শ্রাবণের ধারার মতো পড়ুক ঝরে

শ্রাবণের ধারার মতো পড়ুক ঝরে

আবীর মুখোপাধ্যায়


কবির বকা খেয়ে চুপটি করে দাঁড়িয়ে আছে বনমালী। 

‘‘বলি চুপ করে আছিস কেন?’’

‘‘আজ্ঞে!’’

‘‘এই যে বলিস আমি বড়লোক। ‘দ্বারকানাথের লাতি বলে নয়, নেকার জোরে বড়লোক!’’’

ওদিকে কাজল মেঘের ছায়ায় ঢাকছে খোয়াই, শালবন, সাঁওতাল পল্লি। মেঘ দু’কূল ছাপানো কোপাইয়ের জলে। মেঘ দূরে প্রান্তরের হাওয়ার গানে, পদ্মার আদিগন্ত চরের বৃষ্টি ধোওয়া জুঁই স্মৃতিতে! মেঘ সিংহসদনের মাথায়, শান্তিনিকেতন বাড়ির কার্নিসে।

উড়ো মেঘ ঢুকছে উদয়ন বাড়ির দরজা-জানলা-চিলেকোঠার ভিতর দিয়ে কবির লেখার ঘরে।

এমন মেঘজর্জর সকালে লিখতে বসে, লেখার টেবিলে একটা চিরকুট দেখেই, প্রিয় ভৃত্যকে ডেকে বকছেন রবীন্দ্রনাথ!

‘‘তুই যাকে-তাকে এখানে আসতে দিস কেন? আমার বুঝি অন্য কাজ নেই আর! তোর জন্য আমাকে কি শেষে ফরমাশি গান লিখতে হবে...!’’

এইবার বনমালীর একটু একটু হাসি পেয়েছে। তার যেমন স্বভাব!

ফিক করে এই বুঝি সে হেসে ফেলল!

সে জানে তার বাবামশাই একটু পরেই আবার তাকে ডাকবে ‘লীলমণি।’ তার গায়ের কুচকুচে কালো রঙের জন্য কৌতুক করে হয়তো বলবে, ‘‘চল বোম্বাইতে গিয়ে থাকি এবার হতে, তোতে আমাতে। সেখানে গায়ের রঙ ফর্সা হয় কিনা!’’


বাদল দিনের প্রথম কদম ফুল

মেঘের বাদল ডানার দিকে চেয়ে উদাস হলেন রবিঠাকুর।

চাঁপার গন্ধে ভুরভুর চারপাশ।  

একটু একটু করে যেন গৌড়মল্লার রাগের আলাপ-বিস্তার ছড়িয়ে পড়ছে বকুলবীথি, ছাতিমতলা, শ্যামলীবাড়ির উঠোনে।

কাগজের চিরকুটটা তুলে কবি পড়লেন ‘বেহাগ’ কথাটা। হাতের লেখা দেখে চিনতে পারলেন। বুঝলেন, ভোরবেলা বনমালীর সঙ্গে যোগসাজশ করে এ নির্ঘাত শৈলজার (শৈলজারঞ্জন মজুমদার) কীর্তি!

অনতিপরে বেহাগেই গাঁথলেন বর্ষামঙ্গলের জন্য নতুন গান, ‘আজি তোমায় আবার চাই শুনাবারে।’

তার ঠিক দু’একদিন আগেই জল ভরা গগনতলে বসে লিখেছেন ‘ওগো সাঁওতালি ছেলে।’ আরও একটা গান মল্লারে, ‘বাদল দিনে প্রথম কদমফুল।’

নতুন গান পেয়ে খুশি শৈলজা। সে বার শান্তিনিকেতনে বর্ষামঙ্গল পরিচালনার ভার যে ছিল তাঁরই হাতে! এর পরে নিত্য তিনি চিরকুট রেখে আসেন, কবি লিখে দেন নতুন নতুন বর্ষার গান। স্বরলিপি করে নেন শৈলজা।

দু’জনের মধ্যে রাগারাগিও চলছে!

দশটি গান লেখার পরে কবি ছুটি চেয়ে বলছেন, ‘‘একের পরে শূন্য বসে গেল, এবার শেষ।’’

যুক্তি খুঁজে শৈলজা বলছেন, ‘‘শূন্যের কোনও মূল্যই নেই, একের পাশে অন্তত দুই বসিয়ে এক ডজন করে দিন!’’

