মন বসল না দাঁড়ে মানবেন্দ্র মুখোপাধ্যায় ‘দুই পাখি’ কবিতাটা এখন অন্যভাবে বুঝতে শিখেছে লোকটা। বনের পাখি দিব্যি ছিল আকাশে। হঠাৎ সে খাঁচায় পড়েছে ধরা। মার্চ মাসটা গেল তার শুধু ডানা ঝাপটাতে ঝাপটাতে। মন বসল না দাঁড়ে। বইয়ের ঘরে এ তাক থেকে ও তাক, ও তাক থেকে সে তাক অস্থির ডানা ঝাপটাতে ঝাপটাতে, এটা-ওটা ঠোকরাতে ঠোকরাতে একসময় তার ঘুম পেল। ঘুমের নিয়মেই ঘুম ভাঙল একদিন। ডানাগুলো ঝিমিয়ে এসেছে ততদিনে। সময় তার ছাঁচে ফেলে মানুষকে যেভাবে গড়ে-পিঠে নেয় তারই নাম অভ্যাস। এমনি করেই শরীরের ঘা শুকোয়। মনের উপর সান্ত্বনার প্রলেপ পড়ে। মানুষের মনেরও বোধহয় একটা শরীর আছ…
আগামী ও আগামীকাল তিতাস বন্দ্যোপাধ্যায় আমি কি বেঁচে আছি? জানালার দিকে এগিয়ে যাই। কড়া রোদ ঝলসে দিচ্ছে আকাশ। উল্টোদিকের বাড়ির দেওয়ালে একটা মাছরাঙা বসে আছে। আশেপাশে তো কোনও পুকুর নেই! কে জানে কেন এসেছে এখানে! মাছরাঙাটার শরীরের একটা অদ্ভুত ঔজ্জ্বল্য রোদের কড়া শাসনকে হারিয়ে আমার চোখে বেশি করে স্পষ্ট হয়ে উঠছে। চিৎকার করে বলতে গেলাম— ‘হুস! যা, যা! এখানে মাছ পাবি না’— কিন্তু বলতে পারলাম না। গলা বুজে এলো। বুঝলাম গলা এখন কাজ করবে না কারণ মাথার ভেতর ঘুরে বেড়াচ্ছেন জীবনানন্দ। কয়েকদিন আগে লাবণ্য দাশের ‘মানুষ জীবনানন্দ’ পড়ে জানতে পেরেছিলাম, স্ত্র…
দিন কাটছে, অস্বাভাবিক ছন্দে পারমিতা ভট্টাচার্য মহামারী আর মন্বন্তর, দুটি শব্দই গল্প উপন্যাসে পড়া ছিল। এখন তারা আমাদের ঘরে ঢুকে পড়েছে। ডাক্তাররা জানেন না এই মহামারীর সঠিক চিকিৎসা, আমরা বুঝতে চেষ্টা করছি মন্বন্তরের মোকাবিলা কি ভাবে করতে হবে। দেশছাড়া মানুষগুলো কি ভাবে দেশে ফিরবে। গরম বাড়ছে। জলকষ্ট বাড়বে। অসুখ বাড়বে। কিন্তু দিন কাটছে, অস্বাভাবিক ছন্দে। অনেক গাছপালার মধ্যে বাড়ি। ফুল, পাখি নিত্যদিনের সঙ্গী। কিন্তু, কি যেন একটা নেই। বা কিছু একটা বেশি আছে। খুব দরকারে বাজার যাওয়া ছাড়া বেরোনো নেই। সে তো মাঝেমাঝে। ঘুরনচন্ডি আমার তো সত্যিই অসুবি…
