হারিয়ে যাওয়া মুহূর্তগুলো শাশ্বত ভট্টাচার্য আজকে এইমুহূর্তে দাঁড়িয়ে যে শব্দটি ত্রাসের কারণ হয়ে উঠেছে, সেটি করোনা। অদৃশ্য শক্তি, যা থাবা বসিয়েছে আজ সমগ্ৰ বিশ্বের মানবসমাজের উপর, কেড়ে নিয়েছে একের পর এক প্রাণ। নিঃশেষ করে চলেছে একের পর এক দেশ, বাধ্য করেছে মানুষকে প্রতিমুহূর্তে নিজ অস্তিত্বটুকু টিকিয়ে রাখার জন্য বাঘের মতো লড়াই করতে। কাউকে শারীরিকভাবে, আর তার থেকে অনেক বেশি মানসিকভাবে। ওষুধ নেই এ রোগের— দেশবাসীকে বাঁচিয়ে রাখতে সরকার যে পদক্ষেপ নিলেন, তাতে স্তব্ধ হল দেশ। লকডাউন হয়তো কেড়ে নিয়েছে আমাদের প্রতিদিনের গল্প-আড্ডা-মজা সমস্ত কিছু, ক…
পোস্টডক কাতর, বেকার দিব্যি আছে তড়িৎ রায়চৌধুরী মহামারী মানেই বোধহয় অস্পৃশ্য রোগ। করোনা তো অশরীরী, দেখা যায় না অথচ শ্বাসরোধ করে দেয়। নিঃশব্দে গলা টিপে খুন। কি সাংঘাতিক! লকডাউনের প্রথমদিকে অনেক ঘুমিয়েছি। এখন ঘুম ফুরিয়ে গেছে। ভাগ্যিস ফ্ল্যাটের পাশেই বৃক্ষে ঘেরা আস্ত পুকুর ছিল। নইলে এ সমৃদ্ধ কলকাতায় মোবাইল ছাড়া চোখ রাখার জায়গা জুটত না। জীবনস্মৃতি মনে পড়ে, খড়ির গন্ডীতে বসে পুকুরের স্নানদৃশ্য। না এ পুকুরে দুটো পানকৌড়ি ছাড়া কেউ স্নান করে না। আগে একটাই ছিল, ইদানিং দেখছি দুটো। ওরা তো মানুষের মতো বিষিয়ে যায়নি। ওদের কোয়ারান্টাইন নেই। দুটিতে দিব্…
দিনের পরে যায় দিন দেবকুমার দত্ত আমরা বড্ড ভয়-কাতুরে। কে বলে এ কথা! কে করে এবম্বিধ আকাশকুসুম চয়ন! কে এই বদনাম বাঙালি ও ভারতীয়র গায়ে শুঁয়োপোকার মতো ছুড়ে দেওয়ার সাহস রাখে! তা হলে এ সব তো বেশ ভাবনার কথা। মানছি, সমহারে এ দুর্ভাবনারও বিষয়। এ সবের জবাবে এক এবং অদ্বিতীয় সাহসিক উচ্চারণ— ‘‘আমি ভয় করব না ভয় করব না। দু বেলা মরার আগে মরব না, ভাই, মরব না।।’’ রসিক পাঠক এটুকু বুঝতে পেরেছেন, আমরা ভীরু নই। আমরা এখন করোনা-আবহে ‘করি শত্রুর সাথে গলাগলি, ধরি মৃত্যুর সাথে পঞ্জা।’ কেন এমন দাবি, সেটাও নিবেদন করি। সবিনয়ে। লুচির এক পিঠ তো শুধু তেল-ঘিয়ের স্ন…
