লকডাউনের দিনলিপি

ভুলে যাচ্ছিলাম কোণগুলো

সুমিতা রায়

এরমধ্যে একদিন— আমার এক বন্ধুর সঙ্গে কথা হচ্ছিল, যে বাড়িতে আর বসে থাকতে পারছে না খুব... দমবন্ধ লাগছে এই পরিবেশ! কথাগুলো শুনছিলাম ঠিকই কিন্তু এই অবস্থায় কি বলা উচিত সেটা বুঝে উঠতে পারছিলাম না।
বললাম, অভ্যেস কর অভ্যেস! এই মুহূর্তে এটাই একমাত্র অপশন আমাদের কাছে...। কর্মজীবনে পা রাখার পর থেকে প্রতিদিনের কাজের চাপ, মাথা ভর্তি stress এর মাঝে আস্তে আস্তে ভুলে গিয়েছিলাম বাড়িতে থাকার নিরাপত্তা বোধটাকে। ভুলে যেতে বসেছিলাম বাড়িতে থাকা সেই প্রিয় কোণগুলোর কথা, যেগুলো আমারি অযত্নে আজ খুব অগোছাল!
হ্যা #stayathome এর ঠেলায় আমিও ঘরবন্দি, তাই সেই ছোটবেলার পর বহু বছর বাদে আবার রোজ আমি উপলব্ধি করছি নিস্তব্ধ নিঝুম দুপুর গুলোকে। সেই ফেলে আসা মা-ঠাকুমা ঘুমিয়ে পড়া দুপুরবেলাগুলো যেন ফিরে এসেছে করোনার হাত ধরে।
মনে আছে গরমকালে ছোট ছোট ভাই বোনরা মিলে বাড়ির গাছ থেকে কড়ি কড়ি আম পেড়ে সেগুলো নুন লঙ্কা মাখিয়ে পাঁচিলে বসে খেতাম আর পা দোলাতাম।
টকা টক শব্দ করে খেতাম আর তাড়িয়ে তাড়িয়ে উপভোগ করতাম ক্ষণিকের ওই স্বাধীনতা টুকু...
মনে আছে আমাদের বাড়ির সামনে দিয়ে অনেক রকমের ফেরিওয়ালারা যেত, নিশ্চুপ দুপুরে ভেসে আসতো তাদের হাঁক, ‘কড়াই আচে গামলা আচে বালতি আচে।’ আর যেত ধুনুরীরা, অদ্ভুত একটা টং টং শব্দ তুলে চলে যেত এমাথা থেকে ওমাথা। সে এক আশ্চর্য সিম্ফনি!
সময় বদলায় পসরা বদলায় শুধু বদলায় না ফেরিওয়ালার ডাক! লকডাউনের দুপুরেও এপাড়া ওপাড়া ফেরিওয়ালারা ঘুরে বেড়ায়, কেউ মাস্ক নিয়ে তো কেউ ফল নিয়ে। সরকার আমাদের ঘরে না ঢোকালে জানতেই পারতাম না আমার আপনার পাড়ায় আজও ওরা আছে। বিগবাজার, স্পেনসার, গ্রুফারসের দাপটে হারিয়ে যায়নি।
অবসরের এই সময় আমি রোজ বিকেলে একবার করে ছাদে যাই আর দেখি বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যেটা আজও একইভাবে নেমে আসে সেই ছোটবেলার মতো!
এসবের মাঝেও একটা অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ ভেবে ভয় পাই। ভাবি— ‘এখন আমি বাড়িতেই আছি।’ 

Post a Comment

0 Comments