কবিতা

মোচন

প্রগতি বৈরাগী

আমাদের রাত্রিবাস ইদানিং অকলঙ্ক একাদশী মতে
শ্যামল ও সোনামাখা, দুটি পিঠ থেমে থাকা ট্রেন
মাঝখানে গিরিখাত, আন্ধার আন্ধার...

ডুবে যায় প্রেমমুখ ব্যথামুখ, উদযাপনের শেষে
চুড়া ছুঁয়ে নেমে আসা ঘামে ভেজা টপটপ মুখ
সকল তীর্থগ্রাম, চিরায়ত যুদ্ধপথ ভ্রমণের পরে
ধুলোট সঙ্গকাল সরিয়ে রেখেছ
ফিরতি ডাকের মুখে ঢেকে দিচ্ছ আলস্য দেওয়াল
শুধু তুমি দেখছ না জ্যোৎস্না খোলস ভেঙে
নেমে এল বুকের উপরে
ঋতুচক্রে ধুয়ে যাচ্ছে ধুলোদের দাগ
সবুজ ডাঙাটি জুড়ে প্রাক-মধুকাল,         

গভীরা সন্ধিফুল, স্ফটিক লাবণ্যফল
দুইসারি পাতাদের মাঝে   

ঝিনুক, মুকুতাশিরে রত্নপুকুর

অতীতের ঘ্রাণ থেকে দূরালাপী ওম ভেসে এলে
সুজাতা সুজাতা জলে ফুটে ওঠে ব্রহ্মকমল



নতুন

কস্তুরী সেন

‘হাতে ইচ্ছে করে খাওয়ার
কুরুলিয়ার পুরনো কই ভাজা’

এভাবে ছুটির দিন
কেটে যাবে আল মাহমুদ প’ড়ে
এভাবে দুকলি লিখে,
‘পাঠালাম, পড়ে দেখো’,
নাকি ‘দেখবেন’...

পড়িনি, পড়ে কী লাভ,
কে কবে আদৌ কাকে
কবিতায় বলেছিল
আসলে দাড়িতে লাগে,
আসলে মানুষ নও,
আসলে তো স্রেফ কাঁটাগাছ!

কুরুলিয়া, দ্যাশগ্রাম,
দিন হয়ে এল ক্ষীণ, পুরনো গলির মতো সরু
আসলে তো লেখা নয়,
বলো সেই পথে ফের
নিজেকে পাঠালে বুঝি,
মলিন কাঁটায় ভরা তরু?



তিনটি কবিতা

সঞ্চারী ভৌমিক

১.
যে ঘরে কোথাও কোনও আলো নেই, সেই খানে আমাদের বাস।
খুব সহজেই চেনা গন্ধে ছুঁয়ে ফেলি নিজেদের অবয়বকে!
দক্ষিণের জানলার ভাঙা কপাট দিয়ে যে টুকু চাঁদ অনধিকার প্রবেশ করে তাকেও বলি, ‘আজ রাতটা কাটিয়ে গেলে হয় না?’
বাগানের কাঠচাঁপার ডাল ঝুঁকে পড়ে অন্ধকারকে গাঢ় করে।
নদীর তীরে জমে থাকা অব্যবহৃত পলিতে চাষাবাদ হয় বহু শতাব্দী পরে!
হঠাৎ ঘুম ভাঙে, পিঠের ওপর বিন্দু বিন্দু ঘাম জমে কেবল একটা ছবি হয়।

যে ছবি সহস্র প্রাচীন কোনও পুরাতনীর অবয়ব!

২.
ছেড়ে যাওয়ার সময় দেখি প্রিয় গাছ কেমন করে যেন অভিমানকে সাজিয়ে রাখে— শিরা-উপশিরা, পাতা ও কোটরে।
বিচ্ছেদে চুপি চুপি কাঁদে সে...
প্রেমিক ওষ্ঠ উপবাসী হয়!
গাছেরা ভালবেসে ভাল রাখে শুধু।
ভালবেসে ক’জনই বা আজকাল ভাল রাখে বল?

৩.
আজকাল খাদের পাশেই জোনাকিদের খেলা করতে দেখি...
নদীর পাড়ে জলের আঁকিবুকি কাটা,
এ আমার স্বভাব দোষও বলতে পারো!
আসলে এসব মায়া আমাদের বড় প্রিয়;
আমরা প্রতিরাতে তারাদের নিভে যাওয়া আর জ্বলে ওঠা দেখি।
প্রতিরাতে যারা মরে যায়, তারা জোছনা হয়ে থেকে যায় চাঁদের বুকে...
—আসলে রাত বাড়লে প্রেমিকামনের অসুখ বাড়ে!



Post a Comment

0 Comments