মোবাইল খুলে ক্লাস করছি শ্রীলা বসু ক্লাস থেকে বেরিয়ে আপন মনে গজর গজর করতে করতে এসে ঠক করে অ্যাটেনডেন্স রেজিস্টারটা টেবিলে রাখলাম। ছেলে মেয়েগুলো ক্রমশ যেন নিরেট হয়ে যাচ্ছে। কোনও প্রশ্ন নেই, কোনও কথা নেই মুখে। সকলে একরকম ভাবলেশহীন মুখ করে এমন চেয়ে থাকে— ইত্যাদি। সহকর্মীরাও চা খেতে খেতে সম্মত হন। ‘এর চেয়ে মনে হয় ফাঁকা ঘরে ক্লাস নিই, আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে’— গরম চায়ে জিভ পুড়িয়ে ফেলে বলতে থাকি। এসব কথা যখন হচ্ছিল তখন বোধহয় বিধাতা খবরের কাগজ পড়তে পড়তে বিভাগের মাঠে পায়চারি করছিলেন। শুনে টুনে বললেন, ‘বেশ। তাই কর ব্যাটা। তথাস্তু।’ …
গাছতলায় টাইপ থেমে আছে মলয় মণ্ডল এক বন্ধু কতগুলো ছবি পাঠিয়ে বলল— আদালতে আজকে স্যানেটাইজ করা হচ্ছে। দেখে ভাল লাগলো। কোভিড করোনা ভাইরাসের আতঙ্কে আমরা দিশেহারা! যেদিন থেকে এই আতঙ্ক সারা দেশে ছড়াল তখন থেকেই ত্রাহি ত্রাহি রব উঠল। সবাই আতঙ্কে। রাজ্য সরকার এবং কেন্দ্র সরকার দু’দফায় ৩ মে পর্যন্ত লকডাউন ডাকল। একে আটকাতে গেলে ঘরবন্দিই একমাত্র পথ। স্লোগান হল সোস্যাল ডিসটেন্স। এছাড়া অন্য কোনও উপায় নেই। তখন থেকেই গৃহবন্দি— আদালতের গাছতলায় খটাখট টাইপও থেমে আছে! দীর্ঘ দিন কোর্টে কাজ করছি। জীবনে এরকম সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়নি। বাড়ি, কোর্ট, ব…
এক নতুন পৃথিবী লাবণী রায় চক্রবর্তী লকডাউন? খুব হাসির কথা হবে হয়তো... এর মানেই জানতাম না কয়েকটা দিন আগে! প্রথম যেদিন ঘোষণা হল জনতা কারফিউ, একদিনের ওই ‘চলো নিয়ম মতে’— বিষয়টাকে ঠিক ঠাহর করতে দেয়নি। তার সঙ্গে সঙ্গত দিয়েছিল বিকেল পাঁচটার সেই অভিনন্দন-বাজনা-বাদন। বেশ মজাই পেয়েছিলাম। ২০ মার্চ উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা শেষ করে ফেলেছি বলে খুব স্বাভাবিকভাবেই এর পরের সময়টা আমার নিজের মতো করেই আরাম করে কাটত, অর্থাৎ সোজা ভাষায় নিজের জগতে বই, গান, লেখালেখি, পাহাড় প্রমাণ ভাবনা আর... অবশ্যই মুঠোফোন নিয়ে আমি বাড়িতেই কাটাতাম। দাদা আর আমি দুজনেই বাইরে হস্টে…
নতুন করে বাঁচতে শিখলাম সারদা বসু মুখোপাধ্যায় এখন বরিষণ মাত্র পাঁচ, গৃহ্বন্দি সেও। করোনা নামক এক রাক্ষস আকাশ জুড়ে রয়েছে। একদিন বড় হয়ে ইতিহাসের পাতায় পড়বে এই মারণ রোগের সঙ্গে মানুষের অক্লান্ত হার-জিতের খেলার গল্প। মনে পড়ে যাবে হয়তো তখন মায়ের সঙ্গে কাটানো গৃহবন্দি দশা দিনগুলির কথা। প্রথম দফা লকডাউন, দ্বিতীয় দফা লকডাউন, তৃতীয় দফা লকডাউনে দীর্ঘ হচ্ছে বন্দিদশা। এই কঠোর নিয়ম যতই কঠোর হোক না কেন বেঁচে থাকার একমাত্র পথ, প্রশাসন তৎপর এই মূলমন্ত্র বোঝানোর, উদ্দেশ্য একটাই, বাঁচতে হবে। আমাদের বাড়িটা ঘিরে রয়েছে বড় বড় খেলার মাঠ। বন্দি…