অশ্বত্থকে আলিঙ্গন অভিমন্যু মাহাত জৈড় গাছ, যা বাংলা অভিধানে অশ্বত্থ নামে অভিহিত। স্নানের পর এই জৈড় গাছের গোড়ায় জল ঢালেন আদিবাসীরা। পুরুষেরা জল ঢালার পর আলিঙ্গন করেন। আর মহিলারা ষাটাঙ্গ প্রণাম করেন। চারা হোক বা পূর্ণাঙ্গ জৈড় গাছ, গোটা বৈশাখ জুড়ে প্রতিদিন এই রীতি পালন করেন আদিবাসীরা। এখন প্রশ্ন উঠবে কেন এই রীতি? অরণ্যের প্রতি, গাছের প্রতি মমত্ববোধ প্রতিধ্বনির লক্ষ্যেই আদিকাল থেকে এই প্রথা চালু হয়ে আছে। যে বৃক্ষের মানব সভ্যতার প্রতি বিপুল অবদান, জল- বায়ু- মেঘ যে আনে, তাকে ঘিরে কোনও রীতিনীতি থাকবে না? বেঁচে থাকার জন্য আদিবাসীরা বৃক্ষের…
নিঃসঙ্গের আলোবাতাস নাসিম-এ-আলম স্পর্শ দোষে একাকীত্ব। একাকীত্ব থেকে স্মৃতিহীনতা। সেই অসুখের চিকিৎসাও আছে, তবে সংক্রমণ ও হয় দ্রুত। এমনই জানিয়েছেন গ্যাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেজ, তাঁর নিঃসঙ্গতার শতবর্ষ উপন্যাসে। নিঃসঙ্গতার সংক্রমণ হয় কিনা জানি না তবে একাকীত্ব থেকে স্মৃতিহীনতার অভিজ্ঞতা চোখ মেলে দেখলে বোঝা যায়। ছেলে মেয়ে প্রতিষ্ঠিত, বিদেশে আছে, মা-বাবা একাকী সংসারে। এদের মধ্যে কেউ একজন ইহলোক ছেড়ে গেলে, অন্যজন কথা বলবেন কার সাথে? প্রেত নিঃসঙ্গতার ভিতরে একটাই সান্ত্বনা ছেলেমেয়ে মানুষের মতো মানুষ হয়েছে। দূরে কোথাও নীল আকাশের দিকে চেয়ে অস্ফুট…
ভালো থাকা নয়, ভুলে থাকা ধনঞ্জয় ঘোষাল সামাজিক দূরত্বের কথা শুনে আমার প্রথমেই মনে হয়েছিল প্যারিসের তাহলে কী হবে? যে শহরটাকে ঠিক দশ বছর আগে দেখেছি এবং প্রথম দেখাতেই যে-শহরকে প্রেম ও চুমুর শহর বলে মনে হয়েছিল, প্রতি মুহূর্তে যেখানে আলিঙ্গন ও চুমুর হন্ম হয়, সে শহরে চুম্বনের সিগনেচার কি মিলিয়ে যাবে? প্যারিসের প্রেম পড়ে থাকবে বিষণ্ণ বেহালার মতো? ধূসর নিস্তব্ধতায় ডুবে যাবে মঁমার্ত, ল্যুভর, আইফেল অথবা নাইট-ক্লাব? মনটা ভারী হয়ে উঠেছিল খুব। আমাদের এখানে ঠিক যে-সময়ে লকডাউন শুরু হল, সেই সময়টায় ইতালি এপিসেন্টার হয়ে উঠেছে মহামারীর, মৃত্যুর খবর আসছে স্…
স্তব্ধ দিন উৎকণ্ঠায় বিলীন শ্রেয়ম কর ২০২০ এক নতুন দশকের সূচনা। ক্ষেত্র বিশেষে বক্তার একটি সংক্ষিপ্ত সূচনা যথেষ্ট সমীচিন হয়ে ওঠে। সুতরাং এই লকডাউনের দিনলিপির প্রাক্কালে; আমি স্বয়ং বক্তা, পরিচয় বঙ্গ সন্তান। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পশ্চিম বাংলা তাদের সন্তানদের গৌরবে গৌরবান্বিত হয়েছে ঠিকই কিন্তু সরাসরি যোগে নয়, শিকড়ের টানে। অর্থাৎ বাঙালি এগিয়ে কিন্তু বাংলা কর্মসংস্থানে, রুজিরুটির চাহিদা পূরণে বহুলাংশে পিছিয়ে। তাই আজ আমরা অনেকেই প্রবাসী বাঙালি। গত ন’মাস হল আসামের শোণিতপুর জেলার বাসিন্দা হয়ে দিন গুজরান করছি। বছর ঘুরতেই ফেব্রুয়ারির শেষ…
