রম্য রচনা


ভালবাসার বিচিত্র-কথা । 

অনির্বাণ দাশগুপ্ত

ভাই ফোঁটা এলেই আমরা আতঙ্কে থাকতাম। তার কারণ ডাক পরে কে জানে। ক্লাসে যারাই শ্যামলীর আশেপাশে বসত অথবা যাদের নাম কাকিমা, মানে শ্যামলীর মা।
শ্যামলীর মুখে কোনও-না-কোন দিন শুনেছেন, ডাক পড়ত তাদের সবারই। প্রতি বছরই “ভাই” এর সংখ্যা বাড়তে বাড়তে “শ্যামলীর ভাই ফোঁটা” আমাদের কাছে এক জাতীয় উৎসব হয়ে গেয়েছিল। ওই ভাই ফোঁটার আসরেই শ্যামলীর কত না পুরনো প্রেমিকের দল পরস্পরকে আবার নতুন করে খুঁজে পেয়ে পুরনো মারামারির স্মৃতি ভুলে কোলাকুলি করত। আবেগে গাল থেকে দাড়ি ভিজত সবাই। শুধু সারি সারি পাজামা পাঞ্জাবির লাইন, ফোঁটা নিতে নিতে কেউ শ্যামলীকে চোখ যে মারেনি  তা নয়... কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে খেতো বকুনি “তোরা আমার ফোঁটার যোগ্য নস... পরের বার আর ডাকব না, দেখছিস না মা দেখছে... রাতে হোয়াটসঅ্যাপ করবি, করবি তো?
পিছনে বসে তরুণী বিধবা শ্যামলীর মা এক লাল রঙের নীলকমল চেয়ারে বসে কারণ নজর বেঁধে রাখতেন সবাইকে... আসলে আমার মা ও মেয়ে একলা থাকি, এভাবেই যদি ছেলে-ছোকরাগুলোকে আটকে রাখা যায় ... অনেক ভেবে প্লানটা বের করেছি তবে খরচা কি কম?
এহেন শ্যামলী আঠেরো বছর হবার আগেই তার এক “ফোঁটা”-বন্ধুর সঙ্গে পালালো। পরের বার থেকে আমরা অনাহারে। কাকিমার মুখ থমথমে... অনেকটা যুদ্ধে হারা দেশের প্রতিরক্ষা মন্ত্রীর মতো অবস্থা, এর দু-এক বছর পর এক সন্ধ্যায় নিউগড়িয়া স্টেশনে লক্ষ্মীকান্তপুরে লোকালে উঠতে গিয়ে ছেলে ভোলা শ্যামলীর সঙ্গে দেখা।
—আরে! কেমন আছিস, তোর ছেলে কী মিষ্টি, কী নাম রখেছিস?
—ফোঁটা কান্ত।
—অ! কাকীমা কেমন আছে?
—ভালই! এখন তো তপুদার সঙ্গে থাকে‌!
—তপুদা! সেটা আবার কে?
—হাঁদারাম তপুদাকে মনে নেই? আমাকে গান শেখাতো... ২০১৫ এর ভাই ফোঁটা ব্যাচ... মানে ২০১৫-এ আমি ওঁকে ভাই ফোঁটা দিয়েছিলাম। একটু বয়স্ক কিন্তু  মানুষটা ভলো!
নাকের ডগা দিয়ে বেরিয়ে গেল লক্ষ্মীকান্তপুর লোকাল...জানালায় শ্যামলী, কোলে ফোঁটা কান্ত... আমার জীবনের প্রথম প্রেমিকার ভাইফোঁটা-জাত পুত্র।

ছবি : কৌশিক আকি

Post a Comment

0 Comments