ফের আসে চিরকুট। কোনও দিন লেখা ‘কীর্তন’, তো কোনওদিন ‘বাউল’, ‘বাগেশ্রী’, ‘টপ্পা’-র অনুরোধ।

জীবনের প্রান্তবেলায় কবি গাঁথলেন নানা রাগে বর্ষার গান। ইমন কল্যাণে ‘এস গো, জ্বেলে দিয়ে যাও প্রদীপখানি’, মেঘমল্লারে ‘শ্রাবণের গগনের গায়’, কাফি ঠাটে ‘আজি ঝরঝর মুখর বাদর দিনে’, হাম্বিরে ‘স্বপ্নে আমার মনে হল’, মুলতানে ‘শেষ গানেরি রেশ নিয়ে যাও চলে’, ভৈরবীতে ‘এসেছিলে তবু আসো নাই’, খাম্বাজে ‘এসেছিনু দ্বারে তব শ্রাবণরাতে’, মল্লারে ‘নিবিড় মেঘের ছায়ায়’, বাউল সুরে ‘পাগলা হাওয়ার বাদল দিনে’, বাগেশ্রীতে ‘সঘন গহন রাত্রি’, পিলুতে ‘ওগো তুমি পঞ্চদশী!’ তুমুল বাদল দিনে কবি আলাহিয়া বিলাবলে, ‘আজি মেঘ কেটে গেছে সকালবেলায়।’

এক সময় কবি কেবলই থামতে বলছেন।

বলছেন, ‘‘আমাকে অন্য কাজে মন দিতে হবে, এবারে তুমি থামো। তুমি বুঝতে পারছ না, তোমার ওপর আশ্রমের অনেকেই অসন্তুষ্ট হচ্ছেন! বর্ষামঙ্গলের দেরিও তো হয়ে যাচ্ছে।’’ হাতজোড় করছেন শৈলজারঞ্জন!

ফের পাতলেন রেকাব, ‘‘ষোলোকলায় পূর্ণ করে দিন, আর চাইব না!’’


এসো শ্যামল সুন্দর

বৃষ্টি নেমেছে অঝোরধারা।

উত্তরায়ণ থেকে বৃষ্টি ভেজা শালবনের ভিতর দিয়ে দৌড়ে আসছে কবির ভৃত্য মহাদেব। নন্দলালের কলাভবন, কিঙ্করের সাঁওতাল রমণী ছুঁয়ে ছুঁয়ে সঙ্গীতভবন। ক্লাসে ঢুকে সে থামল।

তার ভিজে তালপাতার ছাতি থেকে জল ছড়িয়ে পড়ল চতুর্দিকে! সে বলল,

‘‘বাবামশাই বলিয়েছে!’’

‘‘গুরুদেব!’’

সেতার রেখে উঠে দাঁড়ালেন, সঙ্গীতভবনের নতুন মাস্টারমশাই সুশীলকুমার ভঞ্জচৌধুরী। মহাদেবের সঙ্গেই চললেন হনহনিয়ে কবির কাছে।

মনে পড়ছিল, দিন কয়েক আগেই কবি তাঁকে ডেকে বলেছিলেন, ‘‘এবারে বর্ষামঙ্গলে যন্ত্রে আমার গান না বাজিয়ে তোমার গৎ বাজাবে। তুমি বর্ষার কোনও রাগের গৎ তৈরি করো।’’

সেই মতো গৎ তৈরি করে কবিকে শুনিয়েওছিলেন। শুনেই কবি রিহার্সালের পরে গৎ-টার বোল লিখে নিয়ে গেলেন ওয়েস্ট পেপার বাস্কেট থেকে তুলে নেওয়া একটা ব্রাউন খামে!

কবির ঘরে ঢুকেও সেটাই ভাবছিলেন সুশীলকুমার।

‘‘বোসো। এই নাও তোমার গান!’’

রবীন্দ্রনাথের কথায়, তাঁর হাতে সেই ব্রাউন খামটা দেখে চমকে উঠলেন সুশীলকুমার। দেখলেন, তাঁর তৈরি সেতারের তান-তোড়-ঝালায় গাঁথা গৎ-এর বোলের নীচে নীচে লেখা বর্ষার নতুন একটা গান।

দেশ মল্লারে ‘এসো শ্যামল সুন্দর।’

পরের বারও বর্ষামঙ্গলের আগে ডাক পড়ল সুশীলকুমারের। কবি তাঁকে মল্লারে গৎ তৈরি করতে বললেন। তৈরি হল গৌড় মল্লার, মেঘ মল্লার, মিয়া কি মল্লারের নতুন নতুন গৎ। গৌড় মল্লারে, ত্রিতালে কবি গাঁথলেন ‘মোর ভাবনারে কী হাওয়ায় মাতালো’ গানটি। এর পরেই বিরতি! একদিন সেতারিকে ডেকে বললেন—

‘‘না হে! ধার করা সুরে গান নিয়ে নানা কথা রটছে!’’

সুশীলকুমার লিখছেন, ‘‘পাছে আমি মনে দুঃখ পাই সেজন্য আমাকে আশ্বাস দিয়ে বললেন, ‘পরে সময়মতো তোমার অন্য গৎগুলির গান লিখে দেব!’’’

সে গান আর লেখা হয়নি!


