ব্লগ : চিত্ররূপময়/ ৩ । আড্ডার ঐতিহ্য তৈরি করেছিলাম


আড্ডার ঐতিহ্য তৈরি করেছিলাম

সুমন গুণ

অস্কার ওয়াইল্ডের সঙ্গে প্যারিসের কাফে ডি ফ্লোর, আনা আখমাতোভার সঙ্গে পিটার্সবাগের স্ট্রে ডগ কাফে, এখানকারই দ্য লিটারারি কাফের সঙ্গে ডস্টয়েভস্কি বা পুশকিনের উষ্ণ যোগাযোগের কথা আমরা জানি, জানি হেমিংওয়ের সঙ্গে প্যারিসের অনেক কাফের টইটম্বুর সম্পর্কের কথাও, তাঁর নানা লেখায় জায়গা পেয়েছে এইসব কফিশপ। 

আখমাতোভা নিয়মিত কাফেতে বন্ধুদের সঙ্গে কবিতা পড়তেন। কাফে ডি ফ্লোর অনেকদিন থেকেই তরুণ লেখকদের জন্য পুরস্কারও চালু করেছে। প্যারিসের লে ডো মাগো ধারণ করেছিল শুধু হেমিংওয়ে নয়, বোভেয়ার-সার্ত্র, পিকাসোকেও। এখানকার কফিতে আমিও চুমুক দিয়েছি। প্যারিসেরই Cafe La Rotonde (এর উচ্চারণ নিয়ে ছবির শহর কবিতার শহরে খুব বিপন্ন হয়েছিলাম) ছিল ফিটজেরাল্ড আর এলিয়টেরও প্রিয়। ফিটজেরাল্ড আর হেমিংওয়ের প্রথম দেখা হয় প্যারিসেরই ডিঙ্গো বার-এ। 

প্রাগের কাফে মমার্ত-এ পা পড়েছিল কাফকার। আমি এক ঝলক এটাও ছুঁয়ে এসেছি। শুনেছি পেদ্রোচি কাফের কথা, যেখানে আড্ডা দিতেন বায়রন আর স্তাদাল। কিংবা রোমের অ্যান্টিকো কাফে গ্রিকো, যেখানে বসতেন ইবসেন, কীটস আর বায়রন। প্যারিসের একটি পাবে সারারাত ধরে শুনেছিলাম বোদলেয়ারের জন্মদিনে তাঁরই কবিতা পড়ছেন সেখানকার তরুণ কবিরা। ফিরে এসে লিখেওছিলাম বড় করে সেসব কথা, 'দেশ'-এই। ফিরে এসে আরেকটা কাজ করেছিলাম। 

কলকাতায় নানান রমণীয় কফিশপ খুঁজে খুঁজে সেখানে বন্ধুদের নিয়ে আড্ডার ঐতিহ্য তৈরি করেছিলাম। এই অসময়ে সেসব কথা খুব মনে পড়ে। সন্ধেগুলো চলে যায়, বন্ধুদের সঙ্গে দেখা হয় না, সেইসব আলোকময় কফিশপ শুধু স্মৃতিতে সংরক্ষিত থাকে। দিনে দুতিনটি করে ভিডিও চর্চায়, তাই, সান্নিধ্যের দাক্ষিণ্য নিচ্ছি। প্রায় সব বন্ধুর সঙ্গেই অন্তর্জালে মোলাকাত হল। 

মোটামুটি গুণে দেখলাম, এই ছসাতমাসে দুশোরও কিছু বেশি অনলাইন আয়োজনে কথা বলেছি, কবিতাটবিতা পড়েছি, গুরুগম্ভীর বক্তৃতাও দিয়েছি। কথা বলতে আমি ভালবাসি, এসব না হলে কী করতাম কে জানে!

Post a Comment

0 Comments