কবিতায়, গদ্যের মেধাবী আহ্বান সুমন গুণ রঁ দ্যা সম্পর্কে রিলকের সেই বিস্ময়ভারাতুর কথা আছে না, যে, এই ঐশ্বর্যময় শিল্পী নিজের ভেতরেই সংরক্ষণ করছেন অন্ধকার আর নীলিমা, নিজেই তিনি এক অরণ্য, যার পাশ দিয়ে বয়ে চলেছে মুগ্ধ জলধারা! অলোকদার পাশে বসে আমার কথাটা মনে পড়ে। বাংলা ভাষায় অলোকরঞ্জন দাশগুপ্ত যে মেধাবী শৌর্য ও লাবণ্য সঞ্চার করেছেন, সেটা আমরা কম বেশি জানি। এমন শিল্পী তো খুব বেশি পাইনি আমরা বাংলা গদ্যে, যাঁর ভাষা তাঁর বক্তব্যের প্রচ্ছদ হয়ে উঠতে পারে। পাণ্ডিত্য অনেকেরই থাকে, তার ভার অনেককে নুইয়ে দেয়, কেউ কেউ অক্লেশে সেই ভার উহ্য রাখতে পার…
যোদ্ধা বিষণ্ণ হবার মন্ত্র শিখে যাবে তড়িৎ রায় চৌধুরী ‘ওজস্বিতা’ ‘উদ্দীপনা’ /ছুটাও ভাষা অগ্নিকণা,/ আমরা করি সমালোচনা/ জাগায়ে তুলি দেশ!/ যাক-না দেখা দিন-কতক/ যেখানে যত রয়েছে লোক/ সকলে মিলে লিখুক শ্লোক/ `জাতীয়’ উপদেশ। বাস্তবিক যুদ্ধ-প্রীতি বা সমর্থনে মেতে ওঠার মধ্যে আমাদের মুখ্য কাজ উত্তেজনার আগুন পোহানো। স্বয়ং রবীন্দ্রনাথেরও মনে হয়েছিল; এমন একটা খ্যাপামির তপ্ত হাওয়ার মধ্যে ছিলাম যে অহরহ উৎসাহে যেন আমরা উড়িয়া চলিতাম। লজ্জা ভয় সংকোচ কিছুই ছিল না। ব্যাক্তিগত ঝগড়ার স্তরেও এই তপ্ত হাওয়া আমরা টের পাই। তবু গোষ্ঠী আর ব্যষ্টিজীবন তো এক নয়। বীর…
চিত্ত হোক ভয়শূন্য এই স্বাধীনতায় মৌমন মিত্র ব ঙ্গে বর্ষা ঘনিয়ে এসেছে। আমেরিকায় গ্রীষ্ম। এই লেখার কথামুখে বলা যায়, লঙ্গিচিউড ল্যাটিচিউডের কী দুরন্ত প্রাকৃতিক ওঠাপড়া!। এত বছরে, আমার মনে দু’দেশের ঋতুই মিলে মিশে গেছে।ঠিক যেভাবে বাংলা অক্ষর মিশেছে অভ্র কী-প্যাডে, মালপোয়া মিশেছে চিজকেক-এ, পার্ক স্ট্রিট মিশেছে ম্যানহ্যাটানে। বহুল গতিবেগে, এভাবেই বোধহয় জীবন এগিয়ে যায়! আজ মহামারীর স্রোতে আমার দু'কূলই ভাসমান। প্রাথমিক ঢেউয়ের অবসান ঘটতে না ঘটতেই, আবার জাঁকিয়ে থাবা বসিয়েছে, করোনার দ্বিতীয় ঢেউ। দৈনন্দিন প্রায় ৩০,০০০ এর বেশি মানুষ রোগাক্রান্…
সুন্দরবনের লেবারের মেয়ে মঞ্জীরা সাহা সু কুমারী ঘাটে পৌঁছিয়ে সামান্য টিমটিমে বাল্বের আলোর নীচে ভ্যান ঠিক করা হয়েছিল। সেই বাল্বের আলো যেটুকু ছড়িয়েছিল তারপর আবার সেই অন্ধকার। মিনিট পাঁচেক গিয়ে ভ্যান দাঁড়িয়ে পড়ল। মৃত বাবলুর সর্দারের বাড়ি অবধি আর ভ্যান যায়নি। বলল এবার মাঠ দিয়ে হাঁটতে হবে। মোবাইলের টর্চ ফেলতে ফেলতে ভালো করে তাকিয়ে যে জায়গায় পা দিয়ে দিয়ে হাঁটছিলাম। পায়ের জুতোর ফাঁক দিয়ে ঘাসগুলো সুড়সুড় করে লাগছিল। প্রতিবারেই মনে হচ্ছিল অন্য কিছু নয়তো! না। অন্য কিছুর কামড় খাইনি। রাঙবেলিয়া টেগর সোসাইটির যিনি সাথে গেছিলেন তিনি আর সাথে ভ্যান চা…