আমার প্রিয়ার ছায়া

১৯৩৭। সেতারি সুশীলকুমারের গৎ-এ ‘এসো শ্যামলসুন্দর’ লিখছেন। সে বারই শান্তিনিকেতন আশ্রমে শেষ মুহূর্তে স্থগিত হয়ে গেল বর্ষামঙ্গল!

ঠিক ছিল পিয়ার্সন পল্লির সাঁওতাল গ্রামে হলকর্ষণ উৎসবের পর দিন অনুষ্ঠান হবে। সেই রাতেই মারা গেল আশ্রমের অধ্যাপক নিত্যানন্দবিনোদ গোস্বামীর একমাত্র ছেলে!

দিন কয়েক পরে অনুষ্ঠান হল কলকাতায়। মানিকতলার মোড়ে, ছায়া রঙ্গমঞ্চে। ৪ ও ৫ সেপ্টেম্বর।

‘ছায়া’-র জন্য কবি নতুন করে বাদলের গান গাঁথলেন। ‘শ্রাবণ-আকাশে ওই দিয়েছি পাতি’, ‘আমি তখন ছিলেম মগন’, ‘আজি পল্লিবালিকা অলকগুচ্ছ’, ‘আমার যে দিন ভেসে গেছে’ এবং ‘মধু-গন্ধে ভরা।’

লিখলেন বর্ষার অনুষঙ্গ আছে এমন অনেক গানও— ‘চিনিলে না আমারে কি’, ‘আজি গোধূলিলগনে এই বাদল গগনে’, ‘গোধুলি গগনে মেঘে ঢেকেছিল তারা’, ‘আমার প্রাণের মাঝে সুধা আছে।’

বোলপুর থেকে এসেছিলেন গানের ইন্দুলেখা ঘোষ, কণিকা মুখোপাধ্যায়, অমলা বসু, উমা বসু, নৃত্যে মণিকা দেশাই, শান্তিদেব ঘোষ, শৈলজারঞ্জন মজুমদার প্রমুখ।

শান্তিনিকেতন ও কলকাতার দলকে একসঙ্গে বসিয়ে রিহার্সাল করাতেন কবি। নাম দিয়েছিলেন ‘মিলিত বর্ষামঙ্গল।’ তাঁর কাছে বসা নিয়ে দু’জায়গার মেয়েদের মধ্যে শুরু হয় তুমুল রেষারেষি!

শৈলজা লিখছেন, ‘‘সে মহড়ায় কলকাতার মেয়েরা বেশ পরিপাটি করে সাজগোজ করে আসত, কানের দুলের সঙ্গে শাড়ি-ব্লাউজের ও চপ্পলের রং মিলিয়ে, সাজগোজ করে। এসে গুরুদেবের পায়ের কাছটিতে বসে বেশ আসর জমাত। গানের ফাঁকে ফাঁকে গুরুদেবের সঙ্গে তাঁদের বেশ মজার মজার কথাও চলত। আর আমার সঙ্গে শান্তিনিকেতনের মেয়ে তিনটি আটপৌরে শাড়ি পরে কোণঠাসা হয়ে পেছনের সারিতে বসে গান অভ্যাস করত!’’

রোজ রাতে খেতে বসে মোহর-ইন্দুদের কাছে কলকাতার মেয়েদের স্বভাবের কথা তুলতেন শৈলজা!

আর তাতেই জ্বলে উঠতেন তাঁরা!

কেউ হয়তো বলতেন, ‘‘এখানে গুরুদেব তো আমাদের চোখেই দেখতে পান না। কলকাতার মেয়েগুলিকে নিয়েই পড়েছেন, আমরা যেন তাঁর কেউ নই।’’

কেউ বলছেন, ‘‘আমরা কিছুতেই সাজগোজ করব না, আমরা শান্তিনিকেতনের মেয়ে।... গুরুদেব ফিরে আসুন, দেখে নেব। কথা বলব না, মুখ ফিরিয়ে থাকব, দেখব কাদের দিয়ে গান করান!’’

যেদিন অনুষ্ঠান, তার কয়েক ঘণ্টা আগেই কবি লিখলেন নতুন একটি বর্ষার গান।

এমন অভিজ্ঞতায় এস্রাজের অধ্যাপক অশেষ বন্দ্যোপাধ্যায় একরকম আতঙ্কেই থাকতেন!

স্মৃতি থেকে কবির ঘনিষ্ঠ পরিকর সুধীরচন্দ্র কর লিখছেন, ‘‘অশেষবাবু নিশ্চিন্ত, দুপুরের ফাঁকে গেছেন নিজের বাসায়। আধঘণ্টা আগে ফিরেছেন একেবারে স্টেজে। পৌঁছেই শোনেন, সঙ্গিন ব্যাপার! নতুন গান তৈরি হয়েছে। সুর বসানো হয়েছে, দলকে শেখানোর পালাও শেষ। তাড়াতাড়ি যন্ত্রীকে সুর বেঁধে নিতে হল।’’

শেষে গাওয়া হল সেই গান, ‘থামাও রিমিক ঝিমিক বরিষণ।’


শাঙন গগনে ঘোর ঘনঘটা

ছায়া প্রেক্ষাগৃহে বর্ষামঙ্গল ছিল কবি-জীবনে কলকাতায় শেষ বর্ষার গানের জলসা!

