যারা কখনও কবিতা লিখতো


যারা কখনও কবিতা লিখতো

মৈনাক বিশ্বাস


কী গভীর অন্ধকার! ‘‘The horror! The horror!’’ 

না! এ সেই অন্ধকার নয়! এখানে কুর্টজ নেই। এখানে আছে একদল ছেলে। যারা বাসস্ট্যাণ্ডে, স্টেশনে বসে চা খেত, আড্ডা দিত। ঘরের চেয়ে বাইরে কাটাতো সময় বেশি। আত্মীয় স্বজনের থেকে দূরে থাকত ভয়ে। শুধু একটি প্রশ্নের ভয়ে: “কী করছ এখন?”

ইংরেজী ‘quarantine’ এর বাংলা অর্থ গুগল ট্রান্সলেটর বলে ‘পৃথকীকরণ’ (এর অন্য কোনও প্রতিশব্দ দিল না কেন্‌ জানি না)। আর ‘exile’ হল ‘নির্বাসন’।

সেই কোন কাল থেকে মূলত রাজনৈতিক কারণেই কাউকে নির্বাসিত করা হত। আর সেই নির্বাসন কখনও কখনও ডেকে আনতো মৃত্যু। আবার নির্বাসনের কথা বলতে গেলেই ওবিডের কথা মনে পড়ে, তার কবিতার কথা মনে পড়ে। যা-ই হোক, সেই ছেলেগুলো, নিজেদের যেন নির্বাসনে রাখত নিজের চেনা সুবিধার বাইরে, বাড়ির চেয়ার ছেড়ে বাঁশের বেঞ্চে। মাস্টার্স পাশ হয়ে কোনও মতে বিএড ইত্যাদি করে আরও দুবছর পার করা যায়, কিন্তু তারপর? খালি পেটে যে কবিতা লেখা যায় না সবসময়! চাকরিও জোটে না!

ঠিক এই কথাটি, চাকরি জোটে না। জোটে না হয়, জোটাতে পারে না। মানে, দোষটা হয় সেই ছেলে বা মেয়েটিরই। এতক্ষন শুধুই ছেলে বলে এসেছি, কারণ এখনও আমাদের ঘরের মেয়েদের ওভাবে বাইরে বের হতে দেওয়া হয় না! ওইটুকু এস্কেপও নেই। বান্ধবী, বোনদের থেকে শুনি, তাদের বাড়িতে বিয়ের জন্য চাপ দিচ্ছে। হয়ত তাদের কারোর প্রেমিক তখনও সেই চাকরির দৌড়ে দৌড়াচ্ছে! একটা সময় আর বাধা দিতে পারে না, হাত পেতে দেয় অন্যের হাতের উপর। আর সেই ছেলেদের বয়স বাড়ে। শেষে চাকরিও পায়। ততদিনে বেলা বোস এর সারনেম পাল্টে গেছে। তাই সেও অন্যের বেলার হাত ধরে। 

এসব পড়তে পড়তে মনে হতেই পারে যে এসব গাঁজাখুড়ি লেখার মানে কী?

উত্তর একটাই, কোনও মানে নেই!

শুধু একটা চাকরির পদে হাজারেরও বেশি প্রার্থী। একজন চাকরি পায়, যোগ্যতা বলে। আর বাকিরা? হারিয়ে যায় ধীরে ধীরে। ডারউইন কে মনে আছে? হ্যাঁ, সেই “Survival of the fittest”...! আমি তুমি আপনি আমরা সবাই আছি। যেদিন ফিট করতে পারব না নিজেকে, ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দেবে!

যা-ই হোক, এই লকডাউনের মাঝে সেই ছেলেমেয়েগুলো ঘরেই বসে। আজকাল একটার পর একটা মৃতদেহের সংখ্যা গুনতে গুনতে সবাই হাঁপিয়ে যায়। শুধু এই মধ্যবিত্ত বাড়িতে বাবার জমানো টাকা ভেঙে দিন চলে; টিউশন যা ছিল, তাও তো গেছে! তারা না পারে চুরি করতে, না পারে মুনিষ হয়ে খাটতে! তারা শুধু এক একজন অমল হয়ে ওঠে, কিন্তু জানলার ওপাশে কেউ আসে না, আধলেখা কবিতাগুলো হারিয়ে যায়। নিজেদের নির্বাসনে আরও দূরে সরিয়ে ফেলে, যেখানে কেউ তার খোঁজ পায় না, কেউ না।

Post a Comment

0 Comments