আনন্দপাঠশালা

বন্ধু-দাদার চিঠি


‘কোথাও আমার হারিয়ে যাওয়ার নেই মানা... মনে মনে...’
সত্যি বন্ধুরা, গৃহবন্দিত্বের এইকালে আমাদের মনে মনেই হারিয়ে থাকতে হবে। কল্পনার জাল বুনে নতুন নতুন সৃষ্টিকে তুলে ধরতে হবে একে অপরের কাছে এই ইন্টারনেটের মধ্যে দিয়েই। কী করব বলো, মাসের পর মাস যে আমাদের ইস্কুলে যাওয়া নেই, পড়া নেই, খেলা নেই। নাচ-গান, অনুষ্ঠান কিচ্ছু নেই... কিচ্ছু নেই। সরাসরি মাস্টারমশাইদের কাছে শাসন, আদর কোনওটাই সে ভাবে নেই। বন্ধুদের মধ্যে এন্তার মজার সময়গুলো, গ্রীষ্মের ছুটির আগে গাছ থেকে কাঁচা মিঠে আম পেড়ে জমানো, বর্ষা এলে অকারণে ভিজতে গিয়ে দিদিমনির বকুনি... কিচ্ছুটি যে নেই এ বছর।
তাই তোমাদের এই গৃহবন্দি সময়ের কথা লিখতে বলেছিলাম আনন্দপাঠশালায়। কেউ কেউ পাঠাতে আরম্ভও করেছো। আজ তেমনই পাঠভবন বিশ্বভারতীর পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী সৃজনী রায় লিখে পাঠালো তার লকডাউন সময়ের দিনলিপি।
সঙ্গে রইল তোমাদের প্রিয় কবিদিদি মৌসুমিদির একটি কবিতাও। তোমাদের জন্য উনি লিখে পাঠিয়েছেন একটি সুন্দর কবিতা।
বন্ধুরা, সাবধানে থেকো। অবাধ্য বড়দের শাসনে রেখো, আর দেখো সবাই যেন মাস্ক মুখে এঁটেই বাইরে বেরোন।
আজ তবে এটুকুই থাক। আবার পরের রবিবার দেখা হচ্ছে।
তোমাদের বন্ধুদাদা
অঙ্কন রায়


ছবি : তড়িৎ রায়চৌধুরী

স্কুল নেই/ ১ 

মনখারাপ করছে পাঠভবন

সৃজনী রায়

আজ উনিশে জুলাই হয়ে গেল। ভাবতেও অবাক লাগছে যে চারটে মাস ঘরের মধ্যে বসে বসেই কেটে গেল। তবে শেষ তিনমাস ধরে মনটা একেবারেই ভাল নেই। প্রথম একমাস তাও মনে হচ্ছিল যে সময়টা বেশ আলাদা রকম যাচ্ছে। স্বপ্নেও ভাবতে পারিনি যে কোনওদিন আমাদের এই ভাবে বাড়ির ভিতর বন্দি হয়ে থাকতে হবে এক মারণ রোগের হাত থেকে বাঁচতে।
এখনও সেদিনের কথা স্পষ্ট মনে পড়ছে, দোলের নাচের মহড়া পর্যন্ত দিয়ে এলাম। বাড়ি ফেরার কিছুক্ষণের মধ্যে ফোনটা বেজে উঠলো। শুনলাম দোল আর হবে না করোনা ভাইরাসের জন্য। সেই নিয়েই ভীষণ মন খারাপ হয়েছিল। আর তার কিছুদিনের মধ্যেই জানতে পারলাম যে স্কুলও বন্ধ। তখন অবশ্য খুব একটা মন খারাপ হয়নি কারণ তখন জানতাম যে পনেরো দিন ছুটি। সেই পনেরো দিনটা যে আজ চার মাসে ঠেকেছে, সে কথা তখন ভাবতেও পারিনি।
কতদিন দেখা হয়নি আমার সব বন্ধুদের সঙ্গে। সেই টিফিনের সময় গল্প করা...
তারপর পাঁচ মিনিটের জন্যে হলেও একটু খেলে নেওয়া... এক ক্লাস থেকে আরেক ক্লাসে যাওয়ার ফাঁকে একটু গল্প করে নেওয়া... কোনও একটা ক্লাস না হলে তখনই নাচ-গান নিয়ে মেতে ওঠা... কতদিন হয়নি... তাই না!
কেমন আছে আমার সেই সেগুন গাছটা, যার গায়ে আমরা ‘প্লাস্টিকমুক্ত এলাকা’র কাগজ সাঁটিয়েছিলাম! আম্রকুঞ্জের গাছগুলোতে তো আম এবার নকুলদানার আকার নিতে নিতেই ফাঁকা হয়ে যায়নি। নিশ্চয়ই গাছের আমগুলো এতদিনে পেকে গেছে। খেতেও নিশ্চয়ই বেশ মিষ্টি হয়েছে। পাতাবাদাম গাছের নীচটা বোধহয় পাতাবাদামে ভরে গেছে। মাঝে মাঝে হয়তো ধুপ্‌ধাপ্‌ করে তাল পড়ছে। আর বটগাছের ঝুরিগুলোও নিশ্চয়ই আরও খানিকটা বড় হয়ে গেছে। কেমন আছে ওরা সবাই? নিশ্চয়ই ওদেরও ভীষণ মনখারাপ এত দিন, এত মাস আমাদের দেখতে না পেয়ে। হনুমান, পাখি, প্রজাপতি, পোকামাকড় সবাই বোধহয় খুঁজে বেড়াচ্ছে আমাদের, তাই না? ওরা তো আর জানে না, এই পৃথিবীতে কী চলছে। বড় মনখারাপ করছে ওদেরকে না পেয়ে। কবে আবার দেখা হবে ওদের সঙ্গে? আবার আগের মতো খেলব, গল্প করব কবে? আবার আগের জীবন ফিরে পাব কবে?
(পঞ্চম শ্রেণি, পাঠভবন, বিশ্বভারতী)

পারবে না তা

মৌসুমি চট্টোপাধ্যায় দাস


যেমন খুশি সাজতে পারো,
গ্রামের রানার - চিঠির থলে,
টেডি বিয়ার সাজতে পারো
চট্‌ জলদি বেশ বদলে৷
সাজতে পারো দিদিমণি,
নাম ডাকবে চমশা এঁটে,
ইচ্ছে মতো কালি মেখে
সাজতে পারো মজুর মুটে৷
পাগলী বুড়ি সাজতে পারো,
সাজতে পারো রাজকুমারী,
সাজতে পারো টেরেসা কি
মাতঙ্গিনী বীর সে নারী৷
লাগিয়ে দাড়ি রবি কবি,
তিলক কেটে নদের নিমাই,
সাজতে পারো এসব, সঙ্গে
বুদ্ধি এবং এলেমও চাই৷
কিন্তু কি আর সাজতে পারো
শিশির মাখা নরম বাগান?
শেষ না হওয়া নীল চাঁদোয়া
আলোয় ভরা দূর আশমান?
সাজতে পারো অতল অপার
ঢেউমাখা এক সফেন সাগর?
পারবে হতে আকাশ ছোঁয়া
সবুজ সতেজ সই তরুবর?
জানি তুমি পারবে না তা,
তাই তো বলি, এদের কথা
একটু ভেবো, বিমল রেখো
এই পৃথিবীর নক্সীকাঁথা৷

Post a Comment

0 Comments