কবিতা/ ১


আপেল ২ । মাসুদ পথিক

অথবা কিংবা আর জলে ভেসে ভেসে তথাপি ভেসে না-ভেসে
কেবলি ভেসে বেড়ায় রক্তমাংস ব-দ্বীপের চারধারে

আপেল ফেরে না সমুদ্রের তীরে ফিরে আসে না

তবুও কোনো ডাকাত দাঁড়িয়ে থাকে রাত জেগে
কুড়িয়ে বা ছিনিয়ে নেবে আপেল সমুদ্রের বুক থেকে

পাহারায় থাকা সমাজপুলিশ ট্যাবুর শকুন চোখ
তারাও গোপনে গহীনে করে মনোপলি বিচরণ

কবে কোনকালে কোন বৃক্ষ থেকে এই আপেল
গড়িয়ে না-গড়িয়ে পতিত হয় জৈব প্রকারে

কতো কতো লোকচক্ষু আকারে বিকারে
তার চারধারে তাকায় বিস্ফারিত লোভে

নূহের নৌকা ভেসে যায় আপেলের পাশ ঘেঁষে
কালা'র চাতুর্য লোকমুখে ছড়ালো রসায়ন

আরো কতো কতো ধর্মীয় জলীয় ক্যারাভ্যান
করে, করে'রে আপেলের ধন ও নিহিত বস্ত্র হরণ

এবং যুদ্ধবাজ কতো জাতির হলোরে পতন
তবুও আপেলে রইলো দৃশ্যমান
কতো-না দর্শন শেখালো কলা ও কৌশল
কীরূপে ফলদায়ক হয় সমুদ্র রমন

ফলে ফল এইরূপ আপেল, হলো ব্যাকরণ তাড়িত
আর পেলো ট্যাবুমাখা রহস্যমথিত মাংসের আদল

তথাপি জোড়া আপেল ভেসে ভেসে যায়
কাছে, দূর দেশে, নিকটে খুঁজে না-পায়
ছড়িয়ে জিনবাহিত বিষদ ফেলোসফি প্রকারে

অতএব রক্তে ভেসে ভেসে অনুভব গুটিয়ে থাকে
যাত্রাপথে এই সমুদ্ররমনী পুরুষের অবয়বই আঁকে

ফলে আপেলের সন্ধানে দিকে দিকে যায়, যাবে
সকল পুরুষ ঘুরে ডাকাত স্বভাবে ডাকাত সভাবে

আপেল বুকে সমুদ্রের উঁচুনিচু ঢেউগুলি,
আহা ঢেউগুলি
মরে নিদ্রার অভাবে...ধর্ষকামী ইতিহাস পিছু নেয় ভবে


জল । বিভাস রায়চৌধুরী

ছায়ার ভেতরে জল, ঘুমের ভেতরে জল...
এ জীবন অবিরল জল কুড়োনোর!

 যখন গাছের কাছে আলো এসে চুপ করে থাকে...
 চিরদিন তার নাম ভোর

 নৌকো এসে ঘুরে যায়... তুমি কি ফিরবে আর?
 বেদনা সহজ, পাশে দুঃখিতের পাখি...

ছায়ার ভেতরে জল, ঘুমের ভেতরে জল...
শরীর আবিষ্কারক!
সমস্ত জলের পাশে বীজ হয়ে থাকি...

মেয়েদের নাম । অরুণ মুখোপাধ্যায় 

ছন্দা—
বলে প্রায় ব্যাকুল হয়ে চিত্কার
করলো আমাদের কবি বন্ধু মানস।
মানস যে কোনও মেয়েকে নানা
নামে ডাকে। কেউই প্রায় পাত্তা দেয় না।
কিন্তু ছন্দা ডাক শুনে পাঁচ রঙা ছাতা
মাথায় স্মিত হাস্যময় মেয়েটি আমাদের
সামনে এসে জানতে চাইলো— কে তার
নাম ধরে ডেকেছে।
মানস বললে— আমি।
আপনি কী আমাকে চেনেন বা জানেন?
না।
তাহলে?
না— মানে এমনি— আমি তো অনেকেরই নাম
ধরে ডাকি— এটা একটা নেশা। আসলে
মেয়েদের তো যে কোনও নামেই ডাকা যায়
যুথী, বকুল, জুঁই, রক্তকরবী—
থাক। আর বলতে হবে না। ভীষণ জোরে হেসে উঠলো
মেয়েটি। তারপর সবাইকে পিছনে ফেলে
চলতে শুরু করলো।
মানস আবার ডাকলো— ছন্দা—
ছন্দা আমাদের সামনে এসে দাঁড়ালো।
না ছন্দা নয়। আবার হয়তো দেখা হয়ে যাবে
যুথী, বকুল, জুঁই এবং আরও অনেক নামে।

প্রবাস জীবন । আলো রায়

বহু রসাভাস ডিগবাজি খেয়ে চলেছে
মহাকাশে তারাদের সভায় এনেছে কেউ
বিদ্রোহী মিছিল দিনান্তবেলায়
অগুন্তি অপ্সরা নেচেছে গেয়েছে
তবু ভালো লাগে নির্জন শয়ন লোভে
ক্ষোভে ক্লান্ত ভঙ্গী বিমর্ষ কাকের ডাকে
বিয়োগান্ত ভোর ভোর হয় রক্তের উজানে
যাব কি যাব না ভেবে ভেবে
অনেক আলোককণা আজকাল ঝ’রে পড়ে
গলিতে উঠোনে গহীন গাঙেও
অন্তর্লীনা দুষ্টু আলোড়ন ওঠে
তবু ভালো লাগে শেষ রাত নীরব প্রস্থান।
আসলে কিছুই নেই নদীর ছলাৎকার ছাড়া
দূরে বৈষ্ণবী বৈষ্ণব নামগানে প্রবল মেতেছে
শূন্যঘাটে ভাঙা চুড়ি নিয়ে যেতে অজস্র ঢেউয়ের ফৌজ আসে।
প্রবাসজীবন শুধু ক্ষয়ে যায় পাথরে প্রান্তরে...!

মিথ । অরুণাভ রাহারায়

ঠিকমতো আঘাত পেলে দূরে সরে যাব।
দাঁড়িয়ে হেলান দেব আকাশের গায়ে

এতটা নীরব তুমি? এতটা গভীর...
সামান্য জল হয়ে নীচে পড়ে আছো।
এই জল আজ
জলঙ্গী নদীতে নেমে কুড়িয়ে নিলাম।

আকাশে দাঁড়িয়ে আমি তোমাকে বোঝাবো...
তুমি জল!

বাঁকানো কাকের মতো মাটির কলসিতে
একটা একটা করে নুড়ি ফেলে দিয়ে
তোমাকে ওপরে তুলে আনবো একদিন।

তুমি জল...

শিল্পী : শেখ শাহজাহান

Post a Comment

0 Comments