রবিবার

সত্যজিতের রবীন্দ্রনাথ

চণ্ডী মুখোপাধ্যায়


সত্যজিতের জন্মদিন মানেই তখন খবরের কাগজের সাংবাদিকদের কাছে তাঁর জন্মদিন ঘিরে বিশেষ স্টোরি খোঁজার দিন। আমি তখন আজকাল-এর সংস্কৃতি বিভাগের সঙ্গে জড়িত। তাই দায়িত্বটা আমারই। প্রথম প্রথম অসুবিধা ছিল না। জন্মদিনে সত্যজিতের বিশপ লেফ্রয় বাড়িতে গেলে স্টোরির অভাব হত না। কেন না সেদিন তাঁর বাড়ি যেন সংস্কৃতির মহাতীর্থ। কিন্তু মুশকিল হল আশির দশকের মাঝামাঝি সময় থেকে। জন্মদিনে সত্যজিৎ সপরিবারে অজ্ঞাতবাসে চলে যেতে শুরু করলেন। কোনও বছর কলকাতার কোনও ফাইভ স্টারে, কোনও বছর কাঠমান্ডু কিংবা মুম্বাইএর কোনও অভিজাত হোটেলে। ফলে তখন থেকে সত্যজিৎ জন্মদিনে ধরা প্রায় অসম্ভব ছিল। কিন্তু কোনওবার আমরা তাঁর জন্মদিনের স্টোরি ও ছবি মিস করিনি। কিন্তু কীভাবে এই অসাধ্যসাধন। রহস্যটা আজ ফাঁস করা যেতেই পারে। আমাদের ছিল স্পেশাল এজেন্ট বিখ্যাত আলোকচিত্রী হীরক সেন। সে সন্দীপ রায়ের বন্ধু এবং সত্যজিতের পারিবারিক আলোকচিত্রী। জন্মদিনে সে সত্যজিতের সফরসঙ্গী। তার কাছ থেকেই পেয়ে যেতাম জন্মদিন উদযাপনের ছবি ও চার লাইনের খবর। চার লাইনকে চারশো করাই তো আমাদের পেশা।
নানা সময়ে সত্যজিতের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ হয়েছে। সে এক অনন্য সময়। কথা মানেই তাঁর কাছ থেকে পাওয়া সিনেমার এক দিগন্ত বিশারী পাঠক্রম। একবার তাঁর জন্মদিনে তাঁর সঙ্গে একই বিমানে ওড়ার সু্যোগ হয়েছে। সত্যজিৎ বিজয়া রায় এক্সিকিউটিভ ক্লাসে, আমরা ইকনমিতে। আমরা মানে আমি, পূষণ গুপ্ত ও হীরক সেন। হাঁ, সন্দীপ রায় ও ললিতা রায় ও ছিলেন। সে স্মৃতি আজকালের পাতাতেই রয়েছে। সত্যজিতের ছবির শুটিঙে দেখেছি আরেক জিনিয়াস সত্যজিতকে। সে সব এক মহাভারত। কিন্তু সব মিলিয়ে আমার বন্ধু বিখ্যাত চলচ্চিত্র সাংবাদিক অনিরূদ্ধ ধর ফেসবুকে সত্যজিৎ-কে মাস্টারমশাই বলেছেন। ঠিকই তিনি আমাদের মতো ছাত্রের মাস্টার মশাই-ই। জন্মদিনে মাস্টারমশাই আপনাকে প্রণাম।
আজ এ কথা আর বলতে দ্বিধা নেই— রবীন্দ্রনাথ সিনেমায় সার্থকতা পেয়েছেন সন্দেহহীনভাবে সত্যজিতের হাতেই। আবার সত্যজিৎ নানাভাবে রবীন্দ্র-প্রভাবিত।
রবীন্দ্রনাথ ও সত্যজিৎ। দুজনের মধ্যে রয়েছে এক পারস্পরিক দেওয়া-নেওয়া। মুখোমুখি হয়নি হয়তো সেই দেওয়া-নেওয়া। কিন্তু মাধ্যমগতভাবে সেই বিনিময়ের পরিধি তো নেহাত কম নয়। এটা তো প্রায় প্রত্যেক বাঙালি স্বীকার করবেন সত্যজিৎ হলেন রবীন্দ্রনাথেরই উত্তরাধিকার- বাঙালি রেনেসাঁর আর এক ফসল। দুজনেই বাঙালি ফলে দীর্ঘদেহী, বিস্তৃতমনস্ক এবং নিজ ক্ষমতাতেই আন্তর্জাতিক। বাঙালি সংস্কৃতিতে রবীন্দ্রনাথের পরেই বা সমান্তরালে যে-নামটি উচ্চারিত হয় তা সত্যজিৎ।
