ব্লগ : রঙের শান্তিনিকেতন ১ । প্রতীক্ষায় জীবন বাজি রাখতে পারি




প্রতীক্ষায় জীবন বাজি রাখতে পারি

সুশোভন অধিকারী

আষাঢ়ের প্রথম দিন। অফিসিয়ালি বর্ষার শুরু হল বুঝি। সেই কবে কালিদাসের যুগে বিরহী যক্ষ তার প্রিয়ের উদ্দেশে মেঘকে দূত করে খবর পাঠিয়েছিল। সেই আর্তি বোধহয় এখনও আকাশে ভেসে বেড়ায়। তবে আজ তার কাজ ফুরিয়েছে। 

বর্ষার মেঘ সরিয়ে জায়গা নিয়েছিল মরাল কপোতের মতো পাখি-পাখালির দল, তাদেরও রোমান্টিক পর্ব পেরিয়ে এখন ডাকবিভাগ ছাড়িয়ে কুরিয়ার সার্ভিস। আজ তাও নয়, ই-মেইল, মেসেজ, হোয়াটস-আপে বার্তার ছড়াছড়ি। এখন আর অপেক্ষা করতে হয় না আমাদের, খবর পাঠানোর পরেই ঠিন করে ঘণ্টি বাজিয়ে উত্তর এসে পড়ে। বড় দ্রুত, বড় চটজলদি।  প্রাপকের সেই প্রাপ্তি পর্বের মুখমন্ডলখানি একটু ভেবে নেবার সময় পর্যন্ত নেই। মাঝে মাঝে মনে হয়, এই এত দ্রুততা কি ভালো? 

একটু নাহয় তাকে নিয়ে কল্পনা করে নিই, সে সুযোগটুকুও কি দেবে না? আমাদের চিঠি লেখার দিন তো কবেই শেষ হয়েছে। কিন্তু শব্দ আর অক্ষরের আড়ালে কত কিছু লুকিয়ে থাকে! সেই আড়াল আবডাল কবেই খুইয়ে বসে আছি। সেইতো বেশ ছিল, কিছু অপেক্ষার সঙ্গে চিঠি খুলবার সে আনন্দমাখা ভালোলাগা, তা থেকে মৃদু দুশ্চিন্তাও কি ছিলো না? নাই বা হলো এমন মুহূর্তে পৌঁছে যাওয়া অনুভব! নাই বা পেলাম এত দ্রুত তোমার খবর? কিন্তু সেই সময়টা বুঝি আর ফিরে আসবে না। এখন আবার ভিডিও-কল করে সমস্ত রোমান্টিক আবহের শেষ করে দিলে। না, জরুরি কাজে সে থাক। অবশ্যই থাক। কিন্তু আমি তোমার জন্যে অপেক্ষা করতেই চাই। 

এই অতি আধুনিক ব্যবস্থা না হয় কাজের প্রয়োজনেই থাক। তুমি যে আমার প্রয়োজনের অনেক বেশি। তুমি তো সেই পরমপ্রিয়জন। তোমাকে তাই এত সহজে পেতে চাই না, আমার অন্দর মহল তোমাকে পাওয়ার জন্য ভেঙে একেবারে চুরমার হয়ে উঠুক, সেই অপেক্ষাটুকুই আমার বিশেষ আনন্দ। ওগো সেই মেঘদূতের বিরহী, তোমার মতো আমি আকুল প্রতীক্ষায় জীবন বাজি রাখতে পারি। অন্তত আজ একবার তোমাকে চিঠি লেখার দূরত্বে পেতে চাই। 

অপেক্ষা করতে চাই, আবার নতুন করে  ভালোবাসার কাছে পৌঁছতে চাই, কোনো তাড়া নেই আমার, কেবল একটু ধীর পায়ে এগিয়ে যাবো তোমার কাছে।


সঙ্গের ছবির শিল্পী নন্দলাল বসু

Post a Comment

1 Comments