এখন জীবন যেরকম সলিল সরকার কোয়ারানটিন কথাটা খুব ছোটবেলায় শুনেছিলাম আমার ডাক্তার জ্যাঠামশায়ের কাছে। খুব দুরারোগ্য রোগ নিয়ে আসা বড়লোকের বখে যাওয়া ছেলের সঙ্গে জ্যাঠামশায়ের কথোপকথন মূলত ইংরেজিতে হতো! সিফিলিস রোগে ভোগা বখাটে ছেলে বিয়ের আগে ডাক্তারের কাছে এসে জানতে পেরেছিল তার প্রকৃত রোগ ও তার প্রতিকার প্রতিরোধের কথা! তাকে মেডিসিনের সঙ্গে একমাস শুধু মেডিসিন নয়, ঘরবন্দি হবার ও অন্যত্র গমনে নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছিল। একমাস পরে সে সুস্থ হয়ে কয়েক মাস পরে বিয়ের পিঁড়িতেও বসেছিল। আমরা গৃহবন্দি হতাম গ্রামের বাড়িতে বর্ষাকাল কিম্বা ছোঁয়াচে রোগ ছড়িয়ে পড়লে…
অন্তরিন বা করোনার অসুখ সঞ্জয় ঘোষ চারপাশ জুড়ে এক অদ্ভূত নিস্তব্ধতা... একটা নিদারুণ শূণ্যতা... একটা মানুষ থেকে আরেকটা মানুষের মধ্যে ছফুট ব্যবধান? আমরা কি কাফকার ‘মেটামরফসিসে’র মতন সবাই পোকা হয়ে গেছি? একটা অন্ধকারের সুড়ঙ্গের মধ্যে দিয়ে আমাদের যাতায়ত? ‘দূরে কাছে কেবলি নগর, ঘর ভাঙে;/ গ্রামপতনের শব্দ হয়;/ মানুষেরা ঢের যুগ কাটিয়ে দিয়েছে পৃথিবীতে, দেয়ালে তাদের ছায়া তবু/ ক্ষতি, মৃত্যু, ভয়,/ বিহ্বলতা ব’লে মনে হয়’। যেদিন আমরা চীনের হুয়ান প্রদেশে প্রথম করোনা ভাইরাসের কথা শুনেছিলাম, আমরা জাগতিক নিয়মে পাশ কাটিয়ে যাচ্ছিলাম, আমরা ভেবেছিলাম যে ওইসব অস…
যেন লকআউট, কিন্তু এখন? সুপ্রিয় গঙ্গোপাধ্যায় ‘লকআউট’ কথাটা ছোটবেলা থেকেই শুনেছি। লাল শালুতে বাঁধা সেই শব্দের মধ্যে চটকলের ভোঁ ছিল। হঠাৎ করে কোন একটা ‘ভোঁ’ কেমন চুপ হয়ে যেতো। জানতে পারতাম ‘তিন নম্বর জুটমিল’ লক আউট হয়েছে। কিছুদিন বন্ধ লোহার বড়ো গেটে বাঁধা থাকতো লাল পতাকা, সামনে বসে থাকতো শক্ত চোয়াল, শুকনো মুখের কিছু মানুষ। তারপর অ্যামবাসাডার-দুধসাদা ধুতি আর সাইকেল-কোঁচকানো পায়জামার মিটিং হতো। খুলে যেতো লকআউট। লকডাউন শুনে প্রথমদিকে সেই লকআউটের কথাই মনে হচ্ছিল, অভ্যস্থ হয়ে যাচ্ছিলাম দীর্ঘায়িত লকআউটের শ্রমিকদের মতো। মনে আশঙ্কা ও হত…
