কোহিনূর শেঠ
২১ মার্চ বাড়ি ফিরলাম। দেশজোড়া জনতা কার্ফুর ঠিক আগের দিন। একে একে ঘোষণা হল ২৩ তারিখ থেকে বন্ধ থাকবে গণপরিবহনের সব মাধ্যম। লকডাউন জারি হল রাষ্ট্রজুড়ে। এরই মধ্যে দিন কাটছে যেমন-তেমন করে।
দমবন্ধ করা এক পরিবেশ। বাড়িতে আছি। দুবেলা খাচ্ছি পেট ভরে। জানি না এভাবে চললে কতদিন ভাল থাকব। এই লকডাউন আমাকে দিয়েছে অনন্ত অবসর যার ফলে এতদিন যে জিনিস গুলো চোখ এড়িয়ে যেত সেগুলো চোখে পড়ছে। চোখে পড়ছে, আমার পাশেই বাস করা মানুষগুলোর চরম দুর্দশা। মফস্বল শহরে থাকি। আমার বাড়ির ঠিক উল্টো দিকেই একটা বস্তি আছে। বেশ কয়েক ঘর খেটে খাওয়া মানুষের বাস সেখানে। এক-একটি খুপরিতে ৭-৮ জন করে থাকে। খোলা আকাশের নীচেই তাদের প্রাত্যহিক সংসার। প্রায় সব বাড়িগুলোর মহিলারাই অন্যের বাড়িতে গৃহ পরিচারিকার কাজ করেন। সেখানে এখন যেতে হচ্ছে না। ফলত সকালবেলার টিফিনটাও পাওয়া যাচ্ছে না।
![](https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEj_jij17WxUgKttyVuCEa4JqA7v84sq5LSOHVMDq05vxqM2lbReXEf6aIfUW76S7CKQvJF7W-kYoApj6oXucC2KcMVB0g7_PpTqoegEkRe3uBKNbgicYvy35yv-xGKI6JjGWwCyuTDVPaA9/s200/kohinur.jpg)
মহল্লায় বাড়ছে ক্ষুধার্ত শিশুর কান্না। বেশ কদিন হল আমি বারান্দায় যাওয়া বন্ধ করেছি। কারণ অভাবের সঙ্গে এই অসম যুদ্ধ চোখে দেখে সহ্য করা যায় না। টিভিতে বারবার সতর্কীকরণ ঘোষণা হচ্ছে ঘরে থাকুন। যাদের ঘর নেই তারা কিন্তু অনেক সাবধানী। চেষ্টা করছে বিধি নিষেধ মেনে চলার। আর যাদের বাড়ি-গাড়ি সব রয়েছে, ঘরে থাকার অবকাশ রয়েছে তারা যে কোনও অছিলায় বাড়ি থেকে বেড়িয়ে পড়ছেন। শুনছি পুরসভা থেকে বাইরে বেরনোর পাস দিয়ে যাবে সব বাড়িতে। দেখা যাক। সবাই লড়ছে। এই অদৃশ্য শত্রুর সঙ্গে লড়াই কতদিন চলবে কে জানে? এখনও অব্দি আমরা সবাই ভাল আছি। আমার বাবার নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রীর ব্যবসা। বাবার ছুটি নেই। আর ছুটি নেই ভুখা মানুষগুলোর খিদের!
(এই লেখাটা যখন লিখছি তখনও একটি বাচ্চা নিরন্তর কেঁদে চলেছে)
1 Comments
এই সময়ের দুঃখের এক খন্ড চিত্র ফুটে উঠেছে, কষ্ট লাগছে!
ReplyDelete