রবিবার

আহারে/ ৪

মৌমিতা পাল


রন্ধন অবশ্যই শিল্প। এই শিল্পের ইতিহাস আছে। আর মজার বিষয় হল সেই ইতিহাসে সম্পৃক্ত হয়ে রয়েছে স্বাদ ও সরবরাহ। যেমন যোগান ও চাহিদা— ঠিক তেমন করেই রন্ধনশিল্প তার গতিপথ বদলেছে। এই যেমন সিজলারের সিজলিং ইতিহাস স্পষ্ট বলে গরম লোহার প্লেটে ওভাবে কেন কার্বোহাইড্রেট ও প্রোটিনকে ব্যালানস করে রেখে সার্ভ করা হয় ফুল মিল। ঠিক তেমন আমাদের ঘণ্ট, শুক্তো, ঝোল, ঝালেরও রয়েছে নানান চলাচল ও ইতিহাস।
স্থানভেদে এক নাম অন্য নাম হয়ে যায়। ঘণ্ট আর বেস্বরী কখনোই আলাদা কিছু নয়। ঘণ্টকেই উত্তরবঙ্গে মূলত বেস্বরী বলা হয়। ঠাকুমা নানান বেস্বরীর গল্প শোনাতেন দুপুরে ঠাকুঘরে মাদুর পেতে চুলে বিলি কাটতে কাটতে। লাউয়ের বেস্বরী ছিল ঠাকুরদাদার প্রিয় পদ। শুধু রান্নাই নয়, রান্না করার পর উচ্ছ্বিষ্ট জিনিস দিয়েও প্রস্তুত হত নানান শিল্পসামগ্রী। মাছের আঁশ দিয়ে বানানো হত শোপিসের পুতুলের জামা। রং চড়ত আঠা লাগানো আঁশের গায়ে। কী অপূর্ব দেখতে হত সেসব। ঠাকুমা ফরিদপুরের মেয়ে হলেও বিয়ে হয়েছিল পাবনা শহরে। অথচ ঠাকুরদাদার চাকরিসূত্রে ঘুরতে হয়েছিল ভারতের নানান প্রান্তে। শিখেছিলেন নানান পদ। বাংলাদেশ ও ভারত তখনও অবিভক্ত। পাবনার বাসায় ফিরতেন ঠিক দুর্গাপুজোয়। সারা বছর যেখানেই থাকুন, পুজোর সময় বাসাতে ফিরতেই হবে- এমনটাই ছিল নিয়ম। বর্তমানে সে বাসা মিলিটারি হসপিটাল।
পুজোর সব কটা দিন আঁশওয়ালা মাছ রান্না হবেই। এক এক দিন এক এক মাছের পদ। কলকাতার বাসাতে স্থায়ীভাবে স্থিতু হলেও সে নিয়ম কোনওদিনই বদলায়নি। ঠাকুমাকে তার শাশুড়ি হাতে করে শিখিয়েছিলেন নানান ঝোল ও ঝাল। বাসায় মুর্গি ঢোকার নিয়ম না থাকলেও বারান্দায় আলাদা উনোনো মাংস রান্নার অনুমতি ছিল।
অনেক বন্ধুর বাসাতেই দেখতাম এমন নিয়ম। বেশ মজা লাগত। বাবার মুসলিম বন্ধুর মার থেকে অবশ্য ঠাকুমা শিখে নিয়েছিলেন মুর্গ জাহানারা। আজ ভাগ করে নেব সেই মুর্গ জাহানারার স্বাদ।বাসার হাজারটা বিধিনিয়ম যে স্বাদকে আটকাতে পারেনি। আর ভাগ করে নেব  ঠাকুমার উত্তরবঙ্গে থাকার সময় শেখা অসমীয়া লবঙ্গ মিঠাই। উত্তরবঙ্গের দার্জিলিং- এর বাসায় থাকাকালীন অনেক অসমীয়া রান্নাই ঠাকুরদাদার বন্ধুর পরিচয়সূত্রে হেঁশেলে প্রবেশ করে। বাঙালি রূপ পরিগ্রহ করে অন্য প্রদেশের সেসব রান্না চিরতরে থেকে যায় হেঁশেলেই।

মুর্গ জাহানারা

উপকরণ: ১ কিলোগ্রাম মুরগি ১০/১২ পিস, ২৫০ গ্রাম টক দই, দুই বড় চামচ কাজুবাটা বা ১০০ গ্রাম কাজুবাটা, দুটো পেঁয়াজ বাটা, বড় চামচের ১ চামচ রসুনবাটা, চিনি সামান্য, সাদা তেল বা ঘি দুই বড় চামচ, নুন আন্দাজ মতো, শুকনো লঙ্কা ৫-৬ টি এবং আস্ত কাঁচা লঙ্কা ৫-৬ টি, জায়ফল ও জৈত্রী ১/২ চামচ, ক্যাওড়া জল ১ চা চামচ, ক্রিম ১ বড় চামচ, কাশ্মিরী লঙ্কা গুঁড়ো।
প্রণালী: দই, আদা, রসুন, পেঁয়াজ বাটা, কাজু বাটা, নুন চিনি আর ১/২ চামচ লঙ্কা গুঁড়ো দিয়ে মাংসটা অন্তত ৩০ মিনিট ম্যারিনেট করে রাখুন। ২ বড় চামচ তেল বা ঘি গরম করে কড়াইতে ম্যারিনেট করে রাখা মাংসটা ছেড়ে দিন। ভাল করে নাড়ুন। সামান্য কষে ঢাকা দিয়ে দিন। জল দেবেন না। মাংস সেদ্ধ হওয়া পর্যন্ত ঢিমে আঁচে রাখুন (১০-১৫ মিনিট)। মুরগি নরম হলে জায়ফল, জৈত্রী ও ক্রিম একসাথে ভালো করে মিশিয়ে নিন। আরও ৫-১০ মিনিট ঢিমে আঁচে নাড়াচাড়া করে নামিয়ে নিন


অসমীয়া লবঙ্গ মিঠাই

উপকরণ: ময়দা ৩০০ গ্রাম, ৩ বড় চামচ, বেকিং পাউডার ১ চিমটে। পুরের জন্য : খোয়া ক্ষীর ১০০ গ্রাম, চিনি ১ বড় চামচ, দুধ ২ বড় চামচ, এলাচ গুঁড়া ১ চামচ, পেস্তা, বাদাম কুচি ও কিশমিশ পরিমাণমতো সব একসাথে কড়াইতে সামন্য নেড়ে নিন। চিনির রস করতে লাগবে চিনি: চিনি ৪০০ গ্রাম, জল ৩-৪ কাপ।
প্রণালী: ময়দাতে ঘি দিয়ে, তাতে অল্প জল দিয়ে শক্ত করে মাখুন। মাখা ময়দা থেকে ছোট ছোট লেচি কেটে লুচির মতো বেলে নিয়ে মাঝখানে পুর দিন। চার ভাঁজ করে ( চিঠির খামের মতো) মুড়ে মাঝখানে একটি লবঙ্গ গেঁথে আটকান। কড়ায় গরম তেলে ছাড়ুন। বাদামি ভেজে চিনির রসে ডোবান। চিনির রস করতে হলে চিনি আর জল একসঙ্গে ফুটিয়ে নিয়ে একটু ঘন রস তৈরি করুন। পরে রস থেকে তুলে মিঠাই থালায় সাজান।

Post a Comment

0 Comments