রূপম ভাল আছে
সুজিত দাস
মান্যবরেষু,
এম এ পাশ, বাবা নেই। কিন্তু চাকরি চাই না আমার।
পিওনের কাজ আমাকে দিয়ে হবে না। ক্যাডারের চাকরিও।
প্রেমিকারা নদীর এপারেই আছে। এপারে এখনও মুথাঘাস। ঘাসের ডগায় মুনিয়া পাখির দোলনা।
তমাল তরুমূলে ফোন ঘোরাবার মতো কেউ নেই
মামা, কাকা, জ্যাঠা এমনকী বাতাস সকলেরই স্মার্টফোন এখন।
মানুষ জানার আগে দক্ষিণের বাতাস জেনে যায় আমার কবিতার শিরোনাম।
দক্ষিণে কোনও অরণ্য নেই। দক্ষিণে শুধুই পটচিত্র।
আমার কাছিমের প্রাণ, হুজুর।
পারিজাত কাননের পাসপোর্ট নেই। নবম তলের লিফটে জায়গা হয়নি।
তবু রাস্তা থেকে তুলে এনে খেতে পরতে দিয়েছেন,
কিনে দিয়েছেন গন্ধ সাবান। আপনি আমার কৃষ্ণ। নাগরিক উচ্চারণ শিখিয়েছেন এই আপনিই।
ভোরের পাখি জেগে ওঠার আগেই আক্খা কলকাতা জেনে যায় আমি এম এ পাশ।
কাঠি জমাইনি। চাকরি চাই না। মোহরকুঞ্জ আমার বাসস্টপ না, আকাদেমির টিকিট নেই।
তবু কোন আহ্লাদে দু—দু’টো খুলে বসলেন আপনারা?
ভারত সরকারের একটাকার কয়েন এখন অচল পয়সা।
নট্ট কোম্পানির পাতাজোরা বিজ্ঞাপন বন্ধ সেই কবে থেকে—
এসব কথা জানাব বলেই ফোনে হাত রাখলাম।
ঈশ্বরের নম্বর আমার লিস্টে নেই, গ্লোবট্রটার যথারীতি অন্য গোলার্ধে।
তাই ডায়াল করলাম আপনাকেই।
আপনার সঙ্গে এখনও ঝগড়া করা যায়, কথার পিঠে কথা বসিয়ে তুমুল রাগ দেখানো যায়।
কিন্তু ফোন ব্যস্ত। আরও দু—এক বছর ব্যস্ত থেকে যাবে এই ফোন।
এম এ পাশ, বাবা নেই। চাকরি চাই না।
শুধু এই কলকাতা শহরের ফুটপাথ, সোনাঝুরির সিঁদুরে মাটি আর মহুয়া ঘ্রাণের বিকেল বরাবর…
একটিই কবিতা লিখব সকলে মিলে। সকলে মিলে অনেক কবিতা লিখব।
ভাল থাকবেন।
রূপম।
ভাল রাস্তার ঠিকানা
তণ্ময় চক্রবর্তী
আড়ালটাও আশ্চর্য শিল্প হতে হবে
না হলে, পৃথিবীর সব চরিত্রহীন ঘরে
ঝুঁকি নিয়ে খেলতে গেলেই
বোকার মতো ধরা পড়ে যাবে।
সম্পর্ক বন্ধুত্ব বিশ্বাস
সযতনে সাজিয়ে রাখা ভাল
বেশি নাড়াচাড়া কি দরকার।
জোর কোরো না, বরং অনুমতি নিয়ে
সাহসী হ’লে গোপনে, তোলা থাক সাবধানে
অন্ধ কুসংস্কার।
দু’চার লাইনের পর সেই বিছানা, বাকি পাতা সাদা
যতই বিজ্ঞাপন করো না কেন
নিজস্ব ভাষা খুঁজে নেবে এমন কলম, সত্যিই আলাদা।
ভালবাসার দাবি, লোকে যাই বলুক
দিনে দিনে বাড়ে, অনেকটাই তুমি জানো
কারণে অকারণে কৈফিয়ত জবাবদিহি
পুঁথিপত্রে যাই হোক, তোমারই বানানো।
রাস্তা আসলে একটাই
বাইলেন সরু গলি এটা ওটা
আদর ক’রে নানারকম নামে লোকে ডাকে।
দুর্নামের ভাগে শুধু একাই বারোটা
গণ্ডগোল তো...
যে কোনও সময়েই লেগে থাকে।
পূর্ণতা
তারেক কাজী
সব স্পর্শ মুছে যায়
সমূহ স্মৃতিই
মলিনতা মেখে
একদিন ফিকে
হয়ে যায়
তারপর আর
ধড়পড়ানি ব্যাতীত
বুকের ভিতর
কিছুই থাকে না
গাল বেয়ে
জল পড়ে
চোখ ফুঁড়ে
গাল বেয়ে
জল পড়ে
মরণ দুয়ার
খুলে ডাকে
জনাব
আসেন
শান্তিনিকেতন
সুপ্রভাত মুখোপাধ্যায়
একটা রাস্তা মরে গেছে বহু দিন আগে— পথ-স্মৃতি
সেই কত রকমের ঝকমারি ধুলোয় মিলেমিশে
আজ সব ফুরিয়েছে বৃষ্টি হয়ে আলাদা খোয়াই
একটা ক্ষয়ের মূর্তি কী সুন্দর শিল্প হয়ে যায়!
আমাদের চেনা বাড়ি-ঘর টানে গিয়েছি কোথায়
কত মন জেনেশুনে প্রেমে পড়ে, ব্যর্থ হয় একা
রাস্তা নিয়ে আরও রাস্তা কত— না পথের বন্ধু জানে
যেটুকু মুখিয়ে থাকা সেটুকু পালন করছে বন
গাছে গাছে বহু দূর আমাদের শান্তিনিকেতন।
0 Comments