কবির তখন ছিয়াত্তর! আর জীবনের প্রথম বর্ষার গানটি লিখেছিলেন পনেরো বছর বয়সে, এই শহরে বসেই! ‘স্মৃতির পটে জীবনের ছবি’ আঁকতে গিয়ে লিখেছেন প্রথম দিনের কথা।

সে দিনও খুব মেঘ! মনকেমনের দুপুর পড়ে আসছে। গঙ্গার উপর থেকে সজল মেঘ ধীরে ধীরে সরছে জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ির দিকে। রবি ‘সেই মেঘলা দিনের ছায়াঘন অবকাশের আনন্দে বাড়ির ভিতরে এক ঘরে খাটের উপর উপুড় হইয়া পড়িয়া’ একটা শ্লেটে লিখলেন ‘গহন কুসুমকুঞ্জ-মাঝে!’

লিখে লিখেই অদ্ভূত আনন্দ হচ্ছিল তাঁর মধ্যে! দিন কয়েক পরেই বিদ্যাপতি-গোবিন্দদাসের ব্রজগাথার শব্দ-সংকেতে লিখলেন জীবনের প্রথম বর্ষার গানটি।

‘শাঙন গগনে ঘোর ঘনঘটা।’ কেবল ‘বর্ষা’ উপপর্যায়ের ২৬ থেকে ১৪০ নয়, ‘গীতবিতান’-এর পাতায় পাতায় চিত্রিত এমন অপূর্ব সব বাদল দিনের গানের ছবি। ‘মেঘছায়ে সজলবায়ে’, ‘এমন দিনে তারে বলা যায়’, ‘কৃষ্ণকলি আমি তারেই বলি’...!

নিভৃতে গান পড়তে পড়তেই ভিজে একসা। বৃষ্টি নামে ময়নাপাড়ার মাঠে।

থই থই মনের দালান-কোঠা। বৃষ্টির ছাট এসে লাগে গায়ে। হৃদি ভেসে যায় শ্রাবণগাথায়।

সে যুগে, বালক কবির গান খুবই জনপ্রিয় ছিল।

জ্যোতিরিন্দ্রনাথ সে সময় প্রতি রবিবার ‘শিকারে’ যেতেন। সঙ্গে রবি। লুচি-তরকারি পাঠিয়ে দিতেন কবির নতুন বৌঠান।

রবির বর্ষার গানের জনপ্রিয়তার আঁচ মেলে তাঁর জ্যোতিদাদার স্মৃতিপাঠে।

‘‘খাওয়া-দাওয়া হইয়া গেলে খুব এক ঝড় উঠিল। রাজনারায়ণবাবু সেই সময় গঙ্গার ঘাটে দাঁড়াইয়া, চিৎকার করিয়া ‘আজি উন্মদ পবনে’ বলিয়া রবীন্দ্রনাথের নবরচিত একটি গান আরম্ভ করিয়া দিলেন। ক্রমে ক্রমে সকল সভ্যই তাঁহার সঙ্গে বিচিত্র অঙ্গভঙ্গী-সহকারে, দারুণ উৎসাহভরে সেই গানে যোগ দিলেন। জলঝড়ের মাতামাতির চেয়ে আমাদের মাতামাতিই তখন বেশী ছিল।’’


গহন ঘন ছাইল

একটু আগেই বৃষ্টি আরম্ভ হয়েছে।

গুরু গুরু মেঘ ডাকছে। আকাশে বিদ্যুৎ রেখা। পদ্মার ঝোড়ো হাওয়ায় বোটের কেবিনে লেখার টেবিল উলঢাল।

বৃষ্টির খবর দিয়ে ২৬ বছরের রবি চিঠি লিখছেন বিলেত ফেরত ১৪ বছরের ভাইঝি ইন্দিরাকে। লিখেছেন বর্ষার নতুন গানের কথা।

সেই কবে জোড়াসাঁকোয় বসে মিঠে ব্রজবুলিতে লিখেছিলেন ‘বাদরবরখন, নীরদগরজন, বিজুলীচমকন ঘোর/ উপেখই কৈছে আও তু কুঞ্জে নিতিনিতি মাধব মোর।’ বর্ষার মৃদু প্রতিবেশে লিখেছিলেন, ‘মরণ রে, তুঁহু মম শ্যাম সমান।’ একবার ‘কালমৃগয়া’ নাটকের প্রয়োজনে, গৌড়মল্লারে ‘গহন ঘন ছাইল।’

কবেকার সব কথা!

