ওষুধ যত না, গ‌ল্প বহুগুন

ওষুধ যত না, গ‌ল্প বহুগুন  

বর্ষণজিৎ মজুমদার । ১০ জুন, ২০২০ । ক্লিভল্যান্ড


রোনা ভাইরাস নিয়ে চারদিকের বেশির ভাগ কথাবার্তাই হাওয়ায় ভাসানো! শুনতে ভাব গম্ভীর! আর এই বাণীগুলো বেশ একটা ফুটেজমুখি!
যেমন অহরহ শুনতে পাবেন— লকডাউনটা বড় তাড়াতাড়ি উঠে যাচ্ছে, এবার সাংঘাতিক একটা মড়ক শুরু হয়ে আমরা সবাই মরবো! যদি বলেন কেন? লকডাউনে যারা বেরোবে তারা তো আর অসুস্থ নন? ব্যাসসস! সঙ্গে সঙ্গে আপনি একটি আস্ত— ডু বা গাধা! এটাও জানেন না যে Asymptomatic বলে একটা কথা আছে, এমন অনেক লোক ঘুরে বেড়াচ্ছে যাদের কোনও উপসর্গ নেই, যারা COVID ছড়াচ্ছে মনের সুখে! আপনার মতো গবেটদের সাথে তর্ক করে বৃথা! বেশ একটা ফেসবুক এ লাইক এর বন্যা বা ফুটেজ খাবার মতো কথা! আপনি যদি ভয়ে ভয়ে প্রশ্ন করেন আচ্ছা Asymptomatic কেন হয়? তাহলে কয়েকজন পন্ডিত আবার মার্ মার্ করে ঝাঁপিয়ে পড়বে! ইমিউন সিস্টেম বোঝেন? আরো ফুটেজ! চারপাশটা চলছে একটা সোজা সরল ব্যাখ্যার ওপর! যেটা টিভি তে পন্ডিতেরা দু’বেলা বলে চলেছেন! সবই সোজা সাপ্টা ব্যাখ্যা! ফুটেজ মুখি! বিজ্ঞান মুখি কখনোই নয়! এই COVID-১৯, র প্রভাব মানব দেহে কি ভাবে ছড়ায় সেটা কিন্তু ধোঁয়াশা, কুয়াশা ঢাকা একটা রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে সত্যিটাকে জানা আর বিজ্ঞানে সত্যিটাকে জানতে গেলে দরকার কিছু খটমটে জটিল প্রশ্ন আপাত দৃষ্টিতে বোরিং এবং ফুটেজ থেকে অনেক দূরের একটা দুর্গম রাস্তা! আজকে এই Asymptomatic ব্যাপারটাকেই আরেকটু ঘেটে ঘ করা যাক। সম্প্রতি WHO র এক প্রতিনিধি দুম করে একটা কথা বলে ফেলেছেন খেয়াল করেছেন কিনা জানি না যে Asymptomatic COVID পজিটিভ রা খুব কম ক্ষেত্রেই রোগ ছড়াতে পারে! ব্যাস মার্ মার্ করে সবাই ঝাঁপিয়ে পড়লো! শেষে মহিলা নিজের চাকরি বাঁচাতে ঢোক গিলে বলে ফেললেন না না আমি ঠিক তা বলতে চাইনি! আসলে সবার শেষে রাজনীতি আর রাষ্ট্রযন্ত্রের শেখানো, হাওয়ায় ভাসানো, শুনতে সহজ কথা গুলোই শেষ কথা! এবার ফিরে আসবো কিছু খিটমিটে প্রসঙ্গে।

১. Asymptomatic COVID-১৯ পজিটিভ মানুষের অস্তিত্ব নিয়ে আমার কোনও প্রশ্ন নেই। আমার মূল প্রশ্ন তারা ভাইরাস ছড়িয়ে ব্যাপক হারে সংক্রমণ ছড়াচ্ছে কিনা। Virology র এক্সপেরিমেন্টাল পদ্ধতি নিখুঁত ভাবে অনুসরণ করে এখন অবধি একটাও Peer Reviewed Scientific Publication আমার চোখে পরেনি। যা চোখে পড়েছে সবই নীতিমুখি, hypothesis বা Prediction বেসড খানিকটা পরিসংখ্যান এর ঘোটলা! ফাঁক ফোঁকর ভর্তি, ভরসা করা যায় না এমন কাজ। আবার উল্টোদিকের কিছু কথা বার্তাও চোখে পড়ছে যেমন সুপার স্প্রেডার মানুষের অস্তিত্ব! এই মুষ্টিমেয় কিছু মানুষ যারা একাধারে Asymptomatic এবং সুপার স্প্রেডার তারাই সংক্রমণ ছড়ানোর মূল কারণ। কিন্তু সবই অনুমান ভিত্তিক! কঠিন প্রশ্ন করলেই সব চুপ চাপ। আবার ফিরে আসি প্রশ্নে।