সম্পর্কের বাঁধনটা তাঁদের পারিবারিকও। বাংলা সাহিত্যে যেন এক অলিখিত নিয়মই চালু হয়ে গিয়েছিল যে বড়োদের জন্যে হলে লিখবে জোড়াসাঁকোর ঠাকুর পরিবার আর ছোটদের জন্যে লিখবে সুকুমার রায়ের পরিবার।
সত্যজিতের বাবা সুকুমার রায়ের জন্মের আগেই কিন্তু সত্যজিতের ঠাকুরদা, সুকুমার-পিতা উপেন্দ্রকিশোরের সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের বন্ধুত্ব গড়ে উঠেছিল, রবীন্দ্রনাথের থেকে উপেন্দ্রকিশোর বয়সে দু’বছরের ছোট হলেও তাঁদের বন্ধুত্বে তা কিন্তু বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি। দেখা যায় কবি সম্পাদিত ‘সাধনা’ পত্রিকায় লিখছেন উপেন্দ্রকিশোর। রবীন্দ্রনাথও উপেন্দ্রকিশোরের লেখার সমালোচনা করেছেন, উপেন্দ্রকিশোর কবির কবিতা অবলম্বনে ছবি এঁকেছেন, রবীন্দ্রনাথের গানের স্বরলিপি করেছেন; তাঁর গানের সঙ্গে বেহালা বাজিয়েছেন। শুধু তাই নয়, উপেন্দ্রকিশোরের বাড়িতে রবীন্দ্রনাথের নিয়মিত আসা-যাওয়াও ছিল। ফলে জন্মাবধি রবীন্দ্রনাথকে দেখছেন সুকুমার রায়। শুধু দেখা নয়, যুবক বয়সে ব্রাহ্মসমাজের সূত্রে রবীন্দ্রনাথের সরাসরি সান্নিধ্যেও আসছেন তিনি। রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে ২৬ বছরের ছোট সুকুমারের এক সাংস্কৃতিক বন্ধুত্ব হয়েছিল। এমনকি রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে আংশিকভাবে ইউরোপও ভ্রমণ করেন তিনি। রবীন্দ্রনাথের যেমন সার্ধ জন্মশতবর্ষ শেষ হল, সুকুমারের তো ১২৫-জন্মশতবার্ষিকী শুরু হল। সুকুমার রায় যখন কালাজ্বরে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুপথযাত্রী তখন অসুস্থ সুকুমার রায়কে দেখতে এসেছিলেন রবীন্দ্রনাথ। রোগশয্যার পাশে বসে কবি গাইলেন, ‘আছে দুঃখ আছে মৃত্যু’, ‘দুঃখ একার নয়, সুখ নহে গো’ এই দুটি গান। সত্যজিতের বয়স তখন দুই। অবশ্য সত্যজিৎ রবীন্দ্রনাথকে বাবার মৃত্যুশয্যায় দেখেছেন, রবীন্দ্রনাথ দু-বছরের সত্যজিৎকে তখন থেকে দেখেছেন। কিন্তু পরবর্তী সময়ে রবীন্দ্রনাথের স্মৃতিতে কিন্তু সত্যজিৎ থাকছেন। আর সত্যজিতের স্মৃতিতে বাবার পাশে রবীন্দ্রনাথ সে-কথা মনে থাকার কথা নয়। সুকুমার রায়ের মৃত্যু হয় ১৯২৩ সালের ১০ সেপ্টেম্বর। সত্যজিতের বয়স তখন ২ বছর ৪ মাস ৮ দিন। সুকুমার রায়ের মৃত্যুতে একদিকে যেমন শান্তিনিকেতনে শোকসভা করেছিলেন রবীন্দ্রনাথ, সেই শোকসভায় রবীন্দ্রনাথ প্রয়াত সুকুমার রায়কে বন্ধু বলেই সম্বোধন করেন। তিনি বলেন, ‘‘আমার পরমস্নেহভাজন বন্ধু সুকুমার রায়ের রোগশয্যার পাশে এসে যখন বসেছি এই কথাই আমার বারবার মনে হয়েছে। আমি অনেক মৃত্যু দেখেছি, কিন্তু এই অল্পবয়স্ক যুবকটির মতো অল্পকালের আয়ুটিকে নিয়ে মৃত্যুর সামনে দাঁড়িয়ে এমন নিষ্ঠার সঙ্গে অমৃতময় পুরুষকে অর্ঘ্যদান করতে প্রায় আর কাউকে দেখিনি। মৃত্যুর দ্বারের কাছে দাঁড়িয়ে অসীম জীবনের জয়গান তিনি গাইলেন। তাঁর রোগশয্যার পাশে বসে সেই গানের সুরটিতে আমার চিত্ত পূর্ণ হয়েছে।’’
সত্যজিৎ কিন্তু দেড়-দু’বছরের কলাভবনের জীবনে রবীন্দ্রনাথকে কীভাবে পেয়েছেন বা না পেয়েছেন তা নিয়ে তেমন স্মৃতিচারণ করেননি। তবে তাঁর কলাভবনের বন্ধু দিনকর কৌশিক স্মৃতিচারণ করেছেন। বিশেষ করে গুরুদেবের শান্তিনিকেতনের শেষ দিন নিয়ে তিনি লিখেছেন, “১৯৪১ সালের জুন মাসে গুরুদেবকে কলকাতা নিয়ে যাওয়া হয়েছে। গুরুদেব আশ্রমের বাসে বসে শালবীথি, সিংহসদন, শ্রীভবন, আদি ঘুরে ঘুরে দূরে যাওয়ার আগে দেখে নিলেন, সেই সময় নন্দিতা, মাসোজি, বিশুদা সবাই তাঁর সঙ্গে ছিলেন। আগস্ট মাসের আট তারিখে সকালে বোধহয় মল্লিকজি সবাইকে জানালেন, গুরুদেবের অবস্থা অবনতির দিকে। যাঁরা কলকাতা যেতে চান যেতে পারেন। আমি আর মানিক জোড়াসাঁকোয় গিয়ে যা দেখেছি, সেটা অবিস্মরণীয়। লক্ষ লক্ষ মানুষের সমুদ্রে আমরা হারিয়ে গিয়েছি। কোনোরকমে রাসবিহারী অ্যাভিনিউয়ের বাসায় পৌঁছোলাম। চটিগুলো হারিয়ে, ঘামে ভিজে, হুসহাস করতে করতে, মনের দুঃখ মনে রেখে গুরুদেবের কথা ভাবতে লাগলাম। পরের দিন আবার শান্তিনিকেতন। গতকাল আর আজকের মধ্যে কতটা পার্থক্য, অথচ সব গাছ যেমন ছিল তেমনি থেকে গিয়েছিল। মনের মধ্যে এক বিরাট শূন্যতা জন্ম নিল।”
১৯৬১ সালে রবীন্দ্র জন্মশতবার্ষিকীতে সত্যজিৎ যখন ‘রবীন্দ্রনাথ’কে নিয়ে তথ্যচিত্র তৈরি করেন তখন রবীন্দ্রনাথের শেষযাত্রার দৃশ্য দিয়েই শুরু করেন। রবীন্দ্রনাথকে কীভাবে আবিষ্কার করতে চান সতজিৎ অথবা রবীন্দ্রনাথ তাঁর কাছে কী তা এই তথ্যচিত্রটি থেকেই আমরা উপলব্ধি করতে পারি। রবীন্দ্রনাথ তথ্যচিত্রের ধারাভাষ্য লিখেছিলেন স্বয়ং সত্যজিৎ-ই। শেষ যাত্রার সঙ্গে সেই ধারাভায্যে তিনি ইংরেজিতে যা বলেন তা বাংলা করলে দাঁড়ায়, “১৯৪১ সালের আগস্ট মাসের সাত তারিখে, কলকাতার একজন মানুষ মারা যান। তার নশ্বর দেহাবশেষ, লুপ্ত হয়ে গেছে কিন্তু এমন এক ঐতিহ্য তিনি রেখে গেছেন যা আগুনে পুড়ে ছাই হওয়ার নয়। সেই ঐতিহ্য শব্দের, সুরের এবং কবিতার; ভাবনার এবং ভাবাদর্শের—যা আজও আমাদের সচকিত করার ক্ষমতা রাখে; আর আগামী দিনেও সেই ঐতিহ্য সমানভাবে সক্ষম থাকবে।’’
