ছোটগল্প/ ৩ : শাওন

শাওন

সুমন ঘোষ


খনও ওর নম্বরে কল করলেই সেই গানটা বাজে : 'ওরা মনের গোপন চেনে না।' এখনও বাজে। ওর সঙ্গে আমার আলাপ অনেকদিনের। প্রথমে দূরে-দূরে কথা হত। অনেকটা দূরে-দূরে। ও পুকুরে ঢিল ছুঁড়ত  আর আমি সেই পুকুরের অন্য প্রান্তে বসে থাকতাম। দেখতাম, ওর ছোঁড়া ঢিল হাওয়ায় উড়তে-উড়তে পুকুরে এসে টুপ করে ডুব দিচ্ছে। আর ঢেউ, নানা রঙের ছোটো-ছোটো ঢেউ, গোল হয়ে দূরের দিকে চলে যাচ্ছে। সেই ঢেউ আস্তে আস্তে ভাঙছে। ভাঙতে-ভাঙতে নানা পাড়ে ছড়িয়ে পড়ছে তারা। আমি যে পাড়ে বসে আছি, সেই পাড়েও তার ছোঁয়া এসে লাগত। না, ঠিক লাগত না। লাগার আগেই আমি চোখ সরিয়ে নিতাম। ধুলো ঝেড়ে উঠে দাঁড়াতাম। একবার মোরামের দিকে  চাইতাম, একবার জলের দিকে। মনে-মনে বলতাম :
'যতদূর চোখ যায় এককোমর উলু
মাঝেমধ্যে খাড়া তালঝাঁকড়ায় বাবুই-এর বাসা
নিজেকে ভালোবাসতে এরকম মেঘবৃষ্টি
চাই, নিজের কাছে চাই চুপচাপ বসে থাকার সময়
শিশু শালের পাড়ায় রাঙামাটি হাঁ করে গিলছে
বৃষ্টি, যতদূর দৃষ্টি যায় -- কী রকম
গা-ছমছমে সবুজ, চোখ তুললে ছাই
মেঘের রং-বর্ণ আর মায়াজাল, কেন্দ্রে বসে
জাল বুনছে বুনো মাকড়সা, কেউ ব'সে
নেই, আলস্যের পাথরও গড়িয়ে গড়িয়ে
নিচে নামছে।'
এদিকে আমি প্রতিদিন যেভাবে গড়িয়ে পড়ছি, তার কোনো সীমা-পরিসীমা নেই। একেবারে খাদ। খাদের ভিতরের অন্ধকার আমাকে ডাকছে। হাত নাড়ছে। এ-ছেলের কোনো ভবিষ্যৎ নেই। নেই তো নেই! কে চেয়েছে ভবিষ্যৎ!
'সাপের ফণায় দোলে গম্ভীর আষাঢ় --- '
এই বলে স্বপ্ন শুরু হয়। শুরু হয়, কিন্তু শেষ হয় না। মাঝপথে থেমে যায়। এক অদ্ভুত অনিশ্চয়তা বুকে নিয়ে সে কুমিরডাঙা খেলে।
'... পলাশের মতো
একটি কবিতা খুঁজে মরে কবি শান্ত, মুখ বুজে!'
তখন ওর কলার টিউন কী ছিল, আমি জানতাম না। খোঁজও রাখতাম না। শুধু মনে আছে, এক সন্ধ্যায়, খুব গরম, আকাশে মেঘ, বৃষ্টি হব-হব, আশেপাশে অনেক লোকজন, আমি ওকে দেখিনি। কিছু একটা কেনা-কাটা করছি দোকানে। ডাকল, সুমনদা, শোনো। পিছন ফিরে তাকালাম। দেখি, দাঁড়িয়ে। সোজাসুজি আমার চোখের দিকে চোখ।
— আরে তুই, এখানে!
কোনো কথা নেই। স্থির দৃষ্টি।
— কীরে কিছু বলবি?
অপলক স্থির চাউনি। কয়েক মুহুর্ত। কয়েকটি হৃদস্পন্দন।
— নাহ্ কিছু না!
বিদ্যুৎ দিল। খুব জোরে মেঘ ডেকে উঠল। সঙ্গে সঙ্গে এই ছোটো জনালোকে ঝুপ করে অন্ধকার নেমে এল। লোডশেডিং।
আরো কি কিছু বলেছিল মেয়েটা? আমি শুনতে পাইনি, মেঘের ডাকে মুছে গিয়েছিল? এরপর তো বৃষ্টি, বৃষ্টি আর বৃষ্টি। সব ঝাপসা। সব জলরঙ ভেসে চলে যাওয়া।