চিঠি লিখতে লিখতে গহন অন্ধকারে, দূরে শ্রাবণের উত্তাল রাত্তিরে নদীগর্ভের ঘনঘোর বাদলের দিকে চেয়ে আছেন কবি।

ইতিমধ্যে বিয়ে হয়েছে তাঁর, যশোরের দক্ষিণডিহির বেণীমাধব রায়চৌধুরীর কন্যা ভবতারিণীর সঙ্গে। গঙ্গার ধারে মোরানসাহেবের বাগানবাড়িতে বিদ্যাপতির গানের শ্রোতা, নতুন বৌঠান চলে গিয়েছেন ’৮৪-র এপ্রিলে। দুঃসহ হয়ে উঠেছে জোড়াসাঁকোর দালান-দেউড়ি!

সেই থেকে বুঝি বাইরে বাইরে ঘুরছেন কবি! হাজারিবাগ, বোম্বাই, শিলাইদহ।

ইন্দিরাকে চিঠি শেষ, তবুও ফুরোচ্ছে না কবির কথা!

ফের লিখছেন। পুনশ্চ!

বৃষ্টি ধোওয়া বিকেলের কথা। ‘‘আসল যে কথাটা বলতে গিয়েছিলুম সেটা বলে নিই। ভয় নেই, আবার চার পাতা জুড়বে না— কথাটা হচ্ছে, পয়লা আষাঢ়ের দিন বিকেলে খুব মুষলধারে বৃষ্টি হয়ে গেছে। ব্যস।’’

কুষ্ঠিয়ায় এক দিকে শুরু করেছেন পাটের ব্যবসা, অন্য দিকে শিলাইদহে বসে বর্ষার গান লিখছেন। ১৮৯৫-এর সেপ্টেম্বরে লিখলেন বহু বছর পরে বর্ষার নতুন গান ‘ঝরঝর বরষে বারিধারা।’

ইন্দিরাকে ‘ছিন্নপত্র’-এ লিখছেন, মেঘের নীচে স্টিমারের ছাতে দাঁড়িয়ে মনে হল চরাচর ঠিক তাঁর ‘মেঘ’ রাগে গাঁথা নতুন গানের মতো। ‘ঝরঝর বরষে বারিধারা/ ফিরে বায়ু হাহাস্বরে জনহীন অসীম প্রান্তরে/ অধীর পদ্মা তরঙ্গে-আকুলা/ নিবিড় নীরদ গগনে।’

দু’বছর পরের এমন আরেক সেপ্টেম্বরের কথা। সে বার শিলাইদহ থেকে সাজাদপুর যাচ্ছিলেন কবি। বাইরে অবিশ্রান্ত বৃষ্টি হচ্ছে। বোটের মধ্যে কবি বুকে আঁকড়ে রেখেছেন গানের নোটবই খানা (মজুমদার পুঁথি)।

মাঝে মাঝেই তার পাতায় সোনা বাঁধানো পেনসিলে লিখছেন নতুন গান। আর গানের পাশে লিখে রাখছেন, ‘ঝড় বাদলা’, ‘ঝড়বৃষ্টি’, ‘বোট টলমল’-মতো শব্দ! সাত দিনে লিখলেন ১৪টি গান। একটি বর্ষার গানও! ‘হেরিয়া শ্যামল ঘন নীল গগনে।’

এর পরে ১৯০৯। সেও এক শ্রাবণের উত্তাল রাত। কবি শিলাইদহে ‘পদ্মা’ বোটে।

বৃষ্টির ছাটে ভিজে যাচ্ছে তাঁর মস্ত রেশমের আলখাল্লা। নদীগর্ভের জলভরা বাতাসে সেটা কেবলই উড়ছে।

চশমায় জল লেগে কাচ দুটো ঝাপসা হয়ে এল। বৃষ্টিমুখর রাত্তিরে তিনি গান ধরলেন, ‘আজি ঝড়ের রাতে তোমার অভিসার/ পরান-সখা বন্ধু হে আমার।’


শ্রাবণ হয়ে এলে ফিরে

শেষ বিকেল। বেণুকুঞ্জে আড্ডা জমিয়েছেন কবির গানের ভাণ্ডারি দিনুঠাকুর। রয়েছেন কালিদাস নাগ, অমল হোম, আরও অনেকে। সদ্য চা-পর্ব শেষ হয়েছে, কালবৈশাখীর মাতন শুরু হল। সকলে ঠাঁই নিল দিনেন্দ্রনাথের ঘরের বারান্দায়।

হঠাৎ দিনুঠাকুর চিৎকার করে শালবনের দিকে আঙুল তুলে দেখালেন, ‘‘ওই দেখো, রবিদা আসছেন!’’

প্রবল ঝড়ের মধ্যে ছুটে আসছেন রবিঠাকুর!

