেকে দেওয়া স্টেটমেন্টের পর বেশ শোরগোল পড়ে গেছে। পড়ারই কথা, কারণ বহু বড় স্টারেদের সিনেমা সরাসরিভাবে অনলাইন প্ল্যাটফর্মে আসছে। সে সমস্ত সিনেমার পোস্ট প্রোডাকশান কমপ্লিট হয়ে গিয়েছিল এবং সিনেমাহল বন্ধ থাকার দরুণ সেলভড হয়ে পড়েছিল সেগুলোই সরাসরিভাবে অনলাইন প্ল্যাটফর্মে আনার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। এর ফলে আইনক্সের তরফ থেকে এরপর আমাদের কী হবে টাইপের একটা বিবৃতি দিয়ে শোক ও ভয় প্রকাশ করা হয়েছে। মনে রাখতে হবে আইনক্স কিন্তু সিনেমার ভবিষ্যৎ কিংবা তার আগামী পরিবর্তনের ধাপ নিয়ে একেবারেই চিন্তিত নয়। সে চিন্তিত নিজের ব্যবসার ক্ষতি নিয়ে!

এখন প্রোডিউসাররাও যে শুধুমাত্র ক্রিয়েটিভ স্বার্থে অনলাইন প্ল্যাটফর্ম বেছে নিচ্ছেন এমনটা নয়। সিনেমা হলে রিলিজ হলে সিনেমা হিট হবে না ফ্লপ তার কোনও সিওরিটি থাকে না। কালেকশান সম্পূর্ণই নির্ভর করে তৎকালীন সময়ে দর্শকদের ছবির প্রতি রিয়্যাকশানের উপর। সেক্ষেত্রে সেলভড হয়ে পড়ে থাকলে সেই ছবির প্রতি এমনিতেই মানুষের আগ্রহ কমতে থাকে। জগগা জাসুস যার আদর্শ উদাহরণ। অত্যন্ত অ্যান্টিসিপেটেড এবং দুর্দান্ত সিনেমা হওয়া সত্ত্বেও বারবার রিলিজ পিছোনোয় মানুষ আগ্রহ হারিয়ে ফেলে যার প্রভাব পড়ে বক্স অফিসের উপর। সেদিক থেকে সরাসরি সিনেমা অনলাইনে এলে একটা এস্টিমেটেড হিউজ অ্যামাউন্ট যা আয় হতে পারে প্রোডিউসারের সেই পরিমাণ অর্থ দিয়েই রাইটস কেনার কাজ চলছে। যেহেতু সরাসরি তা টেলিকাস্ট হবে তাদের প্ল্যাটফর্মে। এটা আমি না, বিখ্যাত ফিল্ম জার্নালিস্ট কোমল নাহাটা নিজের একটি রিসেন্ট ভিডিওতে বলেছেন। যার ফলে প্রোডিউসাররা এক্ষেত্রে অনেক বেশি সেফ এবং ডিস্ট্রিবিউটারদের খুশি করার কাজও এক্ষেত্রে থাকছে না!

এখন এর আরেকটা দিকে আসা যাক। এই জিনিস হিন্দীতেই বেশি হচ্ছে। কারণ উত্তর ভারতে সমস্ত মানুষের হলে গিয়ে সিনেমা না দেখার একটা টেন্ডেসি আছে। মানুষ টরেন্ট কিংবা অনলাইনের রিলিজের জন্য এমনিই অপেক্ষা করে থাকে৷ যার ফলে বহু অসাধারণ সিনেমা বক্স অফিসে চলে না। সাউথে কিন্তু সিচুয়েশান একেবারে উল্টো। কোনও বড় স্টারের সিনেমা অনলাইনে সরাসরি আসেনি। বিজয় যেমন বলেইছে মাস্টার আসলে হলেই আসবে। সূর‍য়া শুধু অনলাইনে আনার কথা আলোচনা করেছিলেন তার নতুন ছবি এর ফলে হল মালিকরা তাকে অনির্দিষ্টকালের জন্য ব্যান করার হুমকি দেন ফলে তিনিও পিছিয়ে যান। এটা সম্ভব হচ্ছে কারণ ওখানে প্রতিটা স্টারের একটা অসম্ভব লয়্যাল ফ্যানবেস আছে। যারা হলে গিয়েই সিনেমা দেখতে পছন্দ করে। যে কারণে শুধুমাত্র তামিলনাড়ুতে রিলিজ করে বিশ্বাশম কিংবা বিগিল দুশো কোটির উপরে ব্যবসা করতে সফল হয়। সারিলেরু নিকিভেরুর মতো মাঝারি মানের সিনেমাও শুধু মহেশ বাবুর নামের জন্য হায়দ্রাবাদ আর তেলেঙ্গানা মিলিয়ে দেড়শো কোটি টাকার ব্যবসা করে। এ জিনিস আপনি হিন্দী সিনেমার ক্ষেত্রে কল্পনা করতে পারবেন না। কারণ মানুষ হলে গিয়ে সিনেমা দেখার অভ্যেস অনেকদিন হলো হারিয়ে ফেলছে আসতে আসতে!

সিংগেল স্ক্রিন উঠে যাচ্ছে। যা সাউথের সঙ্গে সম্পূর্ণ উল্টো। সাউথের যে সমস্ত সিনেমা অনলাইনে আসছে তাতে কিরতি সুরেশ আর জ্যোতিকা বাদে আর কোনো বড়ো নাম করা অভিনেতার সিনেমা নেই। এর কারণ এটাই। তাদের নিজেদের দর্শকদের প্রতি ভরসা। এখন প্রশ্ন হচ্ছে তাহলে হলের ভবিষ্যৎ অন্ধকার? না। আমি তা মনে করি না। বাড়িতে মোবাইলে বা ল্যাপটপে সিনেমা দেখা আর হলে সিনেমা দেখার অনুভূতি আপনি কোনোমতেই মেলাতে পারবেন না। এটা এমন একটা ফেজ যেখানে পোস্ট প্রোডাকশান শেষ হয়ে যাওয়া সিনেমাদের একপ্রকার বাধ্য হয়েই অনলাইনে রিলিজ করা হচ্ছে। যাদের শুটিং চলছে বা শুরু হওয়ার অপেক্ষায় সিচুয়েশান নর্মাল হলেই তা আবার সমস্তরকম নিয়ম মেনে থিয়েট্রিক্যাল রিলিজ হবে৷ টেলিভিশান, সিডি, এমনকি টরেন্টও সিনেমাহলকে রিপ্লেস করতে পারেনি। অনলাইন প্ল্যাটফর্মও পারবে না। যদিও বা পারতে হয়, এখনও বহু বহু বছর অপেক্ষা করতে হবে! 

Post a Comment

0 Comments