স্মৃতির সখ্য

ভুবনডাঙার কিঙ্কর


আবীর মুখোপাধ্যায়


একটি ভাস্কর্য নিয়ে শান্তিনিকেতনে তুলকালাম। শিল্পীকে ডেকে পাঠিয়েছেন রবীন্দ্রনাথ। শিল্পীর নাম রামকিঙ্কর।
শেষ বিকেলের আলো এসে খেলা করছে জাফরি ছুঁয়ে লাল মেঝেতে। সেই নরম আলোয় কোণার্ক বাড়ির বারান্দায় একলা বসে লিখছিলেন কবি।
ঠিক তখনই কিঙ্কর এলেন।
‘‘কার মূর্তি গড়েছ কিঙ্কর?’’
‘‘আমি ওটাকে জ্ঞান দিয়ে বুঝতে পারি নে। স্বপ্নের ঘোরের মধ্যে ওই মূর্তি আমার কাছে এসেছিল।’’
‘‘সেই মূর্তির মধ্যে কি কোনও প্রাণী আছে?’’
‘‘আছে। অথচ যেন নেই!’’
মুখ না ঘুরিয়ে রবীন্দ্রনাথ কথা বলছিলেন ওঁর সঙ্গে। ফের জিজ্ঞেস করলেন, ‘‘আমি যেন একটি মেয়ের মূর্তি দেখেছি, মুখ নামানো।’’
কিঙ্কর মিতস্বরে বললেন, ‘‘হয়তো সে কাউকে চুমো খেতেই মুখ নামিয়েছে।’’
রবিঠাকুরের সামনে চুমু খাওয়ার কথাটা বলে ফেলে খুব অস্বস্তি হল কিঙ্করের। গলা শুকিয়ে কাঠ।
গ্রীষ্মের ছুটি চলছিল শান্তিনিকেতনে, কিন্তু বাড়ি যাননি রামকিঙ্কর। তাঁর দিনমান কাটছিল নিভৃত শালবন, রোদ রাঙা শুনশান গোয়ালপাড়ার মেঠো আলপথ, মেথরপল্লির কল-কল্লোলে রঙ-তুলি-ক্যানভাস নিয়ে।
মহার্ঘ্য সব রাত পেরিয়ে যায় অন্ধকারে, স্পর্শের নির্মাণে। আশ্রমে খোলা আকাশের নীচে, কংক্রিটের ঢালাইয়ে তেমন নির্মাণ দেখেই কিঙ্করের ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে গুজবে মুখর শান্তিনিকেতন। এক ভোরে নিজে সেই ভাস্কর্য দেখে এলেন রবীন্দ্রনাথ।
কবির ডাক পেয়েই কিঙ্করের মনে হয়েছিল, এই বুঝি তাঁকে শান্তিনিকেতনের ছেড়ে চলে যেতে হবে।
কানে বাজছে মাস্টারমশাই নন্দলালের কথা।— ‘‘রাতের স্বপ্নগুলোকে মনে রেখো কিঙ্কর। ভুলে যেও না। তেমন হলে, স্বপ্ন ভেঙে গেলে, উঠে স্বপ্নের কথা লিখে রাখবে। কোনও স্বপ্নই ভুলে যেও না। স্বপ্নে ছবি আসে কিঙ্কর, প্রতিমা আসে। স্বপ্ন আঁকবে!’’
রবীন্দ্রনাথ এবার ফিরে তাকালেন অন্যমনস্ক কিঙ্করের দিকে। বললেন, ‘‘একটি পাখি কি উড়ে যেতে চায় আকাশে? পাখা তার যেন সেইরকম তুলে দিয়েছে।’’
কিঙ্করের চোখের পাতা ভিজে এল। তিনি মুখ তুললেন না। খুব আস্তে কেবল বললেন, ‘‘একটি মেয়ে পাখি হয়তো তার বুকের নীচেই আছে!...’’
কবি আর কিঙ্করের কথায় কথায় একসময় বিকেল ফুরিয়ে সন্ধে নামল। আকাশে সন্ধাতারা। দূরের হাওয়ায় ভেসে আসছে এস্রাজি পকড়। ছড় টেনে কেউ একমনে বাজিয়ে চলেছে কবির বাহারে গাঁথা ধামার, ‘এত আনন্দধ্বনি উঠিল কোথায়’। এর পরও কথা এগিয়েছিল দু’জনের।
কবি ও চিত্রকরের— দুই শিল্পীর।
কী কথা?
বিশ্বভারতীর প্রাক্তনী সাগরময় ঘোষ লিখেছেন সেই কথালাপ, ‘‘রবীন্দ্রনাথ রামকিঙ্করকে ডেকে বললেন, শোন, কাছে আয়। তুই তোর মূর্তি আর ভাস্কর্য দিয়ে আমাদের সবখানে ভরে দে। একটা শেষ করবি আর সামনে এগিয়ে যাবি— সামনে।’’


