পান্থ/ ৩ । খাদের ধারের রেলিংটা

খাদের ধারের রেলিংটা 

হোমাগ্নি ঘোষ


প্রেসিডেন্সি কলেজে পড়ার সময় আমাদের দ্বিতীয় বাড়ি ছিল কফিহাউস। কলকাতায় মানুষ হলেও আমার শৈশবের দীর্ঘ সময় কেটেছে উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন চা বাগানে, তিস্তা নদীর পাশে হটাৎ করে নাম না জানা প্রজাপতির সঙ্গে।
পাহাড় জঙ্গলে অনেক সময় কাটালেও একটা জায়গা ছোটবেলা থেকে ভীষণ প্রিয় আর কাছের হয়ে গেল আমার কাছে, মন খারাপ হলেই আমি যার কাছে এখনও ছুটে ছুটে যাই, যার খাদের ধারের রেলিং বেয়ে আমি আজো আমার শৈশব খুঁজি, যেখানে গেলে আমার মনে হয় আমার বাবা আমাকে বলছে– জানিস বাবি এখান থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখা যায়। আজ আমার সেই দার্জিলিঙের কথা বলি।
দার্জিলিঙে পৌঁছেই প্রথমেই চল যাই ম্যাল এ, ভারতবর্ষের বহু শৈল শহরে গেছি কিন্তু মেঘ রোদ বৃষ্টির খুনসুটিতে মেতে থাকা দার্জিলিঙের ম্যাল তাকে সবার থেকে স্বতন্ত্র আর অনন্যা করেছে। আপনি আনমনে হাঁটছেন এক রোদেলা দুপুরে হটাৎ করে এক দলা নীল কুয়াশা এসে ভিজিয়ে দিল আপনার সারা শরীর। অনেকে বলে, আমার প্রিয় দার্জিলিং নাকি ঘিঞ্জি নোংরা, আমি বলি তুমি দেখার দৃষ্টি অনুভূতির মাত্রা বাড়াও, রঙ বেরঙ্গের পোশাক পরা মিষ্টি নেপালি বাচ্চার হাসি, গরীব ঘোড়াঅলাদের হটাৎ একটানা কাজের ফাকে বিড়ি ধরানো, দুরে ভুট্টা বিক্রি করা সেই দরিদ্র মেয়েটার একরোখা জেদ আমাকে ভালবাসতে শিখিয়েছে, জীবনের মানে একটু হলেও উপলব্ধি করেছি।
মোদ্দা কথা দার্জিলিঙের সেই হঠাৎ করে বৃষ্টি, শিরশিরে ঠাণ্ডা হাওয়া, নেপালি কিশোরীর হাসি, পথচলতি সেই মাতালের এলোমেলো পায়ে পথ চলা, সেই প্রচণ্ড দরিদ্র মানুষগুলোর হেরে যেতে যেতেও জীবনের কাছে হার না মানার চ্যালেঞ্জ আমাকে দার্জিলিঙের প্রেমে ফেলেছিল।
প্রথমেই চলে যাই দার্জিলিং জু তে আর তার সঙ্গে HMI(HIMALAYAN MOUNTAINING INSTITUTE) পথে যেতে পড়বে দারুন সুন্দর St.Andrews church অদ্ভুত তার স্থাপত্য, ১৮৪৩ সালের নভেম্বর মাসের শেষের দিকে এইটা তৈরি হয়েছিল ভূমিকম্পে প্রচণ্ড ক্ষতি হওয়ার পর পুনরাই ১৮৭৩ সালে এটা ঠিক করা হয়। মূলত স্কটিশ সৈন্য আর ইংলিশ টি প্লান্টের রা এখানে উপাসনা করত। আঁকা বাকা উঁচু নিচু চড়াই উতরাই পথ ধরে চলতে থাকি চলুন, তেষ্টা পেয়ে গেল যে কোন চিন্তা নেই, রাস্তায় পড়বে hot stimulating caffe বলে ছোট্ট দোকান, ভেজ মোমও আর তার সাথে কফি, দোকানের উলটোদিকেই nightingale park তাতে ফুটে আছে অজস্র রঙ বেরঙের ফুল।


