বিশেষ নিবন্ধ

অনেক কিছুই শিখিয়ে দিল

মলয় মণ্ডল


অধিকাংশকেই জীবনে এই রকম এক সমস্যার সম্মুখীন প্রথম হতে হল বলেই মনে করি। এই সময়কালটা আমাদের অনেক কিছুই শিখিয়ে দিল।‌
এ এমন এক ভাইরাস যা ধনী, দরিদ্র, জাতপাত কাউকেই রেয়াত করল না। দাম্ভিকতাকে মাটিতে মিশিয়ে দিল যা অন্য কারও দ্বারা কোনও মতেই সম্ভব হত না। এই দীর্ঘ মেয়াদী লকডাউনের কারণে মাঝেমধ্যেই প্রয়োজনে বাড়ির বাইরে বের হতে হয়েছে।‌ আমরা যে পেশায় আছি তাতে বিভিন্ন পেশার মানুষের সঙ্গে কোথাও না কোথাও একটা যোগসূত্র ঘটে যায়।‌ কখনও কখনও কাউকে দেখলে চিনতে পারি, আবার কখনও মনেও করতে পারি না। আবার অনেকেই পরিচয় দিলে মনে পড়ে অনেক কথাই।
একদিন প্রয়োজনে একটু দূরে গেছি। রাস্তায় দেখি কয়েকজন কিছু কাঁচা আনাজ কিনছে। ভাবলাম আমিও কিছু কিনে নিয়ে যাই। যিনি কাঁচা আনাজ বিক্রি করছেন তাঁর মুখের দিকে তাকিয়ে দেখি ইনি তো আমার পরিচিত এক শিল্পী, যিনি বিভিন্ন ছোটখাটো অনুষ্ঠানে গান গেয়ে কিছু উপায় করে সংসার চালান। ভাবলাম যদি সে  দেখে ফেলে বা কিছু কিনলে যদি অপ্রস্তুতে পরে যায় তাই আমি আর না দাঁড়িয়ে তাড়াতাড়ি স্থান ত্যাগ করলাম।
কয়েকজন করোনা আক্রান্ত হওয়ায় পৌরসভা থেকে একদিন বিকেলে মাইকে ঘোষণা করে দিয়ে গেল— সাময়িক কালের জন্য সব্জি বাজার বসবে না। এর ফলে তারপরদিন সকালে একজনকে দেখি একটা ট্রলিভ্যানে কিছু কাঁচা আনাজ নিয়ে অনভ্যস্ত ভাবে বাজার বাজার বলতে বলতে যাচ্ছে। বাড়িতে সব্জি থাকা স্বত্বেও কৌতুহল বশতঃ উঁকি মেরে দেখি আরে এও তো আমার খুবই চেনা। ছিল অন্য পেশায়, লকডাউনের ধাক্কায় নিরুপায় হয়ে পেশা বদল করতে বাধ্য হয়েছে। এই অতিমারিকে ঠেকানোর একমাত্র উপায় হল ঘন ঘন হাত ধোয়া। সেই কারণেই রাস্তার মোড়ে মোড়ে বিভিন্ন কোম্পানির স্যানিটাইজার ও মাস্ক বিক্রির ধুম। সেখানেও দেখি অনেকেই নতুন এবং এক এক জায়গায় এক এক রকম দাম। পেটের তাগিদে অনেকেই পেশা বদল করতে বাধ্য হয়েছে।
এসবের মধ্যেই চলছে চাপানউতোর— এসবের দায় কার তাই নিয়ে। কাঁধে করে বাচ্চাদের নিয়ে মাইলের পর মাইল পায়ে হেঁটে ঘরে ফিরে আসার যে যন্ত্রণা— তাদের থেকে আর কে বেশি বোঝে? আদালত পরিস্কার বলেই দিয়েছে, এসব দেখার কাজ তাদের নয়। অবাক হই তাহলে কি দেখবেন তাই নিয়ে! মিল কলকারখানা বন্ধ। জুটমিলের শ্রমিকরা আজীবন চাকরি করে প্রাপ্য টাকা না পেলে আদালতের দ্বারস্থ হয়েও যে সুরাহা হয় না, তাহলে সেটা কি দেখার মধ্যে পড়ে না? উত্তর মেলে না।
কোনওদিন মাথার চুল নিজেকে কাটতে হবে ভাবিনি। এই প্রথম সেটাও করলাম। এই অতিমারির সময়ে বাঁচালাম কটা টাকা! রাস্তায় বের হলে টুপিটা চাই, না হলে কেউ হয়তো ভাববে...!
সত্যিই— এই সময়কালটা আমাদের অনেক কিছুই শিখিয়ে দিল!
     

Post a Comment

0 Comments