তুমি থেকে তুই হয়ে গিয়েছি পত্রলেখা নাথ লকডাউন আমাকে অনেক ঘনিষ্ঠ করেছে। কথাটা একজন পুরুষকে নিয়েই। তিনি আমার বাবা! বাবার সঙ্গে আমার বয়স ও মনের দূরত্ব ছিল সমানতালে। বাবার খুব শখ ছিল ছেলে হবে কিন্তু আমি কন্যা সন্তান। উনিশ শতকে কী তার আগে বাবা ও পুত্র কন্যাদের যেমন আপনি আজ্ঞে সম্পর্ক থাকে, আমার সঙ্গে বাবার সম্পর্কটা দীর্ঘ দিন ছিল সেরকম। খুব ছোটবেলার কয়েক ঝলক আদরের ছবি ছাড়া তেমন কিছু মনে পড়ে না। তবে দেখেছি আমার জন্মদিন হয়েছে খুব ঘটা করে। এত সব সত্ত্বেও আমি বাবা সহজ হতে পারিনি কখনো। নিজের মনের কথা, আবদারের কথা কখনও বলিনি বাবার কাছে। গত পাঁচ …
মুখ নিজেই একটা রাষ্ট্র সেলিম মণ্ডল দিনযাপনের উৎসবে সাদা পায়রাগুলো আকাশ ঘিরে ফেলবে আর রাতের আকাশ হয়ে উঠবে তারাদের মেলা— সময়টা এমন নয়। সময় এখন একটা দূরবীন। ক্ষুদ্রতম নিজেকে বৃহৎ দেখতে দেখতে ক্লান্ত হয়ে পড়ছে। আমরা সেই ক্লান্তির দরজায় দাঁড়িয়ে ক্রমাগত কড়া নাড়ছি। বন্ধ দরজা। কখন খুলবে জানা নেই। শুধুই অপেক্ষা... কখন অন্তত আকাশ ঘরের মধ্যে প্রবেশ করবে। কখন বিছানায় খেলা করবে রূপসী চাঁদ। কখন তাকে জড়িয়ে ধরব। কখন ছুঁয়ে দেখব। কিন্তু এ-কেমন দিনযাপন, হসন্তের মতন শরীরে-মনে লেপটে থাকে মনখারাপ? দূরত্বের নখে নেলপালিশ চকচক করে। খারাপ আবহাওয়া খবর দেয়, তার কে…
অভাব দরোজা পেরিয়ে উঠানে রাধামাধব মণ্ডল মন খারাপের মাস! ঘরে ঘরে একটি জড়ো হওয়া মনখারাপ! সে মনখারাপ, লকডাউন চলছে বলে নয়! একটু হলেও বাড়ছে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম! মাথায় ঠেকেছে হাত! মিলছে না সমস্ত জিনিস! দোকানিরা বলছে নেই জোগান! ইচ্ছে করে দাম বাড়াচ্ছে কেউ কেউ! এদিকে গ্রাম জুড়ে বন্ধ হয়ে গেছে কাজ! অভাব বার দরোজা পেরিয়ে নাচ উঠানে এসে থেমেছে! এটা সবার! গোটা গ্রাম আতঙ্কিত! ওপাড়ার সোনামণি ও খুকুমণির মা তিন দিন জ্বরে পড়ে আছে। দানাটি কাটার ক্ষমতা নেই। বাড়িতে নেই দানার জোগানও। জ্বর আতঙ্কে কেউ যায়নি ওদের বাড়ি। রঘুনাথ গত বৈশাখে কেরলে কাজে…