২. হাঁচি, কাশি, থুথু র সাথে ড্রপলেট দিয়ে যে ভাইরাস আসে সেটা শ্বাস নালীর কোষের ভেতরেই তৈরি হয় এবং কোষকে ফাটিয়ে সদ্যোজাত ভাইরাস বেরিয়ে আসে (Replication আর Lysis ). Uper Respiratory Track এর ভাইরাস-ই হাঁচি কাশি থেকে বেরিয়ে আশা ড্রপলেট এ ঢুকে পড়তে পারে। একটাও প্রমান এখন অবধি পাইনি যেখানে Asymptomatic দের ক্ষেত্রে uper আর lower রেসপিরেটরি ট্র্যাক থেকে কোষ সংগ্রহ করে (Swab এন্ড Lavage কালেকশন প্রসেস এ ) ভাইরাল লোড (by Plauque Assay ) আর রেপ্লিকেশন (by ইন ভিট্রো live ভাইরাস culture ) দেখা হয়েছে।

৩. Asymptomatic কিন্তু কেন? Asymptomatic দের ক্ষেত্রে যে ভাইরাসটা ভেতরে ঢুকেছে সেটাই কি তুলনামূলক ভাবে কম ক্ষমতাশালী? নাকি মারাত্মক ভাইরাস ভেতরে ঢুকেও প্রতিরক্ষা কোষের চাপে নিজেকে পাল্টে ফেলেছে দ্রুত? নাকি ভাইরাসটা একই রকম মারাত্মক শুধু প্রতিরক্ষা কোষের শক্তি টাই ভাইরাস কে অসুখ বাধাতে দেয়নি? Asymptomatic দের Swab থেকে জ্যান্ত ভাইরাস কে in vitro culture করে তাকে Sequence করতে হবে? কোথায় সেই কাজ?

৪. Asymptomatic দের ক্ষেত্রে ভাইরাস যদি এতো বাধা পেয়ে নিজে বাড়তে না পারে, তাহলে পরের প্রশ্ন হচ্ছে তাহলে কি ভাবে Asymptomatic রা এতো ভাইরাস ছড়াচ্ছে?

৫. Asymptomatic দের থেকে ভাইরাস পেয়ে যারা COVID আক্রান্ত হচ্ছেন তাদের মধ্যে কত ভাগ মারাত্মক অসুস্থ হচ্ছেন? নাকি তারাও অনেকেই Asymptomatic হয়ে যাচ্ছেন? সেটা যদি হয় তাহলে তো এই ধরণের কাজ থেকেই পাওয়া যেতে পারে ভবিষৎতের Live Attinuated ভাইরাস, যেখান থেকে বেরিয়ে আসতে পারে অত্যন্ত কার্যকরী দীর্ঘমেয়াদি ভ্যাকসিন? Live Virus Isolation আর Sequencing ভিত্তিক একটাও কাজ চোখে পড়ছে না।

৬. যে লোকটি COVID ইনফেকশন এ মারাত্মক অসুস্থ হলো আর যে লোকটি উপসর্গহীন রয়ে গেল তার কারণ জিজ্ঞেস করলেই পন্ডিতের দল এক কথায় বলে দিচ্ছে সবটাই প্রতিরক্ষা কোষ। কিন্তু ওই যে বললাম যেই পরের ধাপের প্রশ্নটা করা হল কেন আলাদা প্রতিরক্ষা কোষ? তাহলে আর কোনো উত্তর নেই? আর থাকবেই বা কি করে? কারণ Genetic Basis of COVID Sensitivity নিয়ে খুব একটা উচ্চবাচ্য শোনা যাচ্ছে না। একমাত্র ইটালির কিছু বিজ্ঞানী এই ব্যাপারে খুব সিরিয়াস কাজ কর্ম করছেন। Whole Genome Sequencing Based.

সবাই চটজলদি ওষুধ আবিষ্কার করতে চাইছেন, হ্যা তাতে ওষুধ যত না হচ্ছে ফুটেজ আর হাইপ হচ্ছে তার বহুগুন। COVID এর ক্ষেত্রে এই Asymptomatic লোকেরা সোনার খনি, এখন অন্ধকার বলে সুড়ঙ্গ কাটার লোক নেই। এই আপাত দৃষ্টিতে ফুটেজ বিহীন গভীর কাজগুলো থেকেই বেরিয়ে আসবে এই ভাইরাস আর দেহ কোষের জিন এর জটিল কারিকুরি। সেই রহস্যের জট ছাড়ানোর দিকেই তাকিয়ে আছে আগামী দিনের কার্যকরী ওষুধ বা ভ্যাকসিন। আমরা যেন না ভুলে যাই এটি একটি RNA Virus, ২০২১ এ কয়েকটি ভ্যাকসিন যে বাজারে আসবে তাতে কোনও সন্দেহ নেই, কিন্তু সুদূর প্রসারী কার্যকারিতা নিয়ে সন্দেহ থাকবেই এবং সেটা অমূলক ও নয়। তাই গভীরে যেতেই হবে এই সমস্ত প্রশ্নের উত্তর পেতে।

Post a Comment

0 Comments