বোঝা যায় কোন রবীন্দ্রনাথ সত্যজিৎকে মুগ্ধ করে, অনুপ্রাণিত করে। আসলে এই শেষযাত্রার সূত্র ধরেই তো তিনি ক্রমশ উন্মোচন করতে থাকেন একজন মানব থেকে মহামানব হয়ে ওঠার যাত্রাপথ। তাই সত্যজিৎ কোনওদিন গুরুদেব রবীন্দ্রনাথকে মেনে নেননি। স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ তাঁর কাছে মহামানব। যিনি যুদ্ধোত্তর পৃথিবীতে দাঁড়িয়ে একান্ত ব্যথিতভাবে ‘সভ্যতার সংকট’ লেখেন। আর সত্যজিৎও তাঁর শেষ ছবি করেন ‘আগন্তুক’, যার কেন্দ্রীয় বিষয় তো ‘সভ্যতার সংকট’-ই।
১৯৬০ সাল থেকেই সরাসরি রবীন্দ্রচর্চার মধ্যে ঢুকেছেন সত্যজিৎ এটা বলা বোধহয় ঠিক না। কেন-না ১৯৪৯ সালেই যখন তিনি এবং তাঁর বন্ধু হরিসাধন দাশগুপ্ত সিনেমা তৈরির কথা ভাবছেন তখনই তো তাঁরা বেছে নিলেন রবীন্দ্র রচনা ‘ঘরে-বাইরে’। হয়তো সে ছবি তখন হয়নি, যা তিনি শেষ অবধি করেছেন মৃত্যুর ছ-বছর আগে। তবে ১৯৬০ সাল থেকে রবীন্দ্ররচনা নিয়ে ছবি করে ফেললেন। যা চূড়ান্ত রাবীন্দ্রিক হয়ে ওঠে ‘চারুলতা’-তে। পুরো ছবিটিতেই রবীন্দ্র উপস্থিতি টের পাই। শুধু রবীন্দ্র রচনাই কেন, তিনি যখন অন্য ছবি করছেন তখনও তিনি অমোঘ ভাবে ব্যবহার করছেন রবীন্দ্রসংগীত। ‘কাঞ্চনজঙঘা’, ‘জনঅরণ্য’ কিংবা ‘আগন্তুক’ যার শ্রেষ্ঠ উদাহরণ।
সত্যজিৎ রায় রবীন্দ্রসংগীতের স্বকীয়তা নিয়ে প্রবন্ধ লেখেন ‘এক্ষণ’ পত্রিকায়, যেখানে তিনি বলেন, ‘‘রবীন্দ্রসংগীতের একটা স্বকীয় বৈশিষ্ট্য আছে যেটা অগে কোনো ভারতীয় গানে ছিল না।... গানে রবীন্দ্রনাথের যা একান্ত সৃষ্টি। প্রচলিত নিয়মে তার জাত নির্ণয় করা চলে না। কারণ রবীন্দ্রনাথ জাতের কথা ভাবেননি। তাঁর লক্ষ্য ছিল স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যের দিকে। এক-একটি বিশেষ ভাবকে বিশেষ কথা, বিশেষ সুর-ছন্দে প্রকাশ করার দিকে।’’ রবীন্দ্রনাথের গানের এই স্বকীয়তাকে বাংলা সিনেমায় অমোঘভাবে প্রয়োগ করেছেন সত্যজিৎ। রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে তাঁর বোঝাপড়া এখানেই।
