আনন্দপাঠশালা


বন্ধুদাদার চিঠি

করোনাকালের এই সুদীর্ঘ সময়ে আমার ছোট্ট বন্ধুরা যে কতটা মনমরা হয়ে বাড়িতে বসে আছো, তা আমরা ভীষণ ভাবে বুঝতে পারি। তোমাদের মধ্যে যারা একটু বড়, পৃথিবীর এই সংকটময় পরিস্থিতির কথা বুঝছো, জানছো তারা বাড়িতে বসে বসে অনলাইন পড়াশোনার পাশাপাশি নানার সৃষ্টিশীল কাজে লিপ্ত থাকতে পারছো। যারা সংস্কৃতিমূলক অনুষ্ঠানে অনলাইনের মাধ্যমেই অংশগ্রহণ করছো, যারা ছবি আঁকছো, গল্প লিখছো, আরও কত কি করছো, তাদের প্রত্যেকেকে আমাদের অকুন্ঠ অভিনন্দন আর কুর্নিশ জানাই।
তোমাদেরই এক বন্ধু আলিপুরদুয়ার শহরের ক্লাস ফাইভের ছাত্র অনুব্রত সরকার পর পর কয়েকটি অ্যাপ তৈরি করে আমাদের তাক লাগিয়ে দিয়েছে। ওইটুকু এক ছেলের তৈরি করা ওই অভিনব অ্যাপগুলি গুগল স্বীকৃতি দিয়েছে। এতে বহু শিক্ষক/ছাত্র-ছাত্রীদের স্কুলের ক্লাস, বিভিন্ন সংগঠনের মিটিং, কলেজ, ইউনিভার্সিটির পঠন/পাঠন ও আলোচনা, সাংস্কৃতিক সংস্থাগুলির বৈঠক ইত্যাদি সুন্দর ভাবে পরিচালিত হচ্ছে ওই অ্যাপের মাধ্যমে। দশ বছরের অনুব্রত তাই ছোট হয়েও ছোট নয়। ওকে আবারও একবার সেলাম জানাচ্ছি।
‘ইস্কুল নেই’ বিভাগে আজ কালনা একমি একাডেমীর ষষ্ঠ শ্রেণির গুণী ছাত্র প্রবাহনীল দাস তার লেখা পাঠিয়েছে। বন্ধুরা প’ড়ে দেখো এই সংকটকালটাকে নীল কিভাবে অতিক্রম করছে। তোমাদের প্রিয় কবি পাপড়ি দত্তর একটি কবিতাও রইল আজ।
তোমরাও লেখা পাঠাও বন্ধুরা। গল্প লেখো, কবিতা লেখো, তোমার সঙ্গে ঘটা কোনও বিশেষ ঘটনার কথা লেখ। কত কিই তো লেখার আছে। খুব ভাল থাকো তোমরা। সৃষ্টিশীল থাকো। আমাদের সঙ্গে থাকো। তোমাদের বেশি বেশি করে পাওয়ার জন্য আমরা উদগ্রীব।
তোমাদের বন্ধুদাদা
অঙ্কন রায়

আদিত্রী ভান্ডারী, 
প্রথম শ্রেণি, 
পাঠভবন, শান্তিনিকেতন










ইস্কুল নেই/ ২

কবে যাব স্কুল?