শুধু ঐ তাকিয়ে থাকাটা মাঝে-মাঝে উঁকি দিয়ে যেত। কোনোদিন ও-ব্যাপারে আর শুধাই নি কিছু। এদিকে ক্যালেন্ডার নিজেকে আপডেট করে নিচ্ছে। সুন্দরী হিসেবে ওর খ্যাতি বাড়ছে। কোনো মেক-আপ করত না। সাজেরও কোনো বাহার ছিল না। কিন্তু হেঁটে গেলে কীরকম আলো ছড়িয়ে পড়ত চারিদিকে। আমার তরুণ বন্ধুদের কাছে ওর টুকরো-টুকরো খবর ভাসত। ওকে নিয়ে অপরাপরের উপদ্রবহীন উৎসাহ দেখে আমি বাসের পা-দানিতে একচিলতে হাসি রেখে দিতাম। দেখা হত খুব কম। আমি তখন অন্য অনেক কাজে ও অকাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ছিলাম রোজ। আকাশে-বাতাসে তার প্রেম নিয়ে গুঞ্জন শোনা যেত। তার নাকি এক সুন্দর দেখতে প্রেমিক আছে। বাড়িতেও আসা-যাওয়া আছে। তার সঙ্গে ঘোরাফেরা আছে। ঘনিষ্ঠতা আছে। খুবই স্বাভাবিক ব্যাপার। এ তো হতেই পারে। এ তো সুন্দরের আলিঙ্গন। আলিঙ্গনের ছায়া পড়ত লোকালয়ে। মানুষজন কৌতূহলে এ-ওর কাছে, ও-তার কাছে জিজ্ঞেস করত : কবে বিয়ে? আশীর্বাদ কবে?
এসবে আমার মতি ছিল না। আমি উড়ন্ত পাখির ডানার শব্দে নিজেকে বেঁধে নিতাম। আর নিচু হয়ে বলতাম
'ঠিক যে কী বলতে চাওয়া--তা পরিষ্কার হতে পারেনি
তেমনভাবে।'
বন পেরিয়ে যেতাম। মাঠ পেরিয়ে। নদী। আবার লোকালয়। ক'খানা চাকরির চিঠি হাওয়ায় ভেসেছে। তারপর শেষমেশ একখানা ঢুকেছে বুকপকেটে। আমি কিছুতেই চাইনি। কিন্তু সবাই মিলে জোর করে ঢুকিয়ে দিয়েছে।
সে তারপর একবার বোধহয় আমাকে ফোন করে অভিনন্দন জানিয়েছে। আমি কিছুতেই সে অভিনন্দন নিতে চাইনি। আমি তো কবিতাডাঙার লোক। বারবার চেয়েছি, একটা কবিতার দেখা পেলে কেউ হাসুক। কেউ কাঁদুক। কেউ বলুক, 'রোদ্দুর অনেক দেয়,অন্ধকার দেয় তারো বেশি!'
তারপর আর তেমন কথা হয়নি। ওর পরিবারের লোকজন নানা সূত্রে চিনত আমাকে। পারিবারিক পরিচিতি তো ছিলই সেইসঙ্গে একপ্রকার ঘনিষ্ঠতাও ছিল অনেক আগে থেকে। ফলে ওর বিয়ের আশীর্বাদের খবর এল একটু আগে থেকেই। হ্যাঁ, সেই ছেলেটিই। সেই গুঞ্জনকুমার। কিন্তু আমি তাকে দেখিনি কখনও। আসলে আমার বোধহয় এ ব্যাপারে সেরকম কোনো উৎসাহ ছিল না। খবর পেলাম, বিয়ের ডেটও  ঠিকঠাক। কিন্তু ক'দিন পরে আবার শুনলাম, কী একটা কারণে নাকি পিছিয়ে গেছে।
ঠিক এই পর্বেই ফোন করতে শুরু করল শাওন। শাওন মানে, সেই ঢিল ছোঁড়া মেয়েটি, যার কথা বলছি এতক্ষণ। বলতে লাগল নানা কথা। কোনোটা গন্ধ তো কোনোটা নিঃশ্বাস। সে বলে, আমি শুনি। খালি বিয়ের কথাটা তেমন বলে না। আমিও জোর করি না। আমাদের বলা ও না-বলার বয়েস সহসা গড়িয়ে যেতে থাকে। চোখের পলকে আট-ন'মাস কেটে গেল। বাতাসে, ওর বিবাহগুঞ্জন আবার শোনা যায়। জিজ্ঞেস করি, নিরুত্তর। কখনও বলে, না-না, বিয়ে-টিয়ে ওসব বানানো। দেখো, আমার বিয়েই হবে না।
ওর বাবার সঙ্গে দেখা হয়। চিন্তিত। মেয়ের বিয়ে। যেতে বলে। মধুর সাহায্য বলে, হয়তো প্রয়োজনহীন,তবু বলে, কেবল বলার জন্যই বলে হয়তো।
আমি ওর বরের কথা জিজ্ঞেস করলে শাওন ফোন রেখে দেয়। আমাকে কবিতা পাঠাতে বলে।
এদিকে হুড়মুড় করে বিয়ের দিন এগিয়ে আসছে। শাওনকে একদিন আইবুড়ো ভাত খেতে বলি। সে কিছুতেই আসতে চায় না। পরে কী মনে হতে রাজি হয়। খেতে আসে। অনেকদিন পর দেখা। দেখি একটু অন্যমনস্ক। কিছু খায়। কিছু খায় না। খাবার থালার দিকে অনেকক্ষণ চেয়ে থাকে। আঁকিবুকি কাটে। আমি বলি, উঠে পড়।



