স্মৃতির সখ্য

অন্তরঙ্গ সতীনাথ / পর্ব ১

আলো রায়


সতীনাথ ভাদুড়ী। না - এই নামে পূর্ণিয়ার কোনও বঙ্গবাসী তাঁকে সম্বোধন করেন না, এখনও। আজও তিনি 'সতুদা'। এবং মুষ্টিমেয় কয়েকজন পুরনো অধিবাসী ও হিন্দীভাষী বুদ্ধিজীবী সাহিত্যিক ছাড়া জনমানসে তিনি অদৃশ্যপ্রায়।
     বিহার বাঙালি সমিতির উদ্যোগে মাঝে মাঝে তাঁর স্মরণে আলোচনায় বসেন অতীতবিলাসী কিছু জনগণ, ব্যস!
     বাংলা সাহিত্যপাঠকের কাছে সতীনাথ একজন স্বল্পচর্চিত অথচ মূল্যবান লেখক। আজীবন পূর্ণিয়াবাসী এই প্রবাসী সাহিত্যিক নিজের শহর ও মানুষজনকে ভালোবেসে একান্তেই রয়ে গেলেন।
     প্রথমেই বলে রাখি 'সতুদা'কে আমার পক্ষে সতীনাথ জেঠু বলা উচিৎ, এমনকি কাকাও নয়। আমার পিতার চেয়ে বড় ছিলেন তিনি। শুধু ওই যে প্রথমেই বলেছি, উনি আমাদের সতুদা কিংবা সোত্দা— এবং আমি নিশ্চিত আমার যুবক পুত্রও রাস্তায় তাঁকে হেঁটে যেতে দেখলে বলে উঠবে— 'ওই যে সতুদা যাচ্ছেন!'
     এই সতুদার সাহিত্য বিচার করার ধৃষ্টতা অন্ততঃ আমার নেই। তবে একই পাড়ার নিবাসী হওয়া আর ঘটনাচক্রে তাঁর সঙ্গে পাড়াতুতো ও বাঙলাতুতো ঘনিষ্ঠতার সুবাদে কয়েকটি কথা বলাই যেতে পারে যা হয়তো সবাই অন্যত্র শুনে থাকতে পারেন, নাও পারেন।
     প্রথমে একটি ব্যক্তিগত ঘটনা দিয়ে শুরু করি। সতীনাথের বাগানের এক প্রান্তে কমবয়সী ছেলেরা ব্যায়ামচর্চা করতো। একদিন আমি আমার ছোট ভাইকে নিয়ে সেখানে গেছি। সতুদা বললেন, 'এ কে?'
আমি বললাম, 'ভাই। ছোট ভাই।'
উনি বললেন, 'তা এর বয়স কত রে?'
আমি উত্তর দিলাম, 'বারহ্।'
উনি আবার প্রশ্ন করলেন, 'কত বয়স বললি?'
আমি জবাব দিলাম, 'বারহ্! বারহ্! (হিন্দী উচ্চারণ স্পষ্টতই)
দেখলাম ওঁর ফরসা মুখ লাল হয়ে উঠলো। আলগোছে আমার কাঁধে একটা হাত রাখলেন। অস্ফুট মৃদু স্বরে বললেন, 'তুমি বাঙালি। বারো বলতে পারো না? কোথাকার 'বারহ্' রে। '
আমি নিশ্চিত সেদিন তিনি আমাকে 'বারহ্' বলেননি। নির্ঘাৎ 'বরাহ' বলেছিলেন। অন্তত মনে মনে। হিন্দী উচ্চারণে বারোকে বারহ্ বলার ভুল এ জীবনে আর করিনি!


ক্রমশ

Post a Comment

0 Comments