কবিতা


ঠোঁট

সুমন ঘোষ

সহজ, আরও সহজ করে বলো
কঠিন— সে তো জলের ধারে থাকে
বুকের ভিতর নৌকা ছলোছলো
বিপদ বহন, বলছি তুলনাকে

শ্রীমুখ থেকে ওষ্ঠ তুলে সারা
গোষ্ঠ ছেড়ে গহন বনে ভাসা
বনের ভিতর নুনের পলেস্তারা
সহজ, আরও সহজ সর্বনাশা

নিম্নে ঝোরা অধীর শামিয়ানা
অধীনে নেই, এমন দুটি টিলা
শুনেছে কে ঠোঁটের মৃদু মানা
আলগা হয়ে এসেছে সব খিলান

সহজ, আরও সহজ করে ডাকো
নৌকাখানি বিপদ বহন করে
জিহ্বা খেয়ে ফেলেছে সব সাঁকো
জলের তলায় আমরা পরস্পরে

কঠিন খুলে সহজ দিয়ে বাঁধি
এসব ছিল ঠোঁটের ঘটনাদি!


আমজাদ আলী আহা খান

অতনু বর্মন

আমার কোনও রাগ নেই, রাগিনীও না...

সবাই ঘুমিয়ে কাদা, বারোটা বেজেছে সেও কবে
এখন সময় হল, সরদের তানে কথা হবে।
অঙ্গুলিমেয় এই মধ্যরাতের চোরা টান,
জেগে আছি আমি আর আমজাদ আলী খান।

দরবারী কানাড়ার পদতলে হরিদাস পাল
রাতের বৃন্ত ছুঁয়ে আকাঙ্ক্ষা, একদিন আসবে সকাল।

আমি তো ব্রাত্যজন, অপাংক্তেয়,
ছাত্র পড়িয়ে জোটে ভাত,
তবুও কেন যে টানে বিলম্বিত সন্ধ্যায়
ঘুমহীন মালকোশ রাত!

দু হাজার কুড়ি সাল, অতিমারি, সেও দেখা হল,
একুশে না যদি থাকি তুমি তাকে কানে কানে বলো...
যদিও চিহ্ন নেই, তবু আমি রেখে গেছি দাগ,
আমাকে সমাধি দিও, এপিটাফে বাজিও বেহাগ।

উদাসীনতাও মেঘের মতন খুব  আছে

গৌতম ভরদ্বাজ

উদাসীনতার কোনও পাপ নেই।
পুণ্যও খুব নেই যেমন কিছু।
কী আছে তবে!
আঁধার নিজ অক্ষে প্রখর যখন
ঝড়ের মতন তীব্র খুব আসে।
ঝড় চলে গেলে যে ধ্বংসপাহাড়,
তার যে চূড়া থাকে
যেমন যত পাহাড়ের সব থাকে;
উদাসীনতা সেই সব পাহাড়ের 
চূড়ায় মেঘ যেমন,
ঈশ্বরের সঙ্গে গল্প করে।


কাকতাড়ুয়া

সমর সুর

অঘ্রানের মাঠ জুড়ে গভীর শূন্যতা
শুধু কাকতাড়ুয়া জেগে থাকে বিকল্পের সন্ধানে।
নিঃসঙ্গ কৃষক একা একাই কথা বলে শস্যবীজের সঙ্গে।
আমি এসব কথার কোনও অর্থ বুঝি না
সারাজীবন কতকিছুই না বুঝে বোকার মতো ঘাড় নাড়িয়ে গেছি।
সন্ধ্যার ছায়া পাতায় জড়ালে একতারা হতে ফিরে আসে
সাধন বৈরাগী।
তবু তার দারিদ্র্যে ভরা মুখ থেকে গান থামেনি।
আক্ষরিক ভাবে সব গানের ভিতর থাকে গভীর নিঃসঙ্গতা
প্রেম, জীবনদর্শন।
আত্মপরিচয় থেকে একটা দীর্ঘনিঃশ্বাস চলে যায়
কাকতাড়ুয়ার দিকে।





Post a Comment

0 Comments