এর পর আর কখনও ফিরে দেখেননি কিঙ্কর। হাওয়ার উজানে এগিয়েছেন তিনি। আর এগোতে গিয়েই নিয়ত তাঁকে দুঃখ-দহনে পুড়তে হয়েছে!
‘‘মাস্টারমশাই শ্রদ্ধেয় নন্দবাবু ছিলেন ভীষণ গোঁড়া। তিনি ছিলেন জ্যান্ত মডেল ব্যবহারের ঘোর বিরোধী। বলতেন ও-সব পশ্চিমে চলে। কিন্তু আমি তার উপদেশ মেনে চলিনি। মডেল ব্যবহার করেছি।’’
নিজের মাস্টারমশাই সম্পর্কে শ্রদ্ধাশীল হয়েও এ কথা কিঙ্করই বলতে পারেন।
খুব অল্প বয়সেই রামকিঙ্কর মূর্তি গড়া শিখেছিলেন কুমোরপাড়ার অনন্তজ্যাঠাকে দেখে দেখে। দু’চার আনার বিনিময়ে নিষিদ্ধ পল্লির রমণীদের মূর্তি গড়তে গড়তেই তাঁর ভাস্কর্যের সহজপাঠ।
এই সময়ই স্বদেশি মেলায় তেল রঙে জাতীয় কংগ্রেসের পোস্টার এঁকেও হাত পাকিয়েছেন তিনি। শিল্পের প্রতি অপার নিষ্ঠার মনটি সেই তখনই তৈরি হয়ে গিয়েছিল।
১৯২৫-এ বাঁকুড়ার যোগীপাড়া থেকে ম্যাট্রিক না দিয়েই ‘প্রবাসী’ পত্রিকার সম্পাদক রামানন্দ চট্টোপাধ্যায়ের হাত ধরে শান্তিনিকেতন চলে এলেন কিঙ্কর। পিছনে পড়ে রইল বাঁকুড়ায় তাঁর বাল্যস্মৃতির গাঁ-ঘর, দারিদ্রে দীর্ণ‎ পরিবার-পরিজন আর কাদামাটির কুমোরপাড়া।
শান্তিনিকেতনের কলাভবনে তাঁর কাজের নমুনা দেখে নন্দলাল প্রথম দিনই বললেন, ‘‘তুমি সবই জানো, আবার এখানে কেন?’’
একটু ভেবে তারপর বলেন, ‘‘আচ্ছা, দু-তিন বছর থাকো তো।’’


থেকে গেলেন কিঙ্কর। নাগাড়ে সাড়ে পাঁচ দশক শান্তিনিকেতনে কাটিয়ে মৃত্যুর কিছু দিন আগে এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ‘‘সেই দু-তিন বছর আমার এখনও শেষ হল না!’’
কলাভবনে কিঙ্করই প্রথম অয়েলে কাজ করেছেন। সে নিয়েও বিতর্কের শেষ ছিল না। প্রথমে আপত্তি করলেও পরে নন্দলাল মেনে নেন ছাত্রের যুক্তি। রামকিঙ্কর রঁদা, সেজান ও পরবর্তী কিউবিস্ট ছবির সঙ্গে পরিচিত ছিলেন। তাঁর কাজে কিউবিস্ট প্রভাব নিয়েও নন্দলালের সঙ্গে বিরোধ ছিল। সে বিরোধ‎ মিটেও যায়। বলতেন, বলতেন- ‘আমার গুরু নন্দলাল ছিলেন বিশ্বকৰ্ম্মার বরপুত্র। অমন মমতা আর মাষ্টারমশাই পাওয়া দুর্লভ।’ কতখানি শ্রদ্ধা করতেন মাস্টারমশাইকে, একটি ঘটনা ফিরে পড়ি স্মৃতি থেকে।
কিঙ্করের ছাত্র রামানন্দ বন্দ্যোপাধ্যায় লিখছেন, ‘‘আচার্য নন্দলালের শ্রদ্ধানুষ্ঠান। কলাভবনে মাষ্টারমশাইয়ের কাজের ঘরের সামনে জামতলায় জায়গা হয়েছে। প্রায় সব প্রাক্তন ছাত্রছাত্রীরা এসেছেন। নন্দলালকে প্রত্যেকে অর্ঘ অঞ্জলি দিচ্ছেন রমেন্দ্রনাথ, সত্যেন বিশী, গৌরীদি এমন সবাই। প্রত্যেকেই পদ্ম ফুল দিয়ে প্রণাম করছেন। সারিতে কিঙ্করদাকে অর্ঘ্য দেওয়ার জন্য ডাকা হলে দেখি, কিঙ্করদা বিনোদদা-বিশুদার কাজের ঘরের দিকে হেঁটে যাচ্ছেন। ঐ ঘরের সামনে একটি কলকে গাছ, সেখান থেকে কিছু ফুল তুলে এনে সোজা মাষ্টারমশাইয়ের পায়ে অঞ্জলি দিলেন। আমরা এমনটি দেখে কিঙ্করদাকে জিজ্ঞেস করলুম – ‘কিঙ্করদা, আপনি পদ্ম না দিয়ে কলকে ফুল দিলেন?’ খানিক থেমে বললেন – ‘আরে আমার গুরু নন্দলাল শিবসিদ্ধ, তাকে কি দিয়ে অর্ঘ্য দেব!’
রং-তুলি-কাঁকড়ে কাজ শিখতে শিখতে একদিন কলাভবনের পাঠ শেষ হল। শুরু করলেন স্বাধীনভাবে শিল্পের সাধনা। স্বপ্ন থেকে আসা সে সব সৃষ্টির উল্লাসে, মিশিয়ে দিলেন নিজের গোপন-গহন উল্লাস!
নিত্য ভাঙা-গড়ার খেলায় তাঁর সহজিয়া জীবন নিয়ে ক্রমশই জলঘোলা হল শান্তিনিকেতনে। তাঁর দরাজ গলার রবীন্দ্রনাথের গান শুনল না কেউ! বরং শান্তিনিকেতনী তর্ক তুলল তাঁর জীবনচর্যা নিয়ে। কিঙ্করের তখন ঘরে-বাইরে ‘জীবন্ত মানুষের নেশা’।
একবার, দিল্লি যাওয়ার পথে এক আদিবাসী রমণীর যৌবনের দুর্মর আহ্বানের কাছে নতজানু হয়ে তাঁর সঙ্গে নেমে গেলেন অজানা স্টেশনে। হারিয়ে গেলেন যেন। খবর নেই বহুকাল! হঠাৎ করে শান্তিনিকেতনে এসে পৌঁছল  ঠিকানাবিহীন এক টেলিগ্রাম। তাতে কিঙ্কর জানালেন, ‘I lost myself, search myself.’