বিয়ের সব আয়োজন সারা। খোলায় ধান। চিঁড়ে খাওয়া। গায়ে হলুদ। নান্দীমুখ। ঠাকুরমশাই। ফর্দ। আত্মীয়স্বজন। গানবাজনা। প্যান্ডেল।
কেবল সে কোনো কথা বলে না। মাঝরাতে আমার ফোনে মেসেজ আসে:
'কীভাবে হয়? কেমন করে হয়?'
আমি উত্তর দিই,
'যেমন করে ফুলের কাছে রয়
গন্ধ আর বাতাস দুইজনে...
এভাবে হয়, এমনভাবে হয়।'
একেবারে বিয়ের রাতে যাই। বর এসে গেছে। বাড়িভর্তি লোকজন। ক্যামেরার নানা কেরামতি। কনে সাজানো কমপ্লিট। প্রচুর খাবার-দাবার। সানাই। শ্রাবণ মাস। আকাশে মেঘ নেই। তবে শাওনের মুখে যেন মেঘ ভার হয়ে আছে। হাসছে। গিফ্ট  নিচ্ছে। ফোনে কথা বলছে। কিন্তু সানাই কি একটু বেসুরো বাজছে? গা-ভর্তি গয়না। গয়নার যেন শেষ নেই। গয়নাগুলো কি একটু বেশিই উজ্জ্বল? আর ওর চোখ?
মধ্যরাতে বিয়ে। এখন লোকজন একটু কম। সে হঠাৎ আমায় ডাকল একটু। ছবি তুলবে আমার সঙ্গে। ছবি তুলতে তুলতে কানের কাছে মুখ এনে বলল, তোমার সঙ্গে কথা আছে। মুখের দিকে তাকালাম। ওমনি কে যেন ওকে ভেতর-ঘরে ডাকল। মাইকে কি হেমন্ত বাজছে? এই বালুকাবেলায় আমি লিখেছিনু।
বিশ্বজিৎ লিপ  দিয়েছিল না! নায়িকা কে ছিল?
পরের দিন ওখানেই আছি। কী একটা কাজ করছিলাম। হঠাৎ ফোনটা বেজে উঠল। ধরলাম না। আবার রিং। কেটে দিলাম। শাওনের ফোন। বারবার ফোন। একটুপরে আমিই রিং করলাম ওকে। আর তখনই প্রথম শুনলাম ওর কলার টিউনে বাজছে :
ওরা মনের গোপন চেনে না
ওরা হৃদয়ের রঙ জানে না
প্রজাপতি ডানা ছুঁলো বিবাহ বাসরে
কেন সারারাত জেগে বাড়ি ফিরি ভোরে...
ফোনটা ধরেই বলল, তুমি কোথায়? আমার যাওয়ার সময় তুমি থাকবে না?
— কেন এখানেই আছি তো।
— আমার সঙ্গে দেখা করো।
ফোন কেটে দিল।
বাড়ির ভিতরে গেলাম। বিয়ে বিদায়ের অনুষ্ঠান চলছে। কান্নাকাটি। আমার দিকে ওর লাল হয়ে আসা চোখে তাকাল শাওন। চোখেমুখে অদ্ভুত আকুলিবিকুলি। কাজল ধেবড়ে গেছে। গাল দুটো একটু ফোলা লাগছে না?
— আমি না যাওয়া পর্যন্ত তুমি কিন্তু নড়বে না, সুমনদা।