লেখার এইখানে এসে আমি জ্যোতির্ময় দত্ত সমীপে ঋণী ইই: মানুষ একা এই পৃথিবীর দুর্বলতম প্রাণীদের মধ্যে এক। পরস্পরের স্কন্ধে ভর করে যুগ যুগ ধরে জ্ঞান ও স্মৃতির সঞ্চয়ে, সে এই সভ্যতার বিপুল পিরামিড নির্মাণ করেছে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এরকম এক পিরামিডের শীর্ষস্বরূপ, তুলনায় অনুচ্চ হলেও সত্যজিৎ রায় তাঁর গুণবান পূর্বসূরিদের ওপর দণ্ডায়মান এক শৃঙ্গ। সত্যজিতের সঙ্গে রবীন্দ্রনাথেরও তুলনা অবশ্যম্ভাবী। দুজনের চরিত্রে অন্ধকারের চেয়ে আলোক, অধীনতার চেয়ে তৃপ্তি, সংশয়ের চেয়ে বিশ্বাস বেশি। দুজনের শিল্পী সহৃদয় প্রেম।
রবীন্দ্র জন্মশতবার্ষিকীতে সত্যজিৎ যখন ‘তিনকন্যা’ করছেন, ঋত্বিক ভাবছেন ‘কোমল গান্ধার’। সত্যজিৎ সরাসরি রবীন্দ্র অনুসারী আর ঋত্বিক রবীন্দ্রনাথের প্রতি চলচ্চিত্রগত শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য এক অভিনব পন্থা নিলেন যেন—রবীন্দ্রসাহিত্যের কোনও চলচ্চিত্রায়ণ নয়, বরং বলা যেতে পারে রবীন্দ্র-ভাবনার চলচ্চিত্রায়ণ। আর সত্যজিতের রবীন্দ্ররণ ‘তিনকন্যা’ দিয়েই শুরু, যার পরবর্তী সম্প্রসারণ হল ‘চারুলতা’ এবং ‘ঘরে বাইরে’। অবশ্য সত্যজিৎ রবীন্দ্রনাথে গেলেন তাঁর চলচ্চিত্র জীবন শুরু হওয়ার বছর ছ’য়েকের মধ্যেই। ১৯৫৫ তে ‘পথের পাঁচালী’র বছর ছয়েক পরেই তো রবীন্দ্রজন্মশতবার্ষিকী।
জহরলাল নেহরু তখন প্রধানমন্ত্রী। কেন্দ্রীয় সরকার ঠিক করেন রবীন্দ্রনাথের জীবন নিয়ে একটি তথ্যচিত্র তৈরি হবে। কিন্তু কে করবেন?
নেহরু জানান, এই ছবি করবেন সত্যজিৎ রায়। তৎকালীন সরকারের অনেকেই আপত্তি তুলেছিলেন সত্যজিৎ কী রবীন্দ্র-বিশেষজ্ঞ। তিনি ভাল চলচ্চিত্র পরিচালক হতে পারেন কিন্ত রবীন্দ্র-জীবন বলে কথা। এর জন্য তো রবীন্দ্র-এক্সপার্ট হওয়া দরকার। নেহরু অটল। তখন তারা নেহরুজিকে বোঝাবার চেষ্টা করলেন—বেশ, সত্যজিৎ রায় ছবিটি করুন কিন্তু তাঁর সঙ্গে বিভিন্ন রবীন্দ্র-বিশেষজ্ঞ দিয়ে একটা কমিটি তৈরি করা হোক। তাঁরাই চিত্রনাট্যটি রচনা করবেন। নেহরুজি এই প্রস্তাবও বাতিল করে দিয়ে সত্যজিৎকে একক ভাবেই ছবিটি করতে অনুরোধ করেন। নেহরুজি যে দূরদর্শী ছিলেন তা রবীন্দ্রনাথ তথ্যচিত্রটি যাঁরা দেখেছেন তাঁরাই একবাক্যে স্বীকার করবেন। মাত্র ৫৫ মিনিট সময়ের ক্যাপসুলে রবীন্দ্রনাথের ৮০ বছরের দিগন্তবিস্তৃত জীবন ধরা প্রায় অসম্ভব। কিন্তু সত্যজিৎ সেই অসাধ্য সাধনটি করেছিলেন। ‘রবীন্দ্রনাথ’ তথ্যচিত্রটি আসলে বিন্দুতে সিন্ধু দর্শন। আজ রবীন্দ্র ১৫০ বা সাধুভঙ্গিতে সার্ধ জন্মশতবার্ষিকীতে সেই ‘রবীন্দ্রনাথ’ তথ্য চিত্রটিরও বয়স ৫০ হল। 

Post a Comment

0 Comments