‘‘জীবনে অনেক মেয়ে এসেছে, এটা সত্যি। কেউ এসেছে দেহ নিয়ে, কেউ এসেছে মানসিক তীব্র আকর্ষণ নিয়ে। কিন্তু ছাড়িনি কাউকে। ধরেছি, আষ্টেপৃষ্ঠে ধরেছি। হজম করে ছিবড়ে করে ছেড়েছি। হজম করার মানে জানো? ও মন্ত্রটা আমার গুরুদেবের কাছে শেখা। তাঁর থেকে জন্ম নিয়েছে আমার অনেক ছবি, মূর্তি, অনেক কল্পনা, আর অনুভব।...আমার মডেলরা আমার বহু স্কেচে, ছবিতে, মূর্তিতে, বেঁচে আছে। মডেলরা তো এভাবেই বেঁচে থাকে।’’
নিজের সম্পর্কে নির্দ্বিধায়ায় এমন করে আর কবে, কোন ভাস্করই বা অকপট হতে পেরেছেন! মডেলদের সঙ্গে রামকিঙ্করের সম্পর্ক নিয়ে নিত্য হাওয়ায় ছড়িয়েছে গসিপ।
তাঁর বিশ্বাস ছিল, ‘‘সব কিছুর মধ্যে যৌনতা আছে, যৌনতা ছাড়া সব কিছুই প্রাণহীন, ঊষর!’’
সে সবের প্রসঙ্গ তুললে কখনও এড়িয়ে যাননি কিঙ্কর। কাল্পনিক নয়, মডেলদের সম্পর্কে তাঁর সে-সব সত্য-স্বীকার আর উক্তি সাতসেলাইয়ে জোড়া-তালি দিয়ে দেখে নেব এই পর্বে। প্রথমে বিনোদের কথা।
এক বার তাঁকে প্রশ্ন করা হল তাঁর মডেল বিনোদকে নিয়ে। তিনি উত্তর দেন, ‘‘বিনোদ, মানে বিনোদিনী? সে আমার ছাত্রী, মণিপুরী মেয়ে।  একটু একটু করে শরীরের বাঁক, উপবাঁকের ভুবন চিনিয়েছিল ও-ই। আলো-অন্ধকারে ওকে ঘুরিয়েফিরিয়ে এঁকেছিলাম অনেক। এক দিন চলে গেল, মণিপুরি ভাষায় একটি নাটকও লিখেছে আমাকে নিয়ে।’’
অসমের মেয়ে নীলিমা?
‘‘নীলিমা বড়ুয়া। নষ্ট হয়ে গেল ওর পোর্ট্রেট। আঁকতে আঁকতে কত বার যে রঙ লেগেছে শরীর থেকে শরীরে... সে সব কোথায় গেল! ভুল করেছি, তখন টাকার অভাবে ভাল রঙ কাজে লাগাতে পারিনি।’’
মনে আছে এসথার জয়ন্তী জয়াপ্পাআস্বামীর কথা?
‘‘মনে থাকবে না কেন? সে তো দক্ষিণী ছাত্রী জয়া। খুব ছিপছিপে ছিল। জয়া নামটা আমারই দেওয়া। সুজাতা করেছিলাম ওকে মডেল করে।’’
ভুবনডাঙার খাঁদু?
‘‘দীর্ঘাঙ্গী খাঁদু ফিরে ফিরে এসেছে আমার ভাঙা ঘরে। সুন্দর ছিল ওর ফিগার। প্রায়ই দুপুর দুপুর আমার একলা ঘরে এসে দাঁড়িয়ে থাকত দরজার চৌকাঠ ধরে। এক কাঁখে থাকত ছেলে। সে দুধ খেত মায়ের বুকের। যে ভাবেই দাঁড়াত শরীরে নৃত্যের ভঙ্গি। অজস্র স্কেচ করেছি ওর।’’
আর রাধি?
‘‘ওই তো রইল শেষ পর্যন্ত আমার কাছে। ওর সঙ্গে মেশা নিয়ে অনেকে আপত্তি করেছিল। ডেকে পাঠিয়েছিলেন বিশ্বভারতীর কর্তারাও। তাও ওকে ছাড়িনি। ও ছাড়েনি আমাকেও। আসলে রাধারানীর সঙ্গে আমার জড়ামড়ি সম্পর্ক!’’


