পান্থ/ ১ । লেকের নাম খাঁদারানি


পান্থ/ ১

লেকের নাম খাঁদারানি

সায়ন্তী দাস


মন দিনে তারে বলা যায়
এমন ঘনঘোর বরিষায়।
এমন দিনে মন খোলা যায়—
আর এমন দিন যদি কাটে এক পান্না সবুজ হ্রদের পাড়ে, যার চারপাশে সবুজের কোলাহল। রাশি রাশি অজানা পাখির শব্দমিছিল… সঙ্গে, যে প্রিয়।
কেটে যায় বেলা, থাকে না কোনও অবেলা। হৃদয় পূর্ণ সুখস্মৃতিতে, পেয়ালা উপচানো সে মুহূর্তমালা। জেগে থাকে শুধু দুই ভবঘুরে হৃদয়ের অফুরান করতালি।
খুব বেশি দূর নয়। কলকাতা থেকে আড়াই ঘণ্টার দূরত্ব। সকালের ইস্পাত এক্সপ্রেস-এ চেপে সোজা ঝাড়গ্রাম। তারপর হোটেলে ঢুকে একটু বিরাম নিয়ে বেরিয়ে যাওয়া যেতেই পারে বেলপাহাড়ির পথে,— শাল, আকাশমণি, মহুয়ায় ঘেরা অরণ্যসুন্দরী কাঁকরাঝোরকে আবিষ্কারের উদ্দেশে। রাঙা ধুলোয় ছড়ানো সবুজের চিঠি,… নৈঃশব্দ্য বড় বাঙময় এ পথে। বুনো গন্ধ মেখে সবুজ চিরে কালো পিচ্ছিল সে সিঁথি— এলেই বলতে ইচ্ছে করে, এই পথ  যদি না শেষ হয়, বাইক চড়লে বেশ হয়। তবে টায়ার পাংচার হলে দারুণই কেস হয়। …কিলোমিটারের পর কিলোমিটার জুড়ে ছড়িয়ে এখানে নির্জনতা।
শোনা যায়, যে কন্যের নাকটি একটু চাপা, সে মেয়ের রূপ পুরুষকে বড় টানে। খাঁদা নাক মুখছাঁদে লবণের আধিক্য বাড়ায়, প্রণয় তখন কিঞ্চিৎ নমকিন। এখানে হ্রদের নাম খাঁদারানি। তার গহিন জলে মন ছলকাবেই। বরষায় খান্দারানির রূপই অনন্য। কইন্যার রূপে ডুইব্যা মইরবার সাধ যায়। বুকপলাশে তখন একটাই গান বা শ্লোগান,— তুমি আমার মনের মাঝে গহিন জলের নাও/ আমি তোমায় ছাড়া থাকব কেমন করে…
প্রেমে পড়লে বহু দূর যাওয়া যায়। এখানে যেতে হবে মাত্র ৪৫ কিমি। ঝাড়গ্রাম থেকে ঠিক অতটুকুই দূরে তিনি।
যাবেন  কি এই বরষায়?
এই ভেজা ভেজা দিনের পথে,…চারপাশের ধু ধু মাঠ ভিজে যাওয়া রাস্তার লং ড্রাইভে সাক্ষী থাকুক কণিকা  বন্দ্যোপাধ্যায়…বন্ধু, রহ রহ সাথে/ আজি এ সঘন শ্রাবনপ্রাতে।
ভৈরবী টপ্পায় বাঁধা থাক হৃদয়ের তার।… মনে যে রং আগেই লেগেছে।
এ তো দিনের বেলার রূপ। দিনের পালা সাঙ্গ হলে… ফেরার সময় অরণ্যপথের অপরূপ মহিমা। পূর্ণিমা দেখে যদি বেছে নেওয়া যায় গন্তব্য—
কি হবে তা হলে ? জ্যোৎস্নার সাথে ভাব ?
বলো না কী হবে, জ্যোৎস্নার সাথে আড়ি ?
তুমি যা শুনবে প্রত্যাশা করে আছ
সেই কথা আমি যদি না বলতে পারি ?
                (ফুলকারি/ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়)
ফেরার পথে  পিচ ভিজে যাক জ্যোৎস্নায়। বৈদ্যুতিক আলোবিহীন পথে চাঁদ নেমে আসে চরাচর জুড়ে। দূরে, বহু দূরের আদিবাসী গ্রাম থেকে ভেসে আসবে পূর্ণিমার পরবের নাচগান, মাদলের দ্রিমি দ্রিমি আর ঘন গন্ধ মহুয়ার ।
কপাল ভাল থাকলে রাস্তাতেই মিলে যেতে পারে মোরগ  লড়াইয়ের আসর, অবশ্য সে দিনের আলোয়। দুপুরের খাওয়া হোক কোনও খড়ে ছাওয়া মেঠো দোকানে, যেখানে কাঁচা শালপাতায় লাল মোটা চালের গরম ভাতের ওপর বুনো মোরগের ঝোল। আর কিছুই বাহুল্য সেখানে। একদিনের জন্য হলেও সবকিছু হোক অন্যরকম।
জীবনের অপর নাম চলা, সম্পর্কেরও তাই। গন্তব্যর চেয়ে রাস্তাই যে প্রিয়/ শুধু কিছু মুহূর্ত কুড়িয়ে নিও। শুভ যাত্রা।


(নিকটস্থ দ্রষ্টব্য গাররাসিনি পাহাড়, ঘাগরা, বেলপাহাড়ির অফুরান সবুজ, আর
হারানো প্রেমের চিরকুট, যা আমরা ফেলে আসি রাস্তায়ই।)
থাকা যেতে পারে ঝাড়গ্রাম শহরের যে কোনও হোটেলে। পর্যটন দপ্তরের কিছু হোটেল রয়েছে। সাহায্য নেওয়া যেতে পারে—  https://www.jhargramtourism.com/ এই ওয়েবসাইটটির।


Post a Comment

0 Comments