অপারেশন থান্ডারবল দ্যুতিমান ভট্টাচার্য মো সাদ ইসরায়েলের প্রধান গোয়েন্দা সংস্থা। এর কাজের রিপোর্ট ও গোয়েন্দা তথ্য সরাসরি ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রীকে দিতে হয়। যদিও মোসাদ সামরিক সার্ভিস নয় এর অধিকাংশ কর্মকর্তাই ইসরাইলের ডিফেন্স ফোর্সের। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এদের কর্মকাণ্ড ছড়িয়ে আছে। গোপনে। সবার অগোচরে। ১৯৭২-এর ৮ মে ৯৪ জন যাত্রী নিয়ে ওড়া একটি বোয়িং ৭০৭ বিমান বেলজিয়ামের ব্রুসেলস থেকে ইসরায়েলের লদ্ বিমানবন্দরে নিয়ে যায় চারজন হাইজ্যাকার। একজন বিমানযাত্রী ও দুজন হাইজ্যাকার সেবার মারা যায়। এরপর ১৯৭৬ সালে উগান্ডার এন্টেবি বিমানবন্দর। ছবিটা এইর…
লকডাউন ক্রমেই লকআউট তড়িৎ রায় চৌধুরী ল কডাউনটা ক্রমেই লকআউট হয়ে উঠছে অলকেশ। আমাদের স্বাচ্ছন্দ্য আর সুরক্ষার স্বার্থে উন্মাদ হয়ে যাচ্ছে একদল মানুষ। উন্মাদের পাঠক্রমে লকডাউন ক্রমেই লকআউট হয়ে যাচ্ছে অলকেশ। একে একে সবাই ছাড়া পেল— বাজার-হাট-অফিস-আদালত-ধর্মস্থান-শপিংমল। আনলক যখন শুরু হল তখন রোজকার আক্রান্ত দশ হাজার; এখন দ্বিতীয় পর্যায়ের মুখে প্রায় বিশ হাজার। জীবন তবুও বেগবান। অর্থনীতি চাঙ্গা করতে আমরা মদ্যপদের ও ভরসা করেছি কিন্তু জ্ঞানচর্চার জন্য বিদ্যার্থীদের না। শুধু ছোটদের না ১৪/১৫ বছর এমনকি বিশ্ববিদ্যালয় স্তরকেও না। তারা বিজ্ঞান পড়…
স্বামী নেপাল নিয়ে যাবে মঞ্জীরা সাহা উ ত্তর দিনাজ পুরের আমদাখালি বাস স্টপ। সেখান থেকে প্রায় ঘণ্টা দেড়েক হেঁটে গিয়ে বলাইগাঁ এর মান্ডি পাড়ার কাছাকাছি চলে এলাম। মাটির দেওয়ালে মাটি দিয়েই উঁচু উঁচু ফুল লতা পাতা আর ময়ূর চোখে পড়ছিল। পাখনা তোলা পাখনা বন্ধ ময়ূর। নীল রঙ করা মাটির দেওয়ালে অন্য রঙে রঙ করা ফুল লতা পাতা আলপনা ঘোড়ানো প্যাঁচানো ফর্মের মধ্যে হঠাৎ দুটো স্ট্রেট লাইন আমার চোখে কিরকম অদ্ভুত ঠেকছিল। ওই স্ট্রেট লাইন দিয়ে প্লাস চিহ্ন করেছে। বাড়ির বারান্দায় রাখা আরেকটা জিনিস আমার প্রথম দেখা। বাড়ির মেয়ে বৌদের বানানো ইলুয়া খড়ের ঝাঁটা। মান্ডি…
মন ওই জানে মৌমন মিত্র । ২৯ জুন, ২০২০ । নিউজার্সি ব ছর পাঁচেক আগে, বন্ধু বাসবের সঙ্গে আমার আলাপ স্টারবাক্স কফি শপে। সেদিন তাঁর হাতে এক খানা শ্রীজাতর কবিতার বই। চুল অবিন্যাস্ত। সারা মুখে কাঁচাপাকা দাড়ি। চেহারাও বেশ খোয়াটে। চোখে মুখে সামান্য হা-হুতাশ মনে হল। কিছুক্ষণের মধ্যেই তাঁর সঙ্গে আলাপ জমে ওঠে। বাসব এই দেশের নামী এক বৈজ্ঞানিক। শুনলাম ওঁর স্ত্রী আমার পাশের একটি শহরে নামী ডাক্তার। ওঁদের একমাত্র সন্তান, ঋজু। এক বছর পর ঋজু কলেজে যাবে। স্ত্রীর অঢেল স্বপ্ন এই ঋজুকে নিয়ে। অথচ ঋজুর কোনও কিছুতেই মন নেই। সে লাগামছাড়া জীবন যাপন করতে চায়। এ…