আশা ঘিরেই বেঁচে থাকা অনির্বাণ দাশগুপ্ত ডাক্তারি জীবন ২৫ বছর হলেও মানবজীবন স্বাভাবিকভাবেই তার চেয়ে কিছুটা বেশি। সুখস্মৃতি হয়তো হাতেগোনা, কিন্তু অদ্ভুত স্মৃতি মাত্র দুটি। প্রথমটি এমার্জেন্সি… যদিও তখন আমি যথেষ্টই ছোট কিন্তু কেন জানি না জীবনের সেটাই প্রথম মানব রচিত নির্জনতা। রাস্তাঘাট শুনশান… আর্মি ট্রাকের চাকার শব্দ… পাশের অবাঙালি বাড়িতে রেডিওতে খবর… সংবাদপাঠকও যেন খবর পড়তো চাপা গলায়… যদি কেউ শুনে ফেলে! দ্বিতীয় স্মৃতি বুঝতেই পারছেন, ভাইরাস শাসনের ছন্দে নিজের জীবন ছন্দে ব্রেক লাগানো। হোয়াটসঅ্যাপে খবর পেলাম বিদেশের এক শহরের বিছানা…
নতুন পৃথিবীর স্বরলিপি দেবাশিস চন্দ ঘরকুনো লোকের আবার বন্দিদশা কী! সেই ছোটবেলা থেকেই বাড়ির বাইরে যেতে, হুল্লোড় করতে যার খুব একটা নেই আগ্রহ তার অন্তরিন সময়ের দিনলিপিতে আবেগের জোলাপ, চোখের জল থাকবে না বলাই বাহুল্য। বিকেলবেলা বন্ধুরা যখন ডাকত ফুটবল নিয়ে বা শীতের সময় ক্রিকেট খেলার জন্য তখন সেই স্কুলবালক যখের ধন বা টেনিদা বা ফেলুদায় গেছে হারিয়ে। ঠাকুমা তাড়া দিচ্ছে— যা যা একটু খোলাধূলা কইরা আয়। বন্ধুরা ডাকতাছে। শরীর–সাইস্থ ভাল রাইখতে গেলে একটু খেলাধূলা দরকার। অনেক ঠেলাঠুলির পর বালক মাঠের সবুজ ঘাসে ফেলে পা। এখন সূর্যাস্তের চৌকাঠে …
কেমন আছেন? এই বন্দি-পর্বে কেমন ভাবে দিন পার করছেন? কি ভাবছেন— এই সময় নিয়ে? আপনার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা একটু লিখবেন? ‘ লকডাউনের দিনলিপি ’ নামে আমরা ‘এখন শান্তিনিকেতন’ পত্রিকার ওয়েবসাইটে একটা সিরিজ শুরু হয়েছে। অনেকেই লিখেছেন— দেশ ও দেশের বাইরে থেকে। অনধিক ৫০০ শব্দে একটি লেখা পাঠালে বাধিত হই। ধন্যবাদ। লেখা পাঠানোর ইমেল : ekhonsantiniketan@gmail.com আবীর মুখোপাধ্যায় সম্পাদক এখন শান্তিনিকেতন