‘‘রিয়ালিটির সবটাই কপি করতে নেই।’’
এত ভাঙাচোরা, এত সম্ভোগের পরও এ কথা বলতেন স্বয়ং কিঙ্কর।
৫১ সালে চলে যাওয়া যাক। শিল্পী পূর্ণেন্দু পত্রী তখন কলকাতা আর্ট স্কুলের ছাত্র। শান্তিনিকেতন পৌষমেলায় গিয়ে তাঁর আলাপ হল তিন যুবকের সঙ্গে।
একটু পরেই যা গড়াবে মিত্রতায়। তাঁরা সাংবাদিক অমিতাভ চৌধুরী, অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন ও শুভময় ঘোষ। এঁদের মধ্যে অমিতাভ পূর্ণেন্দুর স্কেচবুকে রেখার ভুবন দেখে তাঁকে নিয়ে গেলেন রামকিঙ্করের কাছে।
‘‘কিঙ্করদা মানে রামকিঙ্কর? শান্তিনিকেতনের বাগানে যার ওইসব দুর্ধর্ষ মূর্তি? সর্বনাশ! অত বড় শিল্পীর কাছে টেনে নিয়ে যাচ্ছ কেন?’’
‘‘মানুষটাকে আগে দেখো, তারপর বুঝতে পারবে কেন নিয়ে যাচ্ছি।’’
কেমন দেখলেন পূর্ণেন্দু রামকিঙ্করের ভূমণ্ডল?
ছাত্র শঙ্খ চৌধুরীর ছেড়ে দেওয়া রতনপল্লির মাটির বাড়িতে তখন উলঢাল রামকিঙ্করের ঘর-দুয়ার। পূর্ণেন্দু লিখছেন, ‘‘কুঁড়েঘরের মতো একটা ঘর। ভিতরে একটা চৌকি। চৌকির উপর অতি সাধারণ বিছানা। দেয়ালে দেয়ালে ঠেসান-দিয়ে-রাখা দরজা-সমান অয়েল পেন্টিং। এদিকে সেদিকে ভাস্কর্যের টুকরো-টাকরা। জনৈকা স্বাস্থ্যবতী যুবতীর মুখ। এইভাবে ঘুরতে ঘুরতে চোখটা চলে গেল চৌকির নীচেয়। সেখানে মেঝের উপর ডাঁই হয়ে পড়ে রয়েছে হাজার খানেক কিংবা তারও বেশী চিঠিপত্র, খাম-পোস্টকার্ড-পার্সেল-প্যাকেট সব মিলিয়ে। মনে হল, অনেক চিঠির গায়ে প্রাপকের হাতের ছোঁয়াটুকুও পড়েনি এখনও।’’
আর মানুষটা?
‘‘কালো পাথরের একটি জীবন্ত ভাস্কর্য। খালি পা। পরনে আধময়লা লুঙ্গি কিংবা খাটো-ঝুলের পাজামা, যে রকমের পাজামা পরে টোকা মাথায় নন্দলাল হেঁটে যান শালবীথির ছায়ায়। শক্ত চোয়াল। সামনে এগিয়ে আসা ঠোঁট। পেশীবহুল আঁটসাট শরীর। চোখ দুটো যেন বুঁদ হয়ে আছে কিসের নেশায়। যে-রকম রোজ দেখা যায় সে রকম কোনও মানুষ নয় যেন।’’
পূর্ণেন্দুর করা স্কেচ দেখতে দেখতে একটিতে এসে থামলেন কিঙ্কর। সেই স্কেচে পৌষমেলার মাঠ, মাঠে দাঁড়িয়ে মালকোচা-মারা এক শিশু সাঁওতাল। তার এক হাতে একটা বাঁশি নিয়ে বাজাচ্ছে। অন্য একটি বাঁশি গুঁজে রাখা দুই জঙ্ঘার ফাঁকে। কিঙ্কর সেটা দেখিয়ে বললেন, ‘‘এটা বাদ দেওয়া উচিত ছিল। ঠিক হয়নি।’’
পূর্ণেন্দু বলেন, ‘‘ছেলেটার ওইখানে একটা বাঁশি ছিল।’’
এবার কিঙ্কর তাঁর স্বভাবসুলভ ভঙ্গিতে হাসতে লাগলেন। বললেন, ‘‘সেটা তো বুঝতে পেরেছি। তুমি মন থেকে আঁকোনি। কিন্তু রিয়ালিটির সবটাই কপি করতে নেই।’’
সেদিন রামকিঙ্কর অমিতাভ-পূর্ণেন্দুদের তাঁর পাহাড়ি শহর শিলং সিরিজের ছবি দেখিয়েছিলেন।
ওয়াশে আঁকা সে সব অরণ্যগন্ধী, এলিমেন্টাল ছবি দেখে পূর্ণেন্দুর মনে হয়েছিল, ‘‘শিলং যেন নড়ছে, চড়ছে, দুলছে গাছ, হাঁটছে মেঘ, রঙ বদলাচ্ছে রোদ, গাছ শিকড় নামাচ্ছে মাটিতে, খসে পড়ছে কিছু, কেউ যেন ছড়িয়ে যাচ্ছে কারও সঙ্গে আলিঙ্গনে-মন্থনে।’’


