করোনা

কেন দূরত্ব বজায় রাখাটা জরুরি?

বর্ষণজিৎ মজুমদার

কেন দূরত্ব বজায় রাখাটা জরুরি ? দেখুন কোনো ধানাই পানাই করবো না ! সত্যি কথাটা সোজা ভাবে বলছি, এই ভাইরাস টি এমন একটি চোর যার কাছে একটি নিখুঁত চাবি আছে আপনার দেহ কোষের তালা খুলে ভেতরে ঢুকে পরার। আপনি সংক্রামিত কিন্তু কোনো উপসর্গ নেই, কিন্তু মুখথেকে বেরিয়ে আসা বাষ্পবিন্দুর (Aerosol ) ভিতর ঢুকে পরে অনবরত বেরিয়ে আসছে ভাইরাস (নিচের ছবি) . অথবা আপনি সংক্রামিত নন কিন্তু আপনার পাশের লোকটি সংক্রামিত, এই বাষ্পবিন্দু প্রায় ছ ফুট অবধি ছড়িয়ে পরতে পারে। এই ভাইরাস এর স্পাইক প্রোটিনটি একটি নিখুঁত চাবি যে একদম একচান্সেই খুলে ফেলতে পারে মানবদেহ কোষের ACE2 নামের গ্রাহক প্রোটিন দিয়ে বানানো তালা (নিচের ছবি দেখুন )। ভাইরাস এর স্পাইক প্রোটিন এর সাথে আপনার দেহকোষের ACE2 নামের গ্রাহক প্রোটিনের তীব্র আকাঙ্খার সংযোগ (high affinity binding ). এই গোত্রের আগের ভাইরাস গুলোর যেমন SARS, MERS এর স্পাইক protein এর চাবিটি ওতো নিখুঁত ছিল না তাই আপনার দেহকোষের গ্রাহক প্রোটিনের সাথে সংযোগের আকাঙ্খা অত তীব্র ছিলো না (low affinity binding )। যদিও ওদের মারণ ক্ষমতা অনেক বেশি ছিল।
তাহলে ব্যাপারটা কি দাঁড়ালো, যদি আপনার পাশের লোকটির মুখথেকে বেরিয়ে আসা বাষ্পবিন্দুতে ভর করে একটিও Cov ২ ভাইরাস আপনার কোষে পৌঁছে যেতে পারে সেক্ষেত্রে সে কিন্তু ঢুকে পরবে ভেতরে ACE ২ র তালা নিখুঁত ভাবে খুলে ফেলে , এইজন্যই এই ভাইরাস টি এতো সংক্রামক , কিন্তু এর আগের গোত্রের মাসতুতো পিসতুতো ভাইরাস ভাইয়েরা যেমন SARS বা MERS এর স্পাইক প্রোটিনের চাবিটি অত নিখুঁত ছিলোনা তাই এই ভাইরাস এর তুলনায় সংক্রামক ক্ষমতা অনেক কম ছিলো। তাই এই চোরটিকে আটকাতে গেলে একমাত্র অস্ত্র দূরত্ব !! দূরত্ব এবং দূরত্ব!! তাই কাঁসর ঘন্টা বাজান, শঙ্খধ্বনি করুন উলু দিন যা খুশি করুন, কিন্তু দল বেঁধে হৈ হৈ করে সংক্রামিত হবেন না। এই ভাইরাস অপেক্ষায় আছে নৈকট্যের!

২০১৯-SARS করোনা ভাইরাস এর বিরুদ্ধে সম্মুখ সমরে সারা পৃথিবীর বিজ্ঞানীরা একের পর এক তুলে আনছেন রাত্রির গভীর বৃন্ত থেকে ফুটন্ত সোনালী সকাল। আজকে তোমাদের জানাতে চাই এমনি কিছু সোনালী সকালের কথা। এই সোনালী সকালের কথায় কোনো মিথ্যে আশ্বাস বাণী নেই শুধু আছে বিজ্ঞান ভিত্তিক তথ্য—