যারা খই ভাজে লকডাউনে সঙ্গীতা চন্দ নিয়ম করে ডায়েরি লেখার অভ্যেস বহুদিন হল ছেড়ে গিয়েছে। ইচ্ছাকৃত, আবার অনিচ্ছাকৃতও অনেকটা। আসলে সারাদিনের মনগড়া জটিলতাগুলো এভাবে অক্ষরে-অক্ষরে বাঁধলে নিছক বিপর্যয় নেমে আসতে পারে বলে আমার ধারণা। প্রশ্ন আসে, কেন তবে লিখছি? সকাল এগারোটার কাছাকাছি, ঘুম ভেঙে দেখি বেলার প্রায় কোয়ার্টার টাইম পার। তড়িঘড়ি দিনযাপনের মূল স্রোতে আসা উচিত হলেও নিতান্তই অলস, মন্থর গতিতে চায়ে চুমুক পড়ল! পাশের ঘর থেকে দেশ রাগ শোনা যায়... দুপুর দুটোর দিকে, বৈশাখ মাস। দুপুরের রোদ আর আমার মেজাজ— এ দুটোর মধ্যে বেশ মিল খুঁজে পাই। কারণ, যেখা…
চারিদিকে পৃথিবীর কৃষ্ণপক্ষ প্রিয়দর্শী চক্রবর্তী ঋত্বিক ঘটকের ‘সুবর্ণ-রেখা’-য় এক দৃশ্যে সন্ধের পানশালায় চরম মদ্যপানে সম্বিৎ খুইয়ে শহর কলকাতার রাজপথে ট্যাক্সির ঝাঁকুনিতে আধো আধো চেতনায় জর্জরিত হরপ্রসাদ (চরিত্রায়নে বিজন ভট্টাচার্য) বন্ধু ঈশ্বরের (অভি ভট্টাচার্য) উদ্দেশ্যে নবপ্রজন্মের প্রতি অনুকম্পায় প্রায় বাণীর মতো আওড়ে যাচ্ছেন কিছু সংলাপ-কিছু প্রলাপ—‘এরা... যুদ্ধ দ্যাখে নাই, মন্বন্তর দ্যাখে নাই, দাঙ্গা দ্যাখে নাই, দেশভাগ দ্যাখে নাই...!’ মগজের পরিণত বৃদ্ধি হয়ে ওঠা ইস্তক এই শ্লেষাত্মক উক্তি তীব্রতায় বিঁধেছে অন্তরাত্মা, যতবার ঘুরেফিরে দেখে…
বুকের ভার, নিজের কাছেই থাকুক নির্মল হালদার করোনা সংকট শুরু হতেই, মহামান্য সরকারের কাছ থেকে শুনতে হল, সামাজিক দূরত্ব। সমাজিক দূরত্ব বজায় রাখুন। কারণটা কি, দূরত্ব বজায় রাখলেই করোনা ভাইরাস সংক্রমণ ঘটাতে পারবে না। আমি বলবো, ভাইরাস ঢুকেই আছে অনেকদিন আগে থেকেই। মহামান্য সরকার বাহাদুর দেখতে পাননি। এখনও দেখতে পাচ্ছেন না, কিন্তু অন্যান্য দেশগুলি বলছে বলে, আমাদের সরকার বাহাদুরকেও বলতে হচ্ছে, করোনাভাইরাস এসে গেছে। সাবধান। সংক্রমণ ঘটার আগেই ঘরে বন্দি থাকুন। বাইরে যাবেন না। মহামান্য সরকারের নিষেধের পর কত দিন কেটে গেল। সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখেও …
খুলে যাচ্ছে হাজার দরজা নীপবীথি ভৌমিক লকডাউনের দ্বিতীয় পর্বও প্রায় শেষের মুখে। গৃহবন্দি জীবন আমাদের এখন। কিন্তু লকডাউন, অর্থাৎ তালাবদ্ধ। কিন্তু কোথায়? কিসের? কিভাবে? এই প্রশ্নগুলো দেখে নিশ্চয়ই সবার মনে হতে পারে, কি অদ্ভুত সমস্ত প্রশ্ন নিয়ে বসেছে এমন একটা প্লাটফর্মে এসে। এতগুলো দিন হয়ে গেল আমাদের তালা চাবি দিয়ে বন্ধ করে দেওয়া জীবনের, অথচ কি অবান্তর কথাবার্তা এসব? আসলে, কি জানেন তো, তালায় চাবি লাগিয়ে দিয়ে সরকার যতই আমাদের ঘরে বন্দি করে রাখার চেষ্টা করুক না কেন, চাবিটা বোধহয় আমাদের হাতেই রয়ে গিয়েছে কোনও না কোনও ভাবে। রয়ে গিয…