‘‘সবাই মারা গেছে, আমার দাদা-বোন-বাবা-মা— সবাই, সবাই।... মৃত্যু সম্পর্কে আমি সব সময়ই উদাসীন। একজন শিল্পী যতক্ষণ সৃষ্টির নেশায় মাতাল হয়ে থাকেন, ততক্ষণ পর্যন্ত মৃত্যু কোনও ভাবেই তাঁকে স্পর্শ করতে পারে না।’’
নেশায় চুরমার হয়ে জীবন আর মৃত্যুর দ্বৈরথকে এ ভাবেই দেখতেন কিঙ্কর।
ষাটের দশকের মাঝামাঝি কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায়, বন্ধু সমীর সেনগুপ্তকে নিয়ে এক বাসন্তিক বিকেলে হাজির হলেন শান্তিনিকেতন।
রিকশা থামল অনিবার্য ভাবে বাংলা মদের দোকান ‘আকর্ষণী’-তে। রিকশায় উঠল দু’ বোতল বাংলা। গন্তব্য রতনপল্লি, রামকিঙ্করের ডেরা।
‘‘কিঙ্করদা, ও কিঙ্করদা...’’
শক্তির হেঁড়ে গলায় হাঁক শুনে লুঙ্গি বাঁধতে বাঁধতে বাইরে এলেন রামকিঙ্কর। মুখে সেই চিরচেনা হাসি।
‘‘আরে কবি এসেচিস—আয়, আয়, কিছু এনেচিস তো হাতে করে?...’’
এর পরের আসরের বর্ণনা দিতে সমীর লিখেছেন, ‘‘শুয়োরপোড়া এল, ফুরিয়ে গেল, একটি রিকশওলাকে ধরে আরও দুটো বোতল আনানো হল, সঙ্গে ছোলাভাজা, সে দুটোও ফুরিয়ে গেল। আবারও দুটো আনানো হল বেশি পয়সা দিয়ে, তখন রাত দশটা বেজে গেছে। তারপর আর আমার কিছু মনে নেই। শুধু মনে আছে, অফুরন্ত বাংলা মদ, অফুরন্ত বিড়ি, অফুরন্ত কথা, স্খলিত গলায় অফুরন্ত রবীন্দ্রনাথের গান।’’
ঢের রাতে ঘুম ভেঙেছিল সমীরের। অন্ধকার ঘরের ভিতর থেকে কোনও মতে চৌকাঠ পেরিয়ে দেখলেন, রামকিঙ্কর একটা টুলের উপর বসে রয়েছেন। উপর থেকে একটা লন্ঠন ঝুলছে। লুঙ্গিটা কোমর থেকে যে খুলে পড়েছে  কিঙ্করের, সে খেয়াল নেই! সম্পূর্ণ নগ্ন! আর তাঁর সামনে একটা অসমাপ্ত মাটির ভাস্কর্য। স্তব্ধ হয়ে চেয়ে রয়েছেন কিঙ্কর।
আরেকবারের কথা। সেও পলাশের দিনকাল।
‘‘কিঙ্করদা, ও কিঙ্করদা...’’
খোয়াইয়ে পলাশ ফুটলে শক্তি যেন আর নিজেকে সামলে রাখতে পারতেন না। কোপাইয়ের চরে উতলা চাঁদের নীচে ভিজতে ছুটতেন কবি ও কাঙাল।
কিঙ্কর শক্তিকে ‘কবি’ বলতেন। তাঁর সঙ্গে প্রথম আলাপের দিন ছিলেন রশিদসাহেবও। পরে ‘কিঙ্করদা’র ডেরায় গেলেই বাইরে থেকে শক্তি বুক চিতিয়ে হাঁক দিতেন। রবীন্দ্রনাথের গান-পদ্য আর অফুরন্ত বাংলা মদে তাঁদের রাত যে কখন শেষ হত, হুঁশ থাকত না কারও।
অশোক-কিংশুকের বেড়ার ওপাশে লালমাটির দেশে, কিঙ্করের সঙ্গে বেসামাল হয়ে দিনযাপনের কথা শক্তি নিজেই লিখেছেন।
সেবার রিকশা রেখে শক্তি ঢুকতেই কিঙ্কর বললেন, ‘‘রিকশা ছাড়লে না? কোথাও যাবে নাকি?’’
‘‘না তো, আপনার কাছেই এসেছি।’’
‘‘তাহলে?’’
‘‘থাক, কিছুক্ষণ।’’
জমানো অভিমানে কিঙ্কর বলেন, ‘‘হ্যাঁ, সেটা ঠিক। ভালো না লাগলে কেটে পড়তে পারবে। বুড়োমানুষের কাছে আজকাল আর কেউ আসে না। বেশ আছি। একা-একা।’’
শান্তিনিকেতনে সেবার দিনভর রিকশা করে খুব উড়েছিলেন শক্তি আর কিঙ্কর। বোলপুর, ভুবনডাঙা, গোয়ালপাড়া। দাউ দাউ দ্বিপ্রহরে রিকশায় যেতে যেতে, নেশায় চুরমার দু’জন। ওঁদের জরুরি কথাবার্তায় কান পাতি আমরা। শুনি কিঙ্কর বলছেন, ‘‘...আচ্ছা, একবার বল্লভপুর ঘাটের দিকে যাওয়া যায়?’’
‘‘কেন যাবে না? চলুন। দুটো বোতল তুলে নিই?’’
‘‘অতটা নেবে? একটাই নাও বরং।’’
‘‘থাক না দুটোই। নষ্ট তো আর হবে না?’’
‘‘তা বটে। ওখানে তোমায় খুব ভালো হাঁড়িয়া খাওয়াব। শোরের মাংস খাও? যা রাঁধে না সাঁওতাল ছুঁড়িগুলো! ফার্স্টক্লাস। চলো, আজ দুজনে মিলে একটা পিকনিক সেরে আসি। আমরা অবশ্য বেশিক্ষণ থাকব না। খেয়ে-দেয়ে ক্যানালের ধারে গিয়ে বসব। আকাশমণির ছায়ায় বসে গুরুদেবের গান গাইব চেঁচিয়ে।...’’
ওঁদের রিকশা ক্রমশ মিলিয়ে যাচ্ছে লালমাটির পথ ধরে বনেরপুকুর ডাঙার বাঁকে। হাওয়ায় হাওয়ায় আর শোনা যাচ্ছে না দু’জনের কথা।