১৯৫৮ সালে প্রায় ৭০০০ ফিট উচ্চতায় অবস্থিত পদ্মাজা নাইদু হিমালয়ান জুলজিকাল পার্ক যার অন্যতম আকর্ষণ রেড পাণ্ডা, তুষার চিতা, হিমালয়ান নেকড়ে। এছাড়াও আছে অর্কিড, নানান স্তন্যপায়ী, পাখি। এখানে তুষার চিতার ক্যাপটিভ জনন বেশ সাফল্য পেয়েছিল। এর পর চল যাই hmi মিউজিয়াম দেখতে সেখানে দেখব বিখ্যাত তেঞ্জিং নোরগের সমাধি এবং EVEREST EXPEDITION ইতিহাসের অমুল্য সব তথ্য। হালফিলের টুরিস্টরা তো এরপর চেনা জায়গা গুলোতে যায়। আমার সাথে একটু অজানা দার্জিলিং কে দেখতে যাই।


সন্ধ্যা নামছে আমার পাহাড়ে সারা আকাশ জুড়ে কমলা রঙের সামিয়ানা, বাতাসে ভেসে আসছে গ্লেনারির কেক-পেস্ট্রির গন্ধ, আমরা চললাম দার্জিলিং বিগ বাজারের দিকে, ঠিক রিঙ্ক মলের বিপরীতেই joeys pub…অঞ্জন দত্তের গানের লাইনটা মনে পরে যাবে— দার্জিলিঙের শ্যাওলা ভেজা গলির ভিতর জয়িস পাব… ছোট জায়গা, নিভু নিভু আলো আধারি, সারা বিশ্বের অনেক বিদেশী পর্যটক, সবাই বুদ পুরান দাজুর গীটারের সুরে, আমিও মাতলাম সেই সুরে হাল্কা বিয়ারের নেশায়, মিশিয়ে দিলাম নিজেকে সারা দুনিয়ার সাথে, সারা পৃথিবী হল আমার ঘর সেই ঘরের কাঠামো তৈরি ভালোবাসা আর বন্ধুত্তে। মনে পড়ছিল, জন লেননের সেই কথাটা everything and everyone is connected by a chain of love my brother… আজ এতোটাই থাক আরেকদিন নিয়ে যাব আমার প্রিয় দার্জিলিঙের অন্য প্রান্তে। যাবার আগে চল একসাথে গলা মিলাই কয়েকটা লাইন এর সাথে, আজকের হিংসা মাখানো পৃথিবীতে কথাগুলো খুব জরুরী Imagine there is no heaven its easy if you try, no hell below us above us only sky. Imagine all the people living for today. Imagine there is no countries, it is not hard to do. Nothing to kill or die for and no religion too. Imagine all the people living life in peace…YOU MAY SAY I AM A DREAMER BUT I AM NOT THE ONLY ONE,I HOPE SOMEDAY YOU WILL JOIN US AND THE WORLD WILL BE AS ONE.
দার্জিলিং গেলে আপনি অবশ্যই যাবেন— HMI and Zoo, দার্জিলিং রোপওয়ে, টাইগার হিলের সূর্যোদয়, বাতাসিয়া লুপ, দার্জিলিং মল চৌরাস্তা, রক গার্ডেন আর গঙ্গা মাইয়া পার্ক, জাপানিজ টেম্পল আর প্যাগোডা, হ্যাপি ভ্যালি টি এস্টেট, মহাকাল মন্দির, টিবেটিয়ান রিফিউজি সেন্টার, ঘুম মনেস্ট্রি আর দার্জিলিং সেন্ট পলস স্কুল।
অবশ্যই খাবেন কেভেন্টার্সের সসেজ, গ্লেনারির কফি আর পেস্ট্রি সন্ধ্যায়, পেনাম, ওয়াশিংটন, কুঙ্গু রেস্টুরেন্টের দুর্দান্ত মোমো।
অনেকের প্রশ্ন কোথায় থাকবো ভালো ভিউ দেখবো তাদের জন্যে mayfair darjeeling, darjeeling himalayan gateway residency, hotel ivy castle, Little tibet, pahari soul homestay খুব ভাল। করোনা বিদায় নিয়ে আবারও এখান থেকে প্রাণ ভরে দার্জিলিং-কে উপভোগ করুন।

Post a Comment

0 Comments