১. খুঁজে পাওয়া গেছে ভাইরাস বিধ্বংসী কার্যকরী এন্টিবডি: COVID-১৯ থেকে সেরে ওঠা লোকেদের রক্তে খুঁজে পাওয়া গেছে ভাইরাস কে নষ্ট করে ফেলার শক্তিধর এন্টিবডি (Passive Immune Protection ). সম্প্রতি ছোটো স্কেল এ মানুষের ওপর সাফল্যের সাথে পরীক্ষাও করা হয়েছে। Regeneron নামের একটি Biotech সংস্থা বড়োসড়ো হিউমান ক্লিনিকাল ট্রায়াল শুরু করতে চলেছে এখনই। ভারতসরকারও এই মুহূর্তে এই ধরণের কাজ শুরু করতে উৎসাহ দেখাক, ভারতবর্ষেও প্রতিভাবান জৈব রসায়নবিদের অভাব নেই তারাও এগিয়ে আসুন। ভারতবর্ষে COVID-১৯ থেকে সেরে ওঠা রুগীরা রক্ত দান এ নিশ্চয় উৎসাহ পাবেন। এই পদ্ধতি খুব তাড়াতাড়ি প্রয়োগ করতে পারলে যে অল্প সংখক বয়স্ক মানুষ মারাত্মক অসুস্থ হবেন তাদের কে বাঁচানো যাবে।

২. National Institute of Health এবং Moderna Biotech সংস্থা শুরু করেছে প্রথম এই ভাইরাস এর জীন সংকেত ভিত্তিক ক্লিনিকাল ট্রায়াল। এক ঝাঁক স্বেচ্ছা সেবকের দেহে প্রয়োগ করা হয়েছে ভাইরাস এর mRNA , এই সংকেত মানবদেহে তৈরী করবে ভাইরাস এর প্রোটিন (Translation ), প্রতিরক্ষা কোষ বানাবে এন্টিবডি। রসায়নাগারের পরীক্ষায় পাওয়া গেছে অভূতপূর্ব সাফল্য, অপেক্ষা মানবদেহে পরীক্ষার ফল।

৩. এই ভাইরাসের শক্তির চাবি কাঠি তার দেহের ওপরে ঝুলতে থাকা কাঁটার মতন স্পাইক প্রোটিন , যা দিয়ে সে সহজেই খুলে ফেলতে পারে মানব দেহকোষের তালা। সম্প্রতি বিজ্ঞানীরা স্ট্রাকচারাল বায়োলজি প্রয়োগ করে দেখে ফেলেছেন সেই চাবির নিখুঁত ছবি। সেই তথ্যের ভিত্তিতে Super Computer ভিত্তিক Artificial Intelligence বানিয়ে ফেলেছে এক গুচ্ছ রাসায়নিক যা দিয়ে বন্ধ করা যায় এই ভাইরাস এর মানব দেহকোষে ঢুকে পরার রাস্তা। এই কাজ ভিত্তিক ক্লিনিকাল ট্রায়াল ও শুরু হবার মুখে

৪. জটিল rheumatoid arthritis এর একটি চালু ওষুধ Actemra খুব ভালো কাজ করছে যে সব বয়স্ক রুগীরা COVID-১৯ এ ফুসফুসের সংক্রমণে মুমূর্ষু হচ্ছেন তাদেরকে বাঁচাতে। এটি এখন ক্লিনিকাল ট্রায়াল এর শেষ পর্যায়ে (Phase ৩) এ পৌঁছে গেছে।

৫. Ebola এবং malaria র চালু থাকা ওষুধ Remdesivir এবং Chloroquine COVID-১৯ আক্রান্ত রুগীর নিরাময়ে সাফল্যের সাথে কাজ করেছে।

সবশেষে এই কথাটা বলে শেষ করি এই ভাইরাস প্রচন্ড ছোঁয়াচে কিন্তু মারণ ক্ষমতা অনেক কম। আগের SARS , MARS বা EBOLA আরো বেশি ভয়াবহ, ওরাও মানব সভ্যতা কে নিশ্চিহ্ন করতে পারেনি ২০১৯-করোনা ভাইরাস ও পারবে না।এই ভাইরাস কেনো এত ছোঁয়াচে সেই নিয়ে আবার পরে বলবো। ভয় নয় সাবধনাতা এটাই হোক মূলমন্ত্র।

ছবি : লেখক






Post a Comment

0 Comments