স্মৃতি থেকে অমল হোম লিখছেন, ‘‘তাঁর বেশবাস, তাঁর শ্মশ্রুকেশ উড়ছে, জোব্বাটা চেপে ধরেছেন বাঁ হাতে, আর ডান হাতে চেপে ধরেছেন চোখের চশমাটা।’’

পাছে সুর ভুলে যান, তাই গাইতে গাইতেই আসছেন। কোন গান?

অমল স্মৃতি, ‘‘আরেকটু এগিয়ে আসতেই শুনতে পেলাম গলা ছেড়ে তিনি গাইছেন— মেঘমন্দ্রের সঙ্গে তাঁর কণ্ঠ উঠছে গর্জে— ‘যেতে যেতে একলা পথে নিবেছে মোর বাতি।’ বারান্দাতে উঠেই বললেন— দিনু, এই নে! ঘরে এসে বসে পড়লেন দিনেন্দ্রনাথের ফরাসে।’’

দু’জনের গানে গানে বাইরে তখন আকাশ আলো করে বৃষ্টি নেমেছে মুষলধারে!     

শিলাইদহ থেকে ফিরেও এমনই অজস্র ধারায় গান লিখেছেন রবীন্দ্রনাথ।

ইতিমধ্যে ১৯০৫-এ পিতা দেবেন্দ্রনাথ দেহ রেখেছেন। তার আগেই চলে গিয়েছেন স্ত্রী মৃণালিনী! নিভে গিয়েছে কন্যা রেণুকা ও পুত্র শমির জীবনবাতি! বেঁচে নেই ভ্রাতুষ্পুত্র বলেন্দ্রনাথ!

কেবল মৃত্যুশোক নয়, সামাজিকভাবেও বিপর্যস্ত তিনি। ব্যবসা নিয়ে বিব্রত! বিদায় নেওয়ার কথা বলছেন!

কবির সেই দীর্ণ-দিনের কথায় সমীর সেনগুপ্ত লিখছেন, ‘‘বিপুল ঋণভার তাঁর মাথায়, পাটের ব্যবসার ব্যর্থতার দরুণ ঋণ, শান্তিনিকেতন বিদ্যালয়ের জন্য ঋণ। এক জায়গা থেকে ধার করে অন্য জায়গার ধার মেটাচ্ছেন, বড়বাজারের মোতিচাঁদ নাখতারের কাছ থেকে ৭ শতাংশ সুদে ৪০০০০ টাকা ধার করে এনে তাই দিয়ে ঠাকুর কোম্পানির দেনা মেটাচ্ছেন, বন্ধুর বাবা তারকনাথ পালিতের কাছ থেকে ধার করে মারোয়াড়ির দেনা মেটাচ্ছেন। নিজের শরীরও ক্লান্ত, রোগে ও অত্যধিক পরিশ্রমে অবসন্ন।’’

১৯০৯-এ শিলাইদহ ও শান্তিনিকেতন মিলিয়ে লিখলেন ছ’টি গান— ‘আজি শ্রাবণঘন গহন মোহে’, ‘মেঘের পরে মেঘ জমেছে’, ‘আষাঢ়সন্ধ্যা ঘনিয়ে এল’, ‘আজি ঝড়ের রাতে’, ‘আজ বারি ঝরে ঝরঝর’ এবং ‘এস হে এস সজলঘন।’ গানে গানে গেঁথে তুললেন পরের বারেও বর্ষামঙ্গল— ‘চিত্ত আমার হারালো’, ‘আমারে যদি জাগালে আজি’, ‘আবার এসেছে আষাঢ়।’

সেই শ্রাবণেও চোখের জলে ভাসল আশ্রম!

চলে গেলেন কবির বন্ধু শ্রীশচন্দ্র মজুমদারের ছেলে ভোলা। মুঙ্গেরে ভোলার মামার বাড়ি বেড়াতে গিয়েই মারা গিয়েছিল শমি। সে সময়ের ছাত্র সুধীরঞ্জন দাস লিখছেন জুন মাসের জ্যোৎস্না ধোওয়া সেই কালরাত্রির কথা, ‘‘দেকি ভোলা বেহুঁস হয়ে পড়ে আছেন এবং গুরুদেব তাঁর পাশে একটা মোড়া না কিসের উপর স্তম্ভিত হয়ে বসে আছেন, নির্নিমেষ চোখে ভোলার দিকে তাকিয়ে।’’

ভোরবেলা ভোলাকে দাহ করে সকলে যখন আশ্রমে ফিরল, কবি ততক্ষণে শেষ করেছেন একটি নতুন গান। বর্ষার গান। ‘আজ বরষার রূপ হেরি।’

ক্রমে তাঁর গানে গানে ধরা পড়ছে বর্ষার বিচিত্র প্রতিবেশ। মেঘসঞ্চার, নববর্ষা, বর্ষণ, কখনও বা শেষ বর্ষার বিরহ!

