দুটি কবিতা : মণিকুন্তলা রায়


মণিকুন্তলা রায়ের দুটি কবিতা


অস্পৃশ্য


ছুঁৎমার্গের শেয়ার বাজারে ধস নামুক 

মর্মান্তিক রোগ বেশি দুঃসহ না অস্পৃশ্যতা

সে ইতিহাস বলবে-

কিন্তু, এ মৃত্যু অশোভনীয়!


মৃত্যু আসুক,

কিন্তু প্রিয়জন নাগালে থাকুক-

নিমীলিত চোখ চুমে যাক

এলোচুলে আঁকা কপাল

বুক আঁকড়ে শেষ কাঁদা কেঁদে নিক

পেটের সন্তান

আলোকবর্ষ দূরে সরে সরে না গিয়ে

প্রজাপতির পাতলা ডানার মতো নিরাপত্তা বলয়ের এপার থেকেই

একবার আঁকড়ে ধরুক

সীমন্ত সীমন্তিনীকে!

এক বুক তৃষ্ণা নিয়ে শেষ ছুঁয়ে দেখার আকুতি

আঁধি শেষে, আঁখি জলে মিটুক!

ঢক্কানিনাদের আড়ালে 

ব্যাধি অস্পৃশ্যতার জিয়ন কাঠি হওয়ার বিভীষিকা আনলে যে 

ইতিহাস ডুকরে কেঁদে উঠবে!


ভাগ বাটোয়ারায় অভ্যস্ত দেশে 

আমি শুধু আঁজলায় ধরা

ভালোবাসা ভাগ করতে বলছি,

সান্নিধ্য ভাগ করতে বলছি-

হোক না সে মানসিক 

আর চাইছি কিছু সম্ভ্রম;

তোমার আমার প্রিয় মানুষের জন্য!

ততদিনে অভিমন্যুকে চক্রব্যুহ থেকে উদ্ধার করার 

একটা রাস্তা ঠিক বেরিয়েই যাবে!



তার


শ্যাওলা ছোপ গৃহস্থ ছাদ

রংচটা নাইলন তারের সঙ্গে

জং তারের মারপ্যাঁচে 

নীরব সংগ্রাম!

এনাটমি লাগে না;

খালি চোখে বেশ বলা যায় 

শ্রেণিবিন্যাস সমান্তরাল নয়!

নির্বিকার আঙুল

সময়মতো মেলে,

সময় মতো তোলে


দু’ তার জুড়ে গরিমায় টানটান মেলা থাকে রঙিন শাড়ি, চাদর—

আর ছোটোখাটোগুলো

কোনোরকমে এর ওর ঘারে!

ইংরেজির উল্টোনো প্রথম বর্ণ

সব সময়ই প্রয়োজনের তুলনায় কম!

একটা দুটো বাতাসে উড়ে গেলে যেন কেউ হিসেব রাখে!

যাইহোক,

দাউ দাউ রোদ, ফালাফালা বৃষ্টির 

টেম্পারমেন্টের পরীক্ষায় উতরেই গেছিল তারা প্রায়!

তারের তলা দিয়ে হামাগুড়ি টেনে পূব থেকে পশ্চিমে 

বেশ পেরিয়ে যাচ্ছিল সময়

ছাদের এক কোণে হঠাৎই ভিনদেশি বেপরোয়া মেঘ!

বুঝতে বুঝতে অনিয়ন্ত্রিত হাওয়ায়

এক কোণে জড়ো সব

সব এক

যেন আঁকড়ে আঁকড়ে টিকে থাকার আকুতি!

যেন এক প্রতিযোগিতা!

এলিমিনেশন রাউন্ড!

যে কেউ, যখন-তখন!

উল্টোনো ইংরেজির প্রথম বর্ণের

অপ্রতুলতায়

শাসন ছিঁড়ে পড়লে 

নির্দয় তান্ডব টেনে নিয়ে 

মিশিয়ে দিল ধুলোয়,

ফেলে দিল জলে

সে এক অস্তিত্বের লড়াই!

খালি তার যেন

থেমে যাওয়া লাইফ লাইন!

নির্বিকার আঙুল

দূর থেকে দেখে সব-

এক বালতি ভেজানো কাপড়

রুক্ষতা, রূঢ়তা, দুর্যোগ কেটে গেলে

টানটান মিলবে আবার,

প্রয়োজনে নতুন তারে !

গৃহস্থের রঙ ওঠা ছাদ উঁকি মেরে দেখবে

লজ্জায় সিঁদুর মেঘের নাক কাটা গেলে

ভাঙা বিকেলে 

হিজল বেছানো পথে

অনিবার্য ভাবে 

আবার রূপকথা আসবে !

আবার উড়বে তারে

লাল, নীল, সাদা, কালো ইউনিফর্ম!




Post a Comment

0 Comments