ভুলে যাচ্ছিলাম কোণগুলো সুমিতা রায় এরমধ্যে একদিন— আমার এক বন্ধুর সঙ্গে কথা হচ্ছিল, যে বাড়িতে আর বসে থাকতে পারছে না খুব... দমবন্ধ লাগছে এই পরিবেশ! কথাগুলো শুনছিলাম ঠিকই কিন্তু এই অবস্থায় কি বলা উচিত সেটা বুঝে উঠতে পারছিলাম না। বললাম, অভ্যেস কর অভ্যেস! এই মুহূর্তে এটাই একমাত্র অপশন আমাদের কাছে...। কর্মজীবনে পা রাখার পর থেকে প্রতিদিনের কাজের চাপ, মাথা ভর্তি stress এর মাঝে আস্তে আস্তে ভুলে গিয়েছিলাম বাড়িতে থাকার নিরাপত্তা বোধটাকে। ভুলে যেতে বসেছিলাম বাড়িতে থাকা সেই প্রিয় কোণগুলোর কথা, যেগুলো আমারি অযত্নে আজ খুব অগোছাল! হ্যা #stayathome এর …
করোনা তোমার কোন পথ দিয়ে নীতা মণ্ডল দেশে লকডাউন ঘোষণা হয়েছে। সবাই বন্দি। হোক না নিজের ঘর, তবুও বন্দি তো! মানুষ নামের যে প্রাণী শত বাধা অতিক্রম করে আকাশে উড়েছে, সমুদ্রে ভেসেছে, মহাকাশে পৌঁছেছে, চাঁদের মাটি ছুঁয়ে এসেছে তারা বদ্ধঘরে থাকবে? থাকবে। কারণ আবার একদিন তারা একটা সুস্থ পরিবেশে শ্বাস নেবে, বেঁচে থাকবে। তাদের ছেলেমেয়েরা এক বাসযোগ্য পৃথিবীতে চলে ফিরে বেড়াবে। সমগ্র মানবসভ্যতার অমন বিপর্যয় আটকাতে কটা দিন কী আর এমন! ভেবে দেখলে নিজগৃহে বন্দিত্ব নতুন কিছু নয়। রবীন্দ্রনাথের নিষ্কৃতি কবিতার মঞ্জুলিকাকে মনে পড়ে? ‘বাপের ঘরটি আপনি মোছে ঝাড়ে,…
যেভাবে ‘লক’ জীবনে ‘ডাউন’ হচ্ছি ইলোরা গঙ্গোপাধ্যায় বেশ কিছু দিন হতে চলল একটা গোটা দেশ তার বন্দিদশা কাটাচ্ছে। বিনা অপরাধের এই নিরূপায় কারাবাসের মেয়াদ সম্পর্কে আমাদের কারুরই সম্যক ধারণা নেই। শুধুমাত্র সুস্থভাবে বেঁচে থাকার লক্ষ্যটুকু নিয়ে এই বিবর্ণ দিনযাপন ক্রমশই অসহনীয় হয়ে উঠছে। গোড়ার দিকে এই মাথাব্যথাটা কিন্তু ছিল না। আমি বরাবরই একটু বিচ্ছিরি রকমের ঘরকুনো। ছুটির দিনে সুযোগ পেলেই আমার এই ছোট্ট ঘরটার মধ্যে নিরুপদ্রবে সময় কাটানো আমার বেশ পছন্দের। কাজেই ২১ দিনের এই লকডাউনের খবর শোনার পর দুশ্চিন্তাটুকু চাল ডাল আর ওষুধপত্রের মতো নিত…