দুপুরে বাড়ি ফিরে গানটা আবার শুনি। লগ্নজিতা গেয়েছে।
ওরা মনের গোপন চেনে না
ওরা হৃদয়ের রঙ জানে না
প্রজাপতি ডানা ছুঁলো বিবাহ বাসরে
কেন সারারাত জেগে বাড়ি ফিরি ভোরে...
...
তুমি চিরদিন, ভীষণ কঠিন
তোমার ঘর ভেসে যায় ওরা
মুখ দেখে বুঝতে পারে না...
ওরা এ মন কেমন বোঝে না
ওরা আসল কারণ খোঁজে না।
তুমি চিরকাল, স্বপ্নে মাতাল
হেঁটে সারাজীবন ধরে, ঝড় বৃষ্টি মাথায় করে।
ওরা মনের গোপন চেনে না
ওরা হৃদয়ের রঙ জানে না।
প্রজাপতি ডানা ছুঁলো বিবাহ বাসরে
কেন সারারাত জেগে বাড়ি ফিরি ভোরে...
ওরা মনের গোপন চেনে না,
ওরা হৃদয়ের রঙ জানে না

সত্যিই তো মনের গোপন কি চেনা যায়?
আমরা আবার যে যার কাজে ফিরে গেছি। কন্ডাকটরের খুচরোতে আবার নিজেদের গতি ঝালিয়ে নিয়েছি। দু'দিন পরেই তার ফোন। রাস্তায় ছিলাম। শুনতে পাইনি। একঘন্টা পর কল করলাম। সেই একই কলার টিউন। শুনলেই বুকটা কেমন করে ওঠে! ফোনের ওপাশে গাড়ির আওয়াজ। হর্ণ। জানা গেল, সে ফিরে আসছে। মনে-মনে ভাবলাম, গতকাল ওর ফুলশয্যা ছিল না!
আমি আর ফোন করিনি। ফোন ধরিও নি। দেখেছি, কোথাও লেখা আছে:
'হে দিন, টিমটিম দুঃখ জ্বলে...
পোড়ে খড়, পোড়ে খড়,
সন্ধ্যের ছাদে ওড়ে পিরের চাটাই'
তারপর একদিন সে আমার বাড়িতে হঠাৎ হাজির। চোখ-মুখ বসে গেছে। সেই উজ্জ্বলতা চাপা পড়ে গেছে। চোখে-মুখে অসম্ভব বেদনার দীঘি। তার ওপর চলে বেড়াচ্ছে একটা লাইন:
'এ কষ্ট তুলনাহীন, এই ভার বওয়া অসম্ভব!'
বাড়ি ফিরে গেল। বলে গেল, বারবার বলে গেল,আমি যেন তার ফোন ধরি।
ধরেছিলাম। হাউ হাউ করে কাঁদছিল।
— জানো সুমনদা, এই বিয়েটা আমি কিছুতেই করতে চাইনি। অনেক অশান্তি করেছি বাড়িতে। কেউ শুনতে চাইনি আমার কথা। একটাই বিয়ে আমি ২২ বার ভেঙেছি। কিছুতেই এই বিয়েটা আমি করতে চাইনি।
— কিন্তু আমি যে শুনেছিলাম, তুই এই ছেলেটিকে ভালোবেসেছিলি। অনেক দিনের আলাপ, সম্পর্ক।
— ঠিকই শুনেছিলে।
আর কিছু বলে না সে।
— এখন মায়ের কাছেই থাকবি?
— না গো, মা বাবা কেউ চায় না আমি এখানে থাকি। চলে যাব। ওরা বলেছে, অন্য কোথাও চলে যা। পারলে মরে যা। কিন্তু এখানে থাকা হবে না।
