স্মৃতির সখ্য

অন্তরঙ্গ সতীনাথ/ পর্ব

আলো রায়



ফণীশ্বরনাথ ‘রেণু’ হিন্দী সাহিত্যে একটি উজ্জ্বল নাম। দীর্ঘ শ্যামবর্ণ পেটানো চেহারা। বড় বড় চোখ, কোঁকড়ানো একমাথা বাবরি চুল, মুখে চুরুট নিয়ে ফরবেশগঞ্জের রেলস্টেশনে এক নম্বর প্লাটফর্মে রামবাবুর স্টলে বিকেলে প্রায়ই বসে থাকতেন। আমরা ক'জন ব্যাঙ্ক কর্মচারী দিনের শেষে রামবাবুর হাতের এক কাপ চা খেয়ে মেসবাড়িতে ফিরতাম। যেদিন ‘রেণুজী’ থাকতেন, সেদিন আমাদের তাড়াতাড়ি ফেরা হত না। পূর্ণিয়ার ছেলে বলে বা সতুদার পাড়ার লোক বলে একটু সস্নেহ প্রশ্রয় ছিল তাঁর। সেই অধিকারে একদিন সসংকোচে জানালাম, ‘রেণুজী, অনেকদিন আগে প্রায় ছেলেবেলায় বলা যায়, আপনাকে দেখেছি সতীনাথ ভাদুড়ীর বাড়িতে।’
‘তাই নাকি?’— মৃদু হেসে বললেন রেণুজী। ‘তা হবে। তখন তো কতই যেতাম গুরুজীর কাছে।’
কেমন যেন অন্যমনস্ক হয়ে গেলেন। সাহস সঞ্চয় করে বললাম, ‘আপনাকে দেখতাম মেঝেতে বসে থাকতে। চেয়ার থাকতেও মেঝেতে কেন?’
হাসলেন রেণুজী। একরাশ ধোঁয়া গিলে বার করে দিলেন। তারপর বললেন, ‘মেঝে থেকে চেয়ারের ওই দেড়ফুট উচ্চতার দূরত্ব এখনও পার করতে পারিনি ভাই।’
মনে আছে সবটাই বাংলাতেই বলেছিলেন। রেণুজী বাংলা বলতেন স্বাভাবিক উচ্চারণে যে কোনও পরিশীলিত বাঙালির মতই। শুধু একবার একটু অন্যমনস্ক ভাবে বললেন, ‘উঁচাইয়াঁ! উঁচাইয়াঁ! কভি নহি ছুঁ সকা.... আজ তক নহি...।’
ট্রেন এসে গেল। গোলমালে বাকি কথা শোনা গেল না। সতীনাথ স্মরণে লীন রেণুজী। হাতের দামি চুরুট পুড়ে যাচ্ছে। নিস্পন্দ।
এখন বিরক্ত করতে নেই। ফিরে এলাম বিদায় না নিয়ে।


ক্রমশ



Post a Comment

0 Comments