তুমি থেকে তুই হয়ে গিয়েছি
পত্রলেখা নাথ
লকডাউন আমাকে অনেক ঘনিষ্ঠ করেছে। কথাটা একজন পুরুষকে নিয়েই। তিনি আমার বাবা!
বাবার সঙ্গে আমার বয়স ও মনের দূরত্ব ছিল সমানতালে। বাবার খুব শখ ছিল ছেলে হবে কিন্তু আমি কন্যা সন্তান। উনিশ শতকে কী তার আগে বাবা ও পুত্র কন্যাদের যেমন আপনি আজ্ঞে সম্পর্ক থাকে, আমার সঙ্গে বাবার সম্পর্কটা দীর্ঘ দিন ছিল সেরকম। খুব ছোটবেলার কয়েক ঝলক আদরের ছবি ছাড়া তেমন কিছু মনে পড়ে না। তবে দেখেছি আমার জন্মদিন হয়েছে খুব ঘটা করে। এত সব সত্ত্বেও আমি বাবা সহজ হতে পারিনি কখনো। নিজের মনের কথা, আবদারের কথা কখনও বলিনি বাবার কাছে।
গত পাঁচ বছরে এই সম্পর্কটা একেবারে অন্য মাত্রা পেল। বাবার কাছে আমার বক্তব্য গুরুত্ব পেতে লাগল। তারপর বাবা ২০১৭ থেকে অসুস্থ হয়ে পড়লেন। তখন থেকে আজ অবধি বাবার সব থেকে কাছের মানুষ আমি। এই চার বছরে বাবা বহুবার নার্সিংহোমে গিয়েছেন। বার বার বলেছেন আমার ছেলে থাকলেও এত করতো না যে দায়িত্ব নিয়ে তুমি যা করছো। আর চোখের জল ফেলেছেন।
লকডাউনে বাবা শয্যাশায়ী। বাবার ঘরে ঢুকি কাছে যাই, বাবা আমায় বুকে টেনে নেন। হাত ধরে থাকেন ছাড়তে চান না। ওষুধ খুঁজতে দৌড়াদৌড়ি করতে হয়। বাবা বলেন, ‘আর কত করবে আমার জন্য! এত সুখ আর কদিনই বা নিতে পারব!’
যে রাশভারী বাবাকে আমি চিনতাম, যিনি নিজের কথাই শেষ কথা মনে করতেন, সেই বাবা এখন প্রতিটা কথাই আমায় জিজ্ঞাসা করেন। লক ডাউনে ২৪ ঘণ্টা বাবার কাছে, অনেক কথার মধ্যে বার বার উঠে আসে ‘তুই ছাড়া আমার কেউ নেই।’
তুমি করে কথা বলতেন আমার সংগে। এখন ‘তুই’ করে বলেন। বোধহয় নিজের কতখানি কাছের আমি— বোঝাতে চান। লকডাউন বাবাকে নতুন করে চিনিয়ে দিল। আরো কদিন লকডাউন থাকুক আমি বাবাকে আরও চিনতে চাই। কাছের করে পেতে চাই। হয়তো এ সুযোগ জীবনে আর কখনও আসবে না। হয়তো কিছুদিনের মধ্যেই বাবাকে হারাবো চিরতরে। তবু লকডাউনের দিনগুলো আমার চিরস্মরণীয় থাকবে।
1 Comments
ভালো লাগল। Better late than never!
ReplyDelete