মন ভাল নেই শিলচরের শতদল আচার্য একা একা রেল গাড়িতে বসে আছি, এই দীর্ঘ রেল পথে কখন গাড়ি পোঁছে যাবে, তার কোনও নিশ্চিয়তা নেই। যদি ও আমরা জানি ১৪ এপ্রিল এই রেলগাড়ি পোঁছে যাবে। রেলের আমি একা যাত্রী নই, এদেশ শুধু নয়— এ পৃথিবীময় যাত্রী। পাশের মানুষ থেকে দূরে থাকার মন্ত্র নিয়ে, সবাই একা একা যাচ্ছে তবু ও মানুষ দূরে দূরে থেকে মানুষের মানবিক মুখ মন দেখতে যাচ্ছে। রেলের কামরা থেকে কোথা ও যাওয়া যাবে না। শুধু একা একা জানলা দিয়ে আকাশ দেখা আর গান শোনা, হাত ধোওয়া আর সব কিছুর পরে একা থাকা, আসলে মানুষ তো একাই। আসা যাওয়া সব কিছুই তো একাই করতে হয়। এই কথা…
দিনগুলো ঘুমিয়ে রয়েছে এলা বসু লকডাউনের দিনগুলো কিছুটা ঘুমিয়ে রয়েছে, এই ঘুম ঘুম দিন কোমায় চলে যাবে না তো? আশংকা, উদ্বেগ সকলের। এই নিত্যবন্দী, নিঃসঙ্গ, শ্বাসরুদ্ধ দিনগুলো সুপ্ত আগ্নেয়গিরির মতন ভিতরে ভিতরে প্রস্তুতি নিচ্ছে না তো আগামীতে এক অজানা আকস্মিক বিস্ফোরণের? জানি না, হয়তো নিচ্ছে, হয়তো নিচ্ছে না। কিন্তু এই অজ্ঞাতকুলশীল বিরোধীপক্ষের মনে কি আছে সেটা না জেনে এই বিপদসংকুল সময়কে অবসর হিসাবে কি করে চিহ্নিত করব? চোখ বন্ধ করে আমরা রাখতেই পারি, কিন্তু ঝড় তো আমাদের দেখতে পাবে, সে কেন রেয়াত করবে? তবু, ভালো থাকতেই হবে, ঘরে বসে মন ভালো রাখতেই হব…
কী আছে– মানুষ না মৃতদেহ? সৌরভ নীল নির্জনতা এত ভয়ঙ্করও হয়ে উঠতে পারে! ঘরবন্দীর আজ কুড়িদিন। অথচ কতদিন এই ঘরবন্দীর স্বপ্ন দেখতাম! নির্জনতার স্বপ্ন দেখতাম! ভাবতাম কাজকর্ম থেকে বেশ কিছুদিন টানা ছুটি নিয়ে ঘরেই থাকব। বেরোব না কোত্থাও। যে বইগুলো পড়ে ওঠা সম্ভব হয়ে ওঠেনি সেগুলো শেষ করব। যে চিন্তাগুলো মাথাতেই নড়ে বেরাচ্ছে বহুদিন আর থেকে থেকে এক দীর্ঘশ্বাস দিয়ে জানান দেয়— লিখে শেষ করব। অথচ কিছুই হচ্ছে না এখন। বাইরের পরিবেশের সঙ্গে ভিতরটাও কোথাও যেন থমকে গেছে— যেভাবে থমকে গেছে আকাশ আর বাড়ির সামনের শুনশান বাইপাস। কেন? তারও যে উত্তর পাই না ভাবতে ব…
খেলা বন্ধ, ভিড় নেই কনকলতা সাহা ওদেরও এখন জানা। বাইরে বেড়োনোর প্রতি সরকারি নিষেধাজ্ঞা যখন, তখন ওদের এই তেতলার ছাদই ভরসা। এখানেই সকাল সন্ধ্যে ইনডোর গেমস্। পাখিদের খেতে দেওয়ার জন্য ছোট ছোট পাতিলে জল রাখা। খাবার দেওয়া দুবেলাতেই। গরমের শুরুতেই এসে ভিড় করে ছাতারে, বুলবুল, মৌটুসি, পায়রা, ঘুঘু, ছিটকোকিল, বেনে বউ আর দূরে সোনালি ডানার চিল। হরেক রঙের প্রজাপতিদের সঙ্গে চলে দোলনায় দোল খেতে গান গাওয়া। তারপর বিকাল হতেই জমে ওঠে গল্পের আসর। বুবুইয়ের পছন্দ হাসির ফোয়ারা, রুশদেশের উপকথা, টিনটিন, অ্যাসটেরিক্স, ঘনাদা, ব্যোমকেশ, শরদিন্দু, পান্ডব গোয়েন্দার গ…