যখন কিছু দেখবে, বাঘের মতো ঘাড় মুচড়ে ধরবে। পিছনে আর তাকাবে না।
রবীন্দ্রনাথের এই কথা বারবার আওড়াতেন তিনি। এ ছিল যেন কিঙ্করের জপমালা।
’৭৫ সাল। ঋত্বিক ঘটক শান্তিনিকেতন গিয়ে ১৬ মি.মি. রঙিন একটি তথ্যচিত্র করলেন কিঙ্করকে নিয়ে। অসুস্থ, তবু গেলেন। প্রতি ফ্রেমে নিজের মতো করে ভেঙেচুরে দেখালেন ভাস্করকে। গোড়ার দিকে একটি ফ্রেমে ক্লোজআপে দেখা গেল বুদ্ধের মুখ। ব্যাকড্রপে পাখোয়াজ।
একটু পরেই ফ্রেমে ঢুকল অদূরে ক্ষীণ কটি, দীর্ঘাঙ্গী বনবালা— সুজাতা। ইউক্যালিপটাসের ছায়া সুনিবিড় পথে মাথায় পায়েসের রেকাব নিয়ে সে যেন হেঁটে চলেছে।
মাদল আর বাঁশির আবহে কোপাই নদীর ধারে আদিবাসী গ্রাম, অনম্র বুক— সুঠাম আর ভারী কোমরের সাঁওতাল মেয়ে— ফ্রেমের পর ফ্রেমজুড়ে ঋত্বিক যেন কিঙ্করের রোদছায়া মাখা আদুল ক্যানভাস এঁকে চলেছেন। একটি ফ্রেমে ধরা দিলেন দুই শিল্পী। জড়ানো গলায় ঋত্বিকের সংলাপ, ‘‘কিঙ্করদা...!’’
‘‘হুঁ।’’
‘‘আপনি যখন রবীন্দ্রনাথের পোর্ট্রেট করছিলেন, তখন উনি আপনাকে কী বলেছিলেন শিল্প সম্পর্কে?’’
রামকিঙ্কর স্মৃতিতাড়িত হয়ে একচোট হাসলেন। তারপর বলেন, বলে চলেন, ‘‘উনি প্রথমে দেখে নিলেন কোথাও লোক আছে কিনা। কারণ অনেক সময় ওনার সঙ্গে লোক থাকত তো, সেক্রেটারিরা থাকতেন। সেই জন্য সব দেখে নিলেন। আমি ওধারে, পোর্ট্রেট করছি ওঁর। উনি বসে বসে লিখছিলেন আর কী, তারপরই বললেন, দেখো, যখন কিছু দেখবে, বাঘের মতো ঘাড় মুচড়ে ধরবে। পিছনে আর তাকাবে না। এই হল শেষ কথা।’’
ছবি এগোয়, কিন্তু শেষ হয় না। দৃশ্য ফুরিয়ে যায়। প্রায় পুরো ছবির শ্যুটিং শেষ করে প্রাথমিক সম্পাদনার পর ব্যাকগ্রাউন্ড সাউন্ডট্র্যাকের কাজ শুরুর মুখেই চিরবিদায় নিলেন ঋত্বিক। অসমাপ্ত তথ্যচিত্রের স্ক্রিনজুড়ে একসময় নেমে আসে দুই শিল্পীর মুখোমুখি অন্ধকার। সেই অন্ধকারে শোনা যায় ঋত্বিক আর কিঙ্করের কথা।
ঋত্বিক প্রশ্ন করেন, ‘‘এই যে আপনার চাল ভেঙে পড়ছে, জল পড়ছে, কী ভাবে সারাবার চেষ্টা করছেন আপনি?’’
কিঙ্কর বলেন, ‘‘পেনশনের টাকা যেটুকু পাই। সেইটুকু থেকে করছি আর কী!’’
‘‘সেটা কি ছবি টাঙিয়ে করা হচ্ছে?’’
কিঙ্কর হেসে ফেলেন। বলেন, ‘‘সেও আছে।’’
হাসতে হাসতে বলে চলেন, ‘‘বড় বড় ক্যানভাস যেগুলো, সেগুলো উলটে দেওয়া আছে। অয়েল কালার কিনা। উপরে কোনও ক্ষতি হবে না। বৃষ্টি পড়ে কিনা, তাই ওগুলো ঝুলিয়ে দিই। ... এগজিবিশনের জন্য ক্যানভাসগুলি নিয়ে যেতে হল, তখন আর কী ঝোলাব?...’’ হাসতে হাসতে বলে চলেন, ‘‘খড় কিনতে হত, কিন্তু যেটুকু টাকা পাই...।’’
এখন কোনও কাজ নেই। বৃদ্ধ হয়ে গেছি। এখন তো আর আঁকতেও পারি না।... চোখে দেখতে পাই না কিছুই। পড়তেও পারি না, কেউ পড়ে দিলে শুনি। কেউ ধরলে হাঁটতে পারি। সমর্থ বয়সের অত্যাচার তার শোধ তুলে নিচ্ছে। মাঝে মাঝে অসহ্য মনে হয়। পাগল পাগল লাগে। কিন্তু কিছু করার নেই। একেবারে বাতিল হয়ে গেছি। চোখ  চলছে না, হাত চলছে না, চোখ অন্ধ। মনে মনে আঁকছি।