প্রবাহনীল দাস


অনুভা চক্রবর্তী, পঞ্চম শ্রেণি
, টেকনো ইন্ডিয়া গ্রুপ পাবলিক স্কুল

করোনা ভাইরাসকে নিশ্চয়ই আর কাউকে নতুন করে চিনিয়ে দিতে হবে না। এই জীবাণুটি এক অজ্ঞাত কারণে শুধু মানবজাতির উপরেই তার ধ্বংসলীলা চালিয়ে যাচ্ছে সেই ২০২০র প্রথম থেকে। যদিও এখন অনেক সংস্থা ও বিভিন্ন পরিষেবা চালু হয়ে গেছে, তবুও আমরা খুব ভাল করেই জানি যে এই ভাইরাসের প্রকোপ একদমই কমেনি, বরং বেড়েই গেছে।
এই করোনার প্রকোপে বেশ কয়েকবার হয়ে গেল ‘লক’ ও ‘আনলক’ প্রক্রিয়া। কিন্তু এসব সত্ত্বেও একটা জায়গা এখনও পর্যন্ত বন্ধই রয়েছে, সেটা হল আমাদের ছোটদের স্কুল। পশ্চিমবঙ্গে, প্রায় মার্চ মাস থেকেই সব স্কুল সম্পূর্ণভাবে বন্ধ। দাপ্তরিক কাজকর্মের কারণে খুললেও কোনও স্কুলই খেলা-পড়ার জন্য এখনও খোলেনি।
এই বন্ধ স্কুলের কাজকর্ম চালিয়ে যাওয়ার জন্য যদিও অনলাইনে পড়াশোনা চলছে পুরোদমে, তবুও সেই স্কুলের মজা এখন ছোটদের কাছে শুধুই এক স্বপ্নের পর্যায়ে এসে ঠেকেছে। কিন্তু আর কতদিন শুধু অনলাইনে বন্ধুদের সঙ্গে কথা বলে কিংবা সেখানে তাদের মুখ দেখেই দিন কাটাতে হবে? আর কখনও কি স্কুল খুলবে না? যেভাবে করোনা ভাইরাস তার প্রকোপ ছড়িয়ে চলেছে, তাতে তাই মনে হয়। খুব কম সংখ্যক ছোটরাই ঘরে থাকতে পছন্দ করে, ফলে বোঝাই যাচ্ছে, পৃথিবীর কত ছোটরাই বিষণ্ণতায় ভুগছে।
স্কুলে না যেতে পারার দুঃখটাই খুলে বলি তবে। সবার প্রথমে আসে বন্ধুদের কথা। অনলাইনে আর যাই হোক, প্রাণ খুলে নিজের সবচেয়ে কাছের বন্ধুকে মনের কথা বলা যায় না। তার জন্য একে অপরের পাশে বসে গল্প করতে হয়। এছাড়াও রোজ সবকটা ক্লাসের ছাত্রছাত্রীরা একসঙ্গে দাঁড়িয়ে প্রেয়ার করলে দিনের শুরুতে মনে যে কাজ করার তাগিদ সঞ্চারিত হত, সেটাই সারাদিন আমাদের দিয়ে সব কাজ করিয়ে নিত। এখন স্কুল বন্ধ, তাই প্রেয়ার বন্ধ। প্রেয়ার নেই, তাই কোনও কাজ করার তাগিদও নেই। আর অনলাইন ক্লাসে শিক্ষক-শিক্ষিকারা আর যাই হোক, কোনও ভালো উত্তর লিখলে মাথায় কিংবা গালে হাত বুলিয়ে দিতে পারবেন না। স্কুলে থাকলে সারাদিন সবাই পড়া ও খেলা ছাড়াও আরও কত কী করতাম, অথচ একা বাড়িতে বসে তার কোনটাই করার না আছে ইচ্ছা, না তাগিদ। তার মধ্যে অবশ্যই উল্লেখযোগ্য বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান৷ অনুষ্ঠানগুলোর পিছনে ১-২ মাসের চূড়ান্ত পরিশ্রম থাকতো। আর অনুষ্ঠানের পর হাততালিতে যে আনন্দ হত তার তুলনা নেই৷ এছাড়াও ক্লাসে মনিটর হওয়া বা প্রিন্সিপ্যাল স্যারের ঘরে মাঝেমধ্যে ডাক পাওয়াতে যে মজা ছিল, বাড়িতে তার বিন্দুমাত্র নেই। একটু হুটোপাটি- খেলাধুলোর জন্য টিফিনের ঘন্টার অপেক্ষা নেই৷ আগে আমরা ছুটির জন্য হা-হুতাশ করতাম, আর এখন করছি স্কুল খোলার জন্য।
তাই অন্তত ছোটদের কথা ভেবেও যদি সবাই ঠিকঠাক ভাবে সব স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলে, তবে আশা করব যে এই রোগের প্রকোপ দ্রুত কমবে, ও আমরা সবাই আবার সুস্থ-স্বাভাবিক পরিবেশে সফলভাবে ফিরতে পারব।
(ষষ্ঠ শ্রেণি, একমি একাডেমি, কালনা পূর্ব বর্ধমান)

ছড়া

সুখের খোঁজ

পাপড়ি দত্ত


শান্তিপ্রিয় বিষ্টুবাবু
বলেন কথা মেপে
আজকে এমন ঘটলো কি যে
হঠাৎ গেলেন ক্ষেপে!
ভাবছো বুঝি কি হল তার
গোমড়া কেন মুখ!
ব্যাকরণটা বোঝার চেয়ে
ব্যা করনেই সুখ!
হতচ্ছাড়া ছোকরাগুলো
আয় করে দিই ঠান্ডা।
তোদের পিঠেই ভাঙবো মেরে
গণ্ডা দশেক ডান্ডা!
লাঠির গাছা হাতেই ছিল
মারতে গিয়ে শেষে
গেলেন ভেসে ছোট্টবেলার
মন কেমনের দেশে।
রুপোর কাঠি সোনার কাঠি
স্বপ্ন দামি দামি,
ছুটফুটে মন কান্ড হাজার
অজস্র পাগলামি।
গ্রীষ্মরোদে বাগান ঘুরে
আম কুড়োনোর ধুম,
লাটাই ঘুড়ি মাঞ্জা সুতো
উড়িয়ে নিতো ঘুম।
পুঁচকে মাথায় মারতো উঁকি
উটকো যত বুদ্ধি,
গঙ্গা জলে হাজার ধুলেও
হত না তার শুদ্ধি।
দিনগুলো সব হারিয়ে গেছে
ব্যস্ততারই ভিড়ে,
স্মৃতিটুকুই থমকে আছে
বয়সটাকে ঘিরে।
বিষ্টুবাবুর রাগ গলে জল
রঙ থৈ থৈ মন,
ছোটোর মাঝে পেলেন খুঁজে
সুখের ব্যাকরণ।

Post a Comment

0 Comments