১৯১২-তে লিখছেন ‘উতলধারা বাদল ঝরে’, ১৯১৪-য় ‘শ্রাবণ হয়ে এলে ফিরে’, ১৯১৭-য় ‘কাঁপিছে দেহলতা’, ১৯২০-তে ‘আমার দিন ফুরালো ব্যাকুল বাদলসাঁঝে।’ শ্রাবণের ধারার মতো গানের স্রোত যেন বা! পরের বছর ভরা বর্ষায় লিখছেন ‘বাদলমেঘে মাদল বাজে’, ‘ওগো আমার শ্রাবণমেঘের’, ‘তিমির অবগুণ্ঠনে’, ‘এই শ্রাবণের বুকের ভিতর’ এবং ‘মেঘের কোলে কোলে।’

লিখে লিখেই অধীর হয়ে উঠছেন, কাছের মানুষদের গান শেখাতে!


ওগো আমার শ্রাবণমেঘের

একবার জোড়াসাঁকোয় বিচিত্রা বাড়ির পিছনে মঞ্চ বাঁধা। কবি বর্ষামঙ্গলের পরিকল্পনা করেছেন।

শান্তিনিকেতনে বর্ষামঙ্গলের সাফল্য দেখে কলকাতায় গানের দলকে এনেছেন কবি। মহলা দেখে আমাদের জানাচ্ছেন ‘পুণ্যস্মৃতি’-র পাতায় সীতাদেবী। ‘‘সেদিন দেখি বিপুল মজলিশ। শান্তিনিকেতনের গানের দল আসিয়া পৌঁছিয়াছে, নাটোরের মহারাজা সপরিবারে উপস্থিত, দর্শকও অনেক। ... রবীন্দ্রনাথের বসিবার ঘরেই প্রথম গান আরম্ভ হইল... মাঝে আচার্য জগদীষচন্দ্র আসিয়া একবার মিনিটখানেকের মতো ঘুরিয়া গেলেন।’’

দেশে তখন অসহযোগ আন্দোলনের ঝড়-ঝঞ্ঝা! তার মধ্যে এই গান-বাজনা অনেকে ভালো চোখে দেখেনি।

এক চিঠিতে কবি প্রমথ চৌধুরীকে লিখলেন, ‘‘দেশের কর্তাব্যক্তিদের কাছ থেকে হুকুম আসচে যে, ‘সময় খারাপ অতএব বাঁশি রাখ, লাঠি ধরো।’ যদি তা করি তাহলে কর্তারা খুশি হবেন, কিন্তু আমার এক বাঁশিওয়ালা মিতা আছেন কর্তাদের অনেক উপরে, তিনি আমাকে একেবারে বরখাস্ত করে দেবেন।’’

পরের বার ১৯২২-এ কলকাতা প্রথম টিকিট কেটে দেখল রবিঠাকুরের বর্ষার গানের জলসা! প্রথম দিন ১৬ অগস্ট রামমোহন লাইব্রেরি, পরের দিন ম্যাডান থিয়েটার। টিকিটের দাম ছিল বক্স ৫০, ৪০ এবং ২৫ টাকা। এছাড়া ৫, ৪, ৩ ও ২ টাকার টিকিটও ছিল। গ্যালারি ১ টাকা!

সে বারও অনুষ্ঠানের জন্য পর পর গান লিখছেন কবি। অক্লান্ত!

‘এই সকালবেলার বাদল-আঁধারে’, ‘শ্রাবণ মেঘের আধেক দুয়ার’, ‘বহুযুগের ওপার হতে’, ‘ভোর হল যেই শ্রাবণশর্বরী’, ‘এ কী গভীর বাণী এল’, ‘বাদলধারা হল সারা’, ‘আজি হৃদয় আমার’, ‘বৃষ্টি শেষের হাওয়া কিসের’...!


গহন রাতে শ্রাবণধারা

১৯৩৫, জুলাই মাসে চলে গেলেন দিনুঠাকুর।

ভরা শ্রাবণে আবারও শোক নামল শান্তিনিকেতনে!

সামনেই বর্ষামঙ্গল। কবি দিনুকে স্মরণ করে সুর দিলেন, ‘কী বেদনা মোর সে কি জানো।’ সে বার কবির আহ্বানে এসেছিলেন আলাউদ্দিন খান সাহেব। অনুষ্ঠানে তিনি বেহালা ও সরোদ বাজান। ছিলেন পুত্র আলি আকবরও! ’৩৮-এর অগস্টে মারা গেলেন গগনঠাকুর!

পুরনো সব বন্ধন যেন একে একে শিথিল হয়ে পড়ছে!

