রবিবার আহারে

আহার/ ৩

মৌমিতা পাল


প্রতিটি রান্নাই আসলে খণ্ডকাহিনি। তা কাতলার ঝাল হোক বা কোনও নিরামিষ পদ, তাতে জুড়ে থাকে সে পদ তৈরির ইতিহাস ও স্থানমাহাত্ম্য। যেখানে শাক-পাতা অপ্রতুল নয়, সেই এলাকায় প্রচলিত নানান শাকের পদ। রান্না আর রান্নাঘর মানেই নানান গল্প। অনেক বাসাতেই বিয়ের আগে মায়েরা রান্নাঘরে ঢুকতে দেন না মেয়েদের। অজুহাত-রাঁধতে রাঁধতে গায়ের রং পুড়ে কালো হয়ে যাবে। আসল রং পোড়াটা অজুহাতই, কারণটা হল ভালোবাসা, আগলে রাখার ইচ্ছে।
উপকরণ যতই জমকালো হোক, ভালোবাসা আর যত্ন না থাকলে যে কোনও রান্নার স্বাদও বিস্বাদ হতে বাধ্য। অধিকাংশ রান্না কষতে হয় তিনবার জল মেরে মেরে। শুধু তেলে রান্না হলে আলাদা কথা। মশলা থেকে তেল বের হবার অর্থ, রান্নার কষা হয়ে গেছে। রান্না মানে সময়ের খেলাও। সময় বয়ে গেলেই যে বেশি ভালো রান্না হবে এমন নয়। সঠিক সময়ের ব্যবহার জানা দরকার। না বেশি, না কম। আধসেদ্ধ বা অধিক- গলিত কোন রান্নাই মুখে তোলা যায় না। তাপেরও সঠিক প্রয়োগ জানান দরকার। কখন আঁচ বেশি হবে আর কখন মধ্যম আঁচে তা জানতে হবে। সময়, তাপ, যত্ন ও উপকরণের পরিমিত প্রয়োগেই রান্না হয়ে ওঠে সার্থক খণ্ড গল্প। এবার রান্নার কথা। গত রাতেই ভিজিয়ে দিয়েছিলাম মটর ডাল, সকালে উঠে কুচিয়ে নিয়েছি নানান শাক। আজ ভাগ করে নেব উত্তরবঙ্গের দুটি প্রচলিত রান্না।

শাকের রায়তা

উপকরণ: মেথিশাক-২০০ গ্রাম, পালং শাক-৫০০, গ্রাম মটর শাক-২৫০ গ্রাম, পুদিনা পাতা বাটা-১/২ কাপ, রসুন-৫ কোয়া বাটা, দই-৫০০ গ্রাম, মূলো কুচানো-১/২ কাপ, ঘি-৫০ গ্রাম, নুন-চিনি-বিটনুন প্রয়োজন মত।
প্রণালী: শাকগুলো একসঙ্গে ধুয়ে কুচিয়ে সেদ্ধ করুন। কড়াইয়ে ঘি তে সরষে ফোড়ন দিয়ে শাক দিয়ে নাড়ুন। দই দিন। দরকারে জল দিন। নুন, চিনি, রসুন, মূলো কুচানো দিয়ে সেদ্ধ করুন। নামাবার সময় পুদিনা পাতা বাটা দিন।

চাপড়ির ঘণ্ট

উপকরণ: পেঁপে বা চালকুমড়ো মাঝারি সাইজের, মটর ডাল এক কাপ, আদাবাটা বেশ খানিকটা, শুকনো লঙ্কা গোটা কয়েক, অল্প কালো সরষে আধভাজা করে রাখা, সামান্য মেথি, হলুদ পরিমাণমতো, তেল ও নুন আন্দাজ মতো।
প্রণালী: চাপড়ি তৈরির জন্য আগের দিন মটরডাল ভিজিয়ে রাখুন। পরের দিন সেটা বেটে তাতে আন্দাজ মতো নুন ও ঝাল দিয়ে একটা ননস্টিক প্যানে অল্প তেল দিয়ে বাটা ডাল টা সমান ভাবে বিছিয়ে দিয়ে অল্প আঁচে ভাজতে দিন। একটা পাশ ভাজা হয়ে গেলে উল্টে দিয়ে অন্য পাশটাও ভেজে নিন। পুরো টা ভাজা হয়ে গেলে নামিয়ে নিন। চালকুমড়ো ও পেঁপে কুচি কুচি করে কেটে নিন। তবে খুব মিহি করে কাটবেন না। কড়াইতে আন্দাজ মতো তেল দিয়ে শুকনো লঙ্কা, সরষে ও মেথি ফোড়ন দিন। এবার তার মধ্যে পেঁপে বা চালকুমড়োটা দিয়ে দিন। কিছুক্ষণ নাড়াচাড়া করার পর এতে হলুদ দিন। হলুদে রং যেমন ধরবে তেমন হলুদ শরীরের পক্ষে ও ভাল। আবার কিছুক্ষন নাড়াচাড়া করার পর পরিমাণমতো জল ও নুন দিয়ে ফুটিতে দিন। সেদ্ধ হয়ে এলে আদাবাটা ছড়িয়ে ভাল করে মিশিয়ে দিন। এবার সবশেষে চাপড়ি টা টুকরো টুকরো করে ছড়িয়ে নামিয়ে নিন। পরিবেশন করুন রবিবারের মেনু।

Post a Comment

0 Comments