এসব কী বলছে শাওন!
— শাওন, আমি ডাকি।
— হুঁ, নরম বালির মতো সে সাড়া দেয়।
আবার ডাকি।
— তুমি আমাকে নিয়ে পালিয়ে যাবে, সুমনদা?
চুপ, একেবারে চুপ করে যাই। একবার ওর মুখ, একবার ওর বাবা-মায়ের মুখ মনে পড়ে। আমার  বাবা-মা-আত্মীয়স্বজন যত পাড়া-প্রতিবেশি সকলের মুখ একবার করে মনে পড়ে। আমি-না, ও-না, আমরা কেউ কাটি না তবু, ফোনটা আপনাআপনি কেটে যায়।
আমি ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়াই।
নিজেকে দেখি।
'আসলে কেউ বড়ো হয় না, বড়োর মতো দেখায়।
নকলে আর আসলে তাকে বড়োর মতো দেখায়,
গাছের কাছে গিয়ে দাঁড়াও, দেখবে কতো ছোটো,
সোনার তাল তাংড়ে ধরে পেয়েছো ধূলিমুঠো।
ভালোবাসার দীঘিতে কত করেছো অবগাহন,
পেয়েছো সুখ দুঃখ আর ছলে ভোলানো দাহ।
পুড়েছো বনে মালার মতো, যাওনি তবু ছেড়ে,
যতক্ষণ স্মৃতি-আড়াল নিয়েছে তাকে কেড়ে।
আসলে তুমি ক্ষুদ্র ছোট, ফুলের মতো বাগানে ফোটো---
বিরহে যদি দাঁড়িয়ে ওঠো, ভূতের মতো দেখায়!
গাছের কাছে গিয়ে দাঁড়াও, দেখবে কতো ছোট।'

কয়েকদিন পর সে আবার শ্বশুরবাড়িতে ফিরে যায়। একা-একা।  কখনো-কখনো মেসেজ করে।
WhatsApp করে। ছবি পাঠায়। বরের দেওয়া ক্ষত। গলায় কালশিটে। হাতে চোট। ফুলে ওঠা রক্তাক্ত ঠোঁট। চোখের কোলে কালি। চোখের কোলে এক অন্ধকার কুয়ো।
'বন্ধ দরজার মুখ
ফিরে আসে শুধু হাহাকার---'
আমার হঠাৎ মনে পড়ে যায়, শাওনের বিয়ের রাতে হেমন্ত গাইছিল না ---
ভুলের বালুচরে যে বাসর বাঁধা হল
জানি তার নেই কোন দাম
.....
.....
গাইছিল না?
দাঁড়ায়ে একলা শুধু
ঢেউ আর ঢেউ গুনি
এ গোনার নেই যে বিরাম।

সত্যিই গাইছিল? ধুর, বিয়েবাড়িতে কি এসব গান বাজে আজকাল? ওসব নিশ্চয়ই আমার মনের ভুল। মনের ভুল?
বেশ, তাহলে শাওন?
সে-ও কি তবে মনের ভুল?
আয়নার ভিতরে আবার নিজের দিকে তাকাই। কে যেন ফিসফিস করছে কানে:
বিরহে যদি দাঁড়িয়ে ওঠো, ভূতের মতো দেখায়!
বিরহে যদি দাঁড়িয়ে ওঠো, ভূতের মতো দেখায়!

শিল্পী : প্রমিতা বারুই

Post a Comment

1 Comments

  1. "শাওন" বুকের গভীরে রক্তের ধারা প্লাবন।

    ReplyDelete