এ পথেই পৃথিবীর ক্রমমুক্তি হবে তড়িৎ রায় চৌধুরী জ লে বড় কিছু ডুবলে একটা ঢেউ ওঠেই। ঢেউ বড় বড় বৃত্তে ছড়িয়ে পড়ে কেন্দ্র থেকে পরিধির দিকে। ছোঁয়া লেগে ছলবল করে ওঠে জলবিন্দু। ইদানিং তো আমরা করোনার জন্য পর্দানশীন। বাইরের অন্য জগতকে আরও বেশি আড়াল করেছে পর্দা। সে ছোট হোক বা বড়— মোবাইল বা টিভি। তাই পর্দার জগতের আইকন হারিয়ে গেলে উত্তেজনা জাগবেই। উত্তেজনায় মানুষ হাত-পা ছোঁড়ে বেশি। অনেকেই হাত ছুঁড়ছেন থুড়ি বাড়াচ্ছেন। ‘‘আপনি কি ডিপ্রেশানে? আমি মাত্র একটা কলের দূরত্বে।/ একটা মেসেজেই দেখো আমি তোমার পাশে আছি।’’ গোটা সোশ্যাল মিডিয়া যেন ‘আমি কান পেতে রই’—…
সামতলী’র বড় ছেলে মঞ্জীরা সাহা যে মাটির উপর জুতো পায়ে হেঁটে এগিয়ে যাচ্ছিলাম সে মাটি যে এতটা ভঙ্গুর তা আমার মতো এ এলাকা থেকে অনেক দূরের শহরে থাকা মানুষের পক্ষে বিশ্বাস করা খুব কঠিন। এ এলাকার নামটা খবরের কাগজের পাতায় ওঠে ভাঙনের জন্য। এ মাটি তার পিঠের বাড়ি ঘর মন্দির মসজিদ বাজার চাষ জমি সব নিয়ে যে গঙ্গার জলের সাথে মিশে যায় সেটা আমার দেখা ফেসবুকের পোস্টের ভিডিওতে। এলাকার মানুষগুলো তাদের এক খানা মাত্র মাথা গোঁজার ঘর আর পায়ের নীচের জমিটুকু শূন্যে হারিয়ে ফেলে শক্ত মাটির খোঁজে আবার চলতে থাকে। বদলে ফেলে তার বাসা তার বাজার হাট চলার পথ। এসব— সবট…
দেশান্তর/ ২ পিতৃদিবস, প্রত্যয়ের দিন মৌমন মিত্র । ২১ জুন, ২০২০ । নিউজার্সি আ মার মায়ের মৃত্যুর সেই ভয়ানক রাতে, আমি বাবার সামনে গিয়ে দাঁড়াতেই, বাবা বলেছিল, ‘পারলাম না, পারলাম না রে বাঁচাতে...।’ আচ্ছা, বাবাদের কী চিরকাল সব কিছু পারতেই হয়? তাঁরা চোখের জল ফেলেন কার কাছে? ক্লান্ত হলে কার আশ্রয় নিতে যান? আমার জানা নেই। কেবল ছোট্ট বেলা থেকে দেখতাম বাবার ক্লান্ত হওয়ার জো নেই। বাড়ির রাঙা পিসিও তার মুখ চেয়ে, ঠাকুমাও তাই, আর আমি তো অশ্রান্ত ভাবে বাবাকে শ্রান্ত হতে দেখিইনি কোনওদিন। আমি বলি, সেই ‘পারতেই হয়’ একটি বিশেষ ধরণের প্রত্যয়। প্রত্…
মিগ বিমান চুরি দ্যুতিমান ভট্টাচার্য ছো ট্ট দেশ ইসরায়েল। কত ছোট? ১৯৪৯ সালে ইসরায়েল, লেবানন, জর্ডান ও সিরিয়ার মধ্যে যে চুক্তি হয়েছিল সেই চু্ক্তি অনুযায়ী দেশটির আয়তন হওয়ার কথা ২০ হাজার ৭৭০ বর্গ কিলোমিটার। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জার্মানির শাসক হিটলার ইহুদিদের প্রতি কঠোর হতে শুরু করেন। জাহাজে করে হাজার হাজার ইহুদি অভিবাসী ফিলিস্তিনী ভূখণ্ডে আসতে থাকে। তখন ফিলিস্তিনী আরবরা বুঝতে পারে যে তাদের অস্তিত্ব হুমকির মুখে পড়ছে। আরবরা নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার জন্য বিদ্রোহ করে। তাদের হামলার লক্ষ্যবস্তু হয়েছিল ব্রিটিশ সৈন্য এবং ইহুদি নাগ…
সংযোগ