রবীন্দ্রনাথের মতো রামকিঙ্করও চাননি শেষ সময় কলকাতায় চিকিৎসার জন্য তাঁকে নিয়ে যাওয়া হোক।
সর্বক্ষণের সঙ্গিনী, মডেল রাধারানি— যাঁর সঙ্গে কিঙ্করের দীর্ঘ জীবনের সম্পর্ক, তিনিও জানিয়েছিলেন, ‘‘উনি যেতে চাননি, ওঁর ভাইপো দিবাকর সই করে দিল। জোর করে ওরা নিয়ে গেল।’’
দিবাকরবাবু অবশ্য অন্য দাবি করেছিলেন, ‘‘ওঁরা আমার সই চাইছেন। একটা লিখিত অনুমতি চাইছেন। কিন্তু আমার দেবার ইচ্ছে নাই।’’
কিন্তু ডাক্তারবাবুদের কথায় শেষ পর্যন্ত তাঁকে ‘সই দিতে হল’। একরকম জোর করে কিঙ্করকে কলকাতায় আনা হয়। শান্তিনিকেতন থেকে আসার দিন তাই জড়ানো গলায় স্বজনদের বলেছিলেন, ‘‘যাচ্ছি শান্তিনিকেতন ছেড়ে। যাচ্ছি— কিন্তু আর ফিরব না। রবীন্দ্রনাথও ফেরেননি।’’
কিঙ্করকে দেখতে একদিন বিকেলে লেডি রাণু মুখোপাধ্যায়ের এলেন। সঙ্গে রথীন মৈত্র ও ইন্দ্ৰ দুগার।
কিঙ্কর রাণুর সব প্রশ্নের সংক্ষিপ্ত উত্তর দিচ্ছেন!
কিন্তু তার দিকে তাকাচ্ছেন না। বিরক্ত রাণু চেয়ার টেনে কিঙ্করের মুখোমুখি। বললেন,
‘‘আপনি আমার মুখের দিকে তাকিয়ে কথা বলুন।’’
কিঙ্কর মৃদু হেসে ফের অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে নিলেন। বললেন, ‘‘এই তো আপনার সঙ্গে কথা বলছি।’’
হতাশ কবির রাণু!
কিছুক্ষণ থেকে চলে গেলেন। কেবিনে সে সময় ছিলেন শুচিব্রত দেব। তিনি বললেন, ‘‘এমন আচরণ কেন করলেন?’’ কিঙ্করের মুখে মৃদু দুষ্টু হাসি।