রাতের যশোর রোড একা পড়ে থাকে শুদ্ধসত্ত্ব ভট্টাচার্য ‘‘It is as reasonable to represent one kind of imprisonment by another,as it is to represent anything that exists by that which exists not.’’- Daniel Defoe, আলব্যের কামুর প্লেগ উপন্যাসের সূচনা। বিগত শতাব্দীর চল্লিশের দশকে আলজেরিয়ার ‘ওরান’ বন্দরে প্লেগের আখ্যান নয়, যে গল্প বলতে যাচ্ছি তা আমাদের ২০২০ মার্চের কলকাতার। মার্চের মাঝামাঝি থেকে ট্রেনে, বাসে ভিড় কম, বাড়ছে মুখোশধারীর সংখ্যা, আমরা বেলায় যাচ্ছি এগারোর পরীক্ষার গার্ড দিতে। ভাবছি এমন করেই চলবে সব। হঠাৎ করে ১৯ তারিখ মেয়ের বারো ক্লা…
দুঃস্বপ্ন কাঠবিড়ালি আর লককডাউন শ্যামল চক্রবর্তী আবছা অন্ধকার। অচেনা অরণ্যের ভেতর দিয়ে হাঁটছি। গায়ে এসে লাগছে লতাপাতা, ডালপালা। সামনে একটা ফোঁস ফোঁস আওয়াজ। চমকে উঠলাম। একটা বিশাল চেহারার ভালুক রাস্তা আটকে দাঁড়িয়ে। ঘুমটা ভেঙে গেল। ভোর। কলকাতার অপার্থিব ভোর। বিছানার পাশের জানালা দিয়ে ঘরে ঢুকে দুস্টু লেজ নাচিয়ে ডাকছে। কাঠবিড়ালিটা বন্ধু ভাবে আজকাল। ডাকি দুস্টু বলে। উঠে পড়ি। দুস্টুকে মুড়ি দিতে হবে। লকডাউনের ২৯ দিন। জীবন বদলে গেছে। এতকালের চেনা কলকাতাও। ‘সে অনেক বদলে গেছে, সে আর আগের মত নেই।’ রাস্তায় মানুষ নেই প্রায়। গাড়ির ভেঁপু বাজেনা আর। ক…
করোনার দিনগুলোতে প্রেম অজিতেশ নাগ সমীর রক্ষিতের একটা বই পড়েছিলাম। নাম ‘কলেরার দিনগুলোতে প্রেম’। লকডাউনের সময়কালে ‘করোনার দিনগুলোতে প্রেম’ নামেও একটা কবিতার পাণ্ডুলিপি নামিয়ে দেবো কিনা ভাবতে ভাবতে ভাবলাম, একবার সব্বাইকে ফোন করে দেখি কে কেমন আছে। সত্যি বলতে কী, দিনগুলো আচমকাই কেমন যেন হয়ে গেলো। এই নববর্ষের সময়ে কলকাতার এবং পার্শ্ববর্তী জেলাগুলোতে নানান সাহিত্যসভার ঢল নেমে যায়। দিন নেই, দুপুর নেই, এমনকি রাত বারোটার পরেও ফোন এসেছে, ‘দাদা অমুক দিনে ফ্রি আছেন?’। তারপর কত কবিতা পাঠ, কত চেনাজানা সাহিত্যিকদের সাথে দেখাসাক্ষাৎ, কত সাহিত্য-আলোচনা…
সংযোগ