কবির দুঃখ-শোক বাদলদিনের মেঘ যেন মিলে মিশে একাকার হয়ে যাচ্ছে তাঁর নব নব বাদলের গানে।

কেবল দেশ, মল্লার, গৌড়মল্লারের মতো বর্ষার রাগ নয়, প্রথা ভেঙে ভেঙে বৃষ্টির ধ্বনি গেঁথে দিচ্ছেন মিশ্র সাহানা, কেদারা, ইমন-বেহাগে। কখনও কাফি, পিলু বা হাম্বির, খাম্বাজেও! বেলা যত পড়ে আসছে, বাদলের গানের ঝুলি যেন পূর্ণ হয়ে উঠছে তাঁর গানের মণি-মুক্তোয়। গাঁথলেন, ‘আজ কিছুতেই যায় না মনের ভার’, ‘আজি বরিষণ মুখরিত’, ‘মনে হল যেন পেরিয়ে এলেম’, ‘জানি জানি তুমি এসেছ এ পথে।’ শান্তিনিকেতন পত্রিকায় প্রকাশিত হচ্ছে, ‘ছায়া ঘনাইছে বনে বনে’, ‘এই শ্রাবণবেলা!’


এসো এসো ওগো শ্যামছায়াঘন দিন

যে বারের কথা দিয়ে শুরু হয়েছিল, সেই ১৯৩৯ সালে বর্ষামঙ্গল অনুষ্ঠানের মাঝপথে অসুস্থ হয়ে পড়লেন কবি।

দিনকয়েক পরে, ফের আয়োজন হল বর্ষামঙ্গলের। এ বার উদয়ন বাড়ির সামনে।

কবি নাম দিলেন ‘বাসি বর্ষামঙ্গল!’

অনুষ্ঠানের দিন কবিকে অনুষ্ঠানসূচি দেখাতে গেলেন শৈলজারঞ্জন। কবি তাঁকে বললেন, ‘‘এখনই যদি তোমাকে আর একটি নতুন গান শিখিয়ে দিই তাহলে সন্ধ্যার অনুষ্ঠানে ছেলেমেয়েদের দিয়ে গাওয়াতে পারো কি?’’

শুনে তখনই রাজি শৈলজা!

নতুন লেখা ‘যবে রিমিকি ঝিমিকি ঝরে ভাদরের ধারা’ গানটা শিখিয়ে দিতে দিতে হেসে রবিঠাকুর বললেন, ‘‘এটা হলে তোমার প্রস্তাব মতো ষোলোটি গান হয়ে যায়, ষোলোকলা পূর্ণ হয়...!’’

শৈলজা লিখছেন, ‘‘গানটি আমাকে শিখিয়েই শান্তিনিকেতন প্রেসে একবার যেতে বললেন। তখন ‘গীতবিতান’ ছাপা হচ্ছিল।’’

গান শিখে ফিরে যাচ্ছেন শৈলজা।

হাওয়া দিচ্ছে জোর। বাতাসে বৃষ্টির গন্ধ। মেঘের অন্ধকারের ভিতর ঢেকে যাচ্ছে নিখিল।

একটু পরে ঝম ঝমা ঝম। কবি দেখছেন আম্রকুঞ্জে বৃষ্টি ভিজছে আশ্রম বালিকারা। বৃষ্টির মর্মর ছিঁড়ে, বাদলের বাতাসে ভেসে তাঁরও খুব ইচ্ছে করে আবার আগের মতো বৃষ্টি ভিজতে! আকুল হয়ে, মৃত্যুর এগারো মাস আগে লিখলেন শেষ ‘বর্ষা’র গান— ‘এসো এসো ওগো শ্যামছায়াঘন দিন।’

দু’ দিন পরেই শান্তিনিকেতেনের বর্ষামঙ্গল!

তারও পরে লিখলেন বৃষ্টির শেষ বন্দিশ— ‘শ্রাবণের বারিধারা বহিছে বিরামহারা।’ 

ততদিনে শরীর ভেঙে পড়েছে। হাঁটতে পারছেন না, হুইলচেয়ারে ঘুরছেন। বেশিক্ষণ কথা বললেও কষ্ট। কানে কম শুনছেন। চোখের দৃষ্টিও কমে এসেছে। দূরের জিনিস ভালো দেখতে পারছেন না। একা একা কেবল চেয়ে রয়েছেন অনিমিখে, দূর গগনে। 

জলভরা শ্রাবণ মেঘের  দিকে!


ঋণ: গীতবিতান, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। ছিন্নপত্র, রবীন্দ্রনাথ। গীতবিতান কালানুক্রমিক সূচী, প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায়। যাত্রাপথের আনন্দগান, শৈলজারঞ্জন মজুমদার। রবিজীবনী, প্রশান্তকুমার পাল। পুণ্যস্মৃতি, সীতাদেবী। রবীন্দ্র-প্রসঙ্গ, আনন্দবাজার পত্রিকা, সম্পাদনা চিত্তরঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়। গীতবিতানের জগৎ, সুভাষ চৌধুরী। দেশ, ৭ অগস্ট ১৯৯৯। রবীন্দ্রনাথের গান দীপের মতো গানের স্রোতে, সমীর সেনগুপ্ত। গানের পিছনে রবীন্দ্রনাথ, সমীর সেনগুপ্ত।


Post a Comment

0 Comments