শিল্পীর যাবার বেলার কথাই সত্যি হল। কলকাতাতেই চলে গেলেন, রবিঠাকুরের ভাস্কর!
মৃত্যুর দু’দিন আগে তাঁকে এসএসকেএম হাসপাতালের উডবার্ন ওয়ার্ডে দেখতে গিয়েছিলেন সত্যজিৎ।
‘‘মানিক, মানিক...!’’
ছাত্রের হাত ধরে কিঙ্কর বললেন, ‘‘মানিক, একটা রিকশা ডেকে আমাকে বাড়ি পৌঁছে দাও!’’
সে-ফেরা আর হল কই?
একসময় চিতা নিভে গেল।
ধোঁয়ায় ধোঁয়ায় ঢেকে যাচ্ছে চাঁদের শশ্মান। ধীরে ধীরে ঢেকে যাচ্ছে ওপারে খোয়াই, বন-বনান্ত, কোপাই পেরিয়ে গগনতল ছুঁয়ে থাকা দিগন্ত।
ঝিরঝিরে বৃষ্টি শুরু হল।
মেঘের গুমোট কেটে সুদূর নীলিমায় দেখা দিল একফালি চাঁদ। শেষ হল দাহ।
কিঙ্করদা চলে গেলেন।
শেষ হল কলাভবনে শিল্পের এক যুগ!

১০
স্মৃতিবাসরে গাইতে বসে কেবলই উদাস হয়ে পড়ছেন মোহর। কী গান... এমন দিনে কী শোনাবেন প্রিয় কিঙ্করদার স্মরণে?
একটু আগেই নীলিমা গাইলেন, সাহানা রাগে, ‘হেরি অহরহ তোমারই বিরহ’। ভাবতে ভাবতেই মোহরের কানে ভেসে আসছিল কিঙ্করদার দরাজ গলায় গান, ‘মোর স্বপনতরীর কে তুই নেয়ে’।
তাঁর মনে পড়ল কিঙ্করদার প্রিয় আরও একটা গানের কথা। আশ্রমের নাটকে কত বার যে বিশুপাগল সেজেছে কিঙ্কর! তাঁর স্মরণ সন্ধ্যায় সেই গানই গাইলেন মোহর।—‘ও চাঁদ চোখের জলের লাগল জোয়ার, দুখের পারাবারে’।
সুর নামল কোমলগান্ধার থেকে শুদ্ধ ঋষভে।
আঁধার রাতে একলা এক পাগলের জন্য চোখের জলে তখন ভাসছে আদিগন্ত খোয়াই।

(লেখাটি পূর্ব প্রকাশিত)
ঋণ
দেখি নাই ফিরে (সমরেশ বসু), রামকিঙ্কর অন্তরে বাহিরে (প্রকাশ দাস), বিশ্বভারতী পত্রিকা, রামকিঙ্কর সংখ্যা, শিল্প সংক্রান্ত (পূর্ণেন্দু পত্রী), এক দুর্লভ মানিক (অমিত্রসূদন ভট্টাচার্য), আমার বন্ধু শক্তি (সমীর সেনগুপ্ত), ঋত্বিক (সুরমা ঘটক)

Post a Comment

0 Comments