আমরা অসহায় আকাশ সরকার আমার বাবা এই বিরাট সিস্টেমের একজন সাধারণ দিনমজদুর। কেরালা রাজ্যের কোঝিকোড জেলায় বর্তমানে তিনি কোয়ারেন্টাইন বন্দিদশা কাটাচ্ছেন। খুব স্বাভাবিক ভাবেই অনির্দিষ্টকালের জন্য ‘কাজ’ বন্ধ। তাই আমাদের এই সামান্য পরিবারটির আগামী দিনগুলি অনির্দিষ্ট ও অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। আমি একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভাষা শিখি। মানুষেরা যে ভাষায় কথা বলে। অথচ কতদিন হয়ে গেল বাবার সঙ্গে কথা হয় নাই। ফোনগুলি অসহায়। চিঠি, ই-মেইল, ফেসবুক, ম্যাসেঞ্জার, হোয়াটস্অ্যাপ সবই ভীষণ শূন্য ও অসহায় নির্বাক দাঁড়িয়ে রয়েছে আমার ও বাবার মাঝখানে। টিভিতে পর্দায় দেখতে পা…
দিবারাত্রির গদ্য বেবী সাউ তারপর, যেন বহু বহু দূর থেকে হেঁটে আসছে সেই ধ্বনি। সুন্দর এবং শান্ত। আমরা চুপচাপ পুবের দরজা খুলে, সমস্ত ভোরের পথ আলোর আলপনা দিয়ে ভরিয়ে তোলার চেষ্টা করি। বাবা তুলে ধরেন, ‘ওঁ জবাকুসুম...’ আমি এবং আমার ছোটবেলারা ছুটে ছুটে চলে যায় বকুলতলায়। শিশিরভেজা ফুলের সাজে উঠে আসে গ্রাম্যপথের চন্দনের মতো গুঁড়ো ধুলো এবং তার গন্ধ। সে সব গন্ধের স্পর্শ পাওয়া যায় কিন্তু ছোঁয়া যায় না কিছুতেই। কিছুতেই নাগাল পাওয়া যায় সেই মুহূর্তের। অথচ, মা কী নিপুণ এবং পারদর্শীতায় সামান্য শাঁখের আওয়াজে ফুটিয়ে তুলতে পারেন একটা আস্ত মঙ্গলময় ভূ…
এ শুধু অলস মায়া আবীর মুখোপাধ্যায় নির্বাসনে মনে পড়ে যাচ্ছে কত পুরনো গানের কথা। গান শোনার কথা। আসলে কম বেশি সবাই এই সময়টা আমরা নতুন করে গান শুনছি। হারানো সব গান। ঘরবন্দি থাকতে থাকতে অলস সময় বয়ে চলেছে সুরে ভেসে। আমার গান শোনা শুরু জীবনের নানা পর্বে। কখনও থেমে যায় মাতামাতি। আবার কোনও শিল্পীকে নিয়ে হয়। একজনের কথা আগেও বলেছি, আজ আবার বলি। সেটা ছিল একটা ঝড়ের রাত। ফুলডাঙা থেকে ঝোড়ো বাতাস ঠেলতে ঠেলতে সীমান্তপল্লির দিকে ফিরছি। পথে বেশ কয়েক জায়গায় গাছ পড়েছে। সে সব এড়িয়েই শান্তিনিকতন আশ্রমের অন্ধকার পথে রিকসা এগোচ্ছে। থেকে থেকে আকাশে বিদ্য…
সংযোগ