ছোটগল্প/ ৪ : দ্বন্দ্ব

দ্বন্দ্ব

অনুসূয়া চন্দ্র

ন‍্যদিন এতক্ষণে বিছানা ছেড়ে ওয়াশরুমে, তারপর ঘরের নিত‍্যকর্ম। আজ যেন নামতেই ইচ্ছে করছে না। ইউরিক অ্যাসিডে সকালটা পা ফুলে ভারী হয়ে থাকে, আজ  মনে হচ্ছে তার থেকেও ভারী কিছু! ঠিক কী! বুঝতে পারছি না। মন? না! সে তো ভালো  হয়ে গেল। চোখ? না সে তো লজ্জায় লাল। তাহলে? নিজেকে প্রশ্ন করতেই ফোলা ফোলা চোখদুটো ফ্ল‍্যাশব‍্যাকে স্বপ্নটা আবার রেজিউম করলো। স্বপ্ন! হ‍্যাঁ রোজই কত না কত স্বপ্ন দেখি। ঘুম ভাঙে সব ভুলেও যায়। কিছুই মনে থাকে না। হঠাৎ হঠাৎ রাস্তা চলতে বা কথা বলতে গিয়ে মনে হয় একটা স্বপ্ন দেখেছিলাম না! তারপর আবার সব ভুলে যায়‍। এমনিতে যে কোনও ভুলতে পারাই আরামদায়ক। তাই স্বপ্নভোলার দোষ কোনওদিন গায়ে লাগেনি।
কিন্তু আজকের স্বপ্নটা এলোমেলো বুনোটে কোথাও হারিয়ে দিল নিজেকে। স্বপ্নটা বলি। দেখলাম, চুড়িদার পরা আমি কে। তা সে কমদিনের কথা নয়। লজ্জা যখন কোমর বেঁধে মেয়েদের জীবনে নেমে আসে, রকমারি চুড়িদার আর তাদের বেসামাল ওড়না তখনই তার চ‍্যুতি ঘটায়। ঠিক সেই সময়টা। কারোর বাড়িতে গেছিলাম কোনও অনুষ্ঠানেই হবে। সেখানে পরিচিতদের ভিড়ে একজনই অচেনা অথচ উৎসুক। কথা বলার ছুতো খুঁজছে তাও আবার আমি বুঝে যাচ্ছি। নিজের সিক্স টু টেন সেন্স টেনে ব‍্যাপারটাকে উপভোগ করছি দেদার। এই জ্বালানোয় আনন্দ হচ্ছে, মজা হচ্ছে আর এইসময় তো নিজেকে নায়িকা নায়িকাই লাগে, তাই না!
এতসবে ওড়না কখনো পরে যাচ্ছে, কখনো ফ‍্যানের হাওয়ায় ..তাতে বেশ লজ্জা লাগছে। বসতে গেলেও তার সামনে দু পা একদিকে করে পায়ের পাতা টুকুও ওড়না দিয়ে ঢেকে দিচ্ছি। পায়ের পাতাতেও এত লজ্জা লুকিয়ে তা জানা ছিল না। এই লুকানো লজ্জা আনন্দ দিচ্ছে, তীব্র ভালোলাগা; আর তখনই ঘুম ভেঙে গেল।
আজ দশ বছর ঋকের সঙ্গে ঘর করছি। দাম্পত্যের সব অবশ্যকরনীয় এখন টুথব্রাশ- অভ‍্যাস। স্নানকরার পর এলোচুলে, পোশাক চেঞ্জের সময় অর্ধনগ্ন শরীরে আর নতুন কোনও আকর্ষণ নেই। এক একসময় মনে হয় পুরো শরীরটা অনাবৃত থাকলেও আমরা কেউ কাউকে ছুঁয়ে দেখব না। ছুঁয়ে দেখাতে আজ আর কোনও জড়তা নেই। দশ বছরে সেটাই স্বাভাবিক। তবে আজকের স্বপ্ন টা, কী এক অদ্ভুত ভালোলাগা! শরীরের স্পর্শ ছাড়াও যে ছোঁয়া গুলো ছিল, তার জন্যে ওড়নার স্খলন যে লজ্জা বয়ে আনত; তাকে প্রাণপণে দু হাত দিয়ে কেন জানি জড়িয়ে ধরতে চাইছি। দূর থেকে একটু লজ্জা আরও বেশিক্ষণের জন্যে পেতে চাইছি আমি।
চোখ কচলে কচলে লাল হয়ে গেল, স্বপ্নটা রিপিট মোডে দেওয়া থাকলে বেশ ভাল ঘুম হত! নিজের মনেই হেসে